হঠাৎ গলায় হাত দিয়ে দেখি যে গলায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছি। ভালো ভাবে দেখতে আয়না তে গিয়ে দেখি যে গলায় কালো দাগ পড়ে গেছে ।আমি আরো ভালো ভাবে দেখতে গিয়ে দেখি যে আয়নার ভিতরে আমার ছবির জায়গায় অন্য কারো ছবি দেখাচ্ছে । ছবিটা অস্পষ্ট আর ভয়ানক । আর সে বলছে যে আমি তোকে আমার সাথে না নিয়ে ছাড়বো না ।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলাম না । মনে হচ্ছে কেন যে ওই অভিশপ্ত পুতুল টা কে আনতে গেছিলাম । আমার পুতুল এর কথা মনে পড়তেই পুতুল টা খুঁজতে লাগলাম । কারণ কিছুক্ষন আগেই পুতুল টা আমার সামনেই ছিল। এখন নেই । তবে কি লতা নিজের পুতুল টা নিয়ে গেছে???
গেলে তো ভালই হয়। পুতুল থেকে আমার নিষ্কৃতি ঘটলো । আমি ব্যস্ত হয়ে পড়লাম নিজের কাজে । এভাবেই বেশ কিছুদিন কাটলো । ঘটনা ঘটলো বেশ কিছুদিন পর আমাদের গ্রামের একজন এর মৃত্যু হয়েছে । ঠিক লতার মৃত্যুর মত। আমি খবর টা শুনেই বেশ চমকে গেলাম । আমার মনে পড়ল এটা ঠিক সেই পুতুল তার কাজই মনে হয়। তার পর আবার বেশ কিছুদিন কেটে যায় । সব কিছু ঠিক থাকে কিন্তু একদিন আবার ও ঘটলো ঠিক আগের মত মৃত্যু রহস্য । অনেকেই মনে করলো কোনো সিরিয়াল কিলার এর কাজ।কিন্তু আমার মন এ হতে লাগলো এইটাও ওই অভিশপ্ত পুতুল এর কাজ। আমায় এসব এর রহস্য বের করতে হবে । খুঁজতে লাগলাম লতা মারা যাবার আগে কোথায় কোথায় গেছিলো কি কি করেছিল ।
আমি বেশ কয়দিন ধরে খোঁজার পর কিছু কিছু কথা জানতে পারলাম যে লতা কোনো এক ছেলে কে অনেক ভালোবাসতো । আমি কথা টা শুনে অনেক অবাক হই। যে মেয়ে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল সে কেনো লুকালো তার ভালোবাসার কথা টা আমার কাছ থেকে। আমি আরো খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি যে লতার স্বাভাবিক মৃত্যু হয় নি । সে নাকি সুইসাইড করেছে। তার পরিবার বিষয় টা ঢাকতে বাইরে বলেছিল যে লতার নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে । আমার কাছে বিষয় গুলা অনেক খোলসা হতে লাগলো এক এক করে ।
কিন্তু শেষ রহস্য টা যেনো কিছুতেই মিলাতে পারছিলাম না ।হঠাৎ মনে পড়ল লতা বলতো যে আমার একটা ফেভারিট ডাইরি আছে । আমি সুখ দুঃখ এর সব কথা সেখানে লিখি। ওটা নাকি তার বাবা তার জন্মদিন এ তাকে উপহার দিয়েছিল । আমি আবার ও লতা দের বাসায় যাই । আর তার রুমে যেতে চাইলে তার মা আমাকে যেতে দেয় না । আমি একটু কৌশলে বলি যে লতা মারা যাওয়ার আগে আমার কাছ থেকে আমার নোট বুক টা ধার নিয়েছিল সেটাই নিতে আসছি । তার মা এবার আর কোনো বাধা দেয়নি ।
আমি তার রুমে গিয়ে এক এক করে সব জায়গায় খুঁজতে থাকি । কিন্তু কোথাও পাই না । লতার মা কে বলি কী লতার বই গুলা কোথায় তার মা বলে সব কিছু তার রুম থেকে বের করে স্টোর রুম এ রেখে দিছি। আমি নিজে গিয়ে খুঁজতে থাকি স্টোর রুম এ । এক এক করে সব জায়গা খুঁজার পর দেখলাম যে নীল রং এর একটা ডাইরি তে লতার নাম লেখা রয়েছে ।
আমি শিওর যে এই ডাইরি থেকে লতার মৃত্যু এর কিছু রহস্য বের করা যাবে । আমি ডাইরি টা নিয়ে বাসায় চলে আসি । এসেই সব কাজ বাদ দিয়ে দরজা টা বন্ধ করে দি । মা বলে কিরে দরজা কেনো বন্ধ করছিস। আমি মা কে বললাম আজকে একটু নিরিবিলি থাকতে দাও আমায় প্লিজ । কেউ কোনো ডিসটার্ব করবে না আমায় । মা কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল যে এখন কার ছেলে মেয়েদের কোনো কোথায় কেনো যে ভালো লাগেনা। কি যে হচ্ছে আমাদের সন্তান দের ভবিষ্যত্।
আমি মাকে বাইরে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দি । আমার মন ডাইরি টা পড়ার জন্য যেনো তর সইছে না ।
"ভৌতিক গল্প ও রহস্যময় কাহিনী" সবার আগে পেতে পেজের সাথেই যুক্ত থাকুন। আমার পেজের লিংক https://www.matrubharti.com/bongsaikat পেজটাতে লাইক এবং ফলো দিয়ে রাখবেন যাতে পরবর্তী গল্প গুলো সহজেই আপনি পেতে পারেন।
আমি নীল রং এর ডাইরি টা বের করেই পড়তে লাগলাম । লতা ডাইরিতে তার সুখ দুঃখ নিয়ে সবাই কে নিয়ে লিখেছে। আমি পড়তে পড়তে এক পিষ্টা তে চোখ আটকে গেলো । দেখি যে লতা একটা ছেলের কথা বলেছে । যে সে তাকে অনেক ভালো বাসে ।কিন্তু তার বাবা মা জানতো না বিষয় টা । আর লতা তার প্রেম কাহিনী সব বর্ণনা করে ওই ডাইরি তে । সাথে তাদের প্রথম দেখা ছেলের নাম গ্রামের নাম আর ওর বাবার নাম ও লেখা আছে । মোটামুটি ভালোই ছিল তাদের প্রেম কাহিনী । কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল ছেলেটার নাম আমি যেন কোথায় একটা পড়েছি । আর তার বাবার ও নাম ও লেখা ছিল । একটু পরে মনে পড়ল যে কয়দিন আগে যে একজন ছেলের মৃত্যু হয়েছে সেই ছেলে তাই এটা ।
আমার কপাল ঘামতে লাগলো । গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো । আমি পড়া বন্ধ করলাম না এক এক করে পড়তে লাগলাম সবগুলো ঘটনাই । আমি দেখলাম সে তার ডাইরি তে লিখে রেখেছে তার প্রিয় মানুষ দের নাম । সেই লিস্ট এ আমার ও নাম আছে । আমি আমার নাম দেখে ওর প্রতি আমার ভালোবাসা বেড়ে গেলো কয়েক গুন । কিন্তু তার পরের লাইন পরে সব কিছু যেনো এক নিমিষে শেষ হয়ে গেলো ।
আমি তার পরের লাইন টা পড়ে দেখলাম লতা লিখছে যে সে নাকি তার প্রিয় মানুষ দের ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারবে না । তাই সে কোথাও চলে গেলে তাদের নিজের সাথে করে নিয়ে যাবে । আমার বুঝতে সমস্যা হলো না যে সে কোথায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে । আমি বুঝলাম তার মৃত্যুর সাথে সাথে আমাদের ও মানে (প্রিয় মানুষদের ) সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে ।
এক মুহুর্তের ব্যাবধান এ সব কিছুর রহস্য আমার কাছে একদম খোলসা হয়ে গেলো । তার মানে লতা মারা যাবার পরে তার আত্মা আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্যে ফিরে এসেছে ।
আমি ভালোভাবে তার প্রিয় মানুষ দের নাম গুলি পড়লাম । শুনতে কাকতালীয় হলেও আমি বাদে তার সব প্রিয় মানুষ গুলি কোনো না কোনো ভাবে মারা গেলো তাও আবার কয়েকদিন এর ব্যাবধান এ ।
আমি বুঝতে পারলাম যে নেক্সট এ মনে হয় আমার মৃত্যু নিয়ে আসতে চলেছে লতা নামের আত্মা।
আমার তার ডাইরিটা পড়তে পড়তে রাত প্রায় 10 টা বেজে গেলো, এদিকে মা খাবার খাওয়ার জন্যে ডাক দিতে লাগলো আমায় ।
আমি মায়ের কথা না ফেলতে পেরে খেতে চলে গেলাম ডাইরিটা বিছানায় ফেলে ।
সবাই খাচ্ছে কেনো জানিনা আমার খাবার পেটে যাচ্ছে না। সব অদ্ভুত রকমের চিন্তা ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
মা বাবা আমার এমন হাবভাব দেখে বলল কি হয়েছে মা । আজকে কি তোর মন খারাপ । বিশ্বাস করতে পারবেন না আমার মৃত্যু তে মা বাবা কে ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হবে ভাবতেই দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে আসতে লাগলো ।আমার চোখে জল দেখে মা খাবার প্লেট ফেলে আমার কাছে এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো আমার মিষ্টি মেয়েটাকে কেউ কিছু বলেছে নাকি । কেনো কান্না করছিস মা । আমি এবার মা বাবা কে সব কিছুই খুলে বললাম ।
মা ও বাবা আমাকে সান্তনা দিয়ে বললো , সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে তুই কোনো চিন্তা করিস না । এদিকে আমি খাওয়া শেষ করে আমার রুম এ চলে আসলাম ।
এসেই দেখি আমার বিছানায় লতা নিজের ডাইরি টা পড়ছে । আমি যেতেই সে আমার দিক তাকালো । কিন্তু কোনো ভয়ানক চেহারা ছিল না তার ।
দেখে যেনো মনে হচ্ছে সেই আগের চিরচেনা লতা আবার ফিরে এসেছে ।
আমি তার কাছে এসেই বললাম আমি কি দোষ করেছি যে তুই আমাকে তোর সাথে নিয়ে যেতে চাইছিস । সে কোনো কোথাই বলছে না । কেবল নিরবে চোখের জল পড়ছে । আমি স্পষ্ট দেখতে পারলাম। । কিন্তু আমি তার চোখের জল মুছে দিতে গিয়েই দেখলাম তাকে ছোঁয়া যাচ্ছে না । সে বলল আমি আর আগের লতা নেই রে যে আমাকে ছুঁতে পারবি।
আমি তাকে বলি যে প্লিজ আমাকে মারিস না আমি আমার বাবা মা কে ছাড়া থাকতে পারবো না ।
সে বলল আমি তোর রুম এ অনেক আগেই এসেছি আমি তোর আর তোর মা বাবার কথাও শুনেছি ।
আমি তোকে নিতে আসি নি রে আমি এসেছি বিদায় নিতে । আমি চলে যাচ্চি ভালো থাকিস । পারলে আমাকে মাফ করে দিস । আমি তোকে অনেক জ্বালিয়েছি । আর আমার বাবা মা কে আমার জন্য দোয়া করতে বলিস । এসব বলেই সে ধোয়ার মত মিশে যেতে লাগলো আর যেতে যেতে বলল যে আমার পুতুল টা তোর অনেক প্রিয় ছিল তাই না । তাই আমার শেষ স্মৃতি হিসেবে তোর কাছে দিয়ে গেলাম । এইটা যখনি দেখবি আমার কথা মনে পড়বে তোর ।এসব বলেই মিশে গেলো সে । আমি অনবরত কান্না করতেই থাকলাম । হাজার হলেও সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড । তার সাথে জড়িয়ে আছে আমার হাজারো স্মৃতি ।
কত স্কুল ফাঁকি দিয়ে ফুচকা খেতে গেছি । সেদিন যেনো তার সব স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে বেড়াতে লাগল আমার ।
আমার কল্পনা ভাঙলো বিছানায় আগুন দেখে । দেখলাম নীল রঙের ডাইরিটা আগুনের লেলিহান শিখায় কালো থেকে নিকষ কালো তে পরিণীত হচ্ছে ।(কিন্তু বিছানা পুড়ে যাচ্ছে না )
আর পাশেই ছিল পুতুল টা ।
আমি পুতুল তাকে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম কেনো চলে গেলো লতা । তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি ।
কিভাবে তোর এই ফ্রেন্ড কে রেখে ভালো থাকবি । নিজের মনে হচ্ছে কোনো প্রিয় মানুষ কে হারানোর কতটা যন্ত্রণা হচ্ছে নিজে বলে বুঝাতে পারবো না ।
.......সমাপ্ত.......
"ভৌতিক গল্প ও রহস্যময় কাহিনী সবার আগে পেতে পেজের সাথেই থাকুন। আমাদের পেজের লিংক https://www.matrubharti.com/bongsaikat পেজটাতে লাইক এবং ফলো দিয়ে রাখবেন যাতে পরবর্তী গল্প গুলো সহজেই আপনি পেতে পারেন। আর গল্প ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন...👹 লাইক কমেন্ট করে আপনার মূল্যবান মতামত জানাবেন...❤️