In The Dark Of Illusion - 6 in Bengali Horror Stories by Utopian Mirror books and stories PDF | অবচেতনার অন্ধকারে - 6

Featured Books
Categories
Share

অবচেতনার অন্ধকারে - 6

কে সেই অশরীরী?

লুসির একবার মনে হয় তারা হলো পৃথিবীর সর্বত্র হাওয়ার মধ্যে শুস্ক কণার মতো ঘুরে বেড়ানো অপঘাতে মৃত আত্মা। অথবা এমনও হতে পারে, যারা জীবনের অনেক স্বাদ অপূর্ণ রেখে মৃত্যুর ডাকে সাড়া দিয়েছে সেই সব পিপাসার্ত মানুষ।

ওদের যেকোনো পরিচয় হোক না কেন, লুসি জানে ওরা বাস করে মধ্য রাতের হিম কুয়াশায়। চোখে দেখা না গেলেও প্রতি মুহূর্তে সে ওদের নীরব উপস্থিতি অনুভব করে তার দগ্ধ হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনে।

অথবা ওরা কি তার মা এনিলিয়ার মতো ? যারা হারিয়ে যাই এই পৃথিবী থেকে, কোনো জঘন্য মানুষের রক্তাত্ত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে।

লুসি জানলার সামনে দাঁড়ালো। আসে পাশে কেউ কোথাও জেগে নেই, শ্রুত হচ্ছে ঘুমন্ত মানুষের নিঃশাসের শব্দ। যদিও জীবনের কোনো অর্থ নেই তার কাছে।

কেননা আজ তার অশুভ চিন্তায় একটি তিন বছরের মেয়েকে পাড়ি জমাতে হয়েছে পরলোকে।

এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য মানুষের যাবতীয় আশা আকাঙ্খাকে উপহাস করে নিঃশব্দে জাগে লুসি।

লুইজাকে মনে পড়ছে লুসির। চোখ বন্ধ করলে সে যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তিন বছরের ওই ফুটফুটে মেয়েটিকে। বারো হবার অপূর্ণ স্বপ্ন ছিল তার, ছিল পৃথিবীকে ভোগ করার তীব্র আকাঙ্খা।

জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো লুসি, তুষারের আচ্ছাদনের মধ্যে দূরে দেখা যাচ্ছে নিউয়র্কের পামগ্র এভেন্যুকে। সারাদিন যে রাস্তাটি অসংখ মানুষ আর যানবাহনের চলাচলে মুখরিত থাকে এখন সেখানে নেমে এসেছে অদ্ভুত নীরবতা। মনে হয় যেন কোনো এক মোহিনী জাদুকরী কঙ্কাল দণ্ড ছোঁয়াতে দুরন্ত শিশু সারাদিনের খেলার শেষে ঘুমিয়ে পড়েছে।

এই ঘরে লুসি একা, অবশ্য ভয় শব্দটা তাকে কোনোদিন গ্রাস করতে পারেনি। যে বয়েসে অন্য সব মেয়েরা বাবা মার সস্নেহ আচ্ছাদনের মধ্যে থাকে সেই বয়েসে লুসি দিন কাটাচ্ছে একলা।

পাশের ঘরে একই শয্যায় শায়িত তার সাইক্রিয়াট্রিস্ট বাবা হেনরি আর ওই মানবী ডাকিনি ক্লারা।

চোদ্দ বছরের মেয়ে লুসি এখন সব কিছু বুঝতে পারে। কেন ক্লারা তার দিকে তাকিয়ে থাকে এমন রক্ত লোলুপ দৃষ্টিতে, কেন বাবা হেনরি ইদানিং তার প্রতি ক্রমশ: উদাসীন হয়ে উঠেছে এবং কেনই বা ওরা দুজনে মিলে শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার করে তাকে পরিণত করছে একটা চেতনা বিহীন জড়ো পদার্থে - এসব রহস্যের আবরণ এখন উন্মোচিত হয়ে গেছে লুসির কাছে।

যে বয়েসে আকাশের রং থাকে আশ্চর্য নীল, ফুলেরা হয় রামধনুর সাতটি রঙের, ডাকতে ডাকতে উড়ে যাওয়া ক্যানারি পৃথিবীকে মনে হয়ে নিকটতম বন্ধু, সেই বয়েসে লুসির কাছে পৃথিবীর রং কালো।

ভালো লাগে তার মধ্যে রাতে শকুনির কান্না, খাঁ খাঁ নিঃঝুম দুপুরে শিকারি নেকড়ের নিঃশ্বাস।

কিন্তু লুইজা ? সেই দলিত মথিত রক্তাত্ত বিকৃত শিশুটি যেন লুসিকে আকর্ষণ করছে।

লুসি ভাবতে ভাবতে চলেছে শহর নিউইয়র্কের এককোনে, ফিফ্থ এভিনিউ ছাড়িয়ে আকাশ ছোঁয়া স্টেট বিল্ডিংসকে পাশে রেখে শহরের সীমান্তে অবস্থিত কবরখানাতে। যেখানে শায়িত আছে অপঘাতে মৃত মানুষের দল, হত্যা অথবা আত্মহত্মা যাদের জীবন দীপ নিভিয়ে দিয়েছে। এবং প্রতিটি মৃত আত্মার অন্তরালে পুঞ্জীভূত আছে অপূর্ণ অভিলাষ, নীরব প্রতিশোধের স্পৃহা।

লুসি প্রবেশ করে, উঁচু পাঁচিল ঘেরা ওই বিস্তীর্ণ কবরক্ষেত্রে নেমে এসেছে হিমেল রাতের ধূসর মলিন ভাস্বরতা। সারি সারি মানুষের মৃতদেহ, শেত পাথরে সঞ্চিত আছে অশ্রু জলে সিক্ত কাহিনী।

লুইজা কোথায় ? লুসি কি জানে শত সহস্র অশ্রুলিপির মধ্যে কোথায় আছে তার প্রথম শিকার লুইজা ?

কোথা থেকে যেন ভেসে আসে মৃদু ক্রন্দনের ধনি। উড়ন্ত শকুনের অপলক চোখে ঠিকরে আসে লালসা। লুসি দেখতে পায়, ভয়ে দুটি চোখ বিস্ফারিত হয়ে যায়। সাদা পাথরের ওপরে লাল রক্তের দাগ, হয়তো বা উষ্ণ।

পাথরে রক্ত ? থমকে দাঁড়িয়ে গেলো লুসি, এ কেমন করে সম্ভব ?

চোখ তুলে তাকালো সে, সারারাত ধরে তুষারের পাশাপাশি ঝরেছে রোজ মেরি ফুলের পাপড়ি। রৌদ্র নেই, তাই এখনো সতেজ। হয়তো বা সুগন্ধিত।

কান্নার শব্দটা বাড়তে থাকে, মনে হয় গোটা প্রকৃতি বুঝি তার প্রতিবাদ জানাচ্ছে। লুসির চোখে পড়লো সদ্য প্রোথিত কাঠের ফলকে লেখা আছে কয়েকটি শব্দ, যারা তার চেতনাকে আলোড়িত করতে পারে। লেখা আছে ---


Here lies one whose name is
written in water.......


তলাতে লেখা - মিস লুইজা বার্ন। জন্ম - সাতাশে জানুয়ারী, ১৯৭৪। মৃত্যু - দশই জানুয়ারী, ১৯৭৭।

একই ? নিজের দুহাতে জমাট রক্ত দেখে প্রচন্ড ভয়ে চিৎকার করতে যায় কিশোরী লুসি। পারে না, কে যেন তার মুখ স্তব্ধ করেছে। এখুনি এই কবরখানা থেকে না পালাতে পারলে কাল সকালে এখানে আবিষ্কৃত হবে মৃত্যুহীন একটি শীর্ণা কিশোরীর মৃতদেহ।

লুসি সেট অজানা। কিন্তু কোনো অদৃশ্য মায়া তার গোটা দেহটাকে পাথরের স্ট্যাচুর মতো দাঁড় করিয়ে রেখেছে কবরখানার তুষার পিছল মাটিতে।