সন্ধ্যে ৭টা, সাউথ সিটি তে আসতে আসতে ভিড় বাড়ছে। সালমা বার বার ঘড়ি দেখছে, তনিমা আস্বস্ত করল, “আরে চাপ নিচ্ছিস কেন? আসবে যখন বলেছে ঠিকই আসবে! চল আমরা ভিতরে যায়”। k.f.c থেকে দু-প্লেট চিকেন নিয়ে একটা টেবিলে দুই বন্ধুতে গল্প করতে লাগল। এর আগেও দুই বন্ধুতে এসেছে কিন্তু আজ সালমার কিছু ভাল লাগছে সালমাকে গম্ভীর দেখে তনিমা জিজ্ঞেস করল, “খুব টেনশন হচ্ছে? মানা করে দি”?
“না ঠিক আছে! ওকে ম্যাসেজ করে বলে দে, এখানে না এসে ফ্ল্যাটে চলে যেতে, আসার আগে অবশ্যই যেন ফোন করে। আচ্ছা ছেলেটা দেখতে কেমন”?
সালমা খাতুন, বয়স ৩২- ৩৩ হবে, তবে দেখে ২৫-২৬ এর বেশি কেউ বলবে না। একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে উচু পদে কর্মরত। দুবছর হল, তালাক হয়ে গেছে। তবে আর পাঁচটা সাধারণ মুসলিম ছেলের মতো ওর স্বামী তিনবার তালাক বলেই ‘তালাক’ দেননি, একেবারে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে তালাক দিয়েছে। সালমার অর্থনৈতিক সাচ্ছন্দ আছে তাও খড়পোশ হিসাবে নিউ আলিপুরে একটা টু-বেড রুম ফ্ল্যাট আর ২০ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট নিয়েছে। এখন একাই থাকে, মাঝে মাঝে আব্বা- আম্মি আসেন। আজ ভীষণ গরম পড়েছে, সালমার ফ্ল্যাট টা পাঁচ তলায়, এমনিতেই জানলা খুলে দিলে ভালই হাওয়া আসে কিন্তু আজ ছাদে উঠতে ইচ্ছে করছে। কখনও কখনও আমাদের ইচ্ছে পূরণের জন্য অনেক দাম দিতে হয়, সালমা কেউ হয়েছে! নিজের ছোট ছোট ইচ্ছে গুলকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আজ একা হয়ে গেছে। একবার অফিসে জিন্স পড়ে যাওয়া নিয়ে ফারুখের আম্মির সাথে তুমুল ঝগড়া হয়, ফারুখ রাতে এসে শাসিয়ে ছিল এরপর জিন্স পড়ে গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। সালমা মুখে কিছু বলেনি কিন্তু ফারুখের মুখে কথা গুলো শুনে অবাকই হয়ে গেছিল। যদিও প্রথম দিকে ফারুখ এই রকম ছিল না, বিয়ের পর হানিমুনে গোয়া গিয়েছিল, বীচে একজন বিকিনি পরিহিত মহিলাকে দিখিয়ে বলে ছিল, দেখেছ, what a sexy girl! সালমা বলেছিল, বিকিনি পড়লে সব মেয়েকেই লাগে! আমি পড়লে তোমার মাথাই ঘুরে যা“থাক্! তোমার আম্মি জানতে পারলে হার্ট- ফেল করবে”।
বিয়ের এক বছর পর একদিন রাতে সালমা বলল, “ফারুখ এখন কি ব্যবসার জন্য বেশি টেনশন করছ”? “কই না তো। কেন”?“না, কিছু দিন ধরে দেখছি তুমি কেমন অন্য মনস্ক, বেশি কথা বল না, ডিনার করার পরেও ব্যবসার কাগজ পত্র নিয়ে বসে পড়”।
“কি করব? কাজ করব না তো”? ফারুখ চিৎকার করে বলল।
সালমা পরিবেশটা একটু হালকা করার জন্য বলল, “বুঝতে পারছি কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছ! তাই আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না, এক বছরেই bore হয়ে গেলে ফারুখ“তোমার রসিকতা আমার মোটেও ভালো লাগছে না, রোজ বাড়ী ঢুকেই তোমার নামে নালিশ! একটু আম্মির কথা মতো থাকতে পারো না, তাছাড়া তোমার চাকরি করার দরকারি বা কি? আল্লার মেহেরবানীতে আমাদের অভাব তো কিছু নেই”।“ফারুখ, আব্বা আমাকে computer science বাড়ীতে রান্না করার জন্য পড়াননি, তাছাড়া আমি কারো ভরসায় থাকতে চাই না, তুমি দিন দিন যা conservative হয়ে যাচ্ছ, তোমার সাথে কত দিন ঘর করতে পারব আমি জানি “সে তো জানি, রাত জেগে facebook এ কথা বলছ প্রাক্তন boy friend এর সাথে, কবে আসছেন স্যার দেশে? আমাকে আগে থেকে বলে দিও, তোমাকে তোমার আব্বার বাড়ীতে রেখে আসব, এই বাড়ীতে থেকে রাসলীলা চলবে না, বাড়ীর একটা ঐতিহ্য আছে আগে এই বাড়ীর মেয়েদের চাকরি করা তো দূর বাড়ীর বাইরে যাওয়া তেও restrictionসেদিন রাত্রে আর কোনও কথা বারাইনি সালমা। তবে সেই দিনের পড় থেকে দু-জনের মধ্যে দূরত্ব বারতে থাকে, সম্পর্কটাকে সহজ করার জন্য ফারুখও এগিয়ে আসেনি। আগে ঝগড়া হলে দু চার দিন পর সালমাই এগিয়ে গিয়েছে, কখনও বা একটু খুনসুটি করেছে, কিন্তু সেই দিনের পর থেকে সালমা নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে ছিল, নিজেদের মধ্যে যেন একটা cold war চলছিল । এর ঠিক এক মাস পর তনিমার ম্যারেজ আনিভারসারিতে বেশ কয়েক প্যাক ভদকা খেয়ে আসে সালমা। অনেক দিন না খাওয়ার জন্য হোক কিংবা সেদিন একটু অতিরিক্ত পানের জন্যই হোক , বাড়ীতে এসেই বমি করে ফেলল। শরীরটা খারাপ ছিল, পরের দিন অফিসে যায়নি সালমা, সন্ধেবেলায় ফারুখ এসে বলল, “তোমার সাথে সত্যি আর থাকা সম্ভব নয়, তোমাকে আমি ‘তালাক দেবো।"
সালমা খাতুন, বয়স ৩২- ৩৩ হবে, তবে দেখে ২৫-২৬ এর বেশি কেউ বলবে না। একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে উচু পদে কর্মরত। দুবছর হল, তালাক হয়ে গেছে। তবে আর পাঁচটা সাধারণ মুসলিম ছেলের মতো ওর স্বামী তিনবার তালাক বলেই ‘তালাক’ দেননি, একেবারে ডিভোর্স পেপারে সাইন করে তালাক দিয়েছে। সালমার অর্থনৈতিক সাচ্ছন্দ আছে তাও খড়পোশ হিসাবে নিউ আলিপুরে একটা টু-বেড রুম ফ্ল্যাট আর ২০ লক্ষ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট নিয়েছে। এখন একাই থাকে, মাঝে মাঝে আব্বা- আম্মি আসেন। আজ ভীষণ গরম পড়েছে, সালমার ফ্ল্যাট টা পাঁচ তলায়, এমনিতেই জানলা খুলে দিলে ভালই হাওয়া আসে কিন্তু আজ ছাদে উঠতে ইচ্ছে করছে। কখনও কখনও আমাদের ইচ্ছে পূরণের জন্য অনেক দাম দিতে হয়, সালমা কেউ হয়েছে! নিজের ছোট ছোট ইচ্ছে গুলকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আজ একা হয়ে গেছে। একবার অফিসে জিন্স পড়ে যাওয়া নিয়ে ফারুখের আম্মির সাথে তুমুল ঝগড়া হয়, ফারুখ রাতে এসে শাসিয়ে ছিল এরপর জিন্স পড়ে গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে। সালমা মুখে কিছু বলেনি কিন্তু ফারুখের মুখে কথা গুলো শুনে অবাকই হয়ে গেছিল। যদিও প্রথম দিকে ফারুখ এই রকম ছিল না, বিয়ের পর হানিমুনে গোয়া গিয়েছিল, বীচে একজন বিকিনি পরিহিত মহিলাকে দিখিয়ে বলে ছিল, দেখেছ, what a sexy girl! সালমা বলেছিল, বিকিনি পড়লে সব মেয়েকেই লাগে! আমি পড়লে তোমার মাথাই ঘুরে যা“থাক্! তোমার আম্মি জানতে পারলে হার্ট- ফেল করবে”।
বিয়ের এক বছর পর একদিন রাতে সালমা বলল, “ফারুখ এখন কি ব্যবসার জন্য বেশি টেনশন করছ”? “কই না তো। কেন”?“না, কিছু দিন ধরে দেখছি তুমি কেমন অন্য মনস্ক, বেশি কথা বল না, ডিনার করার পরেও ব্যবসার কাগজ পত্র নিয়ে বসে পড়”।
“কি করব? কাজ করব না তো”? ফারুখ চিৎকার করে বলল।
সালমা পরিবেশটা একটু হালকা করার জন্য বলল, “বুঝতে পারছি কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছ! তাই আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না, এক বছরেই bore হয়ে গেলে ফারুখ“তোমার রসিকতা আমার মোটেও ভালো লাগছে না, রোজ বাড়ী ঢুকেই তোমার নামে নালিশ! একটু আম্মির কথা মতো থাকতে পারো না, তাছাড়া তোমার চাকরি করার দরকারি বা কি? আল্লার মেহেরবানীতে আমাদের অভাব তো কিছু নেই”।“ফারুখ, আব্বা আমাকে computer science বাড়ীতে রান্না করার জন্য পড়াননি, তাছাড়া আমি কারো ভরসায় থাকতে চাই না, তুমি দিন দিন যা conservative হয়ে যাচ্ছ, তোমার সাথে কত দিন ঘর করতে পারব আমি জানি “সে তো জানি, রাত জেগে facebook এ কথা বলছ প্রাক্তন boy friend এর সাথে, কবে আসছেন স্যার দেশে? আমাকে আগে থেকে বলে দিও, তোমাকে তোমার আব্বার বাড়ীতে রেখে আসব, এই বাড়ীতে থেকে রাসলীলা চলবে না, বাড়ীর একটা ঐতিহ্য আছে আগে এই বাড়ীর মেয়েদের চাকরি করা তো দূর বাড়ীর বাইরে যাওয়া তেও restrictionসেদিন রাত্রে আর কোনও কথা বারাইনি সালমা। তবে সেই দিনের পড় থেকে দু-জনের মধ্যে দূরত্ব বারতে থাকে, সম্পর্কটাকে সহজ করার জন্য ফারুখও এগিয়ে আসেনি। আগে ঝগড়া হলে দু চার দিন পর সালমাই এগিয়ে গিয়েছে, কখনও বা একটু খুনসুটি করেছে, কিন্তু সেই দিনের পর থেকে সালমা নিজেকে একটু গুটিয়ে নিয়ে ছিল, নিজেদের মধ্যে যেন একটা cold war চলছিল । এর ঠিক এক মাস পর তনিমার ম্যারেজ আনিভারসারিতে বেশ কয়েক প্যাক ভদকা খেয়ে আসে সালমা। অনেক দিন না খাওয়ার জন্য হোক কিংবা সেদিন একটু অতিরিক্ত পানের জন্যই হোক , বাড়ীতে এসেই বমি করে ফেলল। শরীরটা খারাপ ছিল, পরের দিন অফিসে যায়নি সালমা, সন্ধেবেলায় ফারুখ এসে বলল, “তোমার সাথে সত্যি আর থাকা সম্ভব নয়, তোমাকে আমি ‘তালাক দেবো।"
আকাশে মেঘ করেছে, মনে হয় এখুনি তেড়ে বৃষ্টি আসবে, সালমা ছাদে থেকে রুমে ফিরে এল। এখন ঘড়িতে সাড়ে দশটা বাজছে, মোবাইলে তিনটি মিসড কল। সালমা কল ব্যাক করে দেখল, তনিমার ফোন আনরিচেবল। মিনিট ১৫ আগে তনির একটা ম্যাসাজ দেখে সালমার মুখে হাসি ফিরে এল। “ I am joking year, the lad is very handsome, age around 25-26, ignite your passion”. সালমা আরও কয়েক বার ব্যর্থ চেষ্টা করল কিন্তু তনিমাকে ফোনে ধরতে পারল না। তনিমাকে মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়ে, অস্ফুটে বলে উঠল, “ I love you sweetheart”. ঘড়ির দিকে তাকাল সালমা, ১০.৪০ বাজছে। কোনো কিছুর জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করলে , প্রতিটা সেকেন্ড যেন একটা দিন মনে হয়, সময় যেন কাটতেই চাইনা। ঘরের জানলাটা লাগাতে গিয়ে দেখে এপার্টমেন্টের বাইরে একজন বসে আছে। সালমা সিকিউরিটি কে ফোন করে খোঁজ নিতে বলল। মিনিট ১০ পরে রাম সিং ফোন করে জানাল, ‘ম্যাডম, এক ল্যরকা ব্যাঠা হে কুছ বোলতা নাহি হে, লাগতা হে নয়া হে কলকাতা মে’। সালমা একটু ভাবল, তারপর বলল, ‘আচ্ছা তোম একবার লড়কা কো উপর ভেজো’। তনিমাকে আবার ফোন করল কিন্তু এবারেও out of reach। সামনে থাকলে গালা-গাল দিয়ে দিয়ে মন শান্ত করত। রাম সিং ফোন করে জানাল ম্যাডম, ও তো নাহি অ্যানা চাতি হে। ‘আরে উসকো বোলো ম্যাডম কুছ পুছনা চাতি হে’ সালমা বলল। মিনিট ১০ এক পরে সালমার ডোর বেলটা বেজে উঠল। সালমার মনে উৎকণ্ঠা মেশানো আনন্দ হচ্ছে, আয়নার সামনে গিয়ে চুলটা একটু ঠিক করে নিয়ে দরজা খুলল। ২১-২২ বছরের তরুণ, মুখে দু-তিন দিন শেভ না করা দাড়ি, চুলগুলো উসকো- খুসকো , গায়ে চেক্ টিশার্ট, ব্লু-জিন্স। সালমা চোখ ফেরাতে পারছে না, এমন নয় সালমা এর আগে কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখেনি, অফিসে সিনিয়ার জুনিয়ার মিলে পাচ-ছয় জন ছুক-ছুক করে, সালমা ফিরেও তাকায় না, কিন্তু আজ যেন কিছু একটা হয়েছে, আজ ভালবাসতে ইচ্ছে করছে, আজ একটু উষ্ণতার জন্য যে কোনো মূল্য দিতে রাজী আছে! সালমা ছেলেটাকে ভিতরে আসতে বলল,কিন্তু ছেলেটার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইল। সালমা একটু অবাক হল, ছেলেটা একটু বেশি ভান করছে মনে হল, “তোমাকে তনিমা পাঠিয়েছে তো”? সালমা জিজ্ঞেস করল। ছেলেটা কোনো উত্তর না দিয়ে মুখটা নিছু করে দাঁড়িয়ে রইল। সালমা নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা করল, তনিমা কি আসল নামটা বলবে, তাছাড়া ছেলেটা হয়তো একেবারে নতুন তাই একটু লজ্জা পাচ্ছে! ছেলেটাকে হাত ধরে সোফাই বসাল সালমা। প্রথমে হার্ড ড্রিংস দেওয়া ঠিক হবে না ভেবে সালমা এক গ্লাস স্পাইট দিল তারপর ছেলেটার মাথার চুলগুলো আঙ্গুলে করে ঠিক করে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল, “ তোমার নাম কি”? যদিও সালমা জানে এই লাইনে কেউ নিজের নাম ঠিক বলে না তবুও কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও কোনো নামে তো ডাকতে হবে তো! “ সন্তু জানা, বাড়ী মেদিনীপুর” , ছেলেটা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, সালমা দুটো আঙ্গুল ছেলেটার ঠোঁটে রেখে বলে থাক্, আমি আর কিছু জানতে চাই না, তুমি কোল্ড ড্রিংসটা খাও।
যদিও সালমা ঘণ্টা দেড়েক আগেই ফ্রেশ হয়েছে তবুও সাউয়ার টা খুলে দিল। মিনিট ১৫ কৃত্তিম ঝর্নার জলে শরীর ভিজিয়ে সালমা একটা টাওয়েল শরীরে জড়িয়ে নিল, আর একটা টাওয়েল দিয়ে মাথার চুল গুলোকে বেঁধে ফেলল। মিনিট দু-এক পরে মাথার টাওয়েলটা খুলে হেয়ার ডায়ার দিয়ে চুল শুকোতে লাগল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লিপস্টিক লাগাতে গিয়ে বুবলার কথা মনে পড়ে গেল। সালমা খুব বেশি সাজগোজ না করলেও বিভিন্ন কালারের লিপস্টিক আর চোখে কাজলটা লাগাত। বুবলাই লিপস্টিক পছন্দ করত না। বুবলাই এর বাড়ী বর্ধমানে, কলকাতায় লেক মার্কেটের কাছে মামার বাড়ী। সাউথ পয়েন্টে পড়ার সময় থেকেই দু-জনের বন্ধুত্ব শুরু। প্রথম দিকে সবাই ক্ষ্যাপালেও, সালমা বা বুবলাই কেউই বিশেষ পাত্তা দিত না। কলেজ ফেস্ট হোক বা দুর্গা পূজা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দুজন কে একসাথেই দেখা যেত। তবে , ঈদে সালমা প্রতেকবার ইনভাইট করলেও বুবলাই কোনো দিন যেত না, প্রত্যেকবার কোনো না কোন বাহানা, “জানিস ‘কনি’ আমার শরীরটা ভালো নেই, আজ যাবো না অন্য কোন দিন। বা অনেকদিন বাড়ী যাইনি আজ বর্ধমানে যাচ্ছি কিংবা আজতো তোদের বাড়ীতে অনেকে আসবেন আমি ঠিক comfort feel করব না রে”। একবার স্কুলে ‘কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়’ স্মরণে রবীন্দ্রসংগীত এর প্রতিযোগিতা হয়েছিল। সালমা খুব সুন্দর গেয়েও দ্বিতীয় হয়েছিল, তারপর থেকে বুবলাই সালমাকে একান্তে ‘কনি’ বলেই ডাকত। একবার দুর্গা পুজার অষ্টমীর দিন, তখন সালমা যাদবপুরে বিটেক সেকেন্ড ইয়ার, বুবলাই N.R.S এ মেডিক্যাল পড়ছে, সব বন্ধু মিলে ম্যাডক্স স্কোয়ারে আড্ডা মারার প্ল্যানিং, সালমার পাত্তা নেই, বুবলাই ফ্ল্যাটে গ“কি রে এখনও রেডি হোসনি, কখন বেরবি”? বুবলাই জিজ্ঞেস করল।
“না রে যাব না, সামনেই ৪র্থ সেমিস্টার এর exam আছে, কিছু পড়া হয়নি”।“আরে একদিন না পড়লে কিছু হ্য় না, তুইতো ‘talented girl’ ‘কনি’, let’s hurry up, we are already getting late, সবাই wait করছে”‘আজ নয়, অন্য কোনো দিন’ সালমা বলল।‘আজ যদি না যাস, আমি তোকে কোন দিন ডাকতে আসব না, আমি সবাই কে বলে এসেছি, আমি তোকে নিয়ে আসছি’।
‘কেন বললি আমাকে জিজ্ঞেস না করে’?
বুবলাই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর বলে,’ আমি বুঝতে পারিনি রে ‘কনি’, sorry! আজকের মতো চল, please’!
‘আরে এতো মন খারাপ করার কি আছে? তুই ও তো কোন দিন ঈদে আসিস না, আমি তোকে কোন দিন কিছু বলেছি’?
‘প্রত্যেকবার ভাবি আসব, কিন্তু কোন না কোন...’
বুবলাইকে থামিয়ে সালমা বলল, ‘কোন অজুহাত দেখিয়ে আসিস না, এখন বুঝতে পারছিস কারো বেস্ট ফ্রেন্ড আনন্দ অনুষ্ঠানে না আসলে কেমন খারাপ লাগে’‘ছোট বেলায় একবার শুনেছিলাম...’ ‘আমরা ঈদে গরু, উট এই সব খায়, তাইতো’?
‘Sorry! Sorry! কনিকাদেবি আমার ভুল হয়ে গেছে’, সালমার হাতটা ধরে কাছে টেনে নেয় বুবলাই, কয়েক পলক তাকিয়ে থাকে সালমার চোখের দিকে, তারপর সালমার ঠোঁট দুটোকে ঠোঁটে চেপে ভালবাসার সাথে সাথে যেন সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ দূর করতে লাগল বুবলসালমা নিজেকে না ছাড়িয়েই বলার চেষ্টা করল, “ঠোঁটে লিপস্টিক লাগানো আছে, আর lunch এ ‘গোস’ খেয়েছিবুবলাই এক ঝটকায় ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়তে থাকে, সালমা হাসতে হাসতে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে।
সালমা রাতের পোশাক পড়ে সন্তুর কাছে এসে দাঁড়াল। সন্তু একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নেয়। সন্তুর হাব-ভাব দেখে তনির উপর রাগ হচ্ছে, কাকে একটা পাঠিয়েছে, কিছুই জানে না, জীবনে ফাস্ট টাইম নাকি? কিন্তু সন্তুর ইনোসেন্ট মুখটা দেখে সালমার মায়াই হচ্ছে, বেচারা! কেন যে এই profession এ এসেছে? তাড়াতাড়ি পয়সা রোজগারের এতো ইচ্ছে কেন বাবা? সবার দ্বারা সব কিছু হয় না, এটা বুঝতে হবে তো! সালমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে! বিছানায় বসে সালমা সন্তুর হাতটা ধরে জিজ্ঞেস করল, “কিছু খেয়ে এসেছ”? সন্তু মুখটা নিচু করে চুপ চাপ বসে থাকে। এখন প্রায় ১২টা বাজছে, সকালের কিছু খাবার রাখা ছিল সেগুলোই মাইক্রোওয়েভে গরম করে নিয়ে এল। সন্তু প্রথমে খেতে রাজী হচ্ছিল না, সালমা প্রায় জোর করেই খাবার টেবিলে বসিয়ে দেয়। সন্তুর পাশের চেয়ারেই সালমা বসল, খাবার পরিবেশন করতে করতেই দেখল সন্তুর গলায় একটা কাঁটা দাক্। সালমার ম্নে হল ওটা নখেরই হবে, নিশ্চয় আগের client এর কীর্তি, ‘ Bloody beach’! সন্তু একবার মুখটা উপরে তুলল। ‘তোমাকে নয়’! ‘তোমাকে নয়’! তুমি খাও! আমার অফিসের এক কলিগের কথা মনে পড়ে গেল। সন্তুর শুকনো মুখটা দেখে আগেই মায়া হয়েছিল তারপর এই কাঁটা দাকটা দেখে আর কিছু করার কথা ভাবতেই পারছে না সালমা! এতোটা নিষ্ঠুর সে হতে পারবে না, সন্তুর খাওয়া হয়ে গেলে, কাঁটা জায়গায় ডেটল দিয়ে ওয়াস করে ‘ antiseptic cream’ লাগিয়ে দেয়। সন্তুর কপালে একটা আলতো চুম্বন করে সালমা পাশের ঘরে চলে যায়। মিনিট পাঁচেক পরে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করে, “ সন্তু তুমি এই লাইন এ কেন এসেছ”? মেয়েরা “ছোট থেকেই ভেবেছিলাম... তাছাড়া তখন তো জানতাম না এই রকম problem face করব”।হা হা হা খুব জোরে হেসে ফেলল সালমা, নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলে, “sorry! এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যপার, এই টাকাটা রাখ”।
সন্তু টাকা নিতে না চাইলেও সালমা জোর করেই সন্তুর পকেটে ১০০০ টাকার নোট ঢুকিয়ে দেয় তারপর বলে, “তোমার শরীর ভাল নেই, আজ রাতটা এখানেই থেকে যাও, কাল সকাল সকাল বেড়িয়ে যেও”।
বিছানায় শুয়েও ঘুম আসছে না সালমার। সন্তুর মুখের গড়নটা অনেকটা বুবলাই এর মতো। বুবলাই এর সাথে কি করে যে রেলেশনটা হয়ে ছিল বুঝতেই পারেনি সালমা। অথচ কয়েকটা কথার জন্য সম্পর্ক টা ভেঙ্গে গেল। এর জন্য যে শুধু বুবলাই একা দায়ী সেটা বললে অন্যায় হবে, কিছুটা সালমার আত্মভিমান আর কিছুটা আমাদের ধজাধারি সমাজ। ২২শে মার্চ, বুবলাই এ“কনি চল, আজ বিকেলে বেলুর বেড়াতে যায়”“না বাবা! যাবো না যদি কিছু সমস্যা হয়”!“কোন problem হবে না, সব আমি সামলে নেব”।
“সব সামলে নেব! তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে! আমি যাব না”।“কনি চল না please”! বুবলাই insist করতে থাকে।
“ওখানে গিয়ে হবে টা কি? আমরা অন্য কোথাও তো যেতে পারি”? “সেটা পারি! কিন্তু আজ একবার গিয়ে দেখ; ওখানকার সন্ধে-আরুতি দেখলে তোর অশান্ত মন একনিমেশে শান্ত হয়ে যাবে”।
সালমা মুঠো ফোনটা ধরে ভাবতে থাকে, না গেলে বুবলাই এর মুড অফ হয়ে যাবে, কিন্তু সালমা এও জানে ও এখন বুবলাই কে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া দেখতে বললে আসবে না, ভীষণ রকম ‘orthodox’,নিজের ভাল লাগাটা অন্যের উপর দিব্বি চাপিয়ে দিতে পারে। সালমা মাঝে মাঝে ‘confused’ হয়ে যায় বুবলাই সত্যি ভালবাসে তো? নাকি ‘infatuation’? সেদিন সন্ধ্যে আরুতি সালমার ভালই লেগে ছিল কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে বুবলাই কে বলে, “what a boring song I have ever he“তোর ভাল লাগে নি”! বুবলাই যেন আকাশ থেকে পড়ল।“না”।
“I did a blunder mistake to bring you here. I am extremely sorry for that”. কথাটা বলে গঙ্গার পাড়ে চুপ- চাপ বসে পড়ল। পাশে পড়ে থাকা নুড়ি পাথর গুলো তুলে একটা একটা করে গঙ্গার জলে ফেলতে থাকল। সালমা একটু দূর থেকে দেখল ছোট নুড়ি পাথর গুলো জলে পড়ে কেমন ছোট ছোট জল তরঙ্গ তৈরি করছে তারপর বড় একটা ঢেউ এসে মিলিয়ে দিচ্ছে। আমাদের জীবনেও ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো চাপা পড়ে যায় কোন বড় স্বপ্ন পু“রাগ করছিস কেন ? আমার ভীষণ ভাল লেগেছে”। সালমা বলল।
“আমার মন রাখার জন্য এই কথা গুলো না বললেও চলবে, ok madam”!
“I swear, I was spellbound…”
সালমা ভগবানের নামে মিথ্যে দিব্বি করে না এটা বুবলাই জানে, বুবলাই একটু খুশি হয়ে বলে, “জানিস কনি আমি এই সেমিস্টারে প্রথম হয়েছি”“Wow! Congratulation. তুই কি নিয়ে specialization করবি কিছু ভেবেছিস”?“গাইনি কিংবা হার্ট”। বুবলাই ঝটপট উত্তর দেয়।
“হুম! অন্য কিছু ও ভাবতে পারিস”?
“এখন এই দুটোতেই বেশি পয়সা বুঝলি? তাছাড়া দেখছিস না চারি দিকে কেমন হার্টের অসুখ বেড়ে গেছে“তুই ‘psychiatrist’ নে। চারি দিকে তো মনের অসুখ ও বেড়ে গেছে”।“ধুস! আমার মনটন পোষায় না, আমি শরীর বুঝি, রক্ত মাংসের শরীর”। কথাটা বলে বুবলাই সালমাকে টানার চেষ্টা করল।
“রাক্ষস! এখন ছাড়! লঞ্চ চলে এসেছে”।সালমা লঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বুবলাই একটু দূর থেকেই জিজ্ঞেস করল, “কীসের ডাক্তার হলে তুই বেশি খুশি হবি”?
“তুই দাঁতের ডাক্তার হলে সব চেয়ে বেশি খুশি হতাম”। কথাটা বলে সালমা লঞ্চে উঠে পড়ললঞ্চের একটা সাইডে রেলিং ধরে সালমা দাড়িয়ে আছে, বুবলাই পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বসন্তকাল, খুব সুন্দর একটা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে, সালমার লম্বা চুল দুএকটা উড়ে আসছে বুবলাই এর মুখে। মিনিট পাঁচেক কোন কথা নেই, কখনও কখনও যেন নিস্তব্ধতা ও কথা বলে। বুবলাই সালমার কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বলল, “বাবা রাজী হয়ে গেছেন, ফাইনাল সেমিস্টার হয়ে গেলেই বিয়ে করে ফেলব”। সালমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না, বুবলাই এর হাত টা ধরে নিজের ওষ্টে স্পর্শ করে রাখল। মিনিট দুয়েক লাগল নিজেকে সামলাতে তারপর বলল, “কাকু এক কথায় র“প্রথমে রাজী ছিলেন না, মা কে পাঠিয়ে ছিলাম”।“কাকিমা রাজী ছিলেন” সালমা জিজ্ঞেস করল।
“বাপরে! পুলিশের মতো জেরা করছিস তো? মা সবটাই জানতেন, একটু দোনা মোনায় ছিলেন, ছেলের মুখ চেয়ে শেষ পর্যন্ত হ্যাঁ বলেছেন, বুঝতেই তো পারছিস আমরা কোন সমাজে বাস করি, এটা তো UK, বা USA নয়, আত্মীয় সজনরা পাঁচ রকম কথা বলবেসালমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ‘হুম’।“বাবা বলছিলেন বিয়ের পর তোর বাপের বাড়ী যাওয়া চলবে না, তারা ইচ্ছে করলে তোকে দেখা করে যেতে পারে”।
সালমা একঝটকায় বুবলাই এর হাত টা ছেড়ে দেয়, ২০-৩০ মিটার দূরে বাজ পড়লে মানুষ যেমন কিছু খনের জন্য কিছু শুনতে পায় না, সালমার অবস্থা সেই রকম, বুবলাই বোঝানোর চেষ্টা করছিল একবার বিয়ে হয়ে গেলে তখন কোন problem হবে না, দরকার পড়লে আমরা দেশের বাইরে চলে যাবো, কোন কথাই কানে যাচ্ছে না, সালমা শুধু ভাবছে একজন ‘progressive’ লোক কিভাবে এই কথা বলতে পারে! অনেক ক্ষণ পর সালমা জিজ্ঞেস করে, “আমার আব্বা তোকে এই কথা বললে তুই মেনেবুবলাই কোন উত্তর দেয় না। “তোকে সারা জীবন রোজগার করতে হবে না, বল রাজী আছিস?” সালমা বেশ জোরে জোরে কথা গুলো বলে। এরপর সালমা একটা রেলিং ধরে দাড়িয়ে থাকে আকাশের দিকে চেয়ে, চোখ থেকে জল ফর্সা গাল বেয়ে চিবুকের কাছে এসে নিচে পরে যাচ্ছে। ভগবানের কাছে জানতে ইচ্ছে করছে সালমার সমাজ টা কবে পাল্টাবে ,কত বছর লাগবে ৫০, ১০বাড়ী থেকে ফারুখের সাথে বিয়ে ঠিক করে , সালমা এক কথায় রাজী হয়ে যায়। কিন্তু সেটাও তো টিকল না, নিজের আত্মসম্মানের জন্য অনেক দাম দিতে হয়েছে সালমভোরের দিকে কখন ঘুম এসেছে সালমার খেয়াল নেই। বেলা ১০ টার সময় তনিমার ফোন এলে সালমার ঘুম ভাঙে। চোখ বন্ধ করেই সালমা ফোন টা রিসিভ করে।“সরি রে কাল আমার ফোনের ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেছিল তাই তোকে জানাতে পারিনি, তোর কাছে গতকাল যেতে পারিনি ছেলেটা , অন্য client এর কাছে ফেসে গিয়ে ছিল, next Sunday যাবে তোর কাছে”সালমা ফোন টা কেটে দিয়ে তাড়াতাড়ি পাশের রুমে যায়, ঘরে কেউ নেই, এক অদ্ভুত শূন্যতা সারা ঘড়ে। বিছানায় একটা চিরকুট
“ আমি যাদবপুরে বিটেক ফাস্ট ইয়ার, গতকাল কয়েক জন সিনিয়ার দাদা ‘intro’ করার অছিলায় আমাদের মারধর শুরু করে, আমি কোন রকমে পালিয়ে এসেছিলাম, ধন্যবাদ গতকাল আশ্রয় দেওয়ার জন্য। ১০০০ টাকার নোট টা
ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি”।
- সন্তু