In The Dark Of Illusion - 1 in Bengali Horror Stories by Utopian Mirror books and stories PDF | অবচেতনার অন্ধকারে - 1

Featured Books
Categories
Share

অবচেতনার অন্ধকারে - 1

- এসো, কাছে এসো|

লুসি চোখ তুলে তাকালো | টানা টানা দুটি চোখে অনন্ত জিজ্ঞাসা | সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো | অদূরে দাঁড়িয়ে আছে এক রমনি মূর্তি, কালো বোরখা ঢাকা দেহ তার, মাথায় একরাশ সোনালী চুলের বন্যা | লুসি যেন আচ্ছন্নের মতো হেঁটে চলেছে |

ঘরের মাঝখানে কাঠের দীপাধারে জ্বলছে একটি মাত্র প্রদীপ | চারপাশে ছড়ানো আছে মৃত মানুষের অস্থি মজ্জা হাড়। পচা দুর্গন্ধ ভরে রেখেছে বাতাসকে।

বাতাস বলতে খর তাপ ভরা রুক্ষতার হাওয়া। এই মরুভূমির দেশে এক বিন্দু বৃষ্টি নেই। এখানে শুধুই উন্মত্ত প্রখর সূর্যের হাহাকার।

লুসি ছায়া মূর্তির ঠিক সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। তারপর চোখ বন্ধ করলো। ছায়ামূর্তি এগিয়ে এসে তার হাত দুটো ধরে জোরে জোরে ঝাকাতে লাগলো। মুখে উচ্চারণ করছে অব্যাক্ত শব্দাবলি।

কোথাও কে যেনো বিকট স্বরে হেসে ওঠে। লুসির মনে হলো বন্ধ ঘরের মধ্যে বন্দি হাড়ের মিছিলে খোটাখোট শব্দ হচ্ছে। হো হো করে হাসছে রাশি রাশি কঙ্কালের দল। তারা যেন কি বেদনার কথা শোনাবে লুসিকে।

কপালে ঘ্যাম দেখা দিয়েছে তার, মনে হয় কেউ বুঝি সবল দুটি হাত দিয়ে তার গলা টিপে ধরেছে। ক্রমশঃ নিঃশাস বন্ধ হয়ে আসছে তার সে আর বাঁচবে না।

যদিও বাঁচতে চায়না লুসি টার্নার। ডাক্তার হেনরি টার্নারের মেয়ে লুসি। ছার বছর বয়েসে তার মা আনিলিয়া আগুনে পুড়ে মারা যায়। লুসির এখনো মনে পড়ে, সেটা ছিল খ্রীষ্টমাস ইভের রাত।

তাঁদের সাজানো বাগান বাড়িটাতে জ্বলছিল অনেকগুলো প্রদীপ। বিরাট সান্তা ক্লসটা তাকিয়ে ছিল তারা ভরা আকাশের দিকে। কারোল গান গাইবার জন্যে পিয়ানোর সামনে বসেছিল লুসি।

ডিসেম্বরের হিমেল হাওয়া তার হাড় কাঁপিয়ে হু হু করে বয়ে যাচ্ছিলো। হটাৎ চেনা কণ্ঠসর আর্তনাদ করে ওঠে। লুসি ছুটে গেলো। তারপর যে দৃশ্যটা চোখের সামনে দেখেছিলো সেটা ভাবতে গেলে আজও তার মন ভয়ে শিউরে ওঠে।

সে দেখেছিলো একটা বীভৎস পোড়া বিকৃত দেহ। তখনো মরে নি, অসহ্য যন্ত্রণাতে ছটপট করছে। লুসি জানে যে ওটা হলো তার মায়ের দেহ। কিচেনে স্টোভ জ্বালতে গিয়ে পুড়ে মারা গেছে তার মা আনিলিয়া ।

বাবাকে ডাকতে গিয়ে খুঁজে পেলোনা লুসি। কোথায় গেলো তার বাবা? এই তো, একটু আগে, বাবার সঙ্গে কথা বলেছিলো লুসি। চার বছরের বাচ্ছা মেয়ে লুসি সেই অভিশাপ্ত রাতটি একা কাটায় তার মৃতা মাকে আগলে রেখে।

তার চোখ মুখ চেনা যায়না। অথচ লুসি জানে যে তার মাকে রূপসী বলা যেতে পারে। কিন্তু কেন পুড়ে মারা গেলো তার মা?

লুসি গত দশ বছরে নিজের কাছে এই প্রশ্ন তুলেছে বারবার। কোনো জবাব পায়নি। কখনো তার মনে হয়েছে যে পৃথিবীর ওপর অবুঝ অভিমানে তার মা আত্মহত্যা করছে। কেননা মার বিবাহিত জীবন সুখের ছিলোনা। আনিলিয়া ছিল সৌখিন স্বভাবের মেয়ে।

আর হেনরি? বদমেজাজি রহস্যময় মানুষ। পার্থিব পৃথিবীর ঘটনাবলী তাকে আকৃষ্ট করতো না। সে আত্ম নিমজ্জিত থাকতো জগতের তন্দ্রাচ্ছন্নতার মধ্যে। আত্মার স্বরূপ নির্ধারণে মগ্ন থাকতো খামখেয়ালি যুবক হেনরি।

তাই অসামান্য সুন্দরী আনিলিয়ার নিঃসঙ্গ দিনগুলো কাটতো একা। লুসি ছিল মায়ের বেদনার্ত মুহূর্তের নীরব সঙ্গী। সে চেয়ে চেয়ে দেখতো যুবতী আনিলিয়ার দিনযাপন। নিশীথ রাত্রে হেনরি ব্যাস্ত থাকতো মড়ার খুলির মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার কাজে।

আর আনিলিয়া সারারাত জানালার গরাদে মাথা রেখে তাকিয়ে থাকতো চাঁদের দিকে, মধ্য রাত্রে উইলো পাতার খসখসানির মধ্যে উড়তো নিশিজাগা পাখি; লুসি অবাক চোখে দেখতো তার মায়ের দুটি আঁখিতে টলটল করছে অশ্রু।

ঠিক তখন পাশের ঘর থেকে ভৌতিক আর্তনাদে ভেসে আসতো ল্যাটিন ভাসাতে মন্ত্র উচ্চারণ ; হেনরি টার্নারের বিকৃত কণ্ঠস্বরকে চাপা দিয়ে বেজে উঠতো আর একটি মোহিনী নারী কন্ঠের নিনাদ -


When shall we three meet again
In thunder, lighting on in rain?


লুসি জানে যে ওই কণ্ঠস্বর তার আন্টি ক্লারার। বাবা হেনরির সঙ্গে সেও প্রেত তৃষাতে মেতে উঠেছে।

ক্লারা, যৌবনের সঙ্গে রোমান্সের সমাবেশে যেন এক কুহকিনি মায়া কন্যা। তার টানা টানা চোখের সবুজ মনিতে শুধুই হাত ইশারা করে মৃতার্ত কবরের শীতল স্নিগ্ধতা, তার কুটিল চিবুকে হত্যার নিপুন কারুকাজ, তার রক্তাত্ত ওষ্ঠাধরে বিকৃত আত্মার বিষ চুম্বন।

তেইশ বছরের যুবতী ক্লারা হয়েছে হেনরির প্রেত সাধনার সহকারিণী। রাতের পর রাত তারা নির্জন প্রকোষ্ট এ মগ্ন থাকে অলৌকিক অন্নেশনে।

সেদিন সারারাত ঝুরু ঝুরু তুষারের মধ্যে নিও অরিলোনসের সেই বাংলো বাড়িতে বীভৎস দগ্ধ মায়ের লাশ পাহারা দিতে দিতে চার বছরের মেয়ে লুসি ভেবেছিলো অনেক কথা।

তারপর ভোর হলো, ফিরে এলো বাবা, এলো ক্লারা। আনিলিয়ার মৃতদেহ দেখে লোভে চকচক করে উঠেছে বাবার দুটো চোখ। ক্লারার ঠোঁটে ফুটেছে কুটিল হাসি।

ছোট্ট লুসির মনে হয়েছিলো তার মাকে ওরা ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে। হ্যাঁ, বাবা হেনরি খুনি, ক্লারার দু হাতে মৃত মায়ের রক্ত যেন দেখতে পেলো লুসি।

তারপর? একটি একটি করে কেটে গেছে তার অভিশপ্ত জীবনের দশটি বছর। প্রতিটি দিন বহন করেছে বেচে থাকার দুঃখ। কেননা বাবা হেনরি তাকে করে তুলেছে প্ল্যানচেটের মিডিয়াম।

প্রথম প্রথম ভীষণ ভয় করতো লুসির, যখন তার হাতে ধরা পেন্সিলতা নড়ে উঠতো। যে সব মানুষগুলো অনেক বছর আগে মরে গেছে, যারা মরেছে কোনো দুর্ঘটনায় তারা কথা বলে উঠতো তার আঙুলে।