The Well Of Death in Bengali Horror Stories by Saikat Mukherjee books and stories PDF | The Well Of Death

Featured Books
Categories
Share

The Well Of Death

বেশ গাছমছমে অন্ধকার আগেই শংকরকে বলেছিলাম এ জায়গাটা মোটেই ভালো নয়। দূরে ঝাউবনের অন্ধকার থেকে যেন একটা চাপা নিশ্বাসের গর্জন ভেসে আসছে। আরও দূরের ডক থেকে জাহাজের সাইরেনের আওয়াজও যেন অদ্ভুতুরে লাগছে। কেমন থমথমে চারপাশটা। কেন জানিনা বেশ ভয় ভয় লাগছে আমার। মনে হচ্ছে যেন এই অন্ধকার সমুদ্রের ঢেউ চিরে এক্ষুনি বেরিয়ে আসবে কোন বিকট মন্সটার।

কাল রাতের ঘটনার পরেও শংকরের কোন ভয়ডর নেই। দেবনাথ আর শংকরের জেদেই তিনজনে বসে পড়লাম পাশাপাশি। শঙ্করের মোবাইলের ছোট স্ক্রিনে আমরা কিছু mp4গান শুনছিলাম। একেবারে ঝুঁকে পড়ে এতটাই বিভোর হয়ে গেছি যে আশপাশে কি ঘটছে কোনকিছুতেই হুঁশ নেই আর । শুধু সমুদ্রের গর্জন কানে আসছে । আরব সাগর থেকে ধেয়ে আসছে হুহু হাওয়া ।

হঠাৎ কেমন একটা বিশ্রী গন্ধ নাকে এল। তিনজনেই পাচ্ছিলাম গন্ধটা । এতটাই মশগুল হয়ে পড়েছি ভিডিও দেখাতে যে বিষয়টা এড়িয়ে গেলাম। এড়িয়ে গেলাম আরও একটা কারনে, সামনেই জেলেদের অনেকগুলো নৌকা আছে মাছ-টাছ মরে পচে গেছে তারই গন্ধ হতে পারে।
একটু পরে একটা খসখস আওয়াজ হতেই মনে হল সেখানে মোবাইলের উপর তিনটি মাথা ঝুঁকে নেই। আরও একজনের উপস্থিতি টের পেলাম । চমকে উঠে পিছু ফিরতেই দেখি একটা কালো কুচকুচে। অপার্থিব অবয়ব ,চোখ গুলো অসম্ভব লাল। ধোঁয়ার মতো মিলিয়ে গেল অন্ধকার ঝাউ গাছ গুলোর দিকে ।তিনজনেই ভয়ে আঁতকে উঠলাম ।

এরপর কি হল কিছু জানি না । জ্ঞ্যান ফিরতেই বুঝতে পারলাম , একজন হোম গার্ড চোখে মুখে জল দিয়ে জ্ঞ্যান ফেরানোর চেষ্টা করছিল । হোমগার্ড জিজ্ঞেস করল , "ভূত দেখা হ্যাই কেয়া ? সামকে বাদ ইঁহাপর কাভিভি মত আনা। " আসলে আমরা বিচের যেখানে বেশি ভীড় সেখান থেকে অনেকটাই দূরে ঝাউবনের সামনে একটু নিরিবিলি খুঁজে বসেছিলাম। সত্যিই ভুল করেছিলাম অচেনা অজানা জায়গায় এসব জানবার কথাও নয় । ভয় পেয়ে শঙ্কর বেশি জোরেই চেঁচিয়ে উঠেছিল। মোবাইলে টাইম দেখে বুঝতে পারলাম তখন প্রায় ন-টা বেজে গেছে ।তড়িঘড়ি বাসায় ফিরতে হবে ।ভেবেই, উঠে রওনা দিলাম বাসস্ট্যণ্ডের দিকে। বালির উপর দিয়ে হন হন করে হেঁটে যাচ্ছি । সিবিচ ততক্ষণে প্রায় খালি হয়ে গেছে । দু-একজন এখানে ওখানে তখনও বসে ছিল । আমরা তাদের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি । সেই কালো মুর্তির ভয়টা তখনো পিছু ছাড়েনি ।

মেন রাস্তায় উঠে এলাম বাস স্ট্যান্ড এখনও কিছুটা দূরে ।উত্তর কর্নাটকের জেলা শহর কারবার। মেন রোড থেকে শহর একটু ভিতরের দিকে । আরও খানিকক্ষণ হাঁটলে তবে বাসস্ট্যাণ্ড । আজ আর বাস পাব কি না জানি না । মেন রাস্তা ধরে হন্তদন্ত হয়ে হাঁটছি । মনে হয় আমাদের পিছন পিছন কেউ আসছে । মাঝে মাঝে পেছনে ফিরে তাকাচ্ছি। না কেউ নেই ফাঁকা রাস্তা অনেক দূর পর্যন্ত ।এমনিতেই লোকালিটি খুব কম ন- টা বাজলেই বাস কিংবা দোকান দানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় ।

দেখলাম একটা অটো আসছে , বাস আর পাবনা ভেবেই তিনজনে অটোতে উঠে বসলাম । কারবার শহর থেকে একটা ব্রিজ পেরিয়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে সদাশিবগঢ় পৌঁছে গেলাম । সদাশিবগঢ় একটা গঞ্জের মত ছোট জায়গা হলেও ।অনেক দোকান দানি আছে একপ্রকার সমৃদ্ধ অঞ্চল বলা চলে । এখানে আমরা এসেছিলাম একটা কাজের জন্যে সিদ্ধার্থ গাঁওকর আর শ্রীনিবাস রাইকরের সাথে ।

আমাদের আপাতত থাকার আস্থানা হল এই শ্রীনিবাসজির বাড়িতেই । ঘরটা বেশ সুন্দর বাংলোবাড়ি টাইপের । দোতলা বারান্দা বাড়ি, টালির চাল এবং বাড়ির চারপাশেই বাগান । তবে বেশ পূরানো বাড়ি দেখেই মনে হয় । নিচের তলায় কেবলমাত্র শ্রীনিবাসজি স্ত্রী এবং এক ছেলে মেয়ে নিয়ে থাকেন। আমাদের থাকার বন্দোবস্ত দোতলাতেই হল ।

প্রথম দিন রাতে শংকরের কিছুতেই ঘুম আসছিল না। দেবনাথ শঙ্করের মোবাইলে ভিডিও চালিয়েছিল । আমাদের সাদাকালো মোবাইল ভিডিও চলেনা । আমরা তিনজনেই দেখছিলাম ।

কত রাত হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছিল আমার ।শঙ্কর ঘুমিয়ে পড়েছে , দেবনাথের হাত থেকে মোবাইল খসে পড়েছে । আমি ঘুমের ঘোরে মোবাইলটা বন্ধ করে পাশ ফিরে শুলাম । আমার আবার নতুন জায়গায় এলে সহজে ঘুম ধরতে চায় না। তার উপর বেশ পুরানো বাড়ি ভেবেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে ।কিছুক্ষণ পর মনে হল টালির চালে যেন কেউ হেঁটে যাচ্ছে । ভাবলাম বেড়াল হবে হয়তো। ঘুমের বারোটা বেজে গেছে ।

কেমন একটা অস্বস্থিতে আর ঘুম আসছিল না । টালির চালে আওয়াজটা যেন আরও বেশি স্পষ্ট হতে লাগল । নাহ! বেড়াল হতে পারে না নিশ্চিত,তবে কি হনুমান বা বাঁদর হবে ।এমন হাজার প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছে । তারপর আওয়াজটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। নিশ্চিন্ত মনে আবারও পাশ ফিরে শুলাম । কিছুক্ষণ পর বাইরে বারান্দায় যেন কেউ পা ঘসে ঘসে পায়চারি করছে। ভয়ে এবার পিলে চমকানোর মত ব্যাপার ।

বেশ কিছুক্ষণ পর আওয়াজটা বন্ধ হয়ে গেল । তারই মধ্যে কখন ঘুম ধরে গেছে বুঝতে পারিনি । বাসযার্নির ক্লান্তি ছিলই। কিছুক্ষণ পর শঙ্কর ঘুমের ঘোরে চেঁচিয়ে উঠল। আমাদের দুজনেরও ঘুম ভেঙ্গে গেল । দেবনাথ তার পাশেই শুয়ে ছিল । মাথায় হাত দিয়ে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতে,করতে জলের বোতলটা ধরিয়ে দিল । ঘড়িতে তখন প্রায় চারটে বাজে এখনও রাতের অন্ধকার বাকি আছে । ভোর হতে এখনও কয়েক ঘণ্টা বাকি ।

ভারতের একেবারে পশ্চিম এলাকায় আছি আমরা । এখানে সকাল প্রায় এক ঘণ্টা পরে হয় সেই হিসাবে সূর্যও একঘণ্টা পরে অস্ত যায় । শঙ্কর বুকে হাত দিয়ে বলল , "একটা কালো ছায়া-মূর্তি আমার বুকে চেপে বসেছিল আর নখ দিয়ে ..." বুকে হাত দিয়ে দেখাল । মোবাইলের আলো জ্বেলে যা দেখলাম । রীতিমত কলিজা হিম হয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। তার বুকে যেন কেউ নখ দিয়ে চিরে দিয়েছে, ঠিক বেড়ালে চিরলে যেমন হয় ।

তিনটি সমান্তরাল রক্তাত লাইন । ঘরে খিল দেওয়া আছে জানলা বন্ধ বেড়াল ঢুকবার কোন সম্ভাবনাই নেই । দেবনাথ উঠে আলো জ্বেলে দিল। আর ঘুম ধরেনি তারপর। এইসব কথা শ্রীনিবাসজিকে বলা হয়নি। কারন বললে কি ভাববে! কে জানে ! হয়তো অস্বীকার করবে । বলবে তোদের থাকার ইচ্ছে নেই। তাই এইসব বাহানা । তখন আমাদের কাজের দরকার ছিল খুব, ইনকামেরও। তাই কিছু বলতে পারিনি ।

কাজের সেটআপ করতে আরও দু-একদিন টাইম লাগবে । তাই আমরা আজকেও ফ্রি সেই জন্যেই দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর ঘুরতে এসেছিলাম কারবার বিচে। আসলে এই বিচটার নাম রবীন্দ্রনাথ টেগোর বিচ । কোন এক সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে এসেছিলেন। আর এই সৈকত দেখে মুগ্ধ হয়ে কবিতা লিখে ফেলেছিলেন। আমিও জানতাম না।একটা বড় কালো পাথরের ফলকে লেখা দেখে বুঝতে পারলাম ।

আর দেবনাথ, শঙ্করকে বললাম সে কথা । তখন বাঙালি হিসেবে সত্যিই গর্ব বোধ করলাম । সেই কবে এক মহান বাঙালির পদস্পর্শে ধন্য হয়েছিল এই সৈকত। আজ আমরাও তিনজন হেঁটে যাচ্ছি সেই বেলাভূমি জুড়ে । তারপর সমুদ্রের বড় বড় ঢেউয়ের সামনে বসে তিনজনে মশগুল হয়ে পড়েছি ।

যা ঘটল ঘটনাটা এখন ভাবলেই বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠে । আমরা অটোর ভিতরে বসে আছি তিনজনে কারও মুখে কোন কথা নেই একটা আকস্মিক ভয় যেন ছেয়ে আছে আমাদের মধ্যে। একবার ঝাউ বনের দিকে মুখ ফিরিয়ে দেখলাম । সেখানে ঘুট ঘুটে অন্ধকারের মধ্যে দুটো চোখ যেন এখনও আমাদের পিছু নেওয়ার জন্যে ছুটে আসছে । ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলাম ।

একটা দীর্ঘ ব্রিজ পেরিয়ে দুটো অল্প উঁচু পাহাড়ের মাঝ দিয়ে প্রায় মিনিট পনেরোর পর আমরা পৌঁছলাম সদাশিব গঢ় । অটোওয়ালা মেন রোডে নামিয়ে চলে গেল । রাত অনেক হয়েছে কিন্তু, খাব কি ! অবশ্য যেই থেকে এসেছি হোটেলেই খাচ্ছি । বাসায় যাবার আগেই মেন রোডের সামনে যে ধাবাটা আছে । সেখানে ঢুকে মাছ ভাত খেয়ে নিলাম । হ্যাঁ এখানে বাঙালিদের মতো মাছ ভাতটাই প্রায় সবার প্রিয় । তাই পেয়েও গেলাম । যদিও বাঙালিদের মতো রান্না না হলেও খেতে অসুবিধা হল না।

খাওয়াদাওয়া হয়ে গেলে আমরা হাঁটা দিলাম । তখন রাত প্রায় দশটা । তখনও অনেকগুলো দোকানদানি খোলা আছে ।একটা ছোট চার্চ পেরিয়ে এলাম । দেবনাথ বলল," চার্চের সামনে ভূত কিছু করতে পারে না।" "এইসব ফালতু কথা," বলে শঙ্কর থামিয়ে দিল । বাজারটা পেরিয়ে সরু রাস্তা ধরলাম । রাস্তাটা প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন। অন্ধকারকে কে না ভয় পায় ! বেশ গা ছম ছম করছে।

কাছে দূরে ঘর-বাড়ি গুলো থেকে টিমটিমে আলো জ্বলতে দেখা যাচ্ছে । হঠাৎ করেই কেন জানিনা মনে হল কেউ যেন আমদের সাথে সাথে হাঁঠছে তার পায়ের ঘসর ঘসর আওয়াজ কানে আসতেই ভয়ে সারা শরীর কেঁপে উঠল । সম্ভবত ওরাও টের পেয়েছে সে ব্যাপারে । দেবনাথ বলল , "চুপ।'' প্রায় চলেই এসেছি বাসায় । একটু সাহস এলো প্রানে তখনো শ্রীনিবাসজিরা জেগেছিল ।

আমাদের খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করাতে বললাম," খেয়ে এসেছি।"
সেদিন রাতে তিনজনেই স্থির করলাম কালই চলে যাব । দরকার নেই কাজের । একটু ভালো ইনকাম করতে চেয়ে শেষে ...। এই ভাবে ভয়ে ভয়ে থাকার কোন মানে নেই। ভয়ে ভয়ে তিন জনেই আছি ভাবলাম আলো জ্বালিয়ে ঘুমাবো আজ কিন্তু শঙ্করের আবার আলো জ্বললে ঘুম আসে না ।

দেবনাথ শঙ্করের উপর একটু বিরক্ত হয়ে বলল, "আজ তাহলে জেগেই কাটাবো দেখি কোথায় ভুত!" তারপর ঘুমিয়েই পড়েছিলাম । শঙ্কর আবারও মাঝ রাতে চেঁচিয়ে উঠল । যথারীতি আমাদেরও ঘুম ভেঙ্গে গেল ।আলো জ্বালতেই একটা কালো ছায়া যেন বন্ধ দরজা ভেদ করে পালিয়ে গেল । সেই একই ব্যাপার শঙ্করের বুকে আবারও তিনটি আঁচড়ানো দাগ । খুব হাঁপাচ্ছে শঙ্কর ।দেবনাথ জল দিল । প্রায় কেঁদে ফেলার মতো করে শঙ্কর বলল, " কখন একবার সকালটা হবে ! কি ভূলটা যে করেছি এখানে এসে ।" তারপর বাকি রাতটুকু জেগেই কাটালাম ।
সকালে তার মোবাইলটা প্রথমে খুঁজেই পাওয়া যায়নি । তারপর দেখা গেল বারান্দার এক কোনে পড়ে আছে । বেশ রহস্য জনক ব্যাপার । দেবনাথ বলল, তুই ভূল করে এখানে রেখেছিস হয়ত । যাইহোক, সকালে শ্রীনিবাসজির সাথে কথা হল, আমরা চলে যাব । আর থাকতে চাই না । সব উদ্ভূতুড়ে ঘটনা পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বলে চলল শঙ্কর, তার বুক খুলে দেখাল সেই চেরা দাগ । সব বুঝে শ্রীনিবাসজি বলল," ঠিক আছে তোমরা যা ভালো বুঝ তাই কর। "বেলা দশটা নাগাদ একটা বাস আছে হুবলি যাওয়ার, তারপর আবার পাঁচটা নাগাদ ।

হুবলিতে আমাদের আত্মিয় পরিজন চেনা জানা লোকজন আছে। এতো তাড়াতাড়ি বেরনো সম্ভব নয় । তাই বিকেল পাঁচটার সময় বেরবো ঠিক করলাম । হাতে এখনও অগাধ টাইম তাই আশপাশটা একটু ঘুরে দেখব ভাবলাম । ঘরেতো বিলকুল থাকতে ইচ্ছে করছে না । বেরিয়ে পড়লাম তবে খুব বেশিদূর যেতে সাহস হল না । এমনিতেই এই দুদিনে যা ঘটছে । ভাবলে এখনও গায়ে কাঁটা দেয় । তাই মার্কেটের আশপাশে ঘুরতে থাকলাম কিছুটা সময় কাটানোর মতো । এলাকাটা বালি মাটি আর ঘন ঘন কাজু বাগানে ভর্তি।

দেখতে দেখতে অনেকটাই বেলা হয়ে এল । আবার সেই মেন রোডের ধারে সেই ধাবায় ভাত খেয়ে নিলাম । তখন প্রায় দুপুর একটা দেড়টা হবে বাসায় ফিরে কাউকে দেখতে পেলাম না । সম্ভবত শ্রীনিবাসজিরা কোথাও গেছে সবাই মিলে । আমরা আর উপরে উঠলাম না । বাড়ির সামনেই ঘোরাঘুরি করতে থাকলাম। কি মন গেল । শঙ্কর বলল ,"চল পেছনের দিকটা একটু ঘুরে আসি।" দেবনাথ বাধা দিয়ে বলল," কি আছে পেছনে ? কিছু নেই । শুধু ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে গিয়ে কি করবি?" তবুও হাতে এখনও ঘণ্টা দুই-আড়াই আছে । এসে দেখলাম পেছনে কয়েকটা আম গাছ। আর কয়েকটা কাজু গাছ । শুকনো ঘাসে ভরে আছে ।

মনে হচ্ছে বহুদিন কোন যত্ন নেই বাগানটার । একটা কুঁয়োও আছে দেখলাম তবে বহুদিন সেটিও ব্যবহার হয়নি । জল নিশ্চয় খারাপ হয়ে যাবে ।এই নির্জন দুপুরে গা ছমছমে পরিবেশ। তবুও কৌতুহলী মন, সাহস করে কুয়োর দিকে এগিয়ে গেলাম। উঁকি দিয়ে দেখলাম কয়েকটা মাগুর মাছ । আর কয়েকটা ছোট সাইজের কচ্ছপ চড়ছে । বুঝলাম কুয়োর জল পরিষ্কার রাখার জন্যে কিছু জিওল মাছ ছেড়ে রাখা হয়েছে । যাতে অতিগ্রীষ্ণের সময় জলের অভাব হলে এই কুয়োর জল ব্যবহার করতে পারে ।আমরা প্রায় ঝুঁকেই দেখছিলাম । দেবনাথ বলল, "কচ্ছপের ঘাড়ে ছোট ছোট লোম গজিয়েছে ।" আমি বললাম ,"আরে লোম নয় শ্যাওলা জমেছে । মানে বহুদিন জলে বাস করার ফল ।" এমন সময় শঙ্করের মোবাইলে রিং টোন বেজে উঠল ।আর ঠিক তখনই যেন আমাদের পেছন থেকে কালো মতো একটা ছায়া সরে গেল । ওমনি শঙ্করের হাত থেকে মোবাইলটা কুয়োর অতল জলে ছিটকে তলিয়ে গেল । তিনজনেই একটা বিদ্যুত্যের শক লাগার মতো চমকে উঠেছিলাম । এমনিতেই দুদিনের ভয়টা আবার জেগে উঠল , যেটা দিনের আলোর সাথে কেটে গিয়েছিল । দিনের আলোতেও যে ভৌতিক কাণ্ড ঘটতে পারে তা আমাদের ধারানার বাইরে । পরিষ্কার দেখতে পেয়েছি কালো মতো একটা ছায়া অবিকল মানুষের মতো হলেও সেটা যে অপার্থিব কিছু বুঝতে দেরি হল না । দেবনাথ বোধহয় একটু বেশিই ভয় পেয়েছে । সাবধান করতে, করতে পালিয়ে এল সেখান থেকে।

শঙ্কর মোবাইলের মায়ায় হাহুতাশ করছে । একবার উঁকি মারছে আর একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে । আমি বললাম, "পালিয়ে চল, এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবেনা । " তারপর এগিয়ে গিয়ে কুয়োর জলের দিকে একবার তাকালাম । দেখি একটা মানুষের শব ভেসে উঠেছে। দেখে মনে হচ্ছিল পচে গেছে কিন্তু তার মুখটা ছিল অসম্ভব কালো আর হঠাৎ করেই চোখ মেলে তাকাল আমাদের দিকে । সে চোখ মানুষের মতো নয় একেবারে রক্তাভ লাল।

ভয়ে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত বিদ্যুৎ খেলে গেল । সারা শরীর অসাড় হয়ে গেছে । বেশ কিছুক্ষণ চোখের পাতা ফেলতে পারছিলাম না । নড়বার মতো কোন ক্ষমতায় ছিল না আমার । পা যেন মাটির ভিতর গেড়ে গেছে । কিছুক্ষণ পর দেবনাথ এসে আমাদেরকে সেখান থেকে টেনে নিয়ে এল। আমরা আর শ্রীনিবাসজির অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়লাম । মেন রোডের ধারে দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্যে । দেখি , শ্রীনিবাসজি একটা পূরানো আম্বাসাডার নিয়ে এসে দাঁড়াল । আমাদেরকে উঠতে বলল। কারবার মেন বাসস্ট্যাণ্ডে ছেড়ে দেবে বলে। তিন জনেই উঠে বসলাম । আজ দুপুরের ঘটনাটা বলতেই , শ্রীনিবাসজি বলল, এই কিছুদিন হল ঘরটা সে কিনেছে। তার আসল বাড়ি গোয়ার মাডগাঁও এ। ভেবেছিল এমন শান্তি পূর্ণ এলাকায় এসে ছোট খাট একটা ব্যাবসা করে সেটেল্ড হয়ে যাবে তা আর হল না । এখানে এসে বেশ ভালোই ছিল কিন্তু এই কয়েকদিন তার স্ত্রীও এমন কিছু প্যারানরম্যাল এক্টিভিটি অনুভব করছে । ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে এই ভাবে থাকা সম্ভব নয় । কখন কি হয় কে বলতে পারে। পাশাপাশি লোকের মুখে সে শুনেছে, আগে এই বাড়িতে যে থাকত তার এক ছেলে নতুন মোবাইল কিনে দেওয়ার বায়না ধরে । কিন্তু পড়াশুনোর ক্ষতি হবে বলে ভদ্রলোক মোবাইল কিনে না দেওয়াতে , বাড়ির পেছনে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে । হতে পারে তারই আত্মা এইভাবে ঘোরাফেরা করে। তাই , শ্রীনিবাসজিও স্থির করেছে গোয়ায় ফিরে যাবে । আমাদের নিশ্বাস তখন ঘন হয়ে পড়ছে ।
উঁচু পাহাড়ের উপর দিয়ে আমাদের বাস খাদের কিনারা ধরে ছুটে চলেছে । আমি জানলা দিয়ে সবুজ জঙ্গল আর ধোঁয়াশা ময় নীলাভ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে আছি। দেবনাথের মুখে নিশ্চিন্ত ভাব ফুটে উঠেছে। আর শঙ্করের চোখে মুখে তখনও মোবাইল হারানোর শোক ।

"সমাপ্ত"