The Genie - 3 in Bengali Horror Stories by Saikat Mukherjee books and stories PDF | আত্মা - 3

Featured Books
Categories
Share

আত্মা - 3

নেহারা বেগমের বুঝতে আর বাকি নেই যে সাপটা তুরেছাকে জড়িয়ে ধরেছিল সেটা তাকে এখনও ছেড়ে যায় নি। কাল রাতের কালো বিড়ালটা এই সাপের আরেকটা রূপ। সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে তুরেছার কাছে আসছে। খুব সম্ভব কাল যে ফকির এসেছিল সেটাও এই সাপের আরেকটা রূপ। অথবা সাপটাই কোনো খারাপ জ্বীনের সাময়িক রূপ। সে
কালো আত্মা । নেহারা বেগম ভাবলেন, না আর দেরী করা যাবে না। আজই তুরাব ওঝাকে খবর দেওয়া লাগবে। তুরেছার শরীর সহ এই বাড়িকে থামানো লাগবে।

তারেক একটানা ঘুম দিলো বারোটা অবধি, ঘুম ভেঙে গেল নেহারা বেগমের ডাকে। এখন তুরাব ওঝাকে আনতে যেতে হবে, এই ওঝার জ্বীন - ভূত তাড়ানোর জন্য এলাকায় বেশ সুনাম আছে।

দু'টা নাগাদ তুরাব ওঝাকে নিয়ে তারেক ফিরেছে,
ওঝার মাথায় লম্বা ঝাকড়া চুল। সাথে ঢোল - ঢপকি আর
কয়েকজন লোক আছে। সারা বাড়ি ঘুরেঘুরে
যন্ত্রমন্ত্র পড়ে থেমেছে। সব শেষে
উঠানে গোল হয়ে লোকজন বসেছে৷
গ্রামের অতি উৎসাহী উৎসব প্রিয় মানুষের উপচে পড়া ভীড় জমেছে। তারেকের নতুন বউও বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে দেখছে। সবার মাঝখানে বসানো হয়েছে তুরেছাকে৷ ওঝা নেচে - গেয়ে হেলেদুলে মন্ত্র পড়ে একটা গামছা দিয়ে তুরেছাকে ঝাড়ফুঁক করছে। আচমকা
ওঝা চিৎকার দিয়ে নিজের পেটে খামচে ধরল, আর তখনি ওঝা..............
মুহুর্তেই সবাই দেখতে পেল একটা কালো
কুচকুচে সাপ ওঝার শার্টের ভেতর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, আর তখনি ওঝা সাথে সাথে মাটিতে পড়ে গেল। লোকজন ভয়ে নিরাপদ দুরত্বে গিয়ে দাড়িয়েছে। কালো কুচকুচে সাপটা সবার সামনে দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ সাপটা মাথা তুলে দাড়ালো৷
গভীর মনযোগে কি যেন দেখছে, খানিক্ষণ পর সবাই আবিষ্কার করল সাপটা গ্রিলে হাত ধরে দাড়িয়ে থাকা তারেকের বউয়ের দিকে তাকিয়ে
আছে, ততক্ষনে বউ সেখান থেকে সরে
গেল। তারেকের বউ শীলার সারাক্ষণ গা ছমছম করছে! চোখের সামনে ভাসছে একটা কালো কুচকুচে সাপ মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ভাবতেই
কেমন যেন গা কাটা দিয়ে উঠে। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা, আজ কেন যেন তারেকের সন্ধা থেকে খুব ঘুম পাচ্ছে।

ঘুমের সাথে আর যুদ্ধ করে পারা যাচ্ছে না, সে খানিক পরেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। শীলা দারুণ অবাক হয়, আজকে তার এমনিতেই ভয় করছে তারমাঝে আবার তারেক ঘুমিয়ে গেল৷ অন্যদিন
তারেকের দুষ্টামির জ্বালায় সারারাত ঘুমোতে পারেনা।

বাহ্ আর আমি সৈকত কবে যে বিয়ে করবো, আর বউ এর সাথে দুষ্টমি করবো কে জানে ???

অনেক্ষণ তারেককে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকার পর খানিক ঘুম লেগেছে শীলার। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল ঠোঁটে - মুখে কারো চুমুর স্পর্শ পেয়ে, শীলা বুঝতে পারে তারেকের ঘুম
ভেঙেছে, লক্ষ করলো তারেক ধিরে ধিরে
তার জামা কাপড় খুলছে। খানিক পরে মিলিত অবস্থায় শীলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেল। শীলাও দুই হাতে তারেককে জড়িয়ে ধরে আবার তীব্র উত্তেজনায় তারেকের চুল খামচে
ধরে ৷ হঠাৎ দুজনের চোখাচোখি হল, শীলার উপরে যে দু'টা চোখ সেগুলো খুব অপরিচিত। অন্ধকারে কেমন যেন ঝলমল করছে। রুমের বাতি জ্বেলে ঘুমিয়েছিল, কিন্তু এখন রুম অন্ধকার। হঠাৎ শীলার হাতে লাগল পাশের আরেকজনের পিঠে! সে বিস্মিত হয়ে গেল, পাশে কে ঘুমোচ্ছে???

আর তার সাথে মিলিত পুরুষটা কে ? ভয়ে শীলা চিৎকার দিলো। তারেক সাথে সাথে হকচকিয়ে ঘুম থেকে উঠে বাতি জ্বেলে দেয়, বাতির আলোতে তারেক যা দেখল সেটার জন্য সে বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলো না। তার রূপবতী স্ত্রী কিছুই পরে নেই, আর একটা সাপ তার কোমর
থেকে বুক অবধি প্যাচিয়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি পাশের রুম থেকে একটা লাঠি নিয়ে এলো, এসেই দেখে সাপটা চোখের সামনে কালো বিড়াল হয়ে গেছে।

গতরাতের ওয়াব উদ্দিনের কথা মনে
পড়ে যায়। সে লাঠি হাত থেকে রেখে নিরাপদ দূরত্বে সরে দাড়ালো। সাথে সাথে সাপটা হঠাৎ করে রুম থেকে উধাও হয়ে গেল। বাতি জ্বেলে দিলে নিজের শরীরে সাপ দেখে শীলা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। তারেক ভয়ে ভয়ে কাপা গলায় ডাকছে,
শীলা, এই শীলা।

আমি জিন্নে মুমিন ইমাম সাহেব।
কথাটা শুনে ইমাম সাহেব বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলেন । তিনি সিলেটের এক জামে মসজিদে প্রায় বিশ বছর যাবত একসাথে ইমাম - মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব
পালন করে এসছেন। উনার বেতন কেবল তিন হাজার টাকা, প্রথম যখন এই
মসজিদে এলেন তখন ছিলো কেবল পনেরো শত টাকা। কদিন যাবত ইমাম সাহেব খুবই অসুস্থ, শুধু শারীরিক না
মানুসিক অসুস্থও আছেন। উনার তিনটে মেয়ে আর দু'টা ছেলে আছে, সবার বড় মেয়েটার নাম আয়েশা। মেয়েটার বয়স হয়েছিল অনেক, বিয়ে দেওয়া অতি জরুরী। সাহায্য নিয়ে শেষমেশ মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছেন। খুচরা ঋণও অনেক
হয়েছে। বিয়ের পরে জামাই এর দুলাভাই, বোন, বড় ভাই, ভাবী, মা - বাবা সবাই বেড়াতে এলেন। এগুলো গ্রামের অনেক আদি প্রথার মধ্যে একটা, সবাইকে
উত্তম খাবারের পাশাপাশি কাপড় - চোপড় দিতে হয়। ইমাম সাহেব ঋণ করে সেটা আদায় করলেন। এর কিছুদিন পরে এলো আম - কাঠালের সিজন, গ্রামের
আদি প্রথা অনুযায়ী আম - কাটাল সহ বিভিন্ন ফলফলাদি মেয়ের বাড়িতে পাঠাতে হবে, প্রথমবার খুব বেশি
করে পাঠানো লাগবে যাতে করে মেয়ের
শশুড়বাড়ির পাড়া - প্রতিবেশীকে খাওয়ানো যায়, ইমাম সাহেব ঋণ করে তাই করলেন। ঋণ মেটানোর আশা হচ্ছে পশ্চিমের জমিটা, সেখানে ভালো ধান
হয়। বিক্রি করে দেবার কথা ভাবছেন।
এভাবে একের পর এক প্রথা অনুযায়ী ইমাম সাহেব দিয়ে যাচ্ছেন, ধান তোলার পরে পিঠা দেওয়া। মেয়ে জামাই এলে কাপড় দেওয়া। রমজান মাসে
ইফতার দেওয়া । আম - কাঠাল যখন মেয়ের বাড়ি পাঠালেন তখন মেয়ের শাশুড়ি পরিমাণ দেখে ভারী বিরক্ত হলেন, ফলফলাদি কম হয়ে গেছে বলে
মেয়েকে শাশুড়ির কমবেশি কথাও শুনতে হল। রমজান মাস আসার সাথে সাথেই বড্ড পেরেশানি করছে বারংবার ফোন দিয়ে, মেয়ের কল দেখলেই ইমাম সাহেবের চোখ ভিজে যায়।

মেয়ে কল দিয়ে বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, 'বাবা আমার যেন মুখ থাকে, রমজানের ইফতারী বড়
করে দিও, বুঝেনই তো প্রথম ইফতার আত্মীয় - স্বজন সবাইকে নিয়ে খেতে হয়৷ এর পরের বার থেকে না হয় কম দিলে। এবার যেন আমার মুখ
থাকে, এমনিতেই আছি বড় ঝামেলায়, তোমাদের সবকিছু শোনাতে চাই না। প্রথম থেকে শাশুড়ির কোনো কিছুই পছন্দ হচ্ছে না, প্রথম সরাসরি কিছু
বলতো না, এখন বলে। বড় লজ্জা লাগে বাবা৷' ইমাম সাহেব শুধু 'আচ্ছা মা, আচ্ছা মা ' করে যান..। তিনি নিজেও জানেন এসব দিতে হয়, এটা আদি প্রথা।
না দিলে মেয়েকে বিভিন্নভাবে জ্বালা সহ্য
করতে হয়, অপমানিত হতে হয় । কিন্তু আজ পনেরো রমজান, ইমাম সাহেবের বাচ্চা - কাচ্চাদের ভালো কোনো ইফতারি বা সেহরীর সময় ভালো কোনো খাবার দিতে পারছেন না। এদিকে মেয়ের বাড়ি বড় করে ইফতারি দিতে হলে
যে অনেক টাকার কারবার সেটাও যোগাড় হচ্ছে না। তাছাড়া রোজা শেষে ঈদ, প্রথম ঈদে মেয়ের শাশুড়ি, চাচী শাশুড়ি, ফুফু শাশুড়ি, ভাবি, দেবর, ভাশুর সবাইকে নতুন কাপড় দিতে হবে।
ইমাম সাহেব ভাবছেন জমিটা বিক্রি করবেন, কিন্তু ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে বিক্রি করে সবকিছু
ঠিকঠাক মতোই করেছেন। কিন্তু ঈদের দু'মাস পড়ে মেয়ের কোলে ফুটফুটে একটা নাতি এসেছে ইমাম সাহেবের। নিয়ম অনুযায়ী সেই সন্তানের আকিকা হবে, আকিকাতে খাসি দিতে হয়
নানার পক্ষ থেকে, আবার কাপড় - চোপড়ও দিতে হবে সবাইকে। এসব এলাকার এগুলো আদি নিয়ম। যারা
পালন করেনা তারা সমাজের নিম্নস্তরের, অসামাজিক,একঘেয়ে, বিভিন্ন শব্দে তাদেরকে সমাজ ভূষিত
করে। মাঝেমধ্যে এসব শব্দ সহ্য করতে না পেরে নববধূ মারাও যায়। ( সিলেট, চট্রগ্রামের
ক্ষেত্রে নববধূর মৃত্যু প্রযোজ্য )

কিন্তু এই মুহুর্তে ইমাম সাহেবের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে তিনি অসুস্থ হয়ে গেছেন। অসুস্থ অবস্থায় সারা রাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে শুধু আল্লাহর কাছে এটাই
দোয়া করলেন, 'মান ইজ্জত নিয়ে যেন মরার আগ পর্যন্ত থাকেন। মেয়েটার যেন মুখটা রাখতে পারেন। ।

এখন প্রশ্ন হলো,

১) কে এই ইমাম?
২) ঐ সাপের সাথে কি সম্পর্ক?
৩) তুরেছা আর শিলার কাছে ঐ সাপ নিয়মিত আসবে কেন?

চলবে.......