Boul Batas - 5 in Bengali Poems by Joy Bandyopadhyay books and stories PDF | বউল বাতাস - 5

Featured Books
Categories
Share

বউল বাতাস - 5

পান পাতার গান

তোমার ঘরে ক্যান্ডেল লাইট ডিনার
আমার ঘরে শ্মশানের চিতা দাউ দাউ
কাদা পায়ে হাটু জলে এক আঁজলা গঙ্গাজল
ছাই ঘেঁটে খুঁজে বেড়াই অচেনা নাভি
টুকরো টুকরো পুরোনো স্মৃতি হাতড়াই
প্রতিশ্রুতির আংটি বা জুড়ি হারানো কানের দুল
চাপ চাপ অন্ধকার বটপাতার কোলে
বাঁধ ভাঙা হাসি আর খোলা চুলে লুটিয়ে পরে রাত
বৈশাখী ঝড়ে শান্তি আনে শ্রাবনের এক ঝলক বৃষ্টি
ঝাপসা আকাশে কাতর ডাকে -
সাথীকে খুঁজে ফেরে রাতচরা কোনো পাখি
অধরা থেকে যায় স্বপ্ন অনেক
তবু একদিন, সব কিছুর অবসান নিশ্চিত।
কাঠচাঁপার ডালে মানুষের শরীরের পচা গন্ধ
চিৎকার করে খিস্তি দিতে ইচ্ছে করে মৃত্যুকে
আরও একটু বাঁচার জন্য কত আয়োজন
গোপনে রাত্রিতে গলে গলে পরে চাঁদ
নিকষ অন্ধকার থেকে ভেসে আসে ধর্ষণের গোঙানি
দেশী মদের নেশায় আমার চোখে এখন
ফুরফুরে রঙিন ফানুস
কি জানি কিসের আনন্দে
রক্তে আজ মাদলের তাল
বুকের পাঁজর ছুঁয়ে নিদারুন মৌতাত
চিতার আগুনে সেঁকি আমার রাতের খাবার
এলোকেশী মেয়ের ভরা বুকে ভেসে যায় আমার উল্লাস
শানিত যৌবনে রক্ত জমাট বাঁধে আরও একবার
রাত্রি তিন প্রহরে বাতাসে মিশে যায়
কুন্ডলি পাকানো কালো ধোঁয়া
শেষ যাত্রার তুলসী শুকিয়ে যায় চোখে
মনের একতারাতে শুধু বাজে
পান পাতার গান ।


কেয়া পাতার নৌকো

চায়ের প্রথম চুমকের সাথে স্বপ্নের শুরু
বিমুগ্ধতার চেয়ে বিশ্বাসটা ছিল বড় বেশী
আম পাতার গানে ভেসে যাওয়া দুপুর
ধুলোতে ছিল বৃষ্টির চেনা গন্ধ
বলাকারা পাখা মেলেছিল খোলা আকাশে
দৃষ্টি বিনিময়ের পালা তখনও ছিল বাকি
কলাপাতার আড়ে আড়চোখে চাউনি
চাউনি ছুঁয়ে ছিল নিষ্কম্প হৃৎপিণ্ড
পোড়া মাটির স্ট্যাচুতে সঙ্কল্পিত প্রাণ
সে প্রাণ নিমজ্জিত একাকী নির্জনে
ছক কাটা দাবার ঘরে রাজা রানীর প্রেম
পেয়াদা উজির লড়ে মরে নিতান্ত সাদামাটা
উট আর পাল্কিতে চলেছে কার বউ
ঘোড়ার আড়াই চালে সব বাজিমাত
ভগবানের ছদ্মবেশে যক্ষের বাসর
ধর্মের দোহাই দিয়ে আত্মা চুরি রোজ
অপরিপক্ব মৌতাতে অপরিমিত মৌ
একটু একটু করে পান করা নিষ্কলুষ সম্মান
জীবন মানে অনেক কিছু জীবন মানে বাঁচা
বাঁচার জন্য নিজে হাতে অযাচিত দাসত্ব
মিথ্যে ছলে চোখের জলে জাল পাতার দায়
দায়ভার মানিয়ে নিয়ে ভগ্ন অহংকার
অলীক পাখির গানের সুরে সম্মোহিত মন
এ কোন মাদারীর খেলা চলছে অবিরাম
তলিয়ে যাওয়া বাঁচার তাগিদটা আবার চাগিয়ে ওঠা
একমুঠো স্বচ্ছ হাওয়া যেন মুক্তির স্লোগান
ঘষা কাঁচে চোখ রেখে ফিরে দেখার তবু আপ্রাণ চেষ্টা
প্রবিষ্টিত কল্পনায় সবকিছু বিভ্রান্তি
একটুকরো পাতার সাথে ভেসে ওঠার সবেগ অভিপ্রায়
এবার বোধহয় গুটিয়ে নিয়েছি নিজেকে
বিবর্ণ ছবিতে তুলির আঁচড়-
অপেক্ষায় থাকা সাদাকালো রঙগুলো রঙীন হবার
তোমার বারান্দায় খোলা চুলে মিষ্টি রোদ
আমার বুকে শুধু ভাদ্রের হা হুতাশ
না থাকার চরম বেদনার চেয়ে বরং না পাওয়াই থাক
ভাটিয়ালী গান বিলীন হোক ভাটার টানে
নাই বা ফিরল ঘাটে মাঝি সাঁজের বাতি দিতে
ছেঁড়া পালে লেগে বসন্তের হাওয়া
গোধুলীর মায়াবী আঁধারে হারিয়ে যাক
একটু একটু করে-
তোমার আমার বড় সাধের
কেয়া পাতার নৌকো।

ভাবনা জুড়ে সূর্যকিরণ

ভাবনা জুড়ে সূর্যকিরণ আলোকমালার সারি
জীবনজুড়ে ঝর্ণাধারা স্বপ্নময়ী নারী
দৃষ্টি আমার বৃষ্টিমুখী মৃত্যুমুখে বিজয় হাসি
আঁধার রাতে চিতার হানা তবুও তোমায় ভালোবাসি
বিজন হাওয়া কানের পাশে বাজায় বাঁশি মিষ্টি সুরে
হারিয়ে যাওয়া গভীর ঘুমে তোমার বুকে একলা নীড়ে
জীবন পথে চলার মাঝে নেইকো বাধা প্রিয়ার সাথে
অপূর্ণ এই ছবির পানে দাঁড়িয়ে থাকা তুলি হাতে
নতুন করে আবার খোঁজা অনুভূতির সূক্ষতাকে
নতুন করে আবার খোঁজা ভালোবাসার মুহূর্তকে।

দু-কদম অনুভূতি


মনের ভেতর থেকে অন্য এক মনের অনুভূতি
অন্য এক আস্বাদন, অনাবিল অন্তমুখী এক মুখ;
নিবিড় আঁধারে নিতে চায়, স্পর্শকাতর কান্না
কান্নাভেজা অন্তরাল, অন্তরালে রক্তস্রোতে শঙ্খধ্বনি।
তোমার বুকে হাত রাখি একবার? খুলে রাখি রাজবস্ত্র আজ!
জীবনটার শুরু কোথায়? মানসপটে নিঃস্বরিত তরল
কিছু তো তরল, আঁকিবুকি কেটে চলে অনন্তকাল
ধমনীথেকে শিরা, শুধু বয়ে চলা প্লাবনের টানে
এ এক অন্যরকম আস্বাদন, অনাবিল অন্তমুখী এক সুখ!!



সৃষ্টির অসীম বাসনা
মাতৃজঠরে প্রাণের ধুকপুক আশ্বাস
হিংস্র শার্দুলের নির্মম পাহারা
তবুও মনের কিনারে পূর্ণ বিশ্বাস
অস্তিত্বের লড়াই বড়ো কঠোর
মমতা বারবার ঠোকর খায় পারিপার্শ্বিকতায়
ভাষাহীন চোখ খুঁজে বেড়ায় সেই হাত
পিতৃস্নেহে সিঞ্চিত একমুঠো গরম ভাত!!