বিন্দু থেকে প্রলম্বিত বৃত্তাকার পরিক্রমণ
এক বুক জলে দাঁড়িয়ে আমার পিতৃতর্পন
ছোটো ছোটো বৃত্তাকার ঘটনাবহুল সংযোজন
জীবনস্রোতে চক্রাকারে বৃত্তের ব্যাপ্তিসাধন।
টুকরো টুকরো ইমন ভেঙে ছড়িয়ে যায়
এদিক ওদিক সবুজ ধানের আলে
সেতারের ঝংকার কল্পিত হয় তবু
অদৃশ্য জলস্তরের প্রতিবিম্ব ছুঁয়ে।
ডানাভাঙা পাখি পড়ে আছে বটের কোটরে
মাথার কাছে ছেঁড়া পালক,পায়ে ছিন্ন শিকল
ঘূর্ণিঝড় থেমে গেছে অসীম নিস্তব্ধতা বুকের পাঁজরে
অনাকাঙ্খিত রাহুগ্রাসে ধমনীতে জমাট তরল।
সুশীতল পাথরে শুয়ে শবদেহের উষ্ণ আলিঙ্গন
সুউচ্চ প্রাচীর উঠে গেছে অজানা ভবিষ্যতের খোঁজে
সুনীল বাতায়ন জুড়ে বিশ্বাসঘাতক বর্তমান,
সুনিবিড় স্বপ্নগুলো গলিত মাংসের গন্ধে ভরা।
সন্তুষ্টির মৃত্যুতে প্রশান্তি আনে দুচোখে ঢাকা তুলসীপাতা
ভঙ্গুর প্রতিশ্রুতিগুলো জমাট বাঁধে কালো শুকনো ঠোঁটে
অবিনশ্বর নাভিতে ঘন হয়ে আছে হৃৎপিণ্ডের শেষ রক্তফোঁটা
আচম্বিত মৃত্যুশোকে সমস্ত রূপকথার অবসান।
দৃষ্টিপথ জুড়ে ছিলো অস্তমিত সূর্য্য লাল
নদীর বাঁকে তখনও হারিয়ে যায়নি সেই
একান্ত গোপনে রেখে আসা নিশ্চিন্ত কবর
অস্তমিত সূর্য্য মুছে দিয়েছিলো কবরে লেখা নাম।
জুঁইফুলের মিষ্টি গন্ধে ভরেছিলো ঘর
একজোড়া টিকটিকি দেয়ালে নিবিড় সঙ্গমে মগ্ন
কঠিন অন্ধকার জুড়ে ছিলো আরামের অনুভূতি
ভোরের আলোয় পড়ে আছে শুধু একমুঠো ছাই।
দুঃস্বপ্ন ঘিরে লাল রঙ গাঢ় থেকে আরও গাঢ়
একরোখা তালগাছের মাথায় নিঃসঙ্গ আগুন পাখি
বেগুনী নিস্তব্ধতা চিরে হঠাৎ সাঙ্গিন বাজ
শঙ্খচিলের ডানাতে উন্মুক্ত আশার হাওয়া।
জীবন চলে তার ছান্দিক পথে
খানিকটা গতে বাঁধা, খানিক গতিহারা
মনখারাপের মেঘলা আকাশের নীচে
শুকনো পাতার মর্মর শব্দে বিলীয়মান আশা।
কলম হাতে এসব লেখা ব্যাকরণগত অর্থ খোঁজে
ভাঙা নদীর ঘাটে ছলাৎছল শব্দে
কলসী বন্দী কল্পনাগুলো রচনাশৈলী হতে চায়
মূর্ত হতে চায় কালো ক্যানভাসে নগ্ন প্রতিকৃতির মতো।
নদীর ঢালু পাড় ভেঙে ঢেউয়ের কলকল
ভোরের লাল রোদ যেখানে থমকে ছিল
থমকে ছিল আমার বিশ্বাস-
গুল্ম আর আগাছারা ফিসফিস করে,
যেন কতদিনের জমানো জল্পনা
পায়ের কাছে ফাঁকা কলসী ভাসে জলে
চারিদিক কোলাহল রোহিত
ঘোমটা ঢাকা মেয়ের কোনো হাত ছিল না
কাঁকে বসিয়ে কল্পনা ভরে নেবার-
অথচ আমি ঘূর্ণির আবর্তনে ভেসে গেলাম।
মনে রাখার মতো কথা কিছুই ছিল না
তোমার প্রেমের বাঁধন আমার বোঝা হয়ে গেছে
মাত্রাহীন নাকি মাত্রাতিরিক্ত-
ও মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকাই শ্রেয়
নদীর অসমান ঢেউয়ে চিকচিক করে
আমাদের সামাজিক অবৈধ প্রেম।
তোমার শাসন সব আমার ওপর
দুই পাড়ে শুধু ভাঙা গড়ার খেলা-
তার মধ্যেও বয়ে চলে সংসার,
আর শরীর ছুঁয়ে নিষ্কাম যৌনতা-
একটুকরো খড়কুটো
মুঠোতে চেপে ধরার আগেই
বানের জলে ভেসে যায় অবরুদ্ধ সময়।
বেওয়ারিশ লাশের মতো পড়ে আছি
চিতার আগুনের আশায়।
কুন্ডলি পাকানো আগুনে ছাই হয়ে উড়ে যায়
আমার শরীরের পঞ্চ ধাতু-
বিষাক্ত কালনাগিনীর কামড়ের দাগ তবু
থেকে যায় নাভিতে-
বিধাতার পরিকল্পনাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে
মুছে যায় আমার সমস্ত ঘাত-প্রতিঘাত।
তোমার জন্য বাঁধা বেসুরো গলার গানে
বৃষ্টির জলে হাত পেতে শব্দের ছেলেখেলা-
নরম ঘাসের গায়ে হাত বুলিয়ে
খুঁটে খুঁটে তোলা ছন্দ,
এসব শুনে চোখে ঘনিয়ে আসে মেঘ,
একমুহূর্তের জন্য থমকে যায় অনুভূতি,
এতদিনের হিমায়িত সব প্রশ্নগুলো
এবার ঝরে পড়ুক আগুনের বৃষ্টি হয়ে।
বুকের মধ্যে হু হু করে বসন্তের বাতাস
কাছে ডেকে বলি আয় আমার সব্বনাশ করে যা
আগ্নেয়গিরির লাভাতে ফসিল করে দে
অশ্রুত স্বপ্নমঞ্জরী - এবার জুড়ুক বিষের জ্বালা।
লোকে বলে প্রেম মানে অনুভূতিতে অবগাহন
আমি বলি প্রেমাপ্লুত অনুভূতি অবসাদের আচ্ছাদন
ঝড়ের মুখে যেভাবে পাখি ঝাপটায় নিরুপায় ডানা
বাতাসে নিষ্পেষিত হয় যার সব অবসন্নতা।
আমার দু-হাতে রেখে তোমার সব আবেগ
সবুজ কুঁড়িরা যখন লুকায় স্মৃতির কোটরে
অভিমান যত গলে গলে পড়ে মোমের মতো
ভালোবাসা সব ছাই হয়ে বাতাসে উড়ছে মনে হয়।
নিশুতি রাতের নীরবতা মসৃণ মখমল
চোখ তুলে দেখেছিলাম আকাশের লাল চাঁদ
শব বাহকের কাঁধে আমার শুকনো খোলস
শহরের পিচ্ছিল রাস্তায় পড়ে আছে নগ্ন শরীরখানা।
আমি কি মৃত্যুর চেয়েও শীতল স্পর্শ দিতে পারিনি?
আমি কি কায়ার সাথে ছায়াকে ধরে রাখিনি এতকাল?
ধমনীতে কি ছুটে যায় নি রক্তের স্রোত? তবে কেন
তুমি দিয়ে গেলে আমার সর্বাঙ্গ জুড়ে তরল আগুন!!
ত্রয়োদশীর চাঁদ যেন মিথ্যে রাংতায় মোড়া
আমার বিথীকায় গেছে তোমার পথ গানের সুরে,
কাঁটা ঝোপের আড়ে গোলাপের বাসি গন্ধ-
রজনীগন্ধার মালা ঝুলছে শুকিয়ে তোমার গলার দুপাশে।
বয়সের ভারে নতজানু শরীর লাঠিতে সাবলম্বী,
ঝরনার ধারাতে বয়ে যায় স্মৃতির অবলোকন-
হাতের মুঠোয় ধরা বাজপাখির শানিত নখ,
অচেনা ক্ষত কালসিটে পড়ে কালো হতে থাকে।
দিকচক্রবালে উপুড় হয়ে কাঁদে পূর্ণিমা-
নির্বাচিত কিছু ছায়াছবি জমাট বাঁধে বৃষ্টির জলে,
হৃদয়ে তরল অন্ধকার ঢেলে নষ্ট করেছি নিজের ঘর-
আজ কোনো শব্দ নেই, বেঁচে আছে শুধু মান অভিমান।
আমি সুরাপাত্র হয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলাম নিজেকে
যার কানায় কানায় ভরা ছিল শুধু বিষ-
নাড়ী কেটে রক্তের পারদ হলকা দিয়ে উঠুক,
তুমি চুমুক দিও না আমার শুকনো ঠোঁটে।
কেন বারবার কষ্ট পাও আমার পাগলামিতে?
কেন মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করো আমার হৃদয় ছুঁয়ে?
আমার মাথার ভেতর হাজার শেয়ালের হাহাকার-
বুভুক্ষু বুকের ভাঁজে তবু গড়িয়ে যায় তরল আগুন!