"কিন্তু তাও অতোটাও উগ্র বলে মনে হলোনা মহিলাকে। এখন ওই রাতুলের মা কে, কোথায় বাড়ি সেসব একটু জানাটাও জরুরি আমার,যদি কিছু ক্লু পাই।"
"জসীমউদ্দীনের বাড়ি যাবে তো আজ?"
"হ্যা এখনি চলুন। হতেও পারে দুটো মৃত্যুই খুন আর দুটোর মাঝে কোনো লিংক আছে!
--------------------------------------------------------
"বাড়িতে কেউ আছেন,থানা থেকে আসছি!"
জসীমউদ্দীনের বাড়ির সামনে জিপ থেকে নেমে হাঁক পাড়লেন প্রিয়তোষবাবু । "দরজা খোলাই আছে ভেতরে গিয়ে দেখি চলুন।"
"হ্যা সত্য,তাই চলো।"
দরজা খুললেন এক ভদ্রবেশী লোক।
"কে আপনারা?... ওউ দারোগাবাবু আপনি।"
"হ্যা আর সঙ্গে ও সত্য বিশ্বাস,টুকটাক গোয়েন্দাগিরি করে। কিন্তু আপনি?"
"আচ্ছা মেজ'দার মৃত্যুর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ কত্তে এসচেন।আমি ছোট ভাই, শাকিব শাহ। আসেন ভেতরে।
"আপনাকেই প্রথমে তাহলে জিজ্ঞাসা করি কিছু। এই মৃত্যুর ব্যাপারে আপনার কী মত এটা কি খুন? কাউকে সন্দেহ করেন?"--- তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে সত্য প্রশ্নগুলো ছুঁড়ে দিলো । "আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। বাড়ির অন্যরা আছে ওদের জিজ্ঞাসা করেন ওরা চাইলে উত্তর করুক। এসবে কিন্তু আমায় জড়াবেন না দারোগাবাবু। আমায় যেতে দিন আমার তাড়া রইচে।"--- এই বলে প্রায় ঝড়ের বেগে জসীমউদ্দীনের ছোটভাই বাড়ির গেট খুলে বেরিয়ে গেলো।
"অদ্ভুত আচরণ!",মনে মনে বললো সত্য। ওরা দু'জন ভিতরের দিকে এগিয়ে গেল। বারান্দা পার হয়ে সামনে পড়লো বৈঠকখানা,ডানদিকে সিঁড়ি। সিঁড়ির দিকে এগোতেই চোখে পড়লো সিঁড়ির মুখের ঘরের দরজা খোলা,ভিতরে যিনি বসে পান সাজছেন উনিই মৃতের স্ত্রী।।
"শুনছেন,বলছি একবার বাইরে আসবেন,দরকার আছে!"--- গলা তুলে ডাকলেন দারোগাবাবু
"হ্যা যাই, বসুন ও ঘরে।"--- সাড়া দিলেন জাহানারা বিবি।
সত্যরা বৈঠকখানার সোফায় গিয়ে বসলো ।
মিনিট পনেরো পরে জসীমউদ্দীনের স্ত্রী এলেন কিছু মিষ্টি আর চা নিয়ে। মুখ চোখে দুঃখের লেশমাত্র নেই, রিল্যাক্সড মুডে রয়েছেন মহিলা। সত্য কাজ শুরু করে দিল,"আচ্ছা আপনার হাসব্যান্ড-এর এই মৃত্যু নিয়ে আপনার কী অভিমত?"
"এটা তো হওয়ারই ছিল।"
"মানে?"
"কিছুনা। অতি লোভে তাঁতী নষ্ট হয়,হয়েছে। প্লিজ, এসব নিয়ে আমায় বিব্রত করবেন না।
"না না একটু ক্লিয়ার করে বলুন এখুনি বললেন এটা হবার ছিল। কেন বললেন?"
"দেখুন মিষ্টি দিলুম,খান,অন্য কথা থাকলে বলুন নাহলে আসুন।
"ভায়া, এই মহিলার থেকে কিছু লাভ হবে বলে মনে হচ্ছেনা। চলো উঠি। মৃতের বড়ো ভাইকে খুঁচিয়ে কিছু মেলে কি না দেখি চলো", ফিসফিস করে বললেন দারোগা সত্যর কানে কানে।
"আপনার ছেলেকে দেখছিনা? কীসে পড়ে ও?"
"কলেজে সেকেন্ড ইয়ার চলছে। ও টিউশন পড়তে গেছে। ওকেও দরকার আপনাদের?"-- ঝাঁঝালো গলায় উত্তর এলো।
"আচ্ছা আমরা আসি তাহলে। বলছি আপনার হাসব্যান্ড-এর বড়ো ভাই কোথায়? একটু ডেকে দিন না৷
"বাড়িতে নেই এখন। বাইরে একটু বেরোলো। ওঁকে কী দরকার?"
"ওকে থ্যাংকস। এলাম।”
বাড়ি থেকে বেরিয়ে জিপে উঠে জিপ স্টার্ট করতেই একজন ভদ্রলোককে বাড়িতে ঢুকতে দেখে জিপ থামিয়ে সত্য তড়িঘড়ি নেমে বাড়ির দিকে ছুটে গেলো।
"বলি শুনছেন?"
"হ্যা কে কে?"--- গেট খুলে ঢুকতে গিয়ে থমকে পিছন ফিরে সাড়া দিলেন ভদ্রলোক।
"আমি সত্য বিশ্বাস, দারোগা বাবুর সাথে এসেছি। গোয়েন্দাগিরি করি টুকটাক। জসীমউদ্দীন শাহ মৃত্যু নিয়ে তদন্তের ব্যাপারে এসেছিলাম আপনি ওনার বড়ভাই তো?কিছু হেল্প করবেন?এই বাড়ির কেউ কিছুই হেল্প করেননি আমাদের এখনো অব্দি।"
"হ্যাঁ হ্যাঁ,করব তবে এখানে নয়। থানায় নিয়ে যাবেন আমায়? বাড়ির কেচ্চা বাড়ির লোকের সামনে আর না বলাই ভালো।"
" নো প্রব্লেম। চলে আসুন জিপে। "
সারা রাস্তায় জিপে কোনো কথা হলো না। সত্য চোখ বুজে কপালে ভাঁজ ফেলে হিসেব মেলানোর চেষ্টায় মগ্ন ছিল।
**********************
মাঝরাতে ছাদে দাঁড়িয়ে আছেন ধনঞ্জয় মিত্র,ঘুম আসছে না সকালের নিউজপেপারটা পড়ার পর থেকে। বারবার ভাবছেন,"এমনটা সত্যিই ঘটেছে?" কোনোদিন এরকম হবে ভাবেননি উনি। আনন্দও হচ্ছে এই ভেবে---যে কাজটা,যে প্রতিশোধটা উনি মন থেকে চাইলেও নিতে পারেননি, বিবেকবোধ তাঁকে আটকে দিয়েছে,সেই প্রতিশোধটা আজ তাঁর হয়ে কেউ যেন নিয়ে নিল। "কিন্তু কে নিল?"
ধনঞ্জয় মিত্রের এককালে অনেক রমরমা ছিল। সে প্রায় বছর কুড়ি আগের কথা। তখন উনি কাঠের ব্যবসায়ী ছিলেন। ৩টে কাঠের গোলা ছিল। পাশাপাশি ছিল জুয়েলারি শোরুম। স্ত্রী মধুলিকা আর মেয়ে মঞ্জুলিকাকে নিয়ে সুখেই কাটত দিনগুলো। হঠাৎ সুখের সংসারে ঘটে গেলো এক ঘোরতর অঘটন। তারপর থেকেই একা একা দিন কাটছে এই ৩ তলা বড়ো বাড়িতে। বাড়িটা যেন মাঝে মাঝে বিকট দানবের মত মনে হয় গিলে খেতে আসে ধনঞ্জয়বাবুকে।
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘরের ভিতরে ঢুকে জলের বোতল নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই টেবিলে একটা কাগজ ঠেকলো হাতে। খাট থেকে টর্চটা নিয়ে জ্বালিয়ে ধনঞ্জয়বাবু দেখলেন একটা কাগজের ছোট টুকরোতে লাল পেন্সিলে লেখা তিনটে শব্দ, "তুমি খুশি হয়েছ?"
চমকে উঠলেন তিনি,"তবে কি ও ফিরে এসেছে? ও যে আমায় কথা দিয়েছিল... তাহলে কি সত্যিই!"
(চলবে...)