Painter - 2 in Bengali Moral Stories by Sayani Paul books and stories PDF | পেইন্টার - পর্ব 2

Featured Books
  • उजाले की ओर –संस्मरण

    मनुष्य का स्वभाव है कि वह सोचता बहुत है। सोचना गलत नहीं है ल...

  • You Are My Choice - 40

    आकाश श्रेया के बेड के पास एक डेस्क पे बैठा। "यू शुड रेस्ट। ह...

  • True Love

    Hello everyone this is a short story so, please give me rati...

  • मुक्त - भाग 3

    --------मुक्त -----(3)        खुशक हवा का चलना शुरू था... आज...

  • Krick और Nakchadi - 1

    ये एक ऐसी प्रेम कहानी है जो साथ, समर्पण और त्याग की मसाल काय...

Categories
Share

পেইন্টার - পর্ব 2

নিমাই ফিরে আসে। এত সুন্দর একটা পেইন্টিং বিক্রি হলো না তার।
–“ নিমাইদা মন খারাপ কোরো না। এটা তুমি টানিয়ে রাখো। কারোর না কারোর পছন্দ তো হবেই, সে মোটা টাকা দিয়ে নিয়ে যাবে। ”

নিমাই তাই করে। কিন্তু তার মন ভালো লাগছিল না। ব্রাউন কোট পড়া লোকটা এমন ভাবে নির্দেশ দিচ্ছিল যেন মনে হচ্ছিল তিনি ভীষণ বড় আর্টিস্ট। তিনি যেভাবে বলেছিলেন নিমাই সেইভাবে এঁকেছিল, তবুও লোকটার পছন্দ হলো না?

সেই দিন নিমাইয়ের ৬০০ টাকা ইনকাম হয়েছিল। কিন্তু বাড়িতে এসেও সে খুশি থাকতে পারছিল না। ওই ব্রাউন কোটের সাথে যদি আরেকবার দেখা হতো…

পরদিন যথাসময়ে নিমাই নিজের জায়গায় বসে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। একটাও খদ্দের আসেনি তার কাছে। নিমাই ঐ পেইন্টিংটার দিকে তাকায়। এটাই যত নষ্টের গোঁড়া। এটাকে নামিয়ে রাখলেই খদ্দের আসবে। যা বলা তাই কাজ, নামিয়ে মাটিতে রাখতেই একটা খদ্দের চলে আসে তার দোকানের সামনে। হিসাব মত নিমায়ের খুশি হবার, কথা কিন্তু নিমাই চটে যায়। এই খদ্দের আর কেউ নয়, সেই ব্রাউন কোট।

–“ আপনি এখানে? ”
–“ হ্যাঁ কেন? এখানে আসতে পারি না? ”
–“ আসতে পারেন অবশ্যই। আপনার গতদিনের পেইন্টিংটা রেখেছি, নেবেন? ”
–“ না, তবে আমার আরেকটা অফার আছে তোমার জন্য। ”
–“ কী? ”
–“ আমি তোমাকে আজ আর একটা পেইন্টিং আঁকতে বলবো। তুমি যদি সেই পেইন্টিং দিয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারো তাহলে দরদাম ছাড়াই আজকের পেইন্টিংটা কিনব। সাথে আগের দিনের পেইন্টিংটা ডবল দামে কিনব। কিন্তু হ্যাঁ, নিজের আঁকার উপর ভরসা থাকলেই এঁকো। ”
–“ কী বলতে চাইছেন আপনি? ”
–“ দেখো তোমার আগের দিনের আঁকা তো আমার পছন্দ হয়নি। তাই যদি তোমার নিজের উপর ভরসা না থাকে তাহলে এঁকে লাভ নেই। খালি খালি রং আর ক্যানভাস নষ্ট। আমি আসলে আর্ট খুব ভালোবাসি। একটুও খুঁত থাকলে আমি মেনে নিতে পারি না। তাই বলে দিলাম। কাজ পছন্দ না হলে আমি নিই না। বাজে আঁকা আমার রক্ত গরম করে দেয়। ”
–“ আপনি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছেন? ”
–“ তুমি কীভাবে নেবে সেটা তোমার ব্যাপার। আমি তো শুধু বললাম। ”
–“ বলুন আপনি কি আঁকাতে চান? সিনারি না ফিগার? ”
–“ পোট্রেট, একটা মেয়ের। আঁকা শুরু করার আগে তোমাকে বলে দিই, পছন্দ না হলে কিন্তু আঁকাটা নেবো না আমি। ”
–“ যদি পছন্দ হয়, তাহলে যা টাকা চাইবো তাই দেবেন তো? ”
–“ ভদ্রলোকের এক কথা। দেবো বলেছি যখন দেবই। ”
–“ বলুন সেই ছবি কেমন হবে? ”
–“ ছবিটা একটা মেয়ের। চোখের মনি সমুদ্রের মতন সবুজ। তার না আছে চুল না আছে ঠোঁট আর না আছে শরীর। শুধুই চোখ আর ভ্রু। তবে সে অশরীরী নয়। আজকাল যান্ত্রিকতার বেড়াজালে যন্ত্র হয়েছে সে অথচ কোন যন্ত্রের চিহ্ন যেন না থাকে। নীল কালো আর হলুদের বিভিন্ন শেড ইউজ করতে পারো ব্যাকগ্রাউন্ড এর জন্য। ব্যস। আর হ্যাঁ, এটা গ্লাস পেইন্টিং। চলো শুরু করো। ”
–“ আপনি কি কবি? এমন সাহিত্যিক গোছের কথা বলছেন কেন? ”
–“ পেইন্টিং টা তুমি বানাতে পারবে কিনা তাই বলো। ”
–“ তার শরীর না থাকলে কী করে বোঝাবো সে মেয়ে? ”
–“ সেটা তোমার মাথাব্যথা। না পারলে ছেড়ে দাও। তোমার মতন অনেক পেইন্টার রাস্তায় রাস্তায় খুঁজে পাবো আমি। ”
–“ পেইন্টার অনেক পাবেন সাহেব, নিমাইদার মতন কাউকে পাবেন না। গ্যারান্টি রইল। ”
–“ বেশি কথা না বাড়িয়ে এঁকে ফেলো দেখি। ”

নিমাই জল খেয়ে চোখ বন্ধ করে। ভেবে নেয় সে কী আঁকবে? ব্রাউন কোট খানিক দূরে গাছের তলায় বসে রয়েছে। নিমাইয়ের প্রতিভাকে চ্যালেঞ্জ করেছে লোকটা। আঁকার ব্যাপারে সে জানেটা কী? শুধু দু’তিনটে সাহিত্যিক সাহিত্যিক কথা বলে নিজেকে দক্ষ পেইন্টার মনে করেন। আগেরবারের আঁকাটাও যথেষ্ট কঠিন ছিল নিমাইয়ের পক্ষে। লোকটা একটা সিনারি আঁকতে বলেছিল। একটা ঘর, চারিপাশটা ফুলের বাগানে ভর্তি। চালটা যেন খরের হয় আর উঠোন যেন পাথরের হয়। রং যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পুরো ছবিটায়। শুধু এইটুকু ডেসক্রিপশনে আর কত ভালো আঁকা যায়? লোকটাকে দেখে বড়লোক মনে হয়েছিল। তাই নিমাইও জানপ্রাণ দিয়ে খেটেছিল ছবিটা উপর। লোকটা একটা পয়সাও না দিয়ে বেরিয়ে যায়। আজ নিমাই দেখিয়ে দেবে পেইন্টিং কাকে বলে। রংগুলো তুলে ধরে সে। সে নিশ্চিত, লোকটা ফেরাতে পারবে না।

তিন ঘন্টা একটানা বসে নিমাই কাজ করেছে। গত ছবির চেয়েও অনেক অনেক বেশি কাজ রয়েছে এতে। ছবিটাতে কিছুই নেই অথচ অনেককিছু আছে। নিমাই নিজেই অবাক হয়ে যায় নিজের পেইন্টিং দেখে। এমন অদ্ভুত জিনিস সে বানাতে পারে তার আগে জানা ছিল না। লোকটার কোন ক্ষমতা নেই এই পেইন্টিংকে প্রত্যাখ্যান করবে। গত দিনের চেয়েও বেশি সুন্দর হয়েছে আজকের ছবিটা। নিমাই ঠিক করে নেয় কত দাম চাইবে। আজকে সোজা হাজারের বাজার। সে উঠে সেই গাছের তলায় যায়। ব্রাউন কোটকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“ সাহেব আপনার আঁকা হই গেছে। হাজার টাকার এক টাকাও কম দেবেন না। ”
–“ দেব না কেন? অবশ্যই দেবো। আগে দেখাও তোমার পেইন্টিং। ”
–“ চলেন। এই দ্যাখেন। আপনি যা যা বলেছেন সবকিছু রয়েছে। কোন এক্সট্রা কাজ করিনি। ঠিক যেমনটা আপনি চান। আগের দিনের সাতশো আর আজকের হাজার। অনেক খাটিয়েছেন মাইরি আপনি আমাকে। ”
–“ এটাকে তুমি পেইন্টিং বলো? আমার বাড়ির আরশোলাও এর চেয়ে ভালো আঁকে। ”
–“ মানে? আপনি আমার পেইন্টিংকে আরশোলার সঙ্গে তুলনা করছেন? ”
–“ আমি বললাম আমার বাড়ি আরশোলা তোমার চেয়ে ভালো আঁকে। খালি নিজের মুখে বাতেলা মারা। নেব না আমি, পছন্দ হয়নি। ”
–“ আমি তিন ঘন্টা খাটলাম আপনার ছবির পেছনে। কত সুন্দর হইসে দ্যাখেন। ”
–“ এসব মিষ্টি মিষ্টি কথা আমার গায়ে লাগেনা। এক টাকাও পাবে না তুমি। রেখে দাও তোমার কাছে। ”
–“ আরশোলার আঁকা যদি এত ভালো লাগে তাহলে আপনি আমার কাছে কেন এসেছেন? আরশোলাকে দিয়েই আঁকিয়ে নেন। ”
–“ আমি তো তোমাকে আগেই বলেছিলাম। সন্তুষ্ট না হলে এক পয়সাও পাবে না তুমি। বারণ করে দিতেই পারতে। আমি তো আর জোর করিনি। ”
–“ স্যার আপনি আমাকে অনেক খাটিয়েছেন। অন্তত সেই পারিশ্রমিকটা আমাকে দিন। গরীবর পেটে এভাবে লাথি মারবেন না। আপনি একবার ভালো করে দ্যাখেন, এরকম পেইন্টিং আর কোথাও পাবেন না। এটা গ্লাস পেইন্টিং। দয়া করে নিয়ে যান আর আমার টাকাটা দেন। ”

লোকটা আবারো উত্তর না দিয়ে গট গট করে হেঁটে চলে যায়। রাগে কষ্টে নিমাইয়ের চোখে জল আসে। পিছন দিক দিয়ে আওয়াজ লাগায় সে, লোকটা একবারও ফিরে তাকায় না। কীকরে এই আঁকাকে বিশ্রী বলে লোকটা? শুধু শুধু গরীব মানুষকে অপমান করা। নিমাইয়ের ১৭০০ টাকার স্বপ্ন এক মুহূর্তে ভেঙ্গে যায়। এমনিতেও সকাল থেকে এক টাকাও ইনকাম হয়নি তার। উপর থেকেই লোকটা এসে সমস্ত মুড খারাপ করে দিল।

–“ আপনি হয় অন্ধ, নয় পাগল। বুঝলেন? ”
নিমাই চিৎকার দিয়ে ওঠে। কিন্তু লোকটা ততক্ষণে অন্ধকারে গায়েব হয়ে গেছে। আশেপাশের লোকজন তাকিয়ে পড়ে নিমাইয়ের দিকে। এমনিভাবে চিল্লাচ্ছে কেন সে? সে তো ঠাণ্ডা মাথার মানুষ।

#ক্রমশ প্রকাশ্য…

কলমে– সায়নী পাল