Chokher Bali - 47 in Bengali Fiction Stories by Rabindranath Tagore books and stories PDF | চোখের বালি - 47

Featured Books
  • మనసిచ్చి చూడు - 5

                                    మనసిచ్చి చూడు - 05గౌతమ్ సడన్...

  • నిరుపమ - 5

    నిరుపమ (కొన్నిరహస్యాలు ఎప్పటికీ రహస్యాలుగానే ఉండిపోతే మంచిది...

  • ధర్మ- వీర - 6

    వీర :- "నీకు ఏప్పట్నుంచి తెల్సు?"ధర్మ :- "నాకు మొదటినుంచి తె...

  • అరె ఏమైందీ? - 18

    అరె ఏమైందీ? హాట్ హాట్ రొమాంటిక్ థ్రిల్లర్ కొట్ర శివ రామ కృష్...

  • మనసిచ్చి చూడు - 4

    మనసిచ్చి చూడు - 04హలో ఎవరు.... ️ అవతల మాట్లాడకపోయే సరికి ఎవర...

Categories
Share

চোখের বালি - 47

47

৪৭

অন্নপূর্ণা কাশী হইতে ফিরিয়া আসিয়া অতি ধীরে ধীরে রাজলক্ষ্মীর ঘরে প্রবেশ করিয়া প্রণামপূর্বক তাঁহার পায়ের ধুলা মাথায় তুলিয়া লইলেন। মাঝখানের বিরোধবিচ্ছেদ সত্ত্বেও অন্নপূর্ণাকে দেখিয়া রাজলক্ষ্মী যেন হারানো ধন ফিরিয়া পাইলেন। ভিতরে ভিতরে তিনি যে নিজের অলক্ষ্যে অগোচরে অন্নপূর্ণাকে চাহিতেছিলেন, অন্নপূর্ণাকে পাইয়া তাহা বুঝিতে পারিলেন। তাঁহার এতদিনের অনেক শ্রান্তি অনেক ক্ষোভ যে কেবল অন্নপূর্ণার অভাবে,অনেক দিনের পরে আজ তাহা তাঁহার কাছে মুহূর্তের মধ্যে সুস্পষ্ট হইল। মুহূর্তের মধ্যে তাঁহার সমস্ত ব্যথিত হৃদয় তাহার চিরন্তন স্থানটি অধিকার করিল। মহেন্দ্রের জন্মের পূর্বেও এই দুটি জা যখন বধূভাবে এই পরিবারের সমস্ত সুখদুঃখকে বরণ করিয়া লইয়াছিলেন--পূজায় উৎসবে, শোকে মৃত্যুতে, উভয়ে এই সংসার-রথে একত্রে যাত্রা করিয়াছিলেন--তখনকার সেই ঘনিষ্ঠ সখিত্ব রাজলক্ষ্মীর হৃদয়কে আজ মুহূর্তের মধ্যে আচ্ছন্ন করিয়া দিল। যাহার সঙ্গে সুদূর অতীতকালে একত্রে জীবন আরম্ভ করিয়াছিলেন, নানা ব্যাঘাতের পর সেই বাল্যসহচরীই পরম দঃখের দিনে তাঁহার পার্শ্ববর্তিনী হইলেন--তখনকার সমস্ত সুখদুঃখের, সমস্ত প্রিয় ঘটনার এই একটিমাত্র স্মরণাশ্রয় রহিয়াছে। যাহার জন্য রাজলক্ষ্মী ইঁহাকেও নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করিয়াছিলেন, সেই বা আজ কোথায়! অন্নপূর্ণা রোগিণীর পার্শ্বে বসিয়া তাঁহার দক্ষিণ হস্ত হস্তে লইয়া কহিলেন, "দিদি।"

রাজলক্ষ্মী কহিলেন,"মেজোবউ।" বলিয়া আর তাঁহার কথা বাহির হইল না। তাঁহার দুই চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল। আশা এই দৃশ্য দেখিয়া আর থাকিতে পারিল না--পাশের ঘরে গিয়া মাটিতে বসিয়া কাঁদিতে লাগিল।

রাজলক্ষ্মী বা আশার কাছে অন্নপূর্ণা মহেন্দ্রের সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন পাড়িতে সাহস করিলেন না। সাধুচরণকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "মামা, মহিন কোথায়।"

তখন সাধুচরণ বিনোদিনী ও মহেন্দ্রের সমস্ত ঘটনা বিবৃত করিয়া বলিলেন। অন্নপূর্ণা সাধুচরণকে জিজ্ঞাসা করিলেন, "বিহারীর কী খবর।"

সাধুচরণ কহিলেন, "অনেকদিন তিনি আসেন নাই-- তাঁহার খবর ঠিক বলিতে পারি না।"

অন্নপূর্ণা কহিলেন, "একবার বিহারীর বাড়িতে গিয়া তাহার সংবাদ জানিয়া আইস।"

সাধুচরণ ফিরিয়া আসিয়া কহিলেন, "তিনি বাড়িতে নাই, বালিতে গঙ্গার ধারে বাগানে গিয়াছেন।"

অন্নপূর্ণা নবীন-ডাক্তারকে ডাকিয়া রোগীর অবস্থা জিজ্ঞাসা করিলেন। ডাক্তার কহিল, "হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতার সঙ্গে উদরী দেখা দিয়াছে, মৃত্যু অকস্মাৎ কখন আসিবে কিছুই বলা যায় না।"

সন্ধ্যার সময় রাজলক্ষ্মীর রোগের কষ্ট যখন বাড়িয়া উঠিতে লাগিল, তখন অন্নপূর্ণা জিজ্ঞাসা করিলেন, "দিদি, একবার নবীন-ডাক্তারকে ডাকাই।"

রাজলক্ষ্মী কহিলেন, "না মেজোবউ, নবীন-ডাক্তার আমার কিছুই করিতে পারিবে না।"

অন্নপূর্ণা কহিলেন, "তবে কাহাকে তুমি ডাকিতে চাও বলো।"

রাজলক্ষ্মী কহিলেন, "একবার বিহারীকে যদি খবর দাও তো ভালো হয়।"

অন্নপূর্ণার বক্ষের মধ্যে আঘাত লাগিল। সেদিন দূরপ্রবাসে সন্ধ্যাবেলায় তিনি দ্বারের বাহির হইতে অন্ধকারের মধ্যে বিহারীকে অপমানের সহিত বিদায় করিয়া দিয়াছিলেন, সেই বেদনা তিনি আজ পর্যন্ত ভুলিতে পারেন নাই। বিহারী আর কখনোই তাঁহার দ্বারে ফিরিয়া আসিবে না। ইহজীবনে আর যে কখনো সেই অনাদরের প্রতিকার করিতে অবসর পাইবেন, এ আশা তাঁহার মনে ছিল না।

অন্নপূর্ণা কবার ছাদের উপর মহেন্দ্রের ঘরে গেলেন। বাড়ির মধ্যে এই ঘরটিই ছিল আনন্দনিকেতন। আজ সে ঘরের কোনো শ্রী নাই-- বিছানাপত্র বিশৃঙ্খল, সাজসজ্জা অনাদৃত, ছাদের টবে কেহ জল দেয় না, গাছগুলি শুকাইয়া গেছে।

মাসিমা ছাদে গিয়াছেন বুঝিয়া আশাও ধীরে ধীরে তাঁহার অনুসরণ করিল। অন্নপূর্ণা তাহাকে বক্ষে টানিয়া লইয়া তাহার মস্তকচুম্বন করিলেন। আশা নত হইয়া দুই হাতে তাঁহার দুই পা ধরিয়া বার বার তাঁহার পায়ে মাথা ঠেকাইল। কহিল, "মাসিমা, আমাকে আশীর্বাদ করো, আমাকে বল দাও। মানুষ যে এত কষ্ট সহ্য করিতে পারে, তাহা আমি কোনোকালে ভাবিতেও পারিতাম না। মা গো, এমন আর কতদিন সহিবে।"

অন্নপূর্ণা সেইখানেই মাটিতে বসিলেন, আশা তাঁহার পায়ে মাথা দিয়া লুটাইয়া পড়িল। অন্নপূর্ণা আশার মাথা কোলের উপর তুলিয়া লইলেন, এবং কোনো কথা না কহিয়া নিস্তব্ধভাবে জোড়হাত করিয়া দেবতাকে স্মরণ করিলেন।

অন্নপূর্ণার স্নেহসিঞ্চিত নিঃশব্দ আশীর্বাদ আশার গভীর হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়া অনেক দিন পরে শান্তি আনয়ন করিল। তাহার মনে হইল, তাহার অভীষ্ট যেন সিদ্ধপ্রায় হইয়াছে। দেবতা তাহার মতো মূঢ়কে অবহেলা করিতে পারেন, কিন্তু মাসিমার প্রার্থনা অগ্রাহ্য করিতে পারেন না।

হৃদয়ের মধ্যে আশ্বাস ও বল পাইয়া আশা অনেকক্ষণ পরে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া উঠিয়া বসিল। কহিল, "মাসিমা, বিহারী-ঠাকুরপোকে একবার আসিতে চিঠি লিখিয়া দাও।"

অন্নপূর্ণা কহিলেন, "না, চিঠি লেখা হইবে না।"

আশা। তবে তাঁহাকে খবর দিবে কী করিয়া।

অন্নপূর্ণা কহিলেন, "কাল আমি বিহারীর সঙ্গে নিজে দেখা করিতে যাইব।"