The Creation in Bengali Motivational Stories by Sandip Bardhan books and stories PDF | সৃষ্টি

Featured Books
Categories
Share

সৃষ্টি

।। বিজ্ঞান তত্ত্ব ।।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি কোথার থেকে, বিজ্ঞানীরা আজও কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে না। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম থিওরি দিয়েছে কিন্তু প্রমান আজও করতে পারেনি। এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য থিওরি 'বিগ ব্যাং থিওরি'। জর্জেস লিমায়ত্রে এই থিওরি প্রথম দিয়েছিল ১৯২৭ সালে। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এর থিওরি অফ রিলেটিভিটি E = mc2 সমীকরণ দ্বারা এক খ্রিস্টান চার্চের পাদরি যার নাম ছিল জর্জেস লিমায়ত্রে বলেছিলেন আমদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সময়ের সাথে সাথে প্রসারিত হচ্ছে। তিনি সেই সময়ই 'বিগ ব্যাং থিওরি ' কথা বলেন । সেই সময় আইনস্টাইন খুব বড় বিজ্ঞানী ছিলেন, সেই সময় আইনস্টাইন এই পাদরি জর্জেস লিমায়ত্রে কে বলেন তোমার গণিতে কোনো ভুল নেই, কিন্তু বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রসারণ সম্ভব নয় । তাঁর মতে শারীরিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা অযৌক্তিক । ১৯৫৫ তে আইনস্টাইন ও ১৯৬৬ তে জর্জেস মারা যান।পরবর্তীতে হাবল টেলিস্কোপ এর দ্বারা বিজ্ঞানীরা দেখলো যে আমদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড প্রতি মুহূর্তে প্রসারিত হচ্ছে। এই ঘটনা বিজ্ঞান জগতে আলোড়ন ফেলে দেয় আবার উঠে আসে জর্জেস লিমায়ত্রের সেই ' বিগ ব্যাং থিওরি ' । জর্জেস লিমায়ত্রের মতে একটি বিন্দু অ্যাটম থেকে আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড অস্তিত্বে এসেছে। ওই আদিম অ্যাটম কনা শক্তিশালী হয়ে একটা সময় বিস্ফোরণ ঘটায় , ওই বিস্ফোরণের পরই আমদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড প্রথম অস্থিত্বে এসেছে এবং সেই প্রসারণ এখনো চলছে। এখন প্রশ্ন আইনস্টাইন কেন সেই সময় এই থিওরি মেনে নিতে পারেনি? তাঁর কারণ হল আইনস্টাইন ইহুদি ছিলেন, ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ সূত্রে তিনি 'তানাখ' বা হিব্রু বাইবেল এ উল্লেখিত উপদেশ ছোট থেকে শুনে ও মেনে এসেছেন। হিব্রু বাইবেল অনুযায়ী বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ঈশ্বরের সৃষ্টি, ঈশ্বর যেমন বালি থেকে প্রথম মানুষ ' আদম ' বানিয়েছে , তেমনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড তার বানানো । এই 'তানাখ বা হিব্রু বাইবেল' এ লেখা আছে ঈশ্বর প্রথমে মহাকাশ বানায়। শুধু হিব্রু বাইবেল এ নয় খ্রিস্টানদের 'বাইবেলে'এবং মুসলিম দের 'কোরান ' এই তিনটি ধর্ম গ্রন্থে একই কথা আছে যে ঈশ্বর প্রথমে হওয়া বানিয়েছে, মানে মহাকাশ বানিয়েছে, যেটা স্থির। এই ধর্ম গুলোতে এটাও বলা হয়েছেপৃথিবী স্থির, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।এই ধর্ম গ্রন্থে যে ঈশ্বরের কথা বলা হয়েছে সেই ঈশ্বর অনন্ত যার কোনো রুপ নেই , যাকে কল্পনা করা যায় না। ইহুদীদের মতে একমাত্র নবী আব্রাহাম, খিষ্টানরা যীশু কে শেষ নবী মনে করে এবং মুসলিমরা আব্রাহাম হল প্রথম নবী, ঈশা মানে যীশু হলো ষষ্ঠ নবী এবং হজরত মহম্মদ হল সপ্তম বা শেষ নবী। এই জন্য আইনস্টাইন সহ অনেক বিজ্ঞানীরা সেই সময় এই 'বিগ ব্যাং থিওরি ' মেনে নিতে পারেনি। সেই সময় জর্জেস এর কাছে শুধু সমীকরণ ছিল যার দ্বারা সে এই থিওরি দিয়েছিল, তার সমীকরণ ঠিক থাকলেও অনেকই তার তত্ত্ব মেনে নেয় নি। পরবর্তীতে দেখা গেল জর্জেস লিমায়ত্রের সমীকরণ ও তত্ত্ব দুটোই ঠিক ছিল।বর্তমান কালে বিজ্ঞানীরা আরও নতুন তত্ত্ব দিয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তত্ত্ব বা থিওরি হল 'সমান্তরাল মহাবিশ্ব' বা ' প্যারালাল ইউনিভার্স ' , যাকে মাল্টিভার্স ও বলে। বর্তমান সময়ে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের সাহায্যে এই মহা বিশ্বের শুরু দেখতে গিয়ে অনেক নতুন তথ্য উঠে আসছে , প্রতি মুহূর্তে প্রসারিত হওয়ার কারণে আমদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড অন্য বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের কাছে চলে আসছে, এর থেকে উঠে আসছে সমান্তরাল মহা বিশ্বের তত্ত্ব। আমাদের মহা বিশ্ব একমাএ মহা বিশ্ব নয় সেটা জেমেশ ওয়েব টেলিস্কোপ দ্বারা বিজ্ঞানীরা বুজতে পেরেছেন। আরো কত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড আছে তার উত্তর তারা খুঁজছে, হয়তো তাদের ক্ষেত্রেও সেটা বের করা সম্ভব হবে না। কিছু কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন সমান্তরাল মহা বিশ্বে ১১ টি ডাইমেনশন অস্থিত্ব আছে বলে দাবি করে থাকে তবে তাদের কাছে প্রমাণ নেই শুধু আছে থিওরি বা তত্ত্ব। আমরা 3d বা ৩ ডাইমেনশন পৃথিবীতে বসবাস করি। এই বিজ্ঞানীরা মনে করে এমন কিছু বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড আছে যেখানে 4,5,6 করে 11 ডাইমেনশনের অস্থিত্ব আছে। আমদের সনাতন হিন্দু ধর্মে 64 / ৬৪ ডাইমেনশন এর কথা বলা আছে ।

।। পুরাতন ধর্ম ।।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
৬৪ /64 ডাইমেনশনের কথা শুনে আপনারা অবাক হবেন কিন্তু এটা সত্য। এই রকম আরো অনেক তথ্য আছে যেই তথ্য গুলো আমাদের বেদ, উপনিষদ, পুরান, গরুড় পুরান, বেদ-পুরাণ ,ভাগবত গীতা পরবর্তী তে রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদি থেকে আমরা জানতে পারি। আমাদের পূর্বপুরষরা হাজার হাজার বছর আগে আমাদের যে জ্ঞান দিয়ে গেছে বিজ্ঞান সেই তথ্য দিয়েছে শেষ কয়েক শতাব্দীতে । বেদ পুরাণে সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা প্যারালাল ইউনিভার্স এর কথা আছে। এঁর থেকে বোঝা যায় আমাদের এই পূর্বপুরুষরা কত বড়মাপের মহাজ্ঞানী ছিলেন। সনাতন হিন্দু ধর্ম এই পৃথিবীর সব থেকে পুরানো ধর্ম। বেদ হিন্দুদের প্রথম ধর্ম গ্রন্থ, যার মানে জ্ঞান, বেদ শুনে মনে রাখা হত কারণ তখন লেখার প্রচলন আসে নি, গুরু শিষ্য পরম্পরায় শুনে মনে রাখা হত। ঋষিরা গভীর মনে তপস্যা করে এই লিপি দেখতে পেয়েছে সেই লিপি গুলো গুরু শিষ্য পরম্পরায় মনে রাখত , বেদব্যাস এই কয়েক হাজার লিপি গুলো কে পরপর শাখাযুক্ত করে ৪ টি বেদ এ ভাগ করেছেন। এই গুলো হল - ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ। পশ্চিমী ইতিহাস বিদ দের মতে হিন্দু সভ্যতার সৃষ্টি খ্রিস্টপূর্ব ৪ থেকে ৫ হাজার বছর আগে , সিন্ধু নদীর ধারে। যাকে সিন্ধু সভ্যতা নামে আমরা জানি। ব্রিটিশ ভাষাতত্ত্ববিদ ম্যাক্স মুলার যখন ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেদের পাণ্ডুলিপি আনল, এনে এক জায়গায় করলেন তখন তিনি অবাক হয়ে যান। তিনি দেখেন সব কটি পণ্ড লিপি এক এবং বেদব্যাস এর সাজানো দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। তিনি সেই সময় বেদের পাণ্ডুলিপি গুলোকে বই এর রূপ দেন। বর্তমানে বেদ পণ্ডিত দের মতে ৪ টি বেদ মুখস্থ করতে ও প্রত্যেক লিপির মানে বুঝতে ১২-১৩ বছর লাগবে খুব ভালো মাথা হলেও ৮-৯ বছর। বেদ মানে জ্ঞান, বেদ কারো লেখা বই বা গ্রন্থ নয়, আমাদের পূর্বপুরষরা অনেক তপস্যা ও ধ্যাণের মধ্যে গিয়ে এই প্রার্থনা গুলো জ্ঞান অর্জন করেছেন করেছে, এবং সেই জ্ঞান বংশ পরম্পরায়,কখনও গুরু শিষ্য পরম্পরায় ধরে রেখেছে। ম্যাক্স মুলার মতে ওই পাণ্ডুলিপি রচিত হয়েছিলো ৩৫০০ বছর আগে, মানে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-২০০০ বছর আগে। স্বামী বিবকানন্দ ও লোকমান্য তিলক এঁর মতে ৮-১০ হাজার বছর আগে। ম্যাক্স মুলার কম বলার পিছনের কারন তিনি ছিলেন খিস্টান ধর্মের তাই তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না এত পুরনো হিন্দু ধর্ম, যেখানে বাকি অন্য ধর্ম যেমন ইহুদী ধর্ম খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০-১০০০ বছর, খিষ্টান ধর্ম ২০০০ , ইসলাম ১৪০০ বছরের পুরানো ধর্ম, বাকি অন্য ধর্ম সব হিন্দু ধর্মের পরে এসেছে। কয়েক বছর আগে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কে ধরে, সেই সন্ন্যাসীর কাছ থেকে একটা ছোট বাক্স উদ্ধার হয়। বাক্সটা অনেক পুরনো সেটা গোয়েন্দাদের চোখে ধরা পরে। তারা যখন সন্ন্যাসী কে বাক্স খুলতে বলে, সন্ন্যাসী বলে আমি এই বাক্স খুলতে পারছি না অনেকবার চেষ্টা করেছি। তখন গোয়েন্দারা নিজেরা খোলার চেষ্টা করে খুলতে পারে না। তারপর সেটা 'এক্সপার্ট ল্যাব' এ নিয়ে যায়, ল্যাব সেটা খোলে। খোলার পর তারা দেখলো তার মধ্যে একটা গোল চাকতি তার মধ্যে এক পা তোলা মূর্তি, পুরোটাই সোনা দিয়ে বানানো এবং সেটা অনেক পুরানো মনে হচ্ছে। তারপর তারা বাক্স ও মূর্তিটাকে কার্বন টেস্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হল এবং মূর্তি টা কিসের সেটাও জানতে চাওয়া হল?
কার্বন টেস্ট এ রিপোর্ট দেখে গোয়েন্দারা অবাক হয়ে গেল , সাথে যারা এই টেস্ট করেছেন তারও অবাক। বাক্স টা ছিলো ৩৫০০-৪০০০ বছরের পুরনো বাক্স কিন্তু অবাক হওয়ার কারণ মূর্তি টা ছিলো নটরাজ শিবের এবং ওটা ২৮৭৫০ বছরের মানে খ্রিস্টপূর্ব ২৬৭৫০ বছরের পুরানো সোনার মূর্তি। সুতরাং আমরা ধরে নিতে পারি আমাদের ধর্ম আরো পুরানো।

।। অনন্ত ।।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বেদ এ একটা শ্লোক এ আছে ঈশ্বরের রূপ নেই, ঈশ্বর অনন্ত, এই শ্লোক টা বলে অন্যান্য ধর্মের কিছু লোক হিন্দুদের বলে আপনারা মূর্তি পুজো কেন করেন ? ঈশ্বর তো অনন্ত! এটা তাদের ধর্ম গ্রন্থেও লেখা আছে। কিন্তু তারা জানে না তারা যাকে god or আল্লাহ বলছে আগে কার হিন্দুরা তাকে ব্রহ্মা বলতো আধুনিক হিন্দুরা এবং বিজ্ঞান তাকে মহা অ্যাটম বলে। বিজ্ঞান ও হিন্দু শাস্ত্র কম্বাইন করলে উত্তর পেয়ে যাবেন। হিন্দুরা মুর্তি পূজা করে সেই সৃষ্টি কাছে যাওয়ার জন্য। বিজ্ঞানের ভাষায় বলছি, A থেকে B স্থানে যেতে যেমন মাধ্যম লাগে , আপনি হেঁটে গেলেও পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন তখন আপনি মাধ্যম ব্যাবহার করছেন , বসে থাকলে আপনি A থেকে B তে যেতে কোনো দিনও পারবেন না। বিজ্ঞানীরা সৃষ্টির শুরু যেই মহা অ্যাটম থেকে সেটা খুঁজতেও বড় বড় টেলিস্কোপ ব্যবহার করছেন সেটাও মাধ্যম। তাই সেই অনন্ত কাছে পৌঁছাতে ভগবান হল তার মাধ্যম। সেটা যে কোনো ভগবান হতে পারে। তারা সেই অনন্ত থেকেই পৃথিবীতে এসেছিলো। স্বামী বিবকানন্দ ও আবিন্দ্রনাথ ঠাকুর একদিন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সাথে দেখা করতে গিয়েছেন, তখন রামকৃষ্ণ দেব আবিন্দ্রনাঠ কে জিজ্ঞাসা করলেন বেদ এ কী আছে ওই অনন্ত কাছে পৌঁছাতে? রামকৃষ্ণ বেদ এর নাম শুনেছিল কিন্তু জানতো না। আমি যতো বার ধ্যানে মগ্ন হচ্ছি ততবারই মা কালীর মূর্তি চলে আসছে ! তখন অবিন্দ্রনাথ বললেন বেদ এ তো তাই আছে তুমি যাকে পূজ্য মনে করো তার পূজা করুন, ধ্যানে তার যব করুন, তিনিই আপনাকে রাস্তা দেখবেন, তার মাধ্যমে সেই অনন্ত কাছে যেতে পারবেন । রামকৃষ্ণ তখন বলল তাই যখনই আমি ধ্যানে মগ্ন হচ্ছি মা (মা কালী) চলে আসছে ধ্যানে বারবার।
এখন কথা হল সেই অনন্ত টা কে বা তাঁর রূপ কি? এর উত্তরও বেদ এ আছে। বেদ এর থেকে বাকি ধর্ম গ্রন্থের সৃষ্টি যেমন উপনিষদ, পুরান , বেদ পুরান, গরুড় পুরান, রামায়ণ, মহাভারত, ভগবত গীতা এই সব বেদের থেকেই এসেছে। বেদ এর ধর্ম একটাই সেটা সনাতন ধর্ম বাকী সব ' পান্থ ' পান্থ একটি সংস্কৃত শব্দ বাংলায় যার মানে ধর্মবিশ্বাস। ধর্মবিশ্বাস আমাদের হিন্দু , কারো বৌদ্ধ, কারো জৈন, করো খিষ্টাণ , কারো মুসলিম ইত্যাদী। শুধু হিন্দুরা নিজেদের সনাতনী বলে, বৌদ্ধ, জৈন তারা কিছু কিছু কথা মানে কিন্তু খ্রিস্টান, মুসলিম আরো যেই সব ধর্ম আছে তারা নিজেদের সনাতন ধর্মাবলম্বী মানে না, অথবা তারা জানে না , তাই তারা অনন্ত বলে , বলে অনন্তের রূপ নেই । খালি চোখে আমরা তো ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দেখতে পাই না, তাই বলে তাদের রূপ নেই। অ্যাটম, প্রোটন, ইলেক্টন এদেরও রূপ আছে। মহাকাশে ৮০% নেগেটিভ এনার্জি আছে তাদের আমরা হাই টেক লেসার রস্মি দ্বারা বুঝতে পারি।

।। পরম ঈশ্বর বিষ্ণু ।।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বেদের মধ্যেই আমাদের সৃষ্টি কথা আছে যেমন তেমনি ভাবে আমাদের শেষ এঁর কথা আছে । একই ভাবে ভগবান এর কথা আছে, একই ভাবে সমান্তরাল মহা বিশ্বের কথা আছে। আবার কোথাও ৬৪ ডাইমেনশনের কথাও আছে যেমন, ঠিক একই ভাবে আমাদের ন'টি গ্রহের কথা আছে । কোথাও আবার সেই অনন্তের রূপের বর্ণনা আছে। বিগ ব্যাং থিওরি থেকে সমান্তরাল মহা বিশ্ব এই তত্ত্ব আমরা বেদের মধ্যেও পাই। নাম আলাদা হতে পারে তত্ত্ব একি।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী আমাদের ব্রহ্মা আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এর সৃষ্টি কর্তা (ব্রহ্মা কে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের গভর্নর বলা যেতে পারে)। শাস্ত্র মতে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের বয়স হল ৩১১.০৪ ট্রিলিয়ন বছর মানুষ জীবন। এখন চলছে ১৫৫.৫২১৯৭২৯৪৪ ট্রিলিয়ন বছর মানুষ জীবন।
ব্রহ্মার এক দিন আমাদের মানুষের ৪.৩২ বিলিয়ন বছর জীবন। ব্রহ্মার প্রত্যেক দিনকে ' কল্প' বলে। ঠিক একই ভাবে রাত ৪.৩২ বিলিয়ন মানুষ জীবন। ব্রহ্মা দিনের সময় বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের তৈরির কাজ করে। ব্রহ্মা আয়ু ১০০ বছর মানে ৩১১.০৪ ট্রিলিয়ান মানুষ জীবন। একে ' মহা কল্প' বলে। আর এই মহা কল্প হল বিষ্ণুর এক নিশ্বাস। বিষ্ণু হল সেই অনন্ত (supreme god or ultimate god)।

**( ব্রহ্মা দিন, রাত ও বছরের হিসাব বিস্তারিত জানতে হলে গুগল এ সার্চ করে নিন এখানে সংক্ষেপে দেওয়া আছে বুজতে অসুবিধা হলে ইন্টারনেটে দেখে নিন )

শাস্ত্রে আছে বিষ্ণু নাভি থেকে ব্রহ্মার সৃষ্টি হয় । শাস্ত্রে আছে বিষ্ণুর এক নিশ্বাসের সাথে হাজার হাজার বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড (universe) অস্তিত্বে আসে এবং প্রত্যেক বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের জন্য একটি ব্রহ্মা। বিষ্ণুর প্রশ্বাস এর সাথে সব বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড ভীতরে টেনে নেয় , সমস্ত ব্রহ্মার মৃত্যু হয়। এই চক্র চলতেই থাকে, এর শেষ নেই। শাস্ত্রে আছে সমস্ত ভগবান - মহা ঋষি সবাই বিষ্ণুর অবতার। বিষ্ণু থেকে যখন এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হচ্ছে পুরোটাই বিষ্ণুর অবতার। মানুষ, পশু পাখি, গাছ পালা সব কিছু তে বিষ্ণু আছে । তাই বেদের মধ্যে বিষ্ণু বিরাজ মান। বেদ এর মানেই জ্ঞান আর জ্ঞান মানেই বিষ্ণু, যে যত জ্ঞানী হবে সে সেই অনন্তের কাছে পৌঁছাতে পারবে।
এর পিছনের বিজ্ঞান - বিগ ব্যাং থিওরি থেকে আমরা জানতে পারি এক বিন্দুতে মহা অ্যাটম শক্তিশালী হয় একটা সময় পর বিষ্ফোরন ঘটায় তার থেকে আমদের ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি হয়েছে । হিন্দু শাস্ত্রে ব্রহ্মা আমদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছে , বিজ্ঞানের মহা অ্যাটম সেই বিন্দু শাস্ত্রে নাম ব্রহ্মা । আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড প্রসারিত হচ্ছে (expand) , শাস্ত্রে ব্রহ্মা দিন যাকে কল্প বলে সেই সময়ই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড প্রসারণের কাজ করে। সমান্তরাল মহা বিশ্ব থিওরি যার অর্থ আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড এক মাত্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড নয়, আমদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড প্রসারণের জন্য অন্য বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ক্রমশ কাছে আসছে । শাস্ত্রে আছে বিষ্ণু নিশ্বাস সাথে সাথে হাজার হাজার মহা বিশ্ব অস্থিত্বে আসে , যার সৃষ্টির কাজ করে ব্রহ্মা। এখান থেকে আমরা সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা parallel universe এর তত্ত্ব পাই।
আটমের বিস্ফোরণের পর অস্তিত্বে আসে ইলেকট্রন, প্রোটন , হাইড্রোজেন গ্যাস, হিলিয়াম গ্যাস নেগেটিভ এনার্জি ও পজিটিভ এনার্জি যাঁদের মাধ্যমে আমাদের এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। বৈদিক শাস্ত্রে আমরা সূর্য্য দেবতা, বায়ু দেবতা, ইন্দ্র, রুদ্র আরো অনেক দেবতা কথা জানতে পারি যাদের স্বর্গে দেবতা বলা হয় , যারা ব্রহ্মার পর এসেছে । মহাকাশ (স্বর্গ) প্রোটন, হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, পজিটিভ ও নেগেটিভ এনার্জি বলছে এদের বেদ এ দেবতা বলা হয়েছে ।
হিন্দু বৈদিক শাস্ত্রে আমরা জানতে পারি বিষ্ণুর রূপের কথা অবতারের কথা। পুরাণে বিষ্ণুর দশাবাতারের বর্ণনা রয়েছে। বিষ্ণুর এই দশ প্রধান আবাতারের মধ্যে নয় জনের জন্ম অতীতে হয়েছে এবং এক জনের জন্ম ভবিষ্যতে কলিযুগের শেষলগ্নে হবে বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন।
বিষ্ণু সহস্রনামে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার উক্তিতে বিষ্ণুকে "সহস্রকোটি যুগ ধারী" বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ, বিষ্ণুর অবতারগণ সকল যুগেই জন্মগ্রহণ করে থাকেন। অনুসারে, ধর্মের পালনএবং দুষ্টের দমন ও সাধু দের পরিত্রাণ এর জন্য বিষ্ণু অবতার গ্রহণ করেন। হিন্দুদের প্রায় সকল শাখাসম্প্রদায়ে, বিষ্ণুকে বিষ্ণু বা রাম, কৃষ্ণ প্রমুখ অবতারের রূপে পূজা করা হয়।
দশ অবতার গুল যথা ক্রমে :
১. মৎস্য - মাছরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
২. কূর্ম - কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৩. বরাহ - বন্য শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৪. নৃসিংহ - অর্ধনরসিংহরূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ
৫. বামন - খর্বকায় বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৬. পরশুরাম - পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৭. রাম - অযোধ্যার যুবরাজ ও রাজা রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ
৮. কৃষ্ণ - দ্বাপরযুগে জ্যেষ্ঠভ্রাতা বলরাম সাথে অবতীর্ণ। ভাগবত পুরাণ অনুসারে দ্বাপরযুগে অনন্ত নাগের অবতার বলরাম রূপে কৃষ্ণের সঙ্গে অবতীর্ণ হন। অধিকাংশ বৈষ্ণব শাখাসম্প্রদায় বলরামকে বিষ্ণুর অবতার বলে মনে করেন। যে সকল সূত্রে বুদ্ধের কোনো উল্লেখ নেই সেখানে বলরামকেই বিষ্ণুর নবম অবতার রূপে দশাবতারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৯. বুদ্ধ - কলিযুগে বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে অবতীর্ণ।
১০. কল্কি - এই ভবিষ্যৎ অবতার কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন বলে হিন্দুরা মনে করেন। ( আরো জানতে হলে ইন্টারনেট ব্যবহার করুন)

।।বেদ ও বিজ্ঞান।।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বিজ্ঞানের time dilation বা সময় প্রসারণ থেকে আমরা জানতে পারি কোনো বিশাল বস্তু সামনের ঘড়ির সময় বস্তুটির থেকে দূরের অবস্থিত ঘড়ির সময় অপেক্ষা ধীরে সময় পরিমাপ করবে। এক কথায় যত বিশাল বস্তু হবে তার মধ্যাকর্ষণ বল তত বেশি হবে, সেখানে সময় ততটা ধীরে কাটবে। আমরা জানি ব্ল্যাক হোল এর চারি দিকে কাটানোর কোনো বস্তু সময় ৭ বছর , পৃথিবীতে তার বয়স হয় ১৪ বছর।
হিন্দু বৈদিক শাস্ত্রে সময় প্রসারণ বা time dilation তত্ত্ব কথা আছে। আগেই উল্লেখ আছে ব্রহ্মা এক দিন মানুষের জীবন ৪.৩২ মিলিয়ন বছর। আবার ব্রহ্মার ১০০ বছর বিষ্ণু একটি নিশ্বাস।
হিন্দু শাস্ত্রে যত কথা আছে সব বিজ্ঞান সম্মত কথা বা বিজ্ঞান এখনো সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। তাই আমরা কাল্পনিক মনে করি, আজ থেকে ৩০০ বছর আগে ভিডিও কল এর কথা বললে তখন সেটা কাল্পনিক মনে হত, ঠিক একই ভাবে আমরা বিজ্ঞান সম্মত না হলে কাল্পনিক মনে করি। তাই বেদ মানে জ্ঞান। বেদ সয়ং বিষ্ণু, আমাদের পূর্বপুরষরা সেই অনন্তের কাছে গিয়েছিল জ্ঞান ও ধ্যানের মাধ্যমে। সেখান থেকে বেদ এর জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং সেই জ্ঞান শিষ্য দের দিয়ে গেছে। শিষ্যরা তাদের শিষ্য দের এই জ্ঞান দিয়ে গেছে, গুরু শিষ্য পরম্পরায় এই জ্ঞান ধরে রেখেছে। বিজ্ঞান যেটা গত ১০০ বছরে খুঁজে বের করেছে সেই সব কথা হাজার হাজার বছর আগে বেদ এ লেখা হয়েছিল, তারও আগে সেটা শুনে শুনে মনে রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞান কথায় টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর সৌর মণ্ডলে ৯ টি গ্রহ আছে যারা সূর্যের চার দিকে ঘুরছে (ওয়েস্টার্ন দেশের বিজ্ঞান) । হিন্দু শাস্ত্রে কয়েক হাজার বছর আগের থেকে লোক যেনে আসছে ন'টি গ্রহ। হিন্দুদের দিন রাত এক নয় , দিন ও রাতের যে তারতম্য আছে সেটা হিন্দুরা হাজার হাজার বছর থেকে জানে, হিন্দু দের সূর্য ওঠার সময় থেকে দিন শুরু হয় সূর্য্য অস্ত গেলে রাত শুরু হয়। হিন্দু দের মকর সংক্রান্তি ও ককর্ট সংক্রান্তি দিন ছোট রাত বড় ও দিন বড় রাত ছোট বিজ্ঞাসম্মতভাবে প্রমাণিত । ইংরেজি ক্যালেন্ডার দিন বড় ছোট কোনো ধারনা নেই, তাই রাত ১২ টা বাজলেই পরবর্তি দিন শুরু হয় যেটার মধ্যে কোনো বিজ্ঞানের ছাপ নেই।
হিন্দু ক্যালেন্ডার শুরু করেছিল রাজা বিক্রমাদিত্য খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ বছর আগে, বর্তমানে ২০৮০ সাল চলছে। তাই হিন্দু ক্যালেন্ডার কে বিক্রম সম্ভাত বলে। হিন্দু ও বাংলা ক্যালেন্ডার মধ্যে পার্থক্য হল - হিন্দু ক্যালেন্ডারের নববর্ষ ১লা চৈত্র মানা হয় বাংলায় সেটা পয়লা বৈশাখ ধরা হয় ( বিশত জানতে ইন্টারনেট এ দেখে নিন)। এই যে আমরা স্কুল কলেজ এ পড়াশুনা করি, এই পড়াশুনা বা এডুকেশন সিস্টেম সনাতনী হিন্দু দের তৈরী করা। গুরু গৃহে শিক্ষা কথা বেদ এ আছে।' তক্ষশিলা ' , ' নালন্দা ' বিশ্ব বিদ্যালয় হিন্দুদের তৈরী। চিকিৎসাশাস্ত্র , আয়ুর্বেদ , যোগা সব হিন্দুদের তৈরী। শূন্য বা 0 (ZERO) আবিষ্কার হিন্দুরা করেছেন, জ্যামিতি ত্রিকোণমিতি এদের আবিস্কার হিন্দুরা করেছে। যেই ঋষিরা এগুলো আবিস্কার করেছেন তাঁরা কোনো সময় দাবি করে নি যে তারা করেছে।
দুঃখের বিষয় বিদেশী বিজ্ঞান এখনো আমাদের বিজ্ঞান বই তে আছে। ইংরেজ চলে গেলেও তাদের অনেক ছাপ রয়ে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। বিদেশী আক্রমণ কারিরা বিভিন্ন সময় আক্রমন করেছে অখন্ড ভারতে, তারা সেই সময়ের তক্ষশিলা, নালন্দা মত বিশ্ব বিদ্যালয় পুরিয়ে দিয়েছে, আগুনে পুরে গেছে কত তথ্য কত নথি। যে গুলো থাকলে আমরা আরো কত তথ্য জানতে পারতাম।
সপ্ত ঋষি যাঁরা আমাদের পূর্বপুরষ ছিল তাঁরা কত জ্ঞানী ছিলেন, যাঁরা আমাদের এই বেদ দিয়ে গেছে, যে জ্ঞান ভান্ডার দিয়ে গেছে, তাঁদের আমরা ভুলতে চলেছি। তাঁরা বেদের মাধ্যমে বলে গেছে সৃষ্টির কথা শেষ এঁর কথা, তাঁরা বলে গেছে যতবার সৃষ্টি হবে ততবার বেদের সৃষ্টি হবে ততবার মানুষ আসবে আবার চলেও যাবে, পুরো ব্যাপার টাই একটা চক্র। এই চক্র সৃষ্টি কর্তা মহা বিষ্ণু (Ultimate supreme God ) । এই মহা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি কর্তা মহা বিষ্ণু।
এই তত্ত্ব গুলো যখন প্রথমে শুনি, তখন থেকে আমার পূর্ব পুরুষ দের প্রতি যানার আগ্রহ বেড়ে যায়। এই আগ্রহ থেকে আমি আরো তথ্য জানি যেই গুলো যেনে আমার নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় আমি হিন্দু। আমার জন্ম সেই ভারতে হয়েছে যেখানে জন্মেছেন প্রভু রাম ও কৃষ্ণ। যেখানে জন্মেছেন মহারাজা বিক্রমাদিত্য, চোল রাজারা এবং শিবাজী মহারাজ । আমি গর্বিত যে আমি সনাতন হিন্দু পরিবার এ জন্ম গ্রহণ করেছি।