অধ্যায় -১ : অংশুর ফোন
অধ্যায় -২ : সম্মেলন
অধ্যায় -৩ : লাইভ কনসার্ট
অধ্যায় -৪ : পুলিশ থানা
অধ্যায়- ৫ : গুপ্ত ক্যামেরার পিছনের মুখ
লেখক : সন্দীপ বর্ধন
অধ্যায় -১ : অংশুর ফোন
মোবাইল ফোনের রিংটোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল বিল্টুর, ঘুমের চোখে ফোনটা রিসিভ করতে করতে কেটে গেলো। সবে ঘুমটা এসেছিল বিল্টুর অনেক ক্ষন ধরে এদিক ওদিক করার পর। মোবাইলটা হাতে নিয়ে লকস্ক্রীন খুলতেই দেখে অংশুর ফোন, মোবাইলের ঘড়িতে তখন তিনটে বাজে। বিল্টু মনে মনে ভাবছে এত রাতে অংশু কেন ফোন করলো , কোনো বিপদে হল নাকি ? ভাবতে ভাবতে আবার ফোন বেজে উঠলো বিল্টু দেখলো আবার অংশুর ফোন আসছে; এবার বিল্টু প্রথম রিং এর সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে ভেসে আসলো অংশুর কান্নার শব্দ। বিল্টু এপাস থেকে প্রশ্ন করলো কী হয়েছে ? তুমি এই ভাবে কাঁদছো কেন? ওপাশ থেকে অংশুর হাঁপানোর শব্দের সাথে কান্নার শব্দ আসছিল, এপাশে বিল্টু মনে মনে ভাবছে নিশ্চয়ই অংশুর সাথে বড়ো কিছু ঘটে গেছে কারণ বিল্টু যতটুকু অংশুর সমন্ধে জানে যে অংশু সহজেই ভেঙ্গে পরার মেয়ে না। বিল্টু প্রথমে অংশু কে শান্ত করানোর চেষ্টা করলো কিন্তু অংশুর কান্না থামাতে পারলো না। কাঁদতে কাঁদতে শুধু বললো 'তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি আশো' ! এটা বলে ফোনটা রেখে দিল।
বিল্টু আর অংশু দুজন দুজনকে দুই - আড়াই বছর ধরে চেনে, দুজনে খুব ভাল বন্ধু, যদিও বিল্টু অংশু কে শুধু ভালো বন্ধু ভাবে না, তার থেকেও বেশি কিছু ভাবে কিন্তু অংশু তাকে শুধু বন্ধু ভাবে, বিল্টুর এটা মনে হয় অংশুর কথাবার্তা, আচার - আচরন দেখে। তাই বিল্টু প্রোপোজ করে বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে চায় না। বিল্টু অংশু কে অনেকে আগের থেকেই চিনতো; যখন বিল্টু দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়তো তখন থেকেই চিনতো অংশুকে, অংশু সেই সময় পড়তো একাদশ শ্রেণীতে । বিল্টু'র একটা ভালো লাগা প্রথম থেকেই ছিল অংশুর প্রতি, পড়াশুনা ও অন্যান্য সমন্ধে জড়িয়ে যাওয়ার জন্য ভালো লাগার কথাটা বলা হয়ে ওঠেনি।
দীর্ঘ দশ বছর পর বিল্টু ও অংশুর বন্ধুত্ব হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। সময়ের সাথে সাথে দুজনে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। এতটাই ভালো বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে যে তারা দুজনে মিলে একটি প্রাইভেট কোম্পানি চালায় , এতটাই ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে যে বিল্টুর এক কথায় দিল্লি চলে আসে অংশু। আজ দুপুরে তারা দিল্লি এসেছে একটি কনফারেন্স ও একটি মিউজিক কনসার্ট এ যোগ দিতে । তারা উঠেছিল একটি বিলাসবহুল পাঁচতারা হোটেলে। দুজনের আলাদা আলাদা রুম বুক করা হয়েছিল। রাতের ভোজন করে দুজন দুজনের রুমে শুতে যাওয়ার কিছুক্ষন পরে বেজে উঠলো বিল্টুর ফোন; অংশুর হাঁপানো আর কান্না শুনে বিল্টু ভাবতে লাগল কী হল অংশুর? এই তো শুতে গেল ! অংশু শুধু ফোনে বললো -' তুমি প্লিজ করে তাড়াতাড়ি আসো'!
এক লাফে বিছানা থেকে উঠে টি শার্ট পরতে পরতে বিল্টু বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির কথা ভাবতে লাগলো ; কি হল অংশুর? এত রাতে কী হতে পারে ? কয়েক ঘন্টা আগে দুজনে একসাথে রাতের ভোজন করে রুমে এলাম, তারপর ওকে ওর রুমে রেখে শুভঃ রাত্রি বলে আমি আমার রুমে এসে শুয়েছি ! এর মধ্যে কি হল?
এইসব ভাবতে ভাবতে আমি আমার রুম লক করে পাশের রুমের দরজায় গিয়ে ধাক্কা দিলাম। কয়েক সেকন্ডের মধ্যেই দরজা খুলে অংশু আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আমি ওকে রুমের ভিতরে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কী হয়েছে, তুমি কাঁদছো কেন? কিছু হয়েছে না কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছ ?
অংশু জানলার দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বললো ওখানে কেউ দাড়িয়ে আমাকে দেখছিল। আমার উপর নজর রাখছিল। আমি বললাম কে নজর রাখবে, তুমি ভুল দেখেছো ঘুমের চোখে। তখন অংশু রেগে বলতে লাগল আমি তোমার সাথে এত রাতে মজা করার জন্য ফোন করে ডেকে নিয়ে এলাম, তুমি যাও এখন থেকে।
তখন বিল্টু অংশুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল আমি জানি তুমি ভয় পেয়েছ তোমার অবস্থা দেখে আমি বুঝতে পারছি তুমি খুব বড় মাপের ভয় পেয়েছো, তুমি যাতে আর ভয় না পাও তাই বললাম কেউ নজর
রাখছে না। আচ্ছা আমাকে ক্ষমা করে দাও, বলো তুমি কি দেখেছো? কে জানলা দিয়ে দেখছে? কখন থেকে দেখছে? তখন অংশু আমাকে পাশে পেয়ে একটু শান্ত হয়েছে , ২-৩ মিনিট চুপ করে বসে থাকার পর অংশু বিছানার পাশে রাখা একটা জলের বোতল থেকে একটু জল পান করে বলতে লাগল - আমি ফোন লক করে ঘুমোতে যাবার সময় জানালার দিকে চোখ পরে, মনে হল কে একটা সরে গেল। আমি ভাবলাম আমি ভুল দেখেছি, আমার কল্পনা অথবা সারাদিন এর ক্লান্তি কিন্তু না আমি এদিক থেকে ওইদিক করতে করতে আবার চোখ পরে জানলার দিকে দেখি কে দাড়িয়ে আছে, আমাকে দেখছে বড় বড় চোখ করে। রুমের নাইট লাইটে স্পষ্ট বোঝা না গেলেও এটুকু বোঝা যাচ্ছিল কেউ দাড়িয়ে আছে জানলার বাইরে। আসতে করে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালাতেই লোকটা জানলার বাইরে থেকে সরে গেছে,লোকটা ওখানে আর ছিল না।
তৃতীয় বার আমি সজাগ ছিলাম যেই দেখলাম সাথে সাথে মোবাইলের ফ্ল্যাশটা জানলার দিকে করতেই তার বড় বড় চোখ জ্বলে উঠল। মোবাইলের আলোয় দেখলাম গভীর কৃষ্ণবর্ণের , কদাচিৎ মুখর্শ্রি যুক্ত এক ব্যক্তি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওই ব্যক্তি কে দেখতে পেড়েছি এটা যখন সে বুঝতে পারল তখন তার মুখমণ্ডলে ভেসে উঠলো এক কুৎসিত হাসি। যতটা কুৎসিৎ ছিল তার হাসি ততটাই ভয়ানোক তার মুখর্শ্রি । মাঝরাতে এই দৃশ্য দেখে কাঁপতে কাঁপতে তোমাকে ফোন লাগতে যাচ্ছিলাম সেই সময় আমার ফোনের নেটওয়ার্ক আউট হয়ে যায়। আমি দেখি ওই ব্যক্তি তখনও হেঁসে যাচ্ছিল ওই দেখে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। এতটাই ভয় পেয়েছি যে আমি ভয়ে দরজা খুলে তোমার রুমে এসে তোমাকে ডাকবো, আমার ওইটুকু সাহসে কুলালো না। এতটাই ভয় পেয়েছি যে ভয়ে কেঁদে ফেলেছি । বিল্টু তখন অংশু কে বললো তুমি ফোন কি করে করলে আমাকে ? অংশু
বললো তাড়াতাড়ি করে ফোন বন্ধ করে চালু করলাম , দেখালাম নেটওয়ার্ক এসেছে তবে খুবই ক্ষীণ । সাথে সাথে কল করলাম তোমাকে কিন্তু রিং হল না। দ্বিতীয়বার রিং হল, তুমি তুললে না। তিনবারের বার তুমি ফোনটা ধরলে , তখন আমার প্রাণে প্রাণ এলো।
বিল্টু তখন অংশুর দু-হাত ধরে বলল ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি রাতে তোমার সাথে তোমার রুমে থেকে যাচ্ছি, আমিও দেখতে চাই কে তোমাকে কে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিল এবং তার উদ্দেশ্য কী? আমি এই ঘরে তোমার সাথেই রাতটা কাটছি তাই তুমি ভয় পেওনা, এটা বলে বিল্টু অংশুকে আশ্বস্থ করার চেষ্টা করল। অংশু কিছুটা আশ্বস্থ হলেও পুরোপুরি হল না । তারপর বিল্টু জানলা খুলে বাইরে দেখতেই চোখে পড়লো উল্টো দিকের বাড়ির ছাঁদ । বিল্টু মনে মনে ভাবলো ওই ছাঁদ থেকে কেউ হয়তো নজর রাখছিল অংশুর উপর কিন্তু তার উদ্দেশ্য কী হতে পারে বিল্টু খোঁজার চেষ্টা করছিল। কিছুক্ষন পর বিল্টু জানলা টা বন্ধ করে আংশুর কাছে গিয়ে বলল কাল সকালে হোটেল কতৃপক্ষকে ব্যাপার টা জানাতে হবে । এটা শুনে অংশুও তাতে সহমত প্রকাশ করল। তারপর বিল্টু অংশু কে বললো রাত অনেক হল শুয়ে পরো আমি নজর রাখছি কেউ জানলায় উকি দেয় কিনা। এটা শুনে অংশু বললো আমি এখানে ঘুমোবো আর তুমি সারা রাত পাহারা দেবে এটা হয় তুমিও শুয়ে পরো।
তখন বিল্টু মনে মনে ভাবছে = রুমে তো বিছানা একটা সেখানে কি করে শুতে পারে ; যতই হোক অংশু বিল্টুর ভালো বন্ধু ; তাদের সম্পর্ক টা বন্ধুত্বের একসাথে এক বিছানায় কী করে শুতে পারে? কয়েক সেকেন্ড পর বিল্টু বললো আচ্ছা ঠিক আছে তুমি শুয়ে পরো; আমি আমার রুমের থেকে মাথার বালিশ টা নিয়ে আসি, বলে বিল্টু ওর রুমে দিকে গেল।
কিছুক্ষনের মধ্যেই বিল্টু তার রুম থেকে বালিশ ও চাঁদর নিয়ে আসলো। তারপর যখন চাঁদর নিচে পাতলো তখন অংশু বলে উঠলো এটা কি করছো? তোমাকে নীচে কে শুতে বলেছে, আমি বলেছি নীচে শুতে? তখন বিল্টু
বললো না বলোনি ঠিকই কিন্তু এক খাটে শুয়া টা ভালো দেখায়, আমরা তো আর প্রেমিক যুগল নই! তখন অংশু বললো প্রেমিক যুগল হলেই এক বিছানায় শুয়া যায় আর বন্ধু হলে বা অন্য সম্বন্ধের কেউ শুতে পারে না ? তুমি আমাকে এতো টা ক্ষীণ মানসিকতার মেয়ে ভাবো? এতো দিন মিশে তোমার এটা মনে হল?
তখন বিল্টু বললো - দেখ অংশু আমি জানি তুমি কত খোলা মনের, তোমার কাছে কোন ব্যাপার না এবং তুমি আমাকেও ভালো করে চেনো আমার কাছেও এটা কোনো ব্যাপার না । তোমার জায়গায় আমি হলেও একই কথা বলতাম। আমি নীচে শুতে যাচ্ছিলাম কারণ আমি তোমার নির্দেশ ছাড়া তোমার বিছানায় কি করে শুই ? আমি তোমার কাছে সরাসরি জিজ্ঞাসা করতে পারিনা ; সরাসরি জিজ্ঞাসা করলে সেটা খারাপ দেখায়, তাই আমি নীচে শুতে যাচ্ছিলাম। অংশু তখন জোরে নিশ্বাস নিয়ে হুমম করে হাসতে হাসতে বললো এটা আমারও বিছানা না; এটা হোটেলের বিছানা সুতরাং বলিশ নিয়ে বিছানায় চলে আসো। এটা শুনে বিল্টু হাসতে লাগলো, তারপর বিল্টু বালিশ নিয়ে বিছানায় গা হেলিয়ে দিল। বিল্টু কে পাশে পেয়ে অংশু এখন একটু শান্ত হয়েছে। শুয়ে শুয়ে একে অপরের সাথে কথা বলতে বলতে দুজন কখন ঘুমিয়ে পড়েছে, দুজনের কেউ বুঝতে পারে নি।
অধ্যায় -২: সম্মেলন
সকলে কনিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙলো বিল্টুর , এতো সকলে কে আবার বেল বাজাচ্ছে কথাটা ভাবতে ভাবতে আবার বেজে ওঠে কনিংবেল ; পাশের থেকে অংশু বিল্টু কে নাড়া দিয়ে বলে দেখোতো কে এসেছে , এতো সকলে জ্বালাতে! এটা বলে অংশু পাশ ঘুরে শুয়ে পরলো। বিল্টু আসছি বলে বিছানা থেকে নিচে নেমে চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুললো। দরজা খুলে বিল্টু দেখলো এক মহিলা রুম পরিষ্কার করতে এসেছে ; বিল্টু ওই মহিলা কে বললো এতো সকলে পরিষ্কার করতে চলে এসেছেন ? তখন মহিলা টা উত্তর দিল স্যার আমি প্রতিদিন সকাল ৯.৩০ তে পরিষ্কার করতে আসি । তখন বিল্টু বললো ৯.৩০ টা বেজে গেছে আমি বুঝতে পারি নি আচ্ছা আসুন ভিতরে ; তারপর ওই মহিলা ভিতরে গিয়ে রুম পরিস্কার করতে লাগলো।
বিল্টু তখন চেয়ারে বসে সিগারেটের বাক্স থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে সুখটান দিতে লাগল। ২-৩ টান দিতে না দিতেই অংশু পাশ থেকে বিল্টুর হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে টানতে লাগল আর বিল্টু কে জিজ্ঞাসা করল কে এসেছে? বিল্টু বলল ওই রুম পরিস্কার করতে এক মহিলা । অংশু কয়েকটা টান দিয়ে সিগারেট টা আবার বিল্টু কে দিয়ে দিল , কিছুক্ষনের মধ্যে ওই মহিলার কাজ হয়ে গেল, কাজ করে রুমের থেকে বেরোনোর সময় বিল্টু মহিলাটা কে জিজ্ঞাসা করলো পাশের রুম তো পরিস্কার করবেন আপনি? মহিলাটা উত্তর দিল- হ্যাঁ স্যার। তখন বিল্টু পাশের রুমের চাবি টা মহিলা কে দিয়ে বললো কাজ হয়ে গেলে চাবি টা আবার দিয়ে যাবেন ; 'আচ্ছা ঠিক আছে স্যার' বলে চলে গেলেন মহিলা।তারপর বিল্টু রিসেপশন কে ফোন করে চা অর্ডার দিল দু'জনের জন্য।
কয়েক মিনিটের মধ্যে চা চলে আসলো, চা শেষ করে অংশু গেল ফ্রেশ হতে ,দুপুরে তাদের একটা সন্মেলনে এ যেতে হবে। অংশু যখন ফ্রেশ হতে গেল তখন বিল্টু ওই জানলার দিকে তাকিয়ে রাতের কথা ভাবতে লাগলো।
বিল্টুকে ভাবছিল কে বা কার এবং কেন উকি দিচ্ছিলো জানলা দিয়ে? তাদের উদ্দেশ্য কি? এই সব ভাবতে ভাবতে অংশু ফ্রেশ হয়ে চলে এসেছে, বিল্টু কে ফ্রেশ হতে বলল কারন ১১ টায় তাদের সম্মেলন। তাই বিল্টু সময় নষ্ট না করে ফ্রেস হতে চলে গেল।
দুজনই তৈরি হয়ে সাড়ে দশটার মধ্যে হোটেল থেকে বেরোলো সন্মেলনের উদ্দেশ্যে। বিল্টুরা হোটেলের সামনে থেকে ক্যাপ বুক করল, ২০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল সম্মেলন হলে। সম্মেলন ছিল বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে ; সেখানে আমন্ত্রণ ছিল দেশের ও বিদেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক বিশেষজ্ঞ , সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টার, থিঙ্ক ট্যাঙ্কার ও বিদেশ মন্ত্রকের কর্মচারীরা। বিল্টু ও অংশু আমন্ত্রিত ছিল থিঙ্ক ট্যাঙ্কার হিসাবে । জিও থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নামে একটি প্রাইভেট গ্রুপের ডিরেক্টর ছিল বিল্টু, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ছিল অংশু। সম্মেলন চললো ৩ ঘণ্টা মতো ।
তারপর দুজনে একটি শপিং মলের ফুড কোর্ট এ বসে লাঞ্চ করলো। লাঞ্চ করতে করতে বিল্টু কালরাতের কথা ভাবছিল নিজের মনে; পাশে অংশু সন্মেলনের কথা আলোচনা করছিল কিন্তু বিল্টু সেই কথা গুলো শুনছিল তবে মাথায় ঢুকছিল না। বিল্টু মাথায় এটাই ঘুরছিল কেন উকি দেবে, ভয় দেখানোর কারন কী এই সব; বিল্টু যে খাচ্ছে কম ভাবছে বেশি সেটা অংশু লক্ষ করে ; তখন অংশু একটা মোমো বিল্টুর মুখে গুঁজে দিয়ে বলে কি ভাবছো এত ? এত ভাবনা কিসের? বিল্টু বললো কাল রাতের ঘটনা , অংশু বললো এতো ভেবে কি করবি আমরাতো আছি আজকের দিনটাই; আগামীকাল তো আমরা চলেই যাব। বিল্টু সেটা ঠিক আজ রাতটাই কিন্তু তোমাকে ভয় দেখানোর কারন টা কি পাশের রুমে তো
আমিও ছিলাম; কোথায় আমাকে তো উকি মেরে দেখেনি বা ভয়ও দেখায়নি, ব্যাপারটা রহস্য জনক নয়? তোমার কি মনে হয়? অংশু বললো হয় লোকটা মানসিক রোগী নয় মেয়েদের লুকিয়ে ভয় দেখাতে মজা পায়; বিল্টু বললো আরেকটা কারণও হতে পারে; অংশু বললো সেটা কি? ইচ্ছা করে ভয় দেখাচ্ছে - বিল্টু বললো। অংশু বললো - ইচ্ছা করে কেউ কেনো দেখাবে , আমার মনে হয় না। বিল্টু তখন অংশু কে বললো সব কিছু আমাদের ইচ্ছে মতো হলে সবাই ভালোভাবে থাকতো, শেয়ার বাজারে কারো টাকা যখন বারে তখন কারো না কারো টাকা কমে । ঠিক একই ব্যাপার এখানে, তুমি এখানে থাকো না, যে তোমাকে দেখছিলো সে তোমাকে চেনে না তাও তোমাকে দেখছিলো কারন ভয় দেখানোর জন্য; তোমার ভয় পাওয়াতে তাদের কি লাভ হবে এটাই রহস্য ? অংশু একভাবে শুনছিল যখন বিল্টু এই কথা গুলো বলছিলো। অংশু শুনে একটাই প্রশ্ন করলো কে হতে পারে সেই লাভোবান ? বিল্টু বললো কালকের বিমানের টিকেট এর দিন পাল্টানো যায় নাকি দেখ !
অংশু বললো মানে তুমি বাড়ি যাবে না কাল; বিল্টু বললো আমি না, আমরা দুজনই যাচ্ছি না। টিকেট দুই দিন পরের কর, বরং তুমি গতকালের টিকেট আগে বাতিল কর , যাওয়ার টিকেট আমি যখন বলবো তখন করো। অংশু বললো যদি কিছু না বেরোয় , তখন দুইদিন থাকা বিফলে যাবে । বিল্টু বললো এইটুকু বিপদতো নিতেই হবে, আর আজ আমরা একটা রুম ছেড়ে দেবো কারন যখন তোমার সাথেই তোমার ঘরে থাকছি তখন আরেকটা রুম রাখার মানে হয় না। অংশু তখন বললো রুমের কথাটা আমি তোমাকে হোটেলে গিয়ে বলবো বলে ঠিক করে রেখেছিলাম কিন্তু তুমি আমার এক কদম আগে বলে দিলে।তুমি সব কী করে বুঝে যাও আমি কি বলবো? বিল্টু বললো এত দিন মিসছি তোমার সাথে আর এইটুকু বুঝবো না !
অংশু বললো সেটা ঠিক কিন্তু তুমি আমাকে একটু বেশিই বোঝো। বিল্টু তখন অংশু কে বললো চলো আমরা এখন থেকে বেরোই বরং হোটেলে গিয়ে
বিশ্রাম করি। রাতে আবার লাইভ কনসার্ট এ যেতে হবে ; যেটা সবথেকে বড় কারন দিল্লি আসার। খাবারের বিল মিটিয়ে বিল্টু আর অংশু হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। হোটেলে এসে বিল্টু রিসেপশনে কথা বলে একটা ঘর ছেরে দিল । তারপর দুজনেই একসাথে রুমে গিয়ে বিশ্রাম করতে লাগলো ।
অধ্যায়-৩: লাইভ কনসার্ট
সম্মেলন থেকে এসে হোটেলে যখন দুজনে বিশ্রাম করছিল তখন দুজনই ঘুমিয়ে পরে। এক ঘন্টা পর বিল্টু'র ঘুম ভেঙে যায়, বিল্টু দেখে অংশু তখনো ঘুমোচ্ছে, এ সি ফুল থাকার কারন সে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে; গায়ে চাঁদর পায়ের তলায় পরে আছে, তখন বিল্টু চাঁদর টা ভাল ভেবে অংশুর গায়ে দিয়ে দিল। বিল্টু যখন চাঁদর অংশুর গায়ে দিচ্ছিলো তখন বিল্টু লক্ষ করল বিছানার সামনে যে ফুলদানি আছে সেই ফুলদানির মধ্যে ছোট গোল কিছু লাগানো আছে, একটু ভালো করে দেখতেই বিল্টু বুঝতে পারলো সেটা একটা স্পাই ক্যামেরা। বিল্টু ক্যামেরা হাত দিয়ে দেখতে যাবে যখন হটাৎ বিল্টুর মাথায় কিছু খেলে গেল, বিল্টু ক্যামেরা টা না ধরে পাশে রাখা সিগারেটের বাক্স টা তুলে নিল; তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে সেই জানলার সামনে দাড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানতে লাগল আর মনে মনে ভাবলো এই ঘরে আরো ক্যামেরা আছে এটা ভাবতেই বিল্টু দৌড়ে বাথরুমে গেল, গিয়ে বাথরুম ভাল করে দেখলো কিন্তু ওখানে কোনো ক্যামেরা বিল্টুর চোখে পড়ল না। বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘরে হাঁটতে লাগল আর ভালো করে দেখতে লাগল। ঘর দেখার সময় বিল্টু আরো দুই জায়গায় ক্যামেরা আছে সেটা দেখতে পারলো।
বিল্টু এতো সাবধানে আসতে আসতে ক্যামেরা খুঁজছিল যাতে কেউ যদি লক্ষ রাখে তাদের উপর সে যেন কোন ভাবে বুঝতে না পারে।বিল্টু'র মাথায় এক এ এক এ দুই হতে লাগল, কিছু কিছু শূন্যস্থান পূরণ হতে লাগল। কিছুক্ষন পর অংশু ঘুম থেকে উঠলো, অংশু লক্ষ করল বিল্টু ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। অংশু বলে উঠল কিছু সমাধান হল জেমেস বন্ড ডবলও সেভেন, বিল্টু তখন বললো তুমি উঠে গেছো, রেডি হয়ে নাও কনসার্ট এর সময় এগিয়ে আসছে
যেতে হবে সময় মতো। তখন অংশু বললো সে তো যাবো কিন্তু তুমি কি ভাবছিলে পায়চারি করতে করতে? লাইভ কনসার্ট এর কথা ভাবছিলাম বিল্টু বললো ।
অংশু বললো মোটেও তুমি এটা ভাবছিলে না; সেটা হলে তোমাকে চিন্তিত দেখাতো না। বিল্টু তখন অংশু'র কানের সামনে গিয়ে আসতে আসতে বলল রাতে বলবো কনসার্ট এর পর।
তারপর অংশুর কানের সামনে থেকে সরে হাসতে হাসতে বললো তৈরি হয়ে নাও রাতে সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য ! বিল্টু'র সারপ্রাইজ এর কথা শুনে অংশু অবাক হল বটে, তবে কোনো প্রশ্ন করলো না। বিল্টু'র সারপ্রাইজ আছে কথাটা সরে বলার কারণ- তাঁদের যদি কেউ নজর রাখে সেই গুপ্ত ক্যামেরার মাধ্যমে তারা যেন বুঝতে না পারে, বিল্টু যে তাদের ক্যামেরা দেখে নিয়েছে।
কিছুক্ষনের মধ্যে দুজনেই তৈরি হয়ে গেল কনসার্টে যাওয়ার জন্য। সন্ধ্যে ছয়টা'র সময় তারা বেরোলো কনসার্টের উদ্দেশ্যে; ১৬ থেকে ১৮ মিনিটের মধ্যে তারা পৌঁছে গেলো কনসার্ট স্টেডিয়ামে। বিল্টু তখনো অংশু কে ক্যামেরার কথা বলে নি, বিল্টু ভাবলো এখন বললে কনসার্ট উপভোগ করতে পারবে না অংশু; তাই সে ঠিক করেছে রাতে ফেরার টাইম এ বলবে ।
সন্ধ্যে সাতটায় এই অনু্ঠানটি শুরু হওয়ার সময়, এই অনুষ্ঠানে পারফরমেন্স করবে বিদেশি এক ' রক ব্যান্ড ' । এই ব্যান্ড বিল্টুর খুব প্রিয় এক ব্যান্ড, অংশু এসেছে বিল্টুর সাথে সঙ্গ দিতে। অংশুর প্রিয় না হলেও বিল্টুর সাথে মিশতে মিশতে বিল্টুর অনেক কিছু ওর এখন ভালো লাগে। ঠিক সময় মতো অনুষ্ঠান শুরু হল, টানা দুই ঘণ্টা মঞ্চ কাপিয়ে গেল ওই রক ব্যান্ড।
বিল্টু আর অংশু দুজনেই খুব উপভোগ করেছে এই পারফরমেন্স, বিল্টুর মাঝে মাঝে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিলো কারণ হাইস্কুল থেকে যাদের গান শুনে এসেছে তাদের সামনে দেখছে আর শুনছে সেটা বিল্টুর কাছে সপ্নের মত।
পারফরমেন্স শেষ হওয়ার পর বিল্টু ও অংশু গায়কের অটোগ্রাফ নিয়েছে ও সেলফি তুলেছে ব্যান্ডের সব সদস্যদের সাথে।
রাত ন'টা নাগাদ তাড়া একটি রেস্তোরাঁয় গেলো নৈশভোজ করতে। নৈশভোজে তাড়া অর্ডার করল হায়দরাবাদি পোলাও, তন্দুরি চিকেন, চিলি পানির, বাটার পারাঠা, মাটন কোরমা, কোল্ড ড্রিঙ্কস ও রেড ওয়াইন। নৈশভোজ করতে করতে অংশু বিল্টু কে বলল কী সারপ্রাইজ দেবে বললে কোথায় সারপ্রাইজ? আর কানে কানে বললে রাতে বলবো কী এমন কথা যেটা হোটেলে বোলা যেতো না? বিল্টু বলল সারপ্রাইজ দেব তবে তোমাকে না যারা দেখছিল আমাদের; শুনে অংশু বলল মানে, কে দেখছিলো তখন আমাদের? আমি বুঝতে পারছি না তুমি কী বলতে চাইছো? ওয়াইনের নেশা তোমার চরে গেছে মনে হচ্ছে।
এই টুকু তে আমার নেশা চড়ে যাবে, তোমার মনে হচ্ছে আমি নেশায় বলছি, বিল্টু জিজ্ঞাসা করলো আংশুকে ? অংশু বলল আমারি এখনও ঠিক নেশা হয় নি, তাহলে তোমার কি করে হবে ! তুমি খুলে বলো কি বলবে বলেছিলে রাতে? বিল্টু বললো আমাদের রুমে ৩টে গুপ্ত ক্যামেরা লাগানো আছে , আমদের রেকর্ড করা হচ্ছে। মানে আমাদের কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে , আমাদের কথা কেউ শুনছে ; আর তুমি এখন বলছো? আমাদের বাথরুমেও কী ক্যামেরা লাগানো আছে ? হে ভগবান আমি শেষ, ' আমর বাথরুমের ভিডিও সোশ্যাল সাইড এ যদি ওরা দিয়ে দেয় তাহলে আমার 'এই সময় বিল্টু পাশে এসে অংশু কে থামিয়ে বলল - বাথরুম এ কোন ক্যামেরা নেই আমি ভালো করে দেখেছি , বাথরুমে থাকলে আমি এতক্ষন চুপ করে বসে থাকতাম, এতক্ষনে পুলিশ নিয়ে হোটেলে তালা ঝুলয়ে দিতাম । অংশুর হাতধরে বলল চিন্তা করিশ না বাথরুম সাদা মার্বেলের বলে হয়তো লাগানো নেই, বড়ো কথা বাথরুমে থাকলে লোকের আগে চোখে পড়বে, তাই বাথরুমে নেই। আর আমার মনে হয় না যে বা যাঁরা এটা করছে তারা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ছাড়ে; ছাড়লে এতদিনে ধরা পড়ে যেতো। যে বা যাঁরা এটা করছে তাদের সুপ্ত বাসনা আছে সেটা পূরণ করে লাইভ দেখে।
অংশু তখন বলল কোথায় কোথায় ক্যামেরা লাগানো ওই রূমে? বিছানার পাশে যে ফুলদানি আছে ওই ফুলদানি তে একটা লাগানো, একটা দেয়াল ঘড়ির ভিতরে, আরেকটা হল বড় দেওয়াল পেইন্টিং এর মধ্যে , এই তিন জায়গায় লাগানো বিল্টু বলল। বিল্টু এটাও বলল তোমাকে ভয় দেখানোর কারন হয় তো এটাই, আমরা একসাথে একঘরে থাকি এবং সহবাস করি।
শোন আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে ওদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার, তোমাকে আর আমাকে একটু নাটক করতে হবে। আমরা এখান থেকে প্রথমে পুলিশ স্টেশন ও তার পর হোটেলে যাবো। পুলিশ স্টেশন যাওয়ার সময় বলছি আমার কি প্ল্যান? এখন আগে খাবার গুলো শেষ করি ! খাবার শেষ করে বিল মিটিয়ে তারা রওনা দিলো পুলিশ স্টেশনের উদ্যেশ্যে ।
অধ্যায় -৪ : পুলিশ থানা
বিল্টু ও অংশু নৈশভোজ করে যখন বেরোলো তখন ঘরিতে দশটা বেজে গেছে; বিল্টু আর অংশু রেস্তোরার বাইরে অটোর জন্য দাড়িয়ে ছিল কিন্তু রাত বেশি হাওয়ার জন্য অটো পেতে অসুবিধা হচ্ছিল। ১৫-২০ মিনিট পর অবশেষে অটো পেল বিল্টু'রা । অটো তে যেতে যেতে পুরো প্ল্যান অ্যাংশুকে বুঝিয়ে দিল বিল্টু; ১০.৪০ নাগাদ পুলিশ থানায় এসে পৌঁছলো বিল্টু ও অংশু। অটোর টাকা মিটিয়ে তারা পুলিশ থানার ভিতরে প্রবেশ করল।
ভিতরে গিয়ে বিল্টু এক কনস্টেবল কে হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করল " অফিসার ইন চার্জ কন হ্যে ইস থানেকা" ? কনস্টেবল বলল " অ্যাপ লোগ থোড়া উধার বেঠিয়ে স্যার পেট্রোলিং পার গ্যায়া হে, কুছ দের ম্যে আজাইগা" । বিল্টু বলল - "আচ্ছা ঠিক হে হাম লোগ বাহার ইন্তেজার কর্ত্যাহে , যাব আয়েগা হামে আপ আওয়াজ দেনা হাম লোগ আন্ডার অ্যাজাইগে" - বলে বিল্টু ও অংশু পুলিশ থানার বাইরে এসে দাড়ালো। বাইরে এসে বিল্টু ও অংশু দুজনে একটা করে সিগারেট ধরালো। সিগারেট খেতে খেতে বিল্টু ও অংশু দেখলো একটা পুলিশ গাড়ি অসলো তার থেকে কয়েকজন পুলিশ থানার ভীতরে ঢুকে গেল। অংশু বলল উনি মনে হয় অফিসার ইনচার্জ, বিল্টু বলল আমারও তাই মনে হয়; চলো ভিতরে চলো বিল্টু অংশু কে বলল। বিল্টু ও অংশু যখন ভীতরে ঢুকতে যাচ্ছিল তখন সেই কন্সটেবল বাইরে এসে বললো 'স্যার অ্যা গ্যায়া, অ্যাপ আন্ধার আইহে" । বিল্টু আর অংশু অফিসার রুমে ঢুকতেই অংশুর মুখে হাসি ফোটে ওহ গিয়ে সরাসরি অফিসার এর রুমে ঢুকে চিয়ারে বসে, বিল্টু অংশুর আচরন দেখে রীতিমতো চমকে যায়; বিল্টু মনে মনে ভাবতে লাগলো অংশুর নেশা হয়ে গেছে, রিপোর্ট লিখাতে এসে আমরাই না ভিতরে ঢুকে যাই । বিল্টু ভয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে , অফিসার কোনো ফাইল দেখছিলেন তাই আমাদের তখন উনি দেখিনি। অংশু চেয়ারে বসে যেই
ভাবে ঠক ঠক শব্দ করে অফিসার কে বোঝালো যে ঘোরে উনি বাদে অন্য কেউ এসেছে, সেটা দেখে বিল্টুর মাথায় হাত ! অংশু এই সব কী করছে, সিগারেট টা টেনে রেড ওয়াইন এর নেশা চরে গেল নাকি ? বিল্টু অংশুর সামনে এগিয়ে ফিস ফিস করে বলতে লাগল কি করছো তুমি, চেয়ার থেকে উঠে দাড়াও ! উনি আমাদের বসতে বলেনি। কে কার কথা শোনে অংশুর কোনো কথা কানেই গেল না।
অফিসার যখন আমাদের দিকে দেখলেন, প্রথমে আমাকে একনজর দেখলো তারপর অংশুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো! যতক্ষণ অংশুর দিকে তাকিয়ে ছিল অফিসার, বিল্টুর মাথায় একটাই দৃশ্য ঘুরছিল আজ রাত এই থানার কারাগারে থাকতে হবে কিন্তু অফিসার অংশু কে দেখে যে হাসি দিয়ে অংশুর নাম ধরে বলল "অংশু তুই এখানে কী করছিস" ! এটা দেখে বিল্টু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। অংশু উল্টে প্রশ্ন করলো তুই দিল্লি পুলিশে ? আমি তো ভাবতে পারছি না এখানে এসে এই ভাবে দেখা হবে ! অফিসার অংশু কে বলল - বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি না? অংশু বলল আরে কি বলিস ও আমার ভালো বন্ধু বিল্টু , ভালো নাম সন্দীপ । অফিসার বিল্টু কে বলল "আপনি ওখানে দাড়িয়ে আছেন কেন ? আরে আসুন আসুন, চেয়ারে এসে বসুন, অংশুর বন্ধু তার মানে আমার ও বন্ধু" এই কথা শুনে বিল্টু চেয়ারে এসে বসলো। অংশু তখন বিল্টু কে বললো এটা হলো আমার কলেজ ফ্রেন্ড ঈশান, বিল্টু তখন পুলিশ অফিসার ঈশানের সাথে হ্যান্ডশেক করল। তারপর অংশু আর ঈশান একে অপরকে কলেজ জীবনের পরের কথা ও কর্মজীবনের কথা বলছিল তখন বিল্টু নিরব দর্শক হিসেবে সেখানে বসে ওদের কথা শুনছিল। তারপর ঈশান অংশু কে জিজ্ঞাসা করলো এখানে কি ঘুরতে এসেছিস? আর থানায় কেন এসেছিস কিছু চুরি হয়ে গেছে রিপোর্ট লেখাতে এসেছিস? অংশু বললো এখানে কাজের সোর্স এ একটা সন্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলাম , আর কিছু চুরি হয় নি বলছি সব বলছি ; তারপর অংশু দিল্লি আসার পর থেকে যা যা হয়েছে সব বলল ঈশানকে। ঈশানকে অংশু এটাও বলল বিল্টুর কাছে একটা পরিকল্পনা আছে ওদের ধড়ার,
সরাসরি পুলিশ যদি গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেও ততক্ষনে যে বা যারা করছে তাড়া প্রমাণ মিটিয়ে দিতে পারে। ঈশান তখন বিল্টু কে জিজ্ঞাসা করলো কি পরিকল্পনা ? বিল্টু পুরো পরিকল্পনা টা বললো ঈশান কে, এটাও বলল দুজন মহিলা অফিসার লাগবে সিভিক কাপড়ে যারা হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে থাকবে , আসা করি এক দুই দিনে বেরিয়ে আসবে ক্যামেরার পিছনের মুখ গুলো। ঈশান বিল্টুর পরিকল্পনা শুনে খুব প্রভাবিত হল, কারণ এর আগে ঈশান এতো সুন্দর পরিকল্পনা করে কোনো মামলা সমাধান করে নি , তাই বিল্টুর পরিকল্পনায় রাজি হয়ে গেল। পরিকল্পনা মতো দুজন মহিলা পুলিশ কে তাদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হল।
তারপর অংশু ও বিল্টু, ঈশান কে বিদায় জানিয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। ঈশান ওদের হোটেলের আগে অবধি গাড়িতে ছেড়ে দেবার কথা বলেছিল , কিন্তু অংশু ক্যাব বুক করেছি বলে কাটিয়ে দিল। থানার বাইরে এসে বিল্টু অংশু কে বলল এগিয়ে দিচ্ছিলো যখন উনি না কেন করে দিলে, আর কখন ক্যাব বুক করলে? অংশু বলল আমার এখন হাঁটতে ইচ্ছে হল তাই না করে দিলাম, তোমার যদি হাঁটতে অসুবিধা থাকে আমি ঈশান কে বলে দিচ্ছি ও তোমাকে ছেড়ে দেবে। আমার কেন হাঁটতে অসুবিধা হবে, তোমার পুরানো বন্ধু এতদিন পর দেখা, এগিয়ে দিতে চাইলো তুমি না করে দিলে তাই জিজ্ঞাসা করলাম - বিল্টু বলল । শুধু বন্ধু, অন্য বন্ধুদের মতো বন্ধু আর আমি পুলিশ থানায় গেছি রিপোর্ট লিখাতে, ওর সাথে ভাগ্যক্রমে দেখা হয়েছে তাই ; ওর জন্য আমি আমার পরিকল্পণা পালটাবো কেন? আমি তো ভেবেই রেখেছিলাম ফেরার সময় হেঁটে যাবো তাই হেঁটে যাচ্ছি। বিল্টু বুঝতে পারলো ঈশান শুধু বন্ধু কাছের বন্ধু নয় , হাঁটতে হাঁটতে বিল্টু অংশু কে জিজ্ঞাসা করলো আমি কোন বন্ধু তাহলে ? অংশু হাসতে হাসতে বললো তুমি আমার বন্ধু নয় শত্রু , এটা শুনে বিল্টু হাসতে লাগলো কারন এই কথাটা এসেছিলো একটি গানের থেকে যেটা বিল্টুই অংশু কে বলে ছিল তাদের বন্ধুত্বের গোড়ার দিকে মজার ছলে।
হাঁটতে হাঁটতে অংশু বলল - ঈশান যখন তোকে দেখে আমার বয়ফ্রেন্ড বলল তখন তোমার মনের মধ্যে ফুল ফুটছিলো, আমি ঠিক বললাম তো ? বিল্টু বললো - ঠিকই তো বলেছে ঈশান, সবাই এটাই ভাববে আমাদের দেখে , কেউ আমাদের বন্ধু ভাববে না শুধু তুমি বাদে। অংশু বলল শুধু আমি বাদে, কেন তুমি আমাকে কি ভাবো? বিল্টু হাসতে হাসতে বলল আমার একার ভাবা দিয়ে কিছু হবে কি? আমি অনেক কিছু ভাবি , তুমি কি ভাবো? তুমি আমাকে ভালো বন্ধু ভাবো যেটা আমার অনেক ভাবনার মধ্যে একটা , তাই আমরা ভাল বন্ধু; অন্য কিছু যখন ভাববে সেটা আমার ভাবনার সাথে মিললে তখন তাই হয়ে যাবো। এটা শুনে অংশু বিল্টুর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল তুমি আমাকে অনেক কিছু মনে করো , শুনে ভাল লাগল। বিল্টু অংশুর দিকে তাকিয়ে বলল আমি কি মনে করি সেটা তুমি ভালো করেই জানো সেটা তুমি হয়তো বুঝতেও পারো, আমার মনে হয় তুমি যখন আমার মতো মনে করবে তখন এই কথা গুলো আলোচনা করা উচিত । অংশু ফিস ফিস করে বলল - ওই জন্যই তো হেঁটে যাচ্ছি। এতো আসেতে ছিল কথা গুল বিল্টু মনে হল অংশু বির বির করে কিছু বলল কিন্তু শোনা গেল না, বিল্টু জিজ্ঞাসা করল অংশু কে কিছু বললে - অংশু বলল না কিছু না। এই কথা বলতে বলতে তারা হোটেলে পৌছে গেল।
অধ্যায়- ৫ : গুপ্ত ক্যামেরার পিছনের মুখ
রাত ১০.৫০ নাগাদ বিল্টু ও অংশু হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে পৌঁছালো। হোটেলে ঢুকে রিসেপশনে দেখলো দুই মহিলা পুলিশ সিভিল কাপড়ে দাড়িয়ে রিসেপশনিস্ট এর সাথে কথা বলছে, এই দুজনকেই ঈশান পাঠিয়েছে। দুই পুলিশ কর্মী হোটেলে রুম নেওয়া নিয়ে কথবার্তা বলছিল। বিল্টু ও অংশু তাদের দিকে একবার দেখে সোজা তাদের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। যেতে যেতে বিল্টু অংশুর কানে ফিস ফিস করে বললো - ' খেলা শুরু হয়ে গেছে '। অংশু বলল আমি খুব উত্তেজিত। এই কথা বলতে বলতে তারা লিফ্ট এ করে তৃতীয় তলায় উঠে গেল।
ঘরে গিয়ে তাড়া তাদের অভিনয় চালু করে দিল। উল্টো দিকে মহিলা পুলিশ দুটো বিল্টু দের পাশের রুমে এসে উঠলো, যে রুম টা বিল্টুরা সকলে ছেরে দিয়েছে। তারা রুমে ঢুকে এদিক ওদিক করতে করতে দেখে নিলো ক্যামেরা গুলো কোথায় আছে। বিল্টু ও অংশু ঘরে ঢুকে তাদের অভিনয় শুরু করলো, বিল্টু অংশু কে টেনে জড়িয়ে ধরল কিন্তু অংশু বিল্টু কে সরিয়ে দিল , আবার বিল্টু জড়িয়ে ধরলো, ধরে চুম্বন করতে গেল কিন্তু অংশু বিল্টুকে ছিটকে ফেলে দিল, বিল্টু গিয়ে পড়লো বিছানার উপর। অংশু বলল তুমি তোমার স্পর্ধা ছাড়িয়ে যাচ্ছ বলে বাথরুমে গেল ফ্রেস হতে। ওই দিকে মহিলা অফিসাররা তাদের পরিকল্পনা মতো গুপ্ত ক্যামেরার পিছনের মানুষ কে উস্কানি দিতে লাগলো ইশারার মধ্যে দিয়ে।
অংশু ফ্রেশ হয়ে ঠিক উল্টো রূপ দেখানো শুরু করলো, অংশু হট টপ ও একটা স্লিপলেস টিশার্ট পরে পিছন দিয়ে বিল্টু কে জড়িয়ে ধরলো , বিল্টু ঘুরে অংশু কে জরিয়ে ধরলো , পাশের ঘরে মহিলা পুলিশ দুটো সমোগামিতার অভিনয়ে ক্যামেরার পিছনের মানুষকে পাগল করে দিচ্ছিলো। মহিলা পুলিশ গুলো বার বার বলছিল একটা ছেলে হলে রাত টা রঙিন হয়ে যেত, এই সময় কোনো হোটেল কর্মচারী হলেও জমে যেত, তারা অল্প করে মদ্য পান করতে
লাগলো আর ক্যামেরার পিছনের মুখ গুলো কে কথার মাধ্যমে উস্কানি দিতে লাগলো। অভিনয় জমিয়ে দিয়েছিল মহিলা পুলিশ কর্মী দুইজন। অন্য দিকে অংশু বিল্টু কে তার সুপ্ত ইচ্ছের কথা জানাছিল যে গুলো ছিল ক্যামেরার পিছনের মুখ গুলোর উদ্দেশ্যে। অংশু, বিল্টু ও মহিলা অফিসাররা যখন হোটেলে এই সব অভিনয় করছিল ঠিক তখন হোটেলের ঠেকে ৫০-৬০ মিটার দূরে দুটো গাড়ি এসে দাঁড়ালো, সেই গাড়িতে ছিল ঈশান সহ আরো ১২ জন পুলিশ অফিসার সিভিল ড্রেসে। তারা অপেক্ষা করছিল ভিতরের থেকে ইশারার অপেক্ষায়, ভিতর থেকে একবার সিগন্যাল পেলেই তাড়া হোটেলের ভীতরে ঢুকবে।
অনেক সময় হয়ে গেলো ঈশান ঘড়িতে দেখলো ২৫ মিনিট, ৩০ মিনিট , ৪০ মিনিট কোনো সিগন্যাল আসছে না হোটেল থেকে। ওই দিকে বিল্টু ও অংশু অল্প অল্প করে মদ্যপান করেছে ঠিক যেমন মহিলা পুলিস গুলো করছিল, আর একে অপরের সুপ্ত ইচ্ছে প্রকাশ করছে। পাশের ঘরে মহিলা অফিসার গুলো একজন পুরুষ সাথীর কামনা করছিল, দুজন দুজনকে জড়িয়ে তারা বলছিলো এখন যদি একজন পুরুষ সঙ্গী হতো তারা তাকে সব রকম সুখ দিত। ঠিক সেই সময় দুই মহিলার রুমের বেল বেজে উঠলো সাথে সাথে এক অফিসার দরজার ফাঁক দিয়ে দেখলো বাইরে দাঁড়িয়ে একজন পুরুষ। ঠিক একই টাইম এ পাশের ঘরে বেল বাজলো বিল্টু গিয়ে দেখলো দুই জন দাড়িয়ে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা অন্য জন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ। বিল্টু অংশু কে ইশারায় বোঝালো মাছ এসেছে বড়শি থেকে খাবার খেতে, ঠিক একি ভাবে এক মহিলা পুলিশ আরেক মহিলা পুলিস কে বোঝালো। ঠিক সেই মুহূর্তে ঈশান এর ফোন দুটো মেসেজ ঢুকলো " বিগ ফিস অন ম্যাই ডোর" । একটা মেসেজ করেছে অংশু ও অন্যটা করেছে দুই মহিলা পুলিশের মধ্যে একজন। মেসেজ পাওয়ার সাথে সাথে ঈশান ও তার সাথে থাকা ১২ জন অফিসার হোটেলের ভীতরে প্রবেশ করলো। হোটেলে ঢুকে একজন রিসেপশনিস্ট কে আইডি কার্ড দেখিয়ে বলল "দিল্লি পুলিশ প্লিজ হামারি সাথ কোঅপারেট কারিয়ে" ।
একজন পুলিশ রিসেপশনে দাড়িয়ে থাকল যাতে রিসেপশনিস্ট কাউকে জানাতে না পারে , বাকিরা ভীতরে চলে গেলো । দুটি দলে ভাগ হয়ে একটি দল লিফটে আরেকটা দল সিড়ি দিয়ে গেল তিন তলায়। আগের থেকে ঈশান কে বলা ছিল কত তলায় কত নম্বর রুমে অংশুরা ও তাঁর দুই অফিসার আছে। যখন পুলিশ তিন তলায় আসছিল তত ক্ষণে ওই পুরুষ যিনি ওই হোটেলের ম্যানেজার বটে, ওই ম্যানেজার কে দরজা খুলে দিয়েছে ওই দুই মহিলা অফিসার , উল্টো দিকে ওই প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা যাঁরা ওই হোটেলের মালিক ছিলো তারা বিল্টুদের ঘরে ঢুকে নিজেদের পরিচয় দিতে লাগলো, তারা হলেন স্বামী স্ত্রী কিন্তু ওনাদের কিছু সুপ্ত বাসনা আছে যেই জন্য তাড়া আজ এখনে । তাড়া এটাও বললেন তারা ভিডিও তে আপনাদের কথা শুনে এখানে এসেছে, বিল্টু ও অংশু যেই সুপ্ত ইচ্ছা, কামনার কথা বলেছে তাদের মধ্যে ঠিক একি রকম কামনা আছে, যার জন্য তারা এই রুমে এসেছে। বিল্টু জিজ্ঞাসা করলো কোন কামনা আপনাদের এখনে নিয়ে আসল শুনি? প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা টা বললো - এক হলো 'সোয়াপিং' আর তোমাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ভাল লাগে আমাদের যৌবনে ভরা পুরুষ ও নারী। ঠিক একই সময় পাশের ঘরে হোটেলের ম্যানেজার তার সুপ্ত বাসনা ও কামনার কথা বলতে লাগলো । তাদের ক্যামেরায় দেখে আর থাকতে পারছিল না তাই এখানে এসেছে সেটা শুনে মহিলা অফিসার একে অপর কে দেখে হাসতে লাগলো। ঠিক একই সময় বিল্টু ও অংশু হাসতে লাগলো।
ঠিক সেই সময় দরজা খোলার শব্দ হল দুই ঘোরের এক সাথে, ঈশানরা রিসেপশনিস্ট এর কাছ থেকে অতিরিক্ত চাবি নিয়ে এসেছিলো যাতে সরাসরি ঢুকতে পারে। দরজা খোলার শব্দে ম্যানেজার ও প্রাপ্তবয়স্ক দম্পতি দরজার দিকে তাকালো, দরজা খুলতেই দেখলো ৬ জন লোক ভীতরে ঢুকলো তাদের হাতে বন্দুক সেটা তাদের দিকে তাক করা। তাদের মধ্যে একজন বললো দিল্লি পুলিশ, আপনাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে - বেআইনি ভাবে ভিডিও রেকর্ডিং করার জন্য ।
এতো তারাতারি হল ব্যাপারটা যে তাঁরা বোঝার আগেই তাদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিল পুলিশ। ম্যানেজার অবাক হল যখন ওই দুই মহিলাটার মুখে এসে চর মেরে বললো - এবার লকাপে তোর সুপ্ত বাসনা পূর্ণ করবো, তখন ম্যানেজার বুজতে পারল ওই মহিলা দুই জন পুলিস অফিসার। পাশের ঘরে অংশু এসে ওই মহিলাকে চড়িয়ে বলল এই ভিডিও করে কত পরিবার কে ব্লাকমেইল করেছিস সাথে প্রাপ্ত বয়স্ক লোকটার দুই গালে দুটো চর মেরে বলল কাকে দিয়ে ভয় দেখাছিলি গত কাল, বল নাহলে আরও মার খাবি, লাইন অনেক লম্বা তোর উপর অনেকে হাত সাফ করবে সাথে তোর বউ ও মারখাবে। পাশ থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাটা বলে উঠল ওটা তাদের হোটেলের ম্যানেজার , ঈশান জিজ্ঞাসা করল কোথায় এখন ম্যানেজার , মহিলাটা বললো পাশের রুমে। ঈশান বলল আর কে কে যুক্ত এর সাথে আর এই গুপ্ত ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম কোথায়? মহিলাটা প্রথমে চুপ ছিল ঠিক সেই মুহুর্তে দেখলো পাশের ঘরের মহিলা দুটো ম্যানেজার কে হাতকড়া পরিয়ে এনে তাদের সাথে দাড় করানো হল, এটা দেখে ওই প্রাপ্ত বয়স্ক দম্পতি বুঝতে পারলো তাদের খেলা শেষ।
যখন ওই মহিলা এসব কথা ভাবছিলো তখনি অংশুর লাথি গিয়ে লাগলো ওই প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দুই পায়ের মাঝে ; সাথে সাথে ওই ব্যাক্তি পা জড়ো করে কাদতে শুরু করলো, ওই দেখে মহিলা বলে উঠল বলছি সব বলছি দয়াকরে মারবেন না। 'খুব ভাল' ঈশান এবার তোর পালা - অংশু বলে বিল্টুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। ঈশান ওখানে কিছু প্রশ্ন করলো তার পর তাদের নিয়ে পুলিশ গাড়িতে তুলে ৬ জনকে ও দুই মহিলা পুলিশ যারা এই নাটকে ছিল তাদের থানায় চলে যেতে বললো।
আর ঈশান সহ আরও ৬ জন অফিসার পুরো হোটেলের তল্লাশি চালালো, আরো প্রমাণ ও আরো ভিডিও রেকর্ডিং পেল । অংশু ও বিল্টু রিসেপশনে এসে দাঁড়ালো যেখানে বাকি কর্মচারী ও যাত্রীরা দাড়িয়ে ছিল পুলিশের আদেশের অপেক্ষায়। হোটেলের বাইরে সংবাদ মাধ্যমের লোক এসে ভিড় করেছে পুলিস এর কাছ থেকে পুরো তথ্য জানতে।
কিছুক্ষন পর ঈশান ও তাঁর দল বেরিয়ে আসল হোটেলের ভিতর থেকে, সাথে সাথে সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকরা ঈশানের সামনে মাইক ধরে জিজ্ঞাসা করতে লাগল কেন এই হোটেলের মালিক,মালকিন ও ম্যানেজার কে গ্রেফতার করা হয়েছে? উত্তরে ঈশান এক একটি তথ্য সংবাদ মাধ্যমকে জানাল এবং বিল্টু ও অংশুর কথা ও ওদের পরিকল্পনার জন্য হাতে নাতে ধরতে পেরেছে সেটাও জানালো। তারপর সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিকরা বিল্টু ও অংশুর সামনে মাইক ধরলো এবং তাদের দুজনের ছোটো একটা ইন্টারভিউ নিল। ইন্টারভিউ শেষ হলে ঈশান অংশু কে বলে হোটেল তো কাল পুলিশে তালা মেরে দেবে, কাল তাহলে তোরা কোথায় উঠবি , আমার কোয়াটার এ চলে আয়, আমি আর আমার বউ থাকি। অংশু ঈশান কে বললো ধন্যবাদ বলার জন্য, কাল আমাদের ফেরার দিন, আগামী বার আসলে তোকে ফোন করে তোর কোয়ার্টারে উঠবো। তার পর ঈশান , অংশু ও বিল্টুর সাথে হাত মিলিয়ে, বিদায় জানালো।
ঈশান চলে যাওয়ার পর বিল্টু অংশুর পাশে এসে বললো আমরা তো টিকিট বাতিল করে দিয়েছি, আমি তোমাকে এখনও অবধি বলিনি টিকিট বুক করার কথা, তাহলে তুমি ঈশান কে কেন বললে কালকের টিকিট? একদিন ওর কোয়ার্টারে গিয়ে থাকায় যেত, ছেলেটা একবারে খারাপ নয় ; তখন অংশু উত্তর দিলো- আমি ঠিকই বলেছি, কোনো মিথ্যে বলিনি! আমি কখন বললাম ছেলেটা খারাপ? খারাপ হলে আমার বন্ধু থাকতো? সেটা ঠিক খারাপ হলে তোমার বন্ধু এতদিন থাকত না - বিল্টু বলে উঠল । টিকিট তো বাতিল করেছো সকালে! তাহলে কেন বললে মিথ্যে বলো নি ! রুমের দিকে যেতে যেতে বিল্টু প্রশ্ন করলো অংশু কে? অংশু শুধু হাসছে , বিল্টু জিজ্ঞাসা করলো হাসছো কেন ? এই ভোর ৪টের সময় আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, বিল্টু লিফটের বোতাম টিপলো, লিফ্ট খুললো অংশু ও বিল্টু লিফটে ঢুকলো, অংশু ৩ নম্বর প্রেস করলো , লিফটের দরজা বন্ধ হল, বিল্টু অংশুর দিকে তাকিয়ে বললো - বলোনা কেন বললে মিথ্যে বলনি? অংশু বিল্টু দিকে তাকিয়ে বললো ভেবে দেখো উত্তর পেয়ে যাবে।
আমার সব শক্তি শেষ, ভাবার শক্তি টুকু নেই বিল্টু উত্তর দিলো। অংশু হাসতে হাসতে বললো আমি বাড়িয়ে দেব? বিল্টু বললো কী করে বাড়াবে? অংশু বললো - এই ভাবে বলে বিল্টুকে টেনে জরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে চুম্বন করলো, তারা এতটাই একে ওপরের ঠোঁটের সাথে লেগে ছিল কখন লিফ্ট তিন তলায় এসে লিফটের দরজা খুলে গেছে তারা বুঝতে পারেনি। লিফটের দরজা যখন আবার বন্ধ হতে যাবে তখন তারা একে অপরকে ছাড়ে, বিল্টু হাতদিয়ে লিফটের দরজা বন্ধ হতে আটকায়।
লিফ্ট থেকে বেড়িয়ে বিল্টু বললো তোমাকে আমি বলেছিলাম টিকিট বাতিল করতে কিন্তু তাঁরপর থেকে তুমি আমার সাথেই ছিলে, তোমাকে বাতিল করতেও দেখিনী তার মানে টিকিট বাতিল হয়নি, টিকিটে কালকে, মানে আজকের তারিখ কারন ভোর ৪ টে বাজে এখন। অংশু হাসতে হাসতে বললো এতোক্ষণে বুঝেছো, অন্য সময় এক বাড়ে বুঝে যাও এখন বুঝতে তোমার সময় লাগলো; বিল্টু হাসতে হাসতে বললো- না বুঝে ভালোই করেছি , এবার থেকে কম বুঝবো, কম বুঝলে তুমি আমাকে বোঝাবে ঠিক কিছুক্ষন আগে যেই ভাবে বোঝালে । অংশু বিল্টু কে জড়িয়ে বললো আমি কি একাই বোঝাবো তুমি আমাকে বোঝাবে না? বিল্টু অংশুর কপালে চুম্বন করে বললো আমি তো তোমাকে সবসময় বোঝাবো।