পর্ব (১)
( আমি আমার বাবা মায়ের খুনি )
~ দাজিয়ান এমন এক ধরনের পাখি যে তার পাখা অন্য দাজিয়ানকে শরিকানা করে উড়ে বেড়ায় নিল আকাশের বুকে। নর এবং নই দাজিয়ান এক না হলে তারা উড়তে পারে না। আমার কেন জানি এই পাখির গল্প খুব স্পর্শ করে আজও। ছোট বেলায় দাদির কাছ থেকে দাজিয়ান পাখির গল্প শুনেছিলাম, তখন ছোট আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দাজিয়ান পাখি খুজে বেড়াতাম, যে পাখিই দেখতাম দাজিয়ান দাজিয়ান বলে চিল্লাতাম। তখন আমি দাদির কোলে, মাত্র কথা বলা শিখেছি। বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝলাম সেই পাখির অস্তিত্ব নেই। আমরা মানুষও সেই কাল্পনিক পাখির মতো একা চলতে পারি না। জীবনপথে সঙ্গীর প্রয়োজন আমাদের হরহামেসা রয়েছে।
[ শৈশব ]
৭ই অক্টোবর ২০০০ সন
শৈশবে আমার দাদি মারা যায়, দাদির মৃত্যুটা আমার জন্য রহস্যজনক এখনঅব্দি । সেদিন রাতেও দাদি সুস্থ ছিলেন, আমাকে দাজিয়ান পাখির গল্প শুনিয়েছিলো, গল্প শেষে দাদিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমিও কি দাজিয়ান পাখি?, দাদি মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন,
"হে তুমিও দাজিয়ান "
দাদির সাথে সেটাই ছিলো আমার শেষ স্মৃতি।
সেদিনটা এখনো ভুলতে পারিনি।, দাদি যেদিন মারা যায় সেদিন ছিলো আমার জন্মদিন, অক্টোবর সাত। যে দিনটায় সবার আনন্দ ফুর্তি করার কথা সেখানে সবাই ছিলো শোকাহত। সবার চোখে ছিলো পানি। বাড়ির কেউ মেনে নিতে পারেনি ঘটনাটিকে আর আমি অনুভুতিহীন হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন চোখ দিয়ে এক ফোটাও পানি বের হয়নি। কেঁদেছিলাম রাতে, ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেছিলাম। কেউ দেখেনি সেই কান্না চাঁদনি রাতের জোস্না আর জোনাকিপোকা বাদে।
দাদির মৃত্যুর পর আমাকে আর কেউ সেই দাজিয়ান পাখির গল্প শুনিয়ে ঘুম পারিয়ে দেয়নি, তাই হয়তো সেদিনের পর থেকে ভালো কোন স্বপ্ন আমি দেখেছি বলে মনে হয় না । আরেকটি প্রশ্ন বাকি ছিলো দাদির কাছে,
"আমার আম্মু আব্বুও কি দাজিয়ান পাখি ?"
প্রশ্নটি আর করা হলো না। চাপা পরে যায় অন্যান্য হাজারো প্রশ্নের মাঝে। দাদিকে হঠাৎ এইভাবে হারিয়ে ফেলবো তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। আমার বাবা মায়ের থেকে বেশি সময় কাটিয়েছি আমার গল্পবুড়ির সাথে অর্থাৎ আমার দাদির সাথে। সেই স্মৃতিগুলো ভুলানো কি এতোটা সহজ । না, মোটেও সহজ না। এ স্মৃতি ভুলার মতোও না। আমার প্রতিদিন মনে হতো এক অদৃশ্য বিশাল পাথর আমার বুকের উপর রেখে দেয়া হয়েছে। না পারি দম নিতে, না পারি দম ছাড়তে আর না পারি কাউকে আমার অনুভুতির কথা জানাতে। কাকেই বা জানাতাম আমার কথা?, কেউ তো ছিলো না সময় দেয়ার মতো।
অন্যদিকে আমার বাবা মায়ের কথায় যদি আসি, তাহলে ভালোর থেকে খারাপ স্মৃতিটাই দীর্ঘ। তারা দুইজন সব সময় ব্যস্ত নয়তো একে অপরের সাথে ঝগড়ায় মগ্ন থাকতো। আমি চাইতাম আব্বু-আম্মু এক সাথে মিলেমিশে থাকুক। আব্বুও অবস্য তাই চাইতেন কিন্তু আম্মু চাইতো অন্য কিছু। আম্মু যে আব্বুর সাথে থাকতে চাচ্ছে না সেটা আমার ভালো মতোই বুঝা শেষ। ছোট ছিলাম কিন্তু অবুঝ না, কমবেশি অনেক কিছুই তখন বুঝতে শিখেছিলাম। তাদের রোজগের ঝগড়া আর কথার ধরনই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলো বাবা-মার বিচ্ছেদ হতে চলেছে। আমার নামের আগে এতিম যোগ হতে যাচ্ছে। বাপ, মা থাকতেও এতিম।
~তাদের সম্পর্কটা দাজিয়ান পাখির মতো না। কি হতো যদি তারা দাজিয়ান হতো?।
আব্বু কাজের দরুন বাইরে গেলে চাচা সাদেক হোসেনের আমাদের বাড়িতে আসা, ঘন্টার পর ঘন্টা দরজা বন্ধ করে গল্পগুজব করা ছিলো চাচা আর মার পছন্দের কাজ আর আমার অপছন্দের। মনে হতো সাদেক চাচা কোন এক রাক্ষস যেকিনা এসেছে আমার আম্মুকে চুরি করতে। সাদেক চাচাকে দুই চোখে দেখতে পারতাম না যদিও চাচা আমাকে খুব আদর করতো। প্রতিবার বাসায় আসলে তার এক হাতে ব্যাগভর্তি কিছু না কিছু আমার জন্য থাকতো। আমি তা নিতাম না, পরে থাকতো ঘরের এক কোনায়, কিছুদিন পর ঘরের কোনায় পরে থাকা ব্যাগটির স্থান হতো কাজের লোকের বাড়িতে।
আমার সকালের ঘুম ভাংতো আব্বু আম্মুর চিৎকার চেচামেচিতে। এমন কোন দিন যায় নাই তারা ঝগরা করেনি। ছোট খাটো বিষয় নিয়ে তাদের কথা কাটা কাটি ছিলো নিত্যদিনের কাজ। দু'জন যখন ঝগড়া করতো তখন ছোট আমি নিজের রুমে গিয়ে কান বন্ধ করে থাকতাম আর দোয়া করতাম, তারাও জেন দাজিয়ান পাখি হয়ে যায়। ঝগড়া আর জোড়ে কথা বলা আমি পছন্দ করি না। কেউ উচ্চস্বরে ঝগড়া করলে আমার ভয় করে। আব্বু-আম্মু সেটাই করতো, উচ্চস্বরে ঝগড়া। তখন থেকেই অজানা এক ভীতি আমার মনে বাসা বাধে। সে ভয়টা কিসের আমার জানা নেই।
[ এক বছর পর ]
দাদির মৃত্যুর এক বছর পরের ঘটনা, সেই অক্টোবর সাত, আমার অষ্টম জন্মদিনে আমি চুপচাপ একা থাকা শুরু করি। একা থাকাটা আমার পছন্দ না তবুও আমার একা থাকতে হচ্ছিলো, দাদি যখন বেচে ছিলেন সময়টা তার সাথেই কাটতো আর এখন সময় ফুরায় না। দাদিকে খুব মনে করে দিন কাটে আমার। আমার বন্ধু ছিলো না, আর যারাই আমার বন্ধু হতো তারা একটা সময় হারিয়ে যেতো। কেনো?, কোথায়?, কিভাবে? সেটা জানা নেই। শুধু এতোটুকু জানা ছিলো যে, তারা গেছে আর ফিরে আসবে না। আমি প্রতিবারের মতো আবার একা একটি দাজিয়ান যার কোন সঙ্গী নেই। যার ডানা আছে তবে একটি। উড়ার ক্ষমতা নেই আমার কিন্তু আমি রোজ নীল গগনের বুকে উড়ার স্বপ্ন দেখি।
দাদির মৃত্যুর পর আমি আব্বু আম্মুর সাথে এক টেবিলে রাতের খাবার খেতে পারিনি, ডাইনিং টেবিল ছিলো কিন্তু তার ব্যাবহার ছিলো না। আমার খুব ইচ্ছে হতো বাবা মায়ের সাথে এক টেবিলে খাবার খাওয়া ঠিক যেভাবে দাদি থাকতে খেতাম। সেটা কখনো পুরন হয়নি। মনে জমা থাকতো হাজারো প্রশ্ন আর কিছু আবদার, তাদের ব্যস্ততা এতোটাই যে আমার সাথে কথা বলার সময় তাদের হতো না। আমিও বলতে পারতাম না জমানো কথাগুলো। অজানা এক ভয় আর একাকিত্বর সাথে জেন আমার বন্ধুত্ব শুরু সে সময়টায়। আমার অধিকাংশ সময় পার হতো বাড়ির কাজের লোকগুলোর সাথে অথবা কার্টুন দেখে তথবা দাজিয়ান পাখির গল্প পরে অথবা কল্পনায় নিজেকে ডুবিয়ে ফেলে অথবা না বলা কথাগুলো জমিয়ে ডাইড়ি লিখে।
[ ৬ অক্টোবর ২০০২ ]
এইভাবেই দেখতে দেখতে সময় পার হয়ে আরও একটি অক্টোবর মাস চলে আসে আমার জীবনে।
প্রতি রাতের মতো সেদিন রাতেও আমি মন খারাপ করে জানালার বাইরে তাকিয়েছিলাম। পরদিন সকালে আমার জন্মদিন, তা নিয়ে আমার কোন অনুভূতি নেই। বাবা বলেছে আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিবে, আমরা ঢাকা যাবো, আমার বয়স যখন ১৫ হবে বাবা আমাদের জার্মান নিয়ে যাবেন, আমরা সেখানেই থাকবো কিন্তু এইসব কোন কিছুই আমাকে আর আগের মতো আনন্দ দিচ্ছিলো না।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি আমার রুমে ঘুমিয়েছিলাম। ঘুমিয়েছিলাম বললে ভুল হবে, ঘুমের নাটক করছিলাম। ঘড়িতে তখন
রাত ১২ :১। আব্বু আমার রুমে ঢুকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, কানের কাছে মুখ নিয়ে বাবা ফিস ফিস করে বললেন,
~ হ্যাপি বার্থডে বাবা, কাজের দরুন তোকে সময় দিতে পারি না। আর কয়েকটি দিন ধর্য্য ধর। বাবা খুব পচা জানি, কিন্তু কি করবো বল?, সব তো তোর ভবিষ্যৎতের জন্যই। তোর মা আর আমার মধ্যে ঝামেলা চলছে সেটাও খুব তারাতারি মিটে যাবে বাবা।
আমি চোখ বন্ধ করে বাবার কথাগুলো শুনছিলাম। মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন। আব্বু আমার বুকের উপর দাজিয়ান পাখির বই সরিয়ে টেবিলের উপরে রাখলেন। যাওয়ার আগে আমার কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন। আমি চোখ খুলে দেখি দরজা পুরোপুরি লাগায়নি। দরজার ফাক দিয়ে আলো আসছে। আমি তাকিয়ে আছি, কি যেনো ভাবছিলাম সেই মুহুর্তে আম্মু রুমে আসলো । আমাকে জাগনা দেখে আম্মু জিজ্ঞেস করলো ঘুমাইনি কেনো?, আমি কোন উত্তর না দিয়ে তার চোখের দিকে তাকালাম। কেনো জানি মনে হলো সে কোন বিষয় নিয়ে লজ্জিত। তার চেহারায় সেই আগের নূর নেই, যে নূর আমি আগে দেখতাম। মানুষ যখন কোন পাপ কাজ করে তখন তার চেহারার নূর চলে যায় দাদি বলেছিলেন। আম্মু তুমি কি পাপ করেছো?, তুমি লজ্জিত কেনো? মনে মনে প্রশ্ন করলেও মুখ দিয়ে সেই প্রশ্ন করার সাহস হলো না। আম্মু আমার বিছানায় বসলো,
~ হ্যাপি বার্থডে বাবাটা,
আমি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি।
~ কি Gift চাই তোমার?
আমি খানিক সময় নিয়ে বললাম
~ তুমি দাজিয়ান হয়ে যাও।
আম্মু হেসে বললো,
~ তো তোমার দাজিয়ান কিভাবে হবো?,
আমি ভাবতে লাগলাম,
তাই তো,!! দাজিয়ান কিভাবে হওয়া যায়?, আমার জানা নেই। গল্পবুড়ি হয়তো জানতো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আম্মু হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,
~ তোমার সাদেক চাচাকে কেমন লাগে?
আমার দুই সেকেন্ডেও সময় লাগেনি প্রশ্নের উত্তর দিতে। আমি বলে দেই,
~ রাক্ষসের মতো।
আম্মু হেসে বললো,
~ রাক্ষসের মতো কেনো?,
আমি মনে সাহস পেয়ে আমার অনুভুতির কথা আম্মুকে এই প্রথম জানালাম।
~ আমি উনাকে একদম পছন্দ করি না। আমার ভালো লাগে না যখন উনি আমাদের বাসায় এসে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটায়। তোমার সাথে কথা বলে। তুমি যখন তার সাথে বাইরে বের হও। আমাকে মিথ্যা বলে বাইরে নিয়ে যাও তুমি রাক্ষসের সাথে দেখা করতে। এগুলো কোন কিছুই আমার ভালো লাগে না।
আম্মু কথাগুলো শুনে থতমত খেয়ে গেছে চেহারা দেখেই আমি বুঝলাম। এমন অনেকবার হয়েছে আম্মু আমাকে ঘুরানোর নামে পার্কে নিয়ে গিয়েছে ঠিকি কিন্তু তার আসল উদেশ্য ছিলো সাদেক চাচার সাথে দেখা করা।
আম্মু আমাকে চকলেট, খেলনা এইটা সেইটা কিনে দিতো যেনো আমি বাবাকে কিছু না বলি। আমি দুইজনের মাঝে ঝগড়া চাইতাম না তাই আমি মুখ বন্ধ করে রাখতাম। আর আম্মুর দেয়া ঘুস আমাদের বাসার কাজের মেয়ে ইয়াসমিন আপুকে দিয়ে দিতাম। সে কতো খুশি হতো, কাজ শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে চকলেটগুলো খেতো আর অপেক্ষায় থাকতো আমি কবে তাকে আবার চকলেট দিবো। একটা সময় ইয়াসমিন আপুও কোথাও হারিয়ে যায়। সে ছিলো হাড়িয়ে গেলেও পরে খোজ পাই সে একটি ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে, তারাও বিয়েও করেছে। ঢাকা শহরে এখন আছে শুখে শান্তিতে। আমু যখন ভাবনায় বুদ আম্মু আমার হুস ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করল,
~ তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো? আমায় না নাকি
তোমার আব্বুকে?
~ আব্বুকে
~ আমাকে বাসো না?
আমি কিছু বললাম না। মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। মা আমাকে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো,
মাথায় চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলে সে চলে গেলো হয়তো আমার প্রশ্ন-উত্তর শুনে সে কষ্ট পেয়েছে। মা হয়তো ভেবেছিলো আমি তার কথা বলবো। আমি বিছানা থেকে উঠে জানালার কাছে গেলাম। আকাশে থাকা চাঁদ আর তারাগুলো জোনাকির আলোর মতো জ্বলছে, তবে জোনাকি অনুকরণে নয়, তারাগুলো নিজেই জেন জ্বলন্ত শ্বেত আগুন। অন্ধকার রাতের আকাশটা গাড় নীল সমুদ্র। আমার কাছে যদি একটি নৌকা থাকতো তাহলে ভালো হতো। আমি সেই নৌকা করে চাঁদের বুড়ির কাছে যেতাম। প্রশ্ন করতাম অনেক কিছু, চাঁদে থাকা বুড়িকে রোজ দেখতাম শুতা বুনতে। আচ্ছা বুড়ির কি আর কোন কাজ নেই?!, রোজ তাকে একই কাজ করতে দেখি। এতো শুতা দিয়ে বুড়ি কি করে ?, প্রশ্নটি প্রতি রাতে মাথায় আসতো আর সকাল হতেই ভুলে যেতাম। বাচ্চাকাল কার কেমন কেটেছে আমার জানা নেই, তবে আমি অধিকাংশ সময় প্রশ্নের উত্তর আর কল্পনার ভেলায় পাড়ি জমাতাম। কি কি জেন ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরতাম আর পরদিন সকালের ঘুম ভাংতো আব্বু আম্মুর ঝগড়া শুনে।
প্রতিবারের মতো সেদিনও সকালে ঘুম ভাংগে আব্বু আম্মুর চিৎকার চেচামিতে। আমার চোখ খোলার সাথে সাথেই আমি বিছানা থেকে উঠে চুপ চাপ বসে থাকি কানে হাত দিয়ে। আমি শুনতে চাই না তাদের ঝগড়া, আমার ভালো লাগে না তাদের রোজগের নাটক। আমার ভালো লাগে না প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে থাকা। মানুষ এইভাবে বাচতে পারে না। তাদের ঝগড়ার কারনে আমার সমস্যা হচ্ছিলো কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি, বুঝার চেষ্টাও করেনি। আমি অনুভব করছিলাম কিছু একটা পরিবর্তন হচ্ছে আমার মাঝে।
আব্বু আম্মুর ঝগরার এক সময় হঠাৎই কাঁচ ভাংগার শব্দ শুনে আমি দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে সিড়িতে দাঁড়িয়ে যাই। সিড়ি দিয়ে নিচে নামবো কিন্তু সাহস হলো না। তাদের সেই হিংস্র চেহারার গঠন আমাকে ভয় পাইয়ে দেয়। আমার চোখে পানি চলে আসলে সিড়িতে বসে চোখ বন্ধ করে মনে মনে এক নাগারে বলেই যাচ্ছিলাম আব্বু আম্মু যেনো দাজিয়ান হয়ে যায়, আব্বু আম্মু যেনো দাজিয়ান হয়ে যায়। চোখ খুলে দেখি বাবা পাশে ভাঙা কাঁচ পড়ে আছে, কাঁচে রক্ত। বাবার হাত কেটে রক্ত পরছে টপ টপ করে। এতো রক্ত আমি আগে কখনো দেখিনি। আমার শরীর কেঁপে বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেলো। আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভয়ে আমার চোখ দিয়ে অনরগল পানি পরতে থাকে। আমি টলটলে চোখে আম্মুর দিকে তাকাই, আম্মুর চোখেও পানি। গালে পাঁচ আঙুলের ডাগ, সাদা চামড়া হওয়ায় পাঁচ আঙুল ফুটে উঠেছে। আম্মু তার চোখের পানি মুছে বাবার সামনে থেকে চলে যায়। চলে যাওয়ার আগে আম্মু দেখেছে, আমি সিড়িতে বসে তাদের দেখছি। ভয়ে আমিও কাদছি। মা মুখে কিছু বলেনি, তবে আমার কেন জানি মনে হলো মার চোখ বলছে,
~ রাশেদ আমায় ক্ষমা করে দিও তোমায় এইসব দেখতে হলো আজ। তুমি তোমার বাবার সাথে থেকো, আমি চলে যাচ্ছি। মাকে আর ফিরে পাবে না। মা খুব পচা।
আম্মু মুখে না বললেও তার চোখ যেনো এ কথাই আমাকে বোঝাচ্ছিল। সময় নষ্ট না করে সদর দরজা দিয়ে আম্মু হন হন করে বেড়িয়ে যায় আর বাবা সেখানে বসে রক্তাক্ত হাত নিয়ে কান্না করতে থাতে। বারবার বলতে থাকে সব দোষ তার অর্থাৎ বাবার। অনুশোচনা করেই যাচ্ছেন উনি। আমি সিড়ি দিয়ে নেমে আব্বুকে জরিয়ে ধরলাম, আব্বু আমার চোখের পানি মুছে মিথ্যা হাসির অভিনয় করে বললো,
~ বাবা, তুই বাসায় থাক কোথাও যাস না। আমি তোর আম্মুকে ফিরিয়ে নিয়ে আসছি। কোথাও যাস না কিন্তু,
বলে সদর দরজা দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পরে, আমি সিড়িতে গিয়ে বসে আব্বুর অপেক্ষায় করতে থাকি।
আসলে তখনও সিড়িতে বসা আমি কল্পনা করছিলাম বাবাকে জড়িয়ে ধরার। বাস্তবেও ইচ্ছে করছিলো খুব, যাই বাবাকে একটা বার জড়িয়ে ধরি কিন্তু…,
আমি সিড়ি থেকে নামতে না নামতেই বাবা রক্তাক্ত হাত নিয়ে দৌড়ে বাড়ির বাইড়ে চলে যায় মাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। বাবাও হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন মার চোখের ভাষা।
~ চলে যাচ্ছি আর আসবো না।
আমি বাবার পিছু করি,
"আব্বু আব্বু" বলে ডাক দিতে থাকি কিন্তু আব্বুর কান পর্যন্ত সেই ডাক পৌছায় না। ধুলো উড়িয়ে গাড়ি চলে গেলো শহরের দিকে, আমি বাড়ির বাইরে দৌরে এসে তাকিয়ে থাকলাম ধুলো উড়া রাস্তায়। গাড়িটি হাওয়ার বেগে চলে গেলো। আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলাম এতিম বাচ্চাদের মতো অসহায় চোখ নিয়ে।
ভিলার বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিলো না আমার। আর যদি যাই তাহলে সাথে কেউ না কেউ থাকতো। আমাদের ভিলা ছিলো লোকালয় থেকে বেশ দূরের এক জংগলের ভিতর। মকরশলের পাশে। আমাদের ভিলা থেকে দুই মিনিট দূরে আমার যে ট্রি হাউজ ছিলো সেখান থেকে ঢাকা শহরের বিশাল দালানগুলো দেখা যেতো। মা সেই ঢাকাতেই গিয়েছে, বাবাও হয়তো সেখানেই যাবে। নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, অনুমান মাত্র। আমি অপেক্ষা না করে বাড়ির গেট খুলা পেয়ে রাস্তা অনুসরণ করে হাটতে থাকি,
চলতি পথে মনে অজানা এক ভয় কাজ করা শুরু করে তবে বুঝতে পারছিলাম না এই ভয়টা কিসের। আমার বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত বার বার মনে হচ্ছিলো, হাটার খুব একটা অভ্যাস না থাকার সত্ত্বেও আমি অনেকটা পথ হেটেছিলাম এই আশায় যে আব্বু আম্মুকে এই রাস্তাতেই পেয়ে যাবো। তখন আকাশের সূর্য ছিল মাথার উপর,
সূর্যের নিয়ম অনুযায়ী আমার গায়ে সূর্যের আদ্রতা লাগার কথা, তবে সেই রোদের আদ্রতা আমার গায়ে লাগেনি। কেমন জানি আরাম অনুভব করছিলাম, না গরম না ঠান্ডা। যত হাটছি রাস্তা ততো বড় মনে হচ্ছে, একটু পরপর প্রাইভেট গাড়ি ও বাস সাই সাই করে চলে যাচ্ছে।
রাস্তার দুই পাশ বিশাল খালি মাঠ, দূরদৃষ্টি পর্যন্ত নাই কোন লোকালয় , নাই কোন মানুষের উপস্থিতি ছিলো। হঠাৎই সূর্যের আলো ধিরে ধিরে বারতে থাকে যেনো পৃথিবীর কাছে চলে আসছে । তবে আমার মনে হচ্ছিলো কেউ সূর্যকে রিমট দিয়ে কন্ট্রোল করছে। আকাশের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম রোদের কারনে তাকানো সম্ভব হলো না।
একটা সময় সূর্যের কিরন এতোটাই বেড়ে যায় যার কারনে চারদিক আমি সাদা আভা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না। নিজের চোখ পরিষ্কার করলাম। বিভ্রান্ত একটি পরিস্তিত। আভার কারনে চোখে যন্ত্রণা হচ্ছিলো, আমি আমার চোখ বন্ধ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে যাই। ধিরে ধিরে চোখ খুলে দেখি সেই সাদা আভা নেই তবে আমি অন্ধকার দেখছি। রোদে অনেক্ষন থাকার পর ছায়ায় গেলে যে অবস্তা হয় আমার সেই একই অবস্তা হয়েছিলো। কিছুক্ষন সময় লাগলো চোখ ঠিক হতে, আমি তাকিয়ে দেখি আমি জজ্ঞলের ভিতর দাঁড়িয়ে!!,
আমার চারিদিকে বিশাল বিশাল গাছ গাছালি। গাছের ডালে ডালে নাম না জানা পাখিগুলো ডাকছে আপন মনে। পরিচিত পাখিগুলোর গান অপরিচিত লাগছিলো, পাখিগুলো এমন ভাবে ডাকছিলো যেনো তারা আমাকে দেখে বিরক্ত। সারাটা দিন ভয়ে ভয়ে কাটয়েছি আর এখন আরেকটা ভয়!!, এর আগেও আমি জংগলে এসেছি দাদির সাথে তবে জজ্ঞলের গাছগুলো এতো বিশাল ছিলো না। গাছগাছালি আমার পরিচিত তবে এই গাছগুলো নাম অজানা। আমি পিছে ফিরে দেখি যে রাস্তা দিয়ে এসেছি সেই রাস্তা আর নেই, রাস্তা মিনিটেই জজ্ঞল হয়ে গেছে নয়তো আমি টেলিপোর্ট হয়ে আম্যাজনের জজ্ঞলে এসেছি। টেলিপোর্টেশন; এইটা কল্পনা মাত্র বাবা বলেছিলেন, তবে বাস্তবে হতেও পারে কোন একদিন। বিজ্ঞান অনেক উন্নত, আর পৃথিবী রহস্যময়, হয়তো টেলিপোর্টেশন কোন একটা মন্ত্র দারাও সম্ভব হতে পারে।
আমার কান্না আসছিলো তবে থামিয়ে রেখেছিলাম, নিজেকে ভরসা দিচ্ছিলাম রাস্তা পেয়ে যাবো, পর মুহুর্তে মনে হলো আমি হয়তো স্বপ্ন দেখছি, চোখ বন্ধ করে জেগে যাওয়ার চেষ্টা করলেই হয়তো দেখবো আমি বিছানায়, তাই করলাম কাজ হলো না। এইটা স্বপ্ন না ভেবে আমার চোখে পানি চলে এলো । ভয়ে যে দিকে চোখ যাচ্ছিলো সেদিক দৌড়াচ্ছিলাম। এই জংগলের কোন শেষ নেই। মনে এক অজানা ভয়ের আবির্ভাব ঠিক সে সময় আচমকা আমার কানে আম্মুর ডাক ভেসে আসলো, আম্মু ডাকছে,
~ রাশেদ….. রাশেদ…..
নিমিষেই সেই অজানা ভয় উধাও হয়ে গেলো, নতুন করে শক্তি ফিরে পেলাম। আমি আম্মুর গলার স্বর অনুসরণ করে দৌড়াতে থাকি। লতাপাতা বাধা হয়ে দাড়াচ্ছিলো। বাধা অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আম্মু আম্মু বলে চিৎকার করে আম্মুকে ডাকছি কিন্তু আম্মু নেই। তার কন্ঠস্বর আর শোনা গেলো না। ভয় আবার একটু একটু করে মনে জমা হচ্ছিলো। আম্মু যদি নাই থাকে তাহলে কে আমাকে আমার নাম ধরে ডাকলো?,
একটি বিশাল গাছ আমার নজরে পরে। হাটার শক্তি না থাকায় জংগলের বিশাল গাছটার নিচে গিয়ে বসে পরি। আকাশ দেখা যাচ্ছিলো গাছটির নিচ থেকে। পরিষ্কার নীল আর নীলের বুকে ভেসে চলছে সাদা মেঘ, স্পষ্টরূপে দেখতে পারছিলাম। গাছের নিচে বসে আকাশের দিকে তাকিয়েছিলাম লম্বা সময় ধরে, শীতল বাতাস, পাখির গান, আর ফুলের সুগন্ধে আমি ভুলে গিয়েছিলাম বাবা মাকে খুজার কথা, কিছুক্ষন আগে আমার সাথে যা ঘটলো তাও মাথা থেকে বের হয়ে গেয়েছিলো। নীলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেমন যেনো এক ঘুম ঘুম অনুভুতি হচ্ছিলো আমার। শীতল বাতাসে ভেসে আসছিলো বেলি ফুলের সুগন্ধ। তারপর ঘুম ঘুম চোখে কিছু একটা দেখলাম উপর নিল গগনে। সেটা কল্পনা নাকি ঘুমের চোখের উল্টো পাল্টা দেখছিলাম তা আমার জ্ঞানের বাইরে।
কালো মেঘে ঢেকে যেতে শুরু করে পুরো আকাশ। আমার কেনো জানি বার বার মনে হচ্ছিলো আকাশের উপর থেকে কেউ আমাকে ডাকছে, কেউ তাকিয়ে আমাকে দেখছে। মাথা ঘুড়িয়ে আশে-পাশে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। মনে হচ্ছিলো কেউ আছে আমার আসে পাসে, অদৃশ্য কিছু। আকাশের দিকে তাকালাম, অনেকক্ষন যাবত কেমন জানি একটা শুর কানে ভাসছিলো মৃদুস্বরে, কেউ গান গাইছে, আবার কিছুক্ষন পর মনে হলো কেউ কান্না করছে, অথবা গান আর কান্নার সংমিশ্রণ কিছু। আমি কান খারা করে স্পষ্ট ভাবে শোনার চেষ্টা করলাম, স্পষ্ট না তবে তখন মনে হচ্ছিলো কোন এক নারী চিৎকার করে কান্না করছে কালো মেঘের উপর থেকে। হ্রদয় ভাঙা কান্না। যেনো সে কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছে, জীবনের সব থেকে দামি কিছু যেটার তার হ্রদয়ের সাথে গাথা ছিলো। কি সেই জিনিস?
আমি মূরতি হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি কোথায় আছি?, কি করছি?, কোন হুস নেই। আজব এক অনুভূতির ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলাম। কালো মেঘ থেকে হঠাৎ বাজের সৃষ্টি তারপর বৃষ্টি পরা শুরু হলো, বৃষ্টির এক ফোটা পানি আমার নাকের উপরে পরলে আমার হুস ফিরে। আমি তারাহুরো করে গাছের নিচে গিয়ে জরোসরো হয়ে গাছটিকে ঘেঁষে বসলাম। গভির আগ্রহ নিয়ে তাকিয়েছিলাম বৃষ্টির দিকে, মাথায় ঘুরছিলো বৃষ্টি থামলে আমি জজ্ঞল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করবো, বাবা বলেছিলেন, যদি কখনো জজ্ঞলে হারিয়ে যাই, তাহলে আমি যেনো গাছে উঠে নদী খুজি। সেই নদীর কিনারা ধরে হাটা দিলেই আমি কোন না কোন গ্রামে গিয়ে পৌছাবো। সেখান থেকে আমি সাহায্য নিতে পারি। যে গাছের নিচে বসে ছিলাম সেটা বেয়ে উঁচুতে উঠা সম্ভব ছিলো না। গাছটি ছিলো বিশাল বড় আর মোটা অনেক। চিকন কোন গাছ খুজতে হবে, যেটা লম্বা কিন্তু চিকন,
মাথায় যখন বাবার শিখানো কথাগুলো মনে মনে ভাবছিলাম তখন ঘটনা ঘটলো আরেকটা, বৃষ্টি পরছে ঠিকি তবে ধিরে ধিরে বৃষ্টির রঙ বদল হতে থাকে। কেন এমন হলো জানার খুব আগ্রহ হচ্ছিলো। বৃষ্টির রঙ পরিবর্তন, নেহাত আমার কল্পনা না। বাবা কখনো বলেনি বৃষ্টির রঙ বদল হওয়ার কথা। দাদির ঝুড়ি ভরা গল্পেও তেমন কিছু ছিলো না। দাদিও বলেনি এমন কোন রুপকথার গল্প যেখানে বৃষ্টি রঙ পরিবর্তন হয়ে লাল হয়ে যায় কিন্তু আমি বাস্তবে দেখছি এমনটা। লাল রক্তের বৃষ্টি।
বৃষ্টি লাল থেকে রক্ত লালের পরিনত হয়ে গেলো চোখের পলকে, সাথে আরেকটি জিনিস লক্ষ করলাম সেটা হলো দুইটি অগ্নি ডিম্ব আকৃতির মতো নয়ন কালো মেঘের আড়াল থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, বুকে মচর দিয়ে উঠলো, অগ্নি নয়ন দুইটি স্পষ্ট ছিলো না। আমি পরিষ্কার দেখার জন্য বৃষ্টির স্পর্শে আসি, বুকে ভয়, বৃষ্টির স্পর্শে আসার সাথে সাথেই বিকট চিৎকার মেঘের উপার থেকে আমার কানে ভেসে আসে। কি ভয়ানক সেই চিৎকার, আমি সাথে সাথে কান বন্ধ করে ভয়ে দৌড়াতে শুরু করি, গাছের সাথে ধাক্কা খেয়েছি, পা কেটে গেছে তবুও দৌড়ানো আমি ছাড়িনি। জায়গাটি পিছনে ফেলে আসার সাথে সাথে সেই ভয়ানক চিৎকার ধিরে ধিরে বাতাসে মিলিয়ে যায় । বৃষ্টিও পড়া বন্ধ হয়, সেই রক্ত লাল বৃষ্টি বা রক্তের বৃষ্টি। আমি ভিজে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আকাশটা আগের মতো পরিষ্কার। নীল, আর নীলের বুকে ভেসে চলছে নিয়ম অনুযায়ী সেই সাদা মেঘ। আমি দৌড়াতে দৌড়াতে অসাবধানতার কারনে একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে চিত হয়ে পরে যাই । জোরে জোরে স্বাস নিচ্ছিলাম স্বাস ছাড়ছিলাম আকাশের দিকে তাকিয়ে।
লক্ষ করলাম এইটা সেই গাছ যে গাছের নিচে আমি বসে বিশ্রাম নিয়েছিলাম কিছুক্ষন আগে, যেখান থেকে আমি ভয়ে দৌড়ানো শুরু করেছিলাম সেখানেই ঘুরে ফিরে চলে এসেছি। মাটি থেকে উঠার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না, শরীর ব্যাথায় চোখ দিয়ে পানি চলে আসে আমার। আব্বু আম্মু করে হাও মাও করে কান্না করতে থাকি।
গাছটির একটি ডালে আমি ঘোলা ঘোলা চোখ নিয়ে দেখলাম এক উজ্জ্বল সাদা রঙের পাখি উড়ে এসে ডালে বসে গান গাইতে থাকে। এই গান সব পাখির গানের থেকে আলাদা। এমন গান আমি আগে কখনো শুনিনি। চোখের পানি মুছলাম, দেখলাম পাখির গঠনও আলাগা, শরীর এক তবে মাথা দুই, একটি মাথার চোখের নেত্র পল্লব বড় এবং উপরের দিকে বাকানো, ঠোঁট লাল, আরেকটা মাথার চোখ খালি, কোন বাকানো নেত্র পল্লব নেই, ঠোঁট কালো,
আমার মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বের হয়ে যায়,
" দাজিয়ান"
আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
চোখ খুলে দেখি আমি একটি বেঞ্চের উপর শুয়ে আসি। রেডিওতে গান বাজছে,
কয়েকজন লোক আমার চারিদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে, তারভিতর একজন ফ্যংলা পাতলা ছেলে উত্তেজিত হয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
~ ভাইজান, পোলাডার জ্ঞান ফিরছে।
আমার চারিদিকে ভির করা লোকগুলো যায়গা দিলে সাদা পাঞ্জাবি পরা একটি লোক চেয়ার নিয়ে আমার কাছে এসে বসে, ফরসা চেহারা, হাইট ৫ ফিট ৯-১০ হবে, আরমি কাট চুল, ক্লিন সেভ, বয়স ৩৫,৪০ হবে আনুমানিক। চুলে পাক ধরনি, কালো কুচকুচে, লোকটি সবার উদ্দেশ্য বললো,
~ আপনারা ভির করবেন না, ছেলেটার গায়ে একটু আলো বাতাস আসতে দিন। যান, যে যার কাজে যান।
কেউ কেউ এক কথাতেই চলে গেলো, আর কয়েকজন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো, আমি তখনো শুয়ে, লোকটি হাত বাড়িয়ে দেয়, আমাকে সহায়তা করে বেঞ্চ থেকে উঠে বসতে । আমি উঠে বসি তার পর আসে পাশে তাকিয়ে দেখি আমি একটি চায়ের দোকানে। চা বানানো শব্দ পাচ্ছি। লোকটি সেই হ্যাংলা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে কি যেনো এক ইশারা করলো, ছেলেটি পানি, বিস্কুট, পাউরুটি আর চা নিয়ে এসে আমার পাশে রাখলো সেকেন্ডের ভিতর। পেটে খিদা, তাকিয়ে ছিলাম খাবারের দিকে। খাবো কি খাবো না ভাবতে ভাবতে হুট করে আমার চোখের সামনে ভাসতে থাকে জজ্ঞলের সেই ঘটনা, রক্তের বৃষ্টি, উজ্জল সাদা দুই মাথার পাখি আর দানব গাছ। আসে পাশে থাকা মানুষগুলোর চেহারার দিকে তাকাচ্ছিলাম, তখন ফরসা সেই লোক খাবার আমার কাছে ঠেলে দিয়ে বললো,
~ খেয়ে নাও, আমি জানি তোমার খুদা পেয়েছে।
লোকটি ঠান্ডা পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে আমাকে বললো,
~ বাবু তোমার নাম কি?
~ আমি রাশেদ,
লোকটির হাত থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢগ ঢগ করে পানি পান করেছিলাম । পিপাসা লেগেছিলো। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করে,
~তুমি রাস্তায় পরেছিলে কেন?, ওই নির্জন রাস্তায় তুমি কি করছিলে?।
আমি রাস্তায় পড়েছিলাম?, এইটা কিভাবে সম্ভব!, আমিতো সেই দানব গাছটার নিচে পরেছিলাম তার পর কি হয় আমার মনে নেই। আমি হা করে লোকটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে খাবার গুলো খাওয়া শুরু করি। লোকটি আর কোন প্রশ্ন করলো না।
আমি খাওয়া শেষ করলে সে জিজ্ঞেস করলো,
~ আর কিছু খাবে?
আমি মাথা নাড়িয়ে না বলি।
~ তুমি রাস্তায় পরেছিলে, আমি সে রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম। তোমাকে দেখি তার পর এইখানে নিয়ে আসি।
তোমার আব্বু আম্মুর নাম্বার জানো?
লোকটি ফোন বের করলো। আমিও বলা শুরু করলাম আমার বাবার নাম্বার।
- ০১৭১৭৭৭৬৮৭
বেশ কয়েকবার ফোন করলো ধরলো না কেউ অপরপাশ থেকে। আমি গভির আগ্রহ নিয়ে লোকটি দিয়ে তাকিয়ে আছি, লোকটি ফোনটি কান থেকে নামিয়ে বললো,
~ কেউ ধরছে না।
আবার কল দিয়ে কানে দিয়ে আমার জিজ্ঞেস করলো
~ তোমার বাবার নাম কি?
~ আবদুল আহাদ, আপনার নাম কি?
~ আমি মিফতাহুল খান।
লোকটি পাঞ্জাবির পকেটে ফোন রেখে দিলো, আমার মন খারাপ হয়ে গেলো, লোকটি জিজ্ঞেস করলো,
~ নাম্বার ঠিক বলেছো তো
আমি হে না কিছু না বলে আবার নাম্বার বলা শুরু করি,
~ ০১৭১৭৭৭৬৮৭
লোকটার ফোন বেজে উঠে, আমি লোকটির পকেটের দিকে তাকিয়ে আছি, মিফতাহুল আংকেল ফোন ধরে সালাম দিল,
~ আসসালামু আলাইকুম,
আংকেলের ফোনে ভলিউম বেশি থাকায় আমি শুনতে পারছিলাম মায়ের কান্নাভরা কণ্ঠ,বাবা বিষন্ন গলায় সালামের জবাব দিলেন,
~ ওয়ালাইকুম সালাম, কে বলছেন?
লোকটি বললো,
~ আমি মিফতাহুল, আমাকে চিনবেন না। আপনার ছেলে রাশেদের থেকে নাম্বারটা নিয়েছি, সে হারিয়ে রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে পরেছিলো, চিন্তা করবেন না সে ঠিক আছে,
~ রাশেদ কোথায়? ওর কিছু হয়নি তো ?
মা তখন হাও মাও করে কান্না করে বাবাকে বলতে শুনলাম,
~ আমার ছেলের সন্ধান পেয়েছ, ও ঠিক আছে? কোথায় আছে?
বাবা মাকে শান্তনা দিলো, মা- বাবার কথাগুলো আংকেলের ফোন থেকে আমি স্পষ্ট শুনতে পারছিলাম।
মিফতাহুল আংকেল বাবাকে বললেন,
~ আহা চিন্তা করবেন না, নেন আপনার ছেলের সাথে কথা বলেন,
আমি ফোনটা ধরে কান্না করে দেই,
~ আব্বু আমি হারিয়ে গেছি।
~ বাবা চিন্তা করিশ না। আমি আসতেছি।
আমি ভয় পেলে বেশি কথা বলতে পারি না। বাবা বুঝতে পেরেছিলো আমি ভয়ে আছি, বাবা আমার ভয় কাটিয়ে ফোনটা রেখে দেয় । আমি যখন ভয় পেতাম বাবা বলতো,
~ তুমি উপর আল্লাহর কথা মনে কর বা এমন কিছু মনে করো যেটা তোমাকে আনন্দ দেয়।
বাবা আজকেও সেটাই বললেন, আমি সেইসব ভাবতে থাকি যা আমাকে সব সময় আনন্দিত করতো। আমি আসে পাশে দেখছি। বাবার অপেক্ষায় আছি। বাবা আসলে জিজ্ঞেস করবো রক্ত বৃষ্টির কথা, আর জংগলের সেই ভয়ানক চিৎকার যেটা মেঘের উপার থেকে ভেসে আসছিলো তার পর সেই পাখি দাজিয়ান আমি দেখেছি। বাবাকে সব বলবো। মিফতাহুল আংকেল আমাকে ভরসা দিয়ে বললেন,
~ তোমার আব্বু আম্মু চলে আসবে চিন্তা করো না,
ঘন্টা খানেক পার হয়ে গেলো, মিফতাহুল আংকেরে সাথে ভালোই মিশে গিয়েছিলাম। কথায় কথায় উনি আবার জানতে চাইলো আমি সেই রাস্তায় কি করছিলাম?,বাবা-মার ঝগড়া আর জংগলের ঘটনা আড়াল করে উনাকে বলে দেই।
~ তাহলে তুমি ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাও বাসা খালি, তুমি একা, তোমার বাবা মাকে খুজতে গিয়ে তুমি জংগলে হারিয়ে যাও। তাহলে জ্ঞান হারালে কিভাবে?
সেই সময় লোকটা ফোন আবার বেজে উঠে। বাবা ঘন্টা খানেকের মধ্যে চলে আসে। লোকটি ফোন ধরে বললেন, হাইওয়া পার হয়ে চলে আসুন। দেখবেন একটি চায়ের দোকানের পাশে লাল গাড়ি দার করানো,
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি বিশাল দুই রাস্তা। বাবা কান থেকে ফোন পকেটে ভরলো, পাশে আম্মুও আছে, কান্না করছে এখনো, তারা পার হওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু গাড়িগুলোর গতি বেশি হওয়ার বার বার এক পা এগিয়ে আমার পিছিয়ে নিচ্ছে।
আমি বাবাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে যাই, সেখান থেকে সাথে সাথে দৌড়ে আব্বু আম্মুর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু সেই লোকটি আমার হাত ধরে ফেলে।
~ রাশেদ এইভাবে দৌড়ানো বিপদজনক, তোমার আব্বু আম্মুকে পার হতে দাও।
উনি আমার হাত ধরে রেখেছে। আমার আব্বু আম্মু পার হচ্ছে, এখন আর গাড়ি আসছে না আগের মতো। আব্বু আম্মু আমা দৌড়ানো দেখে দৌরাতে আমাকে মানা করেছিলো, আমি ভদ্র ছেলের মতো রাস্তা পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।
~ রাশেদ ওইখানে থাকো দৌড় দিও না বাবা। আমরা আসছি।
আমার চোখে হঠাৎ রঙিন সব সাদা কালো হয়ে গেলো, সব কিছু নিরব হয়ে গেছে জেন সময় এই প্রথমবারের মতো থমকে গেছে। গতি হারিয়ে ধির হয়ে গেছে মানুষ, পশুপাখি,গাড়ি আর দুনিয়া, ত সব কিছু জেন থেমে গেলো চোখের পলকে। আমার মুখের হাসি ফিকে হয়ে গেলো সাথে সাথে।
আকাশ থেকে কি জেন একটা তরল আমার গালে এসে পরলো, আমি চমকে উঠে গালে হাত দিয়ে দেখি লাল রক্ত। সব কিছু সাদা কালো দেখছি অথচ আমার হাতের তরল পদার্থ লাল। লাল কেন?, এইটা কি পানি? তরল থেকে সাদা কালো পরিবেশ রঙ ধারন করলো ধিরে ধিরে, সব কিছুর গতি সাভাবিক হলো, নিরবতা থেকে কোলাহলে পরিবর্তন হলো আমার চার পাশ। কিছু লোক দৌরা দৌরি শুরু করল। ভিরের ভিতর আমার বাবা মা কোথায়? দেখলাম তারা রাস্তা পার করছে এখন দেখতে পারছিলো না। লোকগুলো ভির করে আছে কেন?, আমার বাবা মা লোকগুলোর মাঝে আটকে গেলো নাকি?, মিফতাহুল আংকেল আমার হাত ছেড়ে দিল, আমি দৌরে ঢুকে পরলাম সেই লোকগুলোর ভিরে।
সামনে আমার বাবা মা রক্তাক্ত অবস্তায় পরে আছে, আমার গালে যে রক্ত সেটা তাদেরই। একটা হলদে ট্রাক আমার আব্বু আম্মুকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। তারা ছিটকে পরে দূরে। সেই রক্ত ছিটে এসে আমার গালে পরে।
আব্বু আম্মুর হাত শক্ত করে ধরে ছিলো, আমি তাদের চোখে মৃত্যু যন্ত্রণা দেখেছিলাম। আব্বু আম্মু বলে কান্না করছি, মায়ের সারা শব্দ নেই। বাবাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকি। বাবা তার হাতে থাকা প্রিয় ঘড়িটা আমার হাতে পরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন,
~ ক্ষমা করে দিস বাবা, নিজেকে কখনো এতিম ভাবিস না৷ আল্লাহ আছেন। সময় যেমনি হোক অসৎ পথে যাবি না। মনে রাখিস তুই রাশেদ।
বাবা আমার কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মিফতাহুল এম্বুলেন্স ডাক দিয়েছিলো কিন্তু এম্বুলেন্স আসার আগেই সব শেষ। আমি আমার বাবা-মা কে হারাইনি সেদিন, আমি আমার দুনিয়া হারিয়ে ফেলেছিলাম। হারিয়ে ফেলেছিলাম বাচার ইচ্ছেটা। আব্বু আম্মুর সাথে বেশি সময় আমি কাটাতে পারিনি তাদের ব্যস্ততার কারনে, মনে অভিমান ছিলো কিন্তু সেদিন তাদের হারানোর সাথে সাথে অভিমানটা চাপা কষ্টে পরিনত হলো আমার। সেই চাপা কষ্ট বাকি জীবন একা বহন করে যেতে হবে। যতদিন আমি বেচে থাকবো ততোদিন। আজ ৭ অক্টোবর, আজ থেকে এক বছর আগে দাদি মারা জান এই দিনে, এই ৭ অক্টোবরের তারিখে, ঠিক এক বছর পর আমার বাবা-মা এই ৭ অক্টোবর। কয়েক মাস আগে আমাদের ভিলায় একজন বস্রহীন সাধু লোক এসেছিলো ভিক্ষা নিতে। সে আমাকে দেখে মরা আংগুল তুলে ইশারা করে আমার আব্বু আম্মুকে বলেছিলো,
~ তোর ঘড় অন্ধকার করে একটা সয়তানের জন্ম হইছেরে!! দেহিস এই পোলাডা তোমাদের মৃত্যুর কারন হইবো।
হে; আমি সেই শয়তান আর আমার কারনেই আমার বাবা-মা আজ জীবন হারায়। শুধু কি তারাই?! না!;
অক্টোবর সাতে প্রতি বছর আমার পরিবারের কেউ না কেউ মারা গেছে আমার জন্মের পরে। আমার জন্মের পর থেকে আমাদের এক একটা পরিবার সদস্য মারা যেতে থাকে। কেউ রেহাই পায়নি। আজকে সেই অভিসপ্ত অক্টোবর সাত। আমার বাবার মাথায় আমি হাত বুলিয়ে দেই, যেভাবে আগে দিতাম বাবা যখন আমার কোলে মাথা রাখতো। আমার অনুভুতি কাজ করছে না। অবিরাম চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে। তখন কুৎসিত কন্ঠে আমার কানে কেউ ফিস ফিস করে বলছে,
~ তোর বাবা-মার মৃত্যু তোর জন্য হইছে। এইসবের জন্যি তুই দায়ি।
বলে সে হাসতে থাকে আর আমি সেই দোশ শিকার করে নিলাম। হে, আমি বিশ্বাস করি, তাদের দুনিয়া ত্যাগের কারন আমি, আমি রাশের। আমি আমার বাবা মায়ের খুনি।
আমি জরো বস্তুর মতো হয়ে দেখছি আমার বাবা শুয়ে আছে আমার কোলে মাথা রেখে আর মা তার পাশে গভির নিদ্রায় আচ্ছন্ন। দুজনই ঘুম।
মা শক্ত করে বাবার হাত ধরে রেখেছে, আমি তাকিয়ে আছি সেই হাতের দিকে। বাবার সাথে মায়ের ঝগড়া দেখেছি কিন্তু তাদের মাঝে ভালোবাসাও ছিলো সেটা আমি কখনো দেখিনি। বাবা দেখাতো না, বুঝতেও দিতো না তার মনের অবস্থা। আজ মা যেভাবে বাবার হাত ধরে আছে শক্ত করে যেন বাবাকে কোথাও হারাতে দিতে চায় না। আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই, যে প্রশ্ন আমি আমার দাদিকে করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।
হে, আমার আব্বু আম্মুও দাজিয়ান পাখি ছিলো কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি তারা দাজিয়ান। আশে পাশের কোলাহল ধিরে ধিরে হ্রাস পেতে থাকে।
এম্বুলেন্স এসে বাবা আর মাকে স্ট্রেচারে উঠিয়ে নেয়। বাবা মা এমন ভাবে হাত ধরেছিলো সেই হাত ছাড়ানো আর সম্ভব হয়নি। বজ্রপাত হয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। আমি তখনো সেই স্থানে বসা। পিছন থেকে মাথার উপর কেউ একজন ছাতা ধরেছে যেন আমি ভিজে না জাই। এতোক্ষন আমি জেন এক জিন্দা লাশ হয়ে ছিলাম, মাথা ঘুড়িয়ে দেখি এই সেই লোক যে আমার সাথে ছিলো ততক্ষণ যতক্ষন আমার বাবা মা আমাকে না নিতে আসে। তান নাম মিফতাহুল। সে আমার ঘাড়ে হাত রাখতেই আমি পরে যাই।
আমি রাশেদ আর এটা আমার জীবনের অপ্রিয় গল্প যেটা আমি কাউকে বলতে চাইনি। আজ বাধ্য হলাম লিখতে। গল্প; এটা গল্প না এটা আমার জীবনের একটা কালো অধ্যায়ের শুরু। এক সত্য ঘটনা। এ এমন এক ঘটনা যেটা আপনাদেরকে চিন্তা করতে বাধ্য করবে, মনের মাঝে প্রশ্ন খেলবে আপনাদের। এমনটাও কি হতে পারে?, হে; অবশ্যই পারে। একটা জিনিস আগেই বলে দেই, আমরা যেখানে বাস করি সে যায়গাটির নাম দুনিয়া আর এই দুনিয়াতে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। সবই সম্ভব এই দুনিয়াতে। আপনি শুধু আপনার চোখ, কান, আর মাথাটা খোলা রাখুন, সত্য আপনার সামনে হবে।
জ্ঞান হারানো পর আমি একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম। মিফতাহুল আংকেল যে কিনা এখন আমার মামা, সে আমায় কোলে করে তার গাড়িতে উঠিয়ে বসায়, তখন আব্বু আম্মুকে দেখেছিলাম দুইজন এক সাথে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের পিছনে একটি করে পাখা ছিলো ঠিক যেনো দাজিয়ান পাখির মতো।
আম্মু আব্বুর ঘাড়ে মাথা রেখে হাত নারিয়ে আমাকে বিদায় জানালো, আব্বু আম্মুর দিকে ভালোবাসার চাহনি নিয়ে বললো
~ চলো যাই?!
বলেই উড়াল দিলো আকাশে।
দুইজনের একটি করে পাখা তবুও খুব ভালো করে তারা উড়ছে বিশ্বাসের জোরে। আব্বু আম্মুর দুইজনের শরীর এক হয়ে তারা সেই দাজিয়ান পাখির রুপ নিলো, তারপর তারা কোথায় হারিয়ে গেলো আমি যানি না।
১০ বছর পর……
To be continued