Meeting with a Ghost in Bengali Horror Stories by Kalyan Ashis Sinha books and stories PDF | ভৌতিক আড্ডা (Meeting with a Ghost)

Featured Books
Categories
Share

ভৌতিক আড্ডা (Meeting with a Ghost)

এমন সময়ে সৌরভ স্যারের ফোন! এখন রাত সাড়ে বারোটা বাজে, কোন দুঃসংবাদ নয় তো! যদিও আমার কাছে এটা গভীর রাত নয়। আমার মত অনেক সাংবাদিকই আছে, যারা রাতটাকে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু অফিস থেকে বেরোবার সময়ও তো সৌরভ স্যারের সাথে দেখা হল, কিছু বলল না তো!
হ্যালো, স্যার!
এত রাতে হয়তো তোমায় ডিস্টার্ব করলাম।
না, না, ঠিক আছে স্যার, কোন অসুবিধা নেই। অযথা আমায় নিয়ে বিচলিত হবেন না।
হ্যাঁ, যে জন্য এত রাতে তোমায় ফোন করা,
হ্যাঁ, স্যার বলুন।
শুনেছ নিশ্চয়ই, রেড মির্চি আগামী সোমবার থেকে ভৌতিক সিরিজ নিয়ে আসছে। এখনও যদি আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকি, তাহলে আমাদের চ্যানেল কে শুনবে? এমনিতেই সরকারি চ্যানেলের বাড়বাড়ন্তের বাজারে আমাদের শ্রোতা ক্রমেই কমছে। বিজ্ঞাপন কত কমেছে, তা তো নিজে দেখতেই পাচ্ছো!
স্যার, এর জন্য আমরা কি করতে পারি?
এমন কিছু করো, যাতে আমাদের সুদিন আবার ফিরে আসে। ভাবো, ভাবো। ভেবে বের করো, কাল সকালে আমাকে জানাও।
স্যার এত কম সময়ে!
তাহলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকো! আর আমিও চ্যানেল গুটিয়ে নিই।
ঠিক আছে স্যার, কাল সকালে আপনার সাথে দেখা করছি।
আসবে যখন, তখন সুদীপকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসো।
ঠিক আছে স্যার।
উল্টো দিকে ফোন কেটে যায়। স্যারকে তো ঠিক আছে বললাম। কিন্তু এই মন্দার বাজারে এমন কি প্রোগ্রাম তৈরি করা যায় যা শ্রোতা বাড়াবে! আবার স্যার যা বললেন, তাকেও অস্বীকার করা যায় না। যাইহোক, সুদীপকে একবার ফোন করে জানাই। ভাবতে না ভাবতেই দেখি সুদীপের ফোন। একি টেলিপ্যাথি নাকি!
বল সুদীপ।
সুদীপের থেকে জানতে পারি, স্যার সুদীপকেও ফোন করে একই কথা বলেছে। সুদীপ মোটামুটি একটা ঠিক করে রেখেছে। কালকে স্যারকে জানাবে। তবে কতদিন কন্টিনিউ করা যাবে, তা শেষ মেষ শ্রোতারাই ঠিক করবে।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে অফিসের দিকে বেড়িয়ে পড়ি। স্যার নটার আগে অফিসে ঢোকেন না। তবে সুদীপের থেকে আগেই পরিকল্পনাটা জেনে নিতে হবে। আর সুমিকেও সঙ্গে নিতে হবে। এমনিতে সুমি বয়সে অনেক ছোট হলেও যে কোন বিষয়ে ওর মাথা খুব তাড়াতাড়ি খেলে।
অফিসের সামনে এত ভিড় কেন? কোন গন্ডগোল হলো না তো! ভিড় ঠেলে এগিয়ে যাই। তেমন কিছু না, অফিসের সামনের রাস্তা দিয়ে সাইকেলে করে একজন যাচ্ছিল। একটা গাড়ি ব্যাক করার সময় একটু ঠেকিয়ে দিয়েছে। লোকের হাতে কাজ না থাকলে যা হয়! সবাই এসে জড়ো হয়ে ড্রাইভারকে যা নয় তাই বলছে। শেষে আমিই ভিড় কাটিয়ে দিই। কারোর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
অফিসে ঢুকে জানতে পারি, সৌরভ স্যার আমাদের জন্য নিজের রুমেই অপেক্ষা করছেন। তাই তাড়াতাড়ি স্যারের রুমে ঢুকি। দেখি সৌরভ স্যারের সাথে সুদীপ, সুমি ও আরো একজন বসে কি যেন আলোচনা করছেন। আমি ঢুকতেই স্যার আমাকেও আলোচনায় টেনে নেন।
প্রথমেই সুদীপের প্ল্যানটা জানিয়ে দেন। আমরা সামনের সোমবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে একটা ভৌতিক সিরিজ আরম্ভ করতে চলেছি। যা কিছু এখানে হবে তা সম্পূর্ণ লাইভ প্রোগ্রাম হবে। শ্রোতাদের ফোন কলও নেওয়া হবে। তাদের মতামতও থাকবে।
ভালো প্রোগ্রাম। কিন্তু স্পন্সর পাওয়া নিয়ে একটু চিন্তা থেকেই যায়।
আমাদের চ্যানেলে স্পন্সর করবে।
তাহলে তো আর কোন সমস্যাই নেই।
একটা সমস্যা আছে, সুমি বলে।
সবাই একসাথে প্রশ্ন করি, কি?
আগে থেকেই আমাদের সবকিছু রেডি করে রাখতে হবে। একটার পর একটা গল্প। যেন কোথাও খাপছাড়া না হয়ে যায়।
তা তো করতেই হবে, সুদীপ বলে। আর সেই জন্যই তো আগে আলোচনা করে নেওয়া।
শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় সুদীপ, সুমি আর আমি তিনজনেই একসাথে প্রোগ্রামটির অ্যঙ্কারিং করব। পিছনে সৌরভ স্যার সর্বদাই থাকবেন। ঠিক হয় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটা ভূতের গল্প আগে থেকেই রেকর্ড করে রাখা হবে। আমরাও সেই মতো কাজে লেগে পড়ি।
আজ সোমবার। আজকেই আমাদের লাইভ প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামটার উপরে আমাদের চ্যানেলের সব কিছু জড়িয়ে আছে এখন। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই আকাশ কালো করে মেঘ ছেয়ে রেখেছে। আর তার সাথে গুমোট ভাব ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রোগ্রামের সময়ই না ঝড় বৃষ্টি হয়!
কি একটা কাজে সৌরভ স্যারকে আজকে বাইরে যেতে হয়েছে? প্রোগ্রামের আগেই স্যার ফিরে পড়বেন জানিয়ে গেছেন। আমরাও মোটামুটি রেডি হয়েই আছি। শুধু লাইভ প্রোগ্রাম তো, তাই উটকো কিছু শ্রোতার উদ্ভট উদ্ভট প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। সেজন্য আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে থাকি।
এদিকে কখন যে বিকেল থেকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, বুঝতেই পারিনি। বাইরে প্রচণ্ড রকম ঝড় চলছে। সাথে তাল মিলিয়েছে বাজ। এই রকম ঝড় অনেকদিন আমাদের এই অঞ্চলে হয় নি। সুদীপ মাঝে মাঝে ব্যালকনিতে বেড়িয়ে বাইরের ঝড়ের ভিডিও তুলে রাখছে। আর একবার ব্যালকনি থেকে ফিরে এসে সুদীপ জানায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর আমরাও যেন রেডি হয়ে নিই, পৌনে সাতটা বাজে।
এই রে, এতক্ষণ হয়ে গেছে, খেয়াল করিনি। আমিও সুদীপের কথা মত ল্যাপটপ খুলে একবার চেক করে নিই। না, সবকিছু ঠিক মতোই আছে। স্যার এখনো এলো না। প্রথম দিনের প্রোগ্রাম, স্যারকে ছাড়াই শুরু করতে হবে। টাইমের তো আর নড়চড় করা যায় না!
সাতটা বাজতে পাঁচ। আপাদমস্তক বর্ষাতি দিয়ে ঢেকে কেউ একজন অফিসে ঢোকে। দারোয়ান তো প্রথমে ঢুকতেই দিচ্ছিল না, শেষে চিনতে পেরে নিজেই লজ্জা পায়। স্যার, আপনাকে তো চিনতেই পারেনি।
লোকটি অফিসে ঢুকেই অর্ডারের সুরে আলো অফ করে দিতে বলে। এখনই লাইভ ভূতের প্রোগ্রাম হতে চলেছে, আর তোমরা এত আলো জ্বেলে বসে আছো।
গলা শুনে সৌরভ স্যারকে আমরাও চিনতে পারি এবং সাথে সাথেই আলোগুলোকে নিভিয়ে দেয়া হয়। কাজ চালানোর জন্য একটা ছোট লাল রঙের নাইট ল্যাম্প জ্বলছে। সত্যিই, এই ষ্টুডিওটাকেই এখন কেমন ভৌতিক ভৌতিক লাগে!
স্যার বলে দেন, লাইভ প্রোগ্রাম হলেও রেকর্ডিং চালাও, আর ফোন এনগেজ করে দাও।
কিন্তু স্যার!
যা বলছি করো, এতে ফোন কলও রেকর্ডিং করা আছে। তোমরা যা কিছু করেছ, সুদীপ কালকেই আমাকে পাঠিয়েছে। সেগুলোই এখানে আছে। নাও নাও, তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নাও, সাতটা বাজলো বলে। টাইম সম্পর্কে সচেতন না হলে কিন্তু খুব বিপদ! কেউ তোমাদের বিশ্বাসই করবে না। তোমরা শুরু করো, আমি একবার বাথরুম থেকে আসছি, বলে আমার হাতে একটা পেনড্রাইভ দেয়।
পেনড্রাইভটা স্যারের হাত থেকে নেওয়ার সময় স্যারের হাতটা আমার হাতে ঠেকে। উঃ! কি ভীষণ রকম ঠাণ্ডা!
বাইরের টানা বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ থাকলে এমনই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাবে।
আমরাও প্রোগ্রামে মন দিই। কিন্তু স্যার যা বলে গেলেন, তাতে আমাদের কাজ তো এখন কিছুই নেই। শুধু পেনড্রাইভটা কম্পিউটারে সংযোগ করে চালিয়ে দিলেই হল। মাঝেমাঝে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ব্রেক এবং বিজ্ঞাপন। আর কোন কাজ নেই তাই মোহনদাকে চা দিতে বলি।
সুমি বলে, বাইরে এই ঝড় বৃষ্টির সময়ে ভুতের প্রোগ্রামে শুধু চা!
সঙ্গে গরম গরম পিঁয়াজি হলে বেশ জমবে,বলে সুদীপ মোহনদাকে পিঁয়াজি ভাজার কথা বলে। এই মোহনদা হচ্ছে আমাদের চ্যানেলের সর্বক্ষণের সঙ্গী। অথচ আমরা কজন ছাড়া মোহনদাকে কেউ চেনেই না। আমাদের যা কিছু আবদার, সবই মোহনদাই মেটায়। আজকেও মনে হয় ব্যতিক্রম হবে না।
রেডিও থেকে সুমির গলা ভেসে আসে, গুড ইভিনিং ফ্রেন্ডস। এখন আমরা শুরু করতে চলেছি ভৌতিক আড্ডা। আপনারাও আমাদের সাথে আড্ডায় অংশ নিতে পারেন। আমার সঙ্গে আছে সুদীপ আর কৌস্তব। সরাসরি আমাদের চ্যানেলের নাম্বারে ফোন করে আড্ডায় অংশ নিতে পারেন। আমাদের নম্বরটি হলো শূন্য তিন তিন, দুই দুই .....
নাম্বার বলা শেষ হলো কি হলো না, হঠাৎ ক্রিং ক্রিং করে ফোনটা বেজে ওঠে।
কিন্তু ফোনের রিসিভার তো নামানো রয়েছে! রেকর্ডিং প্রোগ্রাম চলছে! সুমির কথায় চমক ভাঙ্গে। আরে ওটাও রেকর্ডিং।
হ্যালো,
হ্যাঁ, বলুন, আর তার আগে আপনার নামটা একটু বলবেন। আর কোথা থেকে বলছেন তা জানাবেন।
সব বলবো, সব বলবো, কিন্তু তার আগে বলুন তো, কি শুরু করেছেন আপনারা! ভদ্রতার লেশমাত্র নেই। বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ দুদিন আগে ঠিক করেই ভৌতিক আড্ডা!
প্লিজ, কে বলছেন, নামটা বলুন। আর কোথা থেকে বলছেন?
কি বলবো! আর বললেই বা তোমরা বুঝবে কেমন করে?
তবুও আপনার নামটা বলুন।
আগে কিছু একটা ছিল, এখন অনেকদিন ব্যবহার হয়নি তো, তাই ঠিক মনে পড়ছে না!
দেখলেন, আপনি আপনার নামটাও জানালেন না, অথচ আমাদের অভদ্র বলছেন!
তা কি বলবো? ভৌতিক আড্ডা চলছে, তো ভূত কোথায়? শেষে বাধ্য হয়েই আসরে নামতে হলো। এখানে এসেই চোখ ধাঁধিয়ে গেল। এত আলো জেলে রাখে কেউ!
ও, আপনি তাহলে ভূত মশাই বলছেন!
শোনো খুকি, দু চার পাতা ইংরেজি পড়ে ভূতকে অস্বীকার করতে যেও না। পাগোলকে পাগোল বললে সে যেমন রেগে যায়, আমাদের ক্ষেত্রেও তেমনি হয়। অযথা উল্টোপাল্টা কথা বলে মাথা গরম করে দিও না। আড্ডা মারার জন্য ডেকে এনে এটা কি রকম অসভ্যতা! তোমাদের মতো মানুষ গুলোর জন্যই আজ মানুষের এই হাল! মুখে বলে এক, আর কাজে করে এক! তার চেয়ে বরং মোহনের আনা গরম গরম পিঁয়াজি দিয়ে চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো। মোহন যে এখন পিঁয়াজি ভেজেছে, তা নিশ্চয়ই আমার জানার কথা নয়! কিংবা কাল রাতে তুমি যে বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলে, তাও জানার কথা নয়! কিভাবে জানলাম, তা জানার চেষ্টা না করে, মন খুলে আড্ডা মারতে শেখো। আর শুধু আমি একা নয়, আজকে অনেকেই এই স্টুডিওতে আড্ডা দিতে আসছে।
হঠাৎ ফোনটা কেটে যায়। রেডিও থেকেই এবার সুদীপের গলা, বাইরে ঝড় বৃষ্টির দাপটে কোন কারনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আমরা আবার নতুন কলে ফিরে আসবো। একটু আগে যিনি কল করেছিলেন, তিনি আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে দিয়ে গেলেন। নতুন কল নেওয়ার আগে আমরা একটা ব্রেক নিচ্ছি, বিজ্ঞাপনের পরেই আবার আড্ডায় ফিরে আসব।
আমাদের প্রোগ্রাম বেশ জমে উঠেছে। সত্যিই সৌরভ স্যার যা মাথা মেরে সাজিয়েছেন না, যে কেউ ঘোল খেয়ে যাবে।
দে, আমার দিকে প্লেটটা একটু বাড়া। ও মোহনদা আর কয়েকটা পাঠাও। ভৌতিক আড্ডায় এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাব না থাকলে ঠিক জমে না যেন। অন্ধকারে একটু অসুবিধা হয় ঠিকই, কিন্তু বেশ জমেছে। মোহনদা আবার প্লেট ভর্তি করে দিয়ে যায়। যাবার সময় ফোনের রিসিভার নিচে নামানো দেখে, অভ্যাসবশত রিসিভারটা ঠিক জায়গায় রাখে।
বাইরে প্রচন্ড শব্দ করে একটা বাজ পড়লো। কাছাকাছি কোথাও পড়লো বোধ হয়! সুদীপ আবারও ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। সামনে নারকেল গাছের মাথাটা একেবারে ঝলসে গেছে! এত বৃষ্টির মধ্যেও কাঁচা গাছটা তাতে একেবারে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে! আমরাও সুদীপের পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং।
বাইরের ব্যালকনি থেকেই আওয়াজ পাই। ছুটে এসে রিসিভার তুলি।
হ্যালো,
আমি সৌরভ বলছি, তোদের সবার ফোন অফ কেন? প্রোগ্রাম কি শুরু হয়েছে? কখন থেকে চেষ্টা করে চলেছি! রাস্তায় গাছ পড়ে আছে, কোন গাড়ি যেতে পারছে না। আমিও আটকে আছি।
আমি কি বলব, বুঝতে না পেরে চুপ করেই থাকি। সুদীপ আর সুমিও আমার পাশে বোবা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের তিনজনের দৃষ্টিই তখন বাথরুমের দিকে। বাথরুমের দরজা হাট করে খোলা। মেঝেয় বর্ষাতি থেকে পড়া জল গুলো এখনো শুকায়নি।
উল্টোদিক থেকে সৌরভ স্যার কি বলছেন, আর মাথায় ঢোকাতে পারি না! শুধু কে যেন আমাদের পিছন থেকে বলে দেয়, ভৌতিক আড্ডা চলছে!