Huge - shoots in Bengali Comedy stories by Samir Sinha books and stories PDF | বিশাল - কান্ড

Featured Books
Categories
Share

বিশাল - কান্ড

সমীর সিন্ হা

কর্মসূত্রে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের আমার ওঠা-বসা সেই সুত্রে না জানি কত সহস্র মানুষজনের সঙ্গে মেলামেশা ও পরিচয় তার হিসেব কোনো দিন করিনি করলে বোধহয় 'ফোনবুক' ভরে যাবে।

সপ্তাহে মাঝে-মধ্যে আমাকে 'স্বাস্থ্য' দফতরে যেতেই হয় ওখানে অনেক দোকানের মাঝে একটি 'চা -এর' দোকানে এই দপ্তরের 'রথী- মহারথীরা' 'চা'-এর চুসকী নিতে প্রতিদিন পালা করে আসতেই থাকে কারনটা খুব স্বাভাবিক বাবুদের সরকারি 'চা' মুখে রোচে না তাই নিদিষ্ট সময়মত বাহিরে বেরিয়ে 'চা' এর চুসকী নেওয়া বড়ই জরুরি হয়ে যায় আর কি !

'উপর-নিচে' ওঠা নামা আর অফিসকালীন বাহিরে বেরিয়ে শারীরিক কল-কজ্বার যে যত্ন নেওয়া যায় এ এক অনন্য নজির, আর এরই ফাঁকে আমার 'চা' এর চুসকীর বাহানায় দফতরের বেশীরভাগ কাজ কর্ম হয়েই যায় তাই জেনেবুঝে এই 'লাঞ্'এর এই সময়টা খুব একটা মিসস্ করি না ।

এই 'জায়গাটাকে' ঠিক কি বলে ডাকা যায় কোন দিন ভাবি নি এই কাহিনী লেখার আগে পর্যন্ত, 'সঙ্গম' না 'মিলনমেলা' না 'প্রতিবাদ স্থল' না অন্য কিছু থাক পরে এই ব্যাপারে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো।

প্রথম-প্রথম এখানে এসে ঠিক কি ঘটছে বুঝতে পারাটাই এক বড় ব্যাপার ছিল আমার কাছে।

ধরা যাক, দোকানে কোনো এক অফিসার 'ওমলেট' খেতে খেতে উনার 'পি -এফ' এর সুদের হার নিয়ে চর্চা করছেন অন্য দপ্তরের 'সচিবের' সঙ্গে আবার কেউবা নিজের দপ্তরের 'বস-'কে কি ভাবে' স্বার্থান্বেষী' প্রমান করা যায় তার চেষ্টা করছেন উনার কোন পরিচিত 'কলিকের' কাছে।

একটু খেয়াল করে দেখবেন, আমাদের দেশই বোধহয় এমনই এক 'দেশ' যেখানে রোজগের যাওয়া আসার ফাঁকে ইশারা ইশারায়ই বন্ধু সুলভ আচরণ বা 'মহল' তৈরী হয়েই যায় খুব সহজেই উদাহরণস্বরূপ:-
'ফালানা' পানের দোকানের সামনে দাঁড়াতেই আপনার পছন্দের বিশিষ্ট 'পান' কিংবা 'চা-এর কাপটা আপনার হাতের মুঠোয় পৌঁছে গেল তৎক্ষণাৎ সকল কাস্টোমারদের এর মাঝে এ এক অন্য ধরনের গর্ব যার মূল্য বোঝানো চটকরে যায় না কেবল অনুভব করা যায় আর কি !

ঠিক, এই ভাবেই আমার সাথে ঘটনাচক্রে 'বিশাল ভাই' এর সাথে পরিচয় তা সে অনেক গুলো বছর আগের কথা, ছেলেটি 'দিল্লি' 'কর্পোরেশনএ' কাজ করে 'ইয়ং, 'হ্যান্ডসাম' আর আমার মনে হয় একটু বেশি চা এর সাথে 'বিস্কুট' খাওয়ার প্রবনতা যাকে ঠিক কি বলে - 'চাআতুর' (এর কোন ব্যাকরণগত মানে নেই) কারন যত বারই আমি ওকে 'চা'-নিতে দেখেছি সাথে একটা 'বিস্কুটের প্যাকেটা' হাতে ঢাল হিসেবে রাখা থাকবেই, থাকবে কখনও দিন বিনা 'ঢাল' হাত দেখিনি ।

চাকরিরটা পাকা-পোক্ত করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিল তার আগে রোজ যখনই দেখা হতো জিজ্ঞাসা করতো 'পেটের' দিকে দেখিয়ে 'ভাইয়া',
- আমার ভুড়ীটা একটু কমেছে না, রোজ নিয়ম মেনে অফিস যাওয়ার আগে জিমে কৎরত করে আসছি !
- দেখে আপনার কি মনে হয়? বলেই নিজের চেহারা নিজেই পরখ করতে শুরু করতো !

আমি বলতাম, সব ঠিক আছে শরীরচর্চা খুবই ভালো কিন্তু বিয়ের সঙ্গে এর সম্পর্কটা কোথায়? ঠিক 'ভাই' বুঝতে পারলাম না ।

'বিশাল ভাই' খানিকটা বিস্মিত হয়ে জবাব দিল কি যে আপনি বলেন বিয়ে করবো মেদ ঝরাবো না তা কখনো হয় - সবাই কি বলবে? 'দুলেরাজার' চেহারারটা দেখ একবার যেন একটা আস্ত 'জলহস্তী', বলে হাসতে শুরু করলো 'হা-হা-হা' ।

'ভাই' ওর বিয়ের নিমন্ত্রণ আমাকে করে ছিল, কিন্তু আমাদের চাকরিটা একটু আলাদা তাই ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই কখন কোথায় থাকবো তার কোন ভরসা নেই তাই 'জাবো - জাবো' করে আর যাওয়া হয় নি পরে অবশ্য এই ব্যাপারে 'বিশাল ভাই' এর সঙ্গে আমার কথা হয়।

এরই ফাঁকে, আমি আমার কাজকর্ম নিয়ে খানিকটা ব্যস্ত হয়ে পড়ি আর ওদিকে 'বিশাল ভাই' ওর হানিমুন ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে বেশ কিছু দিনের জন্য 'দিল্লি' থেকে দূরে রইল ।

কাজের চাপে সমস্ত কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম কিছুদিনের মধ্যেই আবার সেই পুরনো ছন্দে ফিরে এলাম ।

হঠাৎ করে কয়েকদিন পর 'বিশাল ভাই' এর সঙ্গে দেখা চিনতেই পারছিলাম না প্রথমটা, গায়ে নুতন ধরনের ডিজাইন করা জামা, নূতন বাইক সঙ্গে এক বিশাল 'মিলটনের' খাবার ডাব্বা দেখা হতেই একটা লম্বা দীর্ঘ মেয়াদী হাসি আর শোনাতে শুরু করল ওর বিয়ে বাড়ির কথা-কাহিনী বিস্তারিতভাবে।

এই ভাবেই চললো বেশ কিছু দিন যে যার কাজে ব্যস্ত হঠাৎ একদিন দেখলাম চুল উসকোখুশকো একদম অন্য ধরনের দেখতে উৎসুক চোখে চেয়ে রইলাম পরের ঘটনা আপনাদের জানাচ্ছি।

ঘটনা হল, 'বিশাল ভাই' বিয়েতে বহু ধরনের জিনিষপত্র যৌতুক হিসেবে পায় এরমধ্যে নামি কোম্পানির এসিও যৌতুক হিসাবে সংযোজন ছিল খুশি খুশি জিনিষপত্র গুলো 'বিশাল ভাই' তার প্রানের থেকেও দামী নুতন রুমে একে একে শেট করছিল নিজের ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে আর সবার শেষে 'এসির' জন্য বিশেষ সময় রেখেছিল যাকে বলে 'স্পেশাল ক্যাটাগরি আইটেম', 'দিল্লির' গরম আবহাওয়ার যা অবস্থা যে না সহন করেছে সে ছাড়া কেউ উষ্ণতার প্রকৃত মানেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারবে না তা সে যত বড় সহনশীল বেক্তি হোক না কেন !

এরপর, যথাযথ 'এসি' কোম্পানিকে ফোন করে 'বিশাল ভাই' জানিয়ে দেয় ওর বাড়ির ঠিকানা ।

কোম্পানি তার সময়মত সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়ে দেয় 'এসি-মেশিন' লাগানোর জন্য, এদিকে 'বিশাল ভাই' ও উপস্থিত, ইঞ্জিনিয়ার 'এসির' ডাব্বা খোলার আগেই তার চেলাকে জোর গলায় বলল,
- 'ছোট্টু ড্রিল মেশিনটা দে! সঙ্গে একটা ছেনি দেওয়ালের...'ছেদ' করতে হবে যে !

- 'হ্যাঁ' 'স্যার' কোন দিকে আপনার এসি থাকবে আমাকে একটু বলবেন?
- ফুটোটা করবো তো! তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করছি?

অগ্যতা, ইঞ্জিনিয়ারকে দিক নির্দেশনা দিয়ে 'বিশাল ভাই' ওদের জন্য 'চা' এর জল বসানোর জন্য নীচ তলায় 'মা' আর 'স্ত্রী' কে বলে আসতে গেছে আর কি, এরই ফাঁকে দুই জন মিলে 'ছাদের উপরে নিদিষ্ট জায়গায় একটা বাচ্চা ছেলে এপার ওপার করতে পারে 'এক পেল্লাই ফুটো' করে ফেললো আর কি !!

দুই হাতে 'চা' এর 'ট্রে' নিয়ে 'বিশাল ভাই' উপরের রুমে ঢুকে কি করবে প্রথমে ভেবে উঠতে পারে নি, নুতন দামী রং করা ঘরের হাল এর থেকে খারাপ অবস্থা আর কি বা হতে পারে বোধহয় কোনদিন কল্পনা করে নি।

'ইঞ্জিনিয়ার' 'ভদ্রলোক' 'বিশাল ভাইকে' দেখিয়ে বললেন আপনার বাড়ির দেওয়াল খুব একটা মজবুত নয় এক দম ভুর-ভুরা অবস্থা...
'বিশাল ভাই' এর গায়ে যেন কাটা 'ঘায়ে নুনের ছিটে লাগলো' আর কি !

কিছু বলার আগেই ভদ্রলোক এসির সিল্ড্ ডাব্বা খুলে 'ভাইকে' বলল আপনার এসি আমাদের কোম্পানির সবথেকে 'অ্যডভান্স মডেল' এই 'এসি' আমার দ্বারা লাগানো হবে না এর জন্য অন্য কোন ইঞ্জিনিয়ার আসবে আপনি নুতন কম্পেলেন করুন 'স্যার'।

আর উপরের 'ফুটো-টা' একটু ঢেকে রাখবেন কারন যখন তখন বৃষ্টি আসতে পারে, রুমে জল ঢুকে যেতে পারে, 'উইদারের যা অবস্থা'।

- 'বাই' 'বাই' 'স্যার' বলতে বলতে সামনে দিয়ে অ্যাসিস্টেন্টকে নিয়ে হন হনিয়ে সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল নিমিষের মধ্যে।

সারা গায়ে রাগ মেখে 'বিশাল ভাই' এর 'টেমপারেচার' তখন প্রায় চরমে কোনক্রমে রাগ সামলে চেয়ারে বসতেই সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল জলের ছিটে আসছে ঘরে মানে খুব শীঘ্রই বৃষ্টি শুরু হবে...

আর কোন দিকে না তাকিয়ে 'বিশাল ভাই' নিচের ঘরে সবে অফিস থেকে আসা নিজের ছোট ভাইকে সজোরে নাম ধরে ডেকে উঠল 'আকাশ' জলদি উপরে আয় 'আকাশ' ফুটো হয় বৃষ্টির জল আমার ঘরে ঢুকে পড়লো যে ! জলদি আয় ভাই !

কোনক্রমে দুই ভাই মিলে ছাদের ফুটোটাকে কভার করে প্লাস্টিকের শীট চড়িয়ে দিল কিন্তু 'হায়-রে-পোড়া' কপাল বৃষ্টির প্রকোপ যখনই একটু বেশি হয় তখনই জল রুমের দিকে ধেয়ে আসে এ যেন এক অমোঘ 'কবাডি খেলা, কখনও এই কোটে আবার পরমুহূর্তে অন্য কোটে, সারা রাত জেগে ঔই দিন কি ভাবে কাটায় ওরা সেই কথা যত কম মনে রাখা যায় ততই ভালো।

অগ্যতা, পরের দিন সকালে কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসএ ফোন করে সমস্ত কথা' 'বিশাল ভাই' জানাল বিস্তারিতভাবে।

উত্তরে, জবাব এল 'স্যরি' 'স্যার' আপনার অসুবিধা হওয়ার জন্য দুঃখিত আজ বিকেলে আমাদের 'সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার' আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে, চিন্তা করবেন না।

উত্তরে 'বিশাল ভাই' তিতিবিরক্ত হয়ে বলে উঠলো, 'ম্যাডাম' রোজ রোজ অফিস বন্ধ করা যায় কি আগামী কাল লোক পাঠান অনেক অনেক ধন্যবাদ।

পরের দিন, সকাল সকাল 'বিশাল ভাই' অফিস পৌঁছে যায় তাড়াতাড়ি সেকেন্ড হাফে বেরিয়ে আসার জন্য, সেই দিন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে চা টা খেয়ে অপেক্ষা করতে থাকে 'সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ারদের' পথপানে ঠিক তখনই পাশের বাড়ির 'মিস্টার রুপকুমার' মিউজিক সিস্টেমের সাথে ব্যান্ডের গান 'তোমার দেখা নাই রে, তোমার দেখা নাই,' বাজিয়ে গলা মিলিয়ে সুর তুলছে যা সত্যিই ঔই সময়ে এক্কেবারে প্রাসঙ্গিক।

অবশেষে প্রতীক্ষার পালা শেষ, কলিং বেল বেজে উঠল এই সুরে "হে ক্ষনিকের অতিথি"....
এক মাঝ বয়সের বেক্তি সঙ্গে দুইজন কম বয়সী 'অ্যাসিস্ট্যান্ট' আর একটা বিশাল ব্যাগ নিয়ে রুমে এল 'এসির' ময়নাতদন্তের জন্য।

প্যাকেট খুলে এসির মডেল বাহিরে বের করে ভদ্রলোক 'বিশাল ভাইকে' বলল - এই মডেলের জন্য আপনার দেওয়ালের সঠিক জায়গায় ফুটোটা হয় নি !

- ডানদিকে আবার নতুন করে ওপেনিং করতে হবে, যন্ত্রপাতির ব্যাগটা বের কর? কথাটা শুনে 'বিশাল ভাই' প্রায় 'মূর্ছা' যাওয়ার মতো অবস্থা !

- কি বলছেন কি? আপনার 'ইঞ্জিনিয়ার' তো ফুটোটা করে গেল গতকালই আর আপনি বলছেন আবার নুতন করে করতে হবে ব্যাপারটা কি? মশাই।
- 'স্যার' ও বেচারা এই প্রোফেশানে নুতন তো তাই একটু ভুল হয়ে গেছে আর কি !

- 'বিশাল ভাই' রাগে 'গর-গর' করতে করতে বলল একবার ছাদের হালটা দেখেছেন চারিদিকে যেন 'আত্ঙ্গবাদী' হামলা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এর লোকসান কে ভরপাই করবে বলুন? আমি তো কনজিউমার কোর্ট যাব এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

শুনে ভদ্রলোক থতমত খেয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করা শুরু করে দিল কিছুক্ষণ পর 'বিশাল ভাইকে' শুধলো 'স্যার' ফুটো তো আমাকে করতেই হবে আপনার এসি টাঙ্গানোর জন্য আর পুরোনো ভুল ফুটোর জন্যে আপনাকে এই ড্রেন পাইপের টাকা দিতে হবে না আমার আপনাকে কোম্পানির তরফ থেকে এটি ফ্রি লাগিয়ে যাচ্ছি আর 'স্যার' 'ভুল মানুষ মাত্রই হয়'
- প্লিজ কিছু মনে করবেন না !

আর কিবা বলা যায়, অগ্যতা এসি লাগানোর জন্য ড্রিল মেশিন বের করে উনার দুই সহকারী সিঁড়ি বেয়ে 'বিশাল ভাই' এর ছাদের 'চিরফার' শুরু করে দিল কিছুক্ষণ পর ছাদে আরও একটা অতিকায় ফুটো তৈরি হয়ে গেল মুহুর্তের মধ্যে, প্যাকেট থেকে মালপত্র সব যে যার জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হয়ে যেতে লাগলো যাক শেষ পর্যন্ত এসির সমস্যার অন্ত হলো।

আর মনে মনে 'বিশাল ভাই' 'এসির' শীতল হাওয়ায় অনুভূতি অনুভব করে খুশী হতে লাগলো তখনই পিছন দিক থেকে ভদ্রলোক বলে উঠলেন 'স্যার' আপনার কাজ শেষ জিনিসপত্র সব উল্টোপাল্টা হয়ে আছে একটু গুছিয়ে নেবেন আর পুরোনো ফুটোটা বন্ধ করে দেবেন,
- আপনাদের বেশিনটা কোথায় একটু দেখাবেন হাতটা একটু ধোবো !

কিছুক্ষণ পর, সমস্ত জরুরি কাগজপত্র সই করিয়ে লোক লস্কর নিয়ে ভদ্রলোক 'বিশাল ভাইকে' ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলো আর বলে গেল দেখবেন আমাদের কোম্পানির 'এসির' নিচে বসে আপনার সমস্ত অভিযোগ বিলিন হয়ে যাবে আর এক স্বর্গীয় নান্দনিক অনুভূতির সংস্পর্শে আপনার মন প্রাণ ভরে উঠবে ...ইত্যাদি, ইত্যাদি।

লোকজনদের বিদায় জানিয়ে 'বিশাল ভাই' স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এই ভেবে যাক শেষ পর্যন্ত বাড়িতে 'এসি' এল কষ্ট একটু হলো তো বটে তাতে আর কি জীবনে সব কিছু মানিয়ে নিতে হয়।

সব থেকে বড় কথা হলো, এই 'এসির' জন্য কতগুলো 'সি-এল' নিতে হয়েছে অফিস থেকে এর খবর কেই বা রাখে !

রাতে একটু শান্তিতে ঘুম আসবে এই ভাবেই তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে 'স্বামী-স্ত্রী' নিজেদের রুমে প্রবেশ করলো আর স্ত্রীকে 'বিশাল ভাই' বলেই ফেলল বিয়ের সবথেকে ভালো উপযোগী গিফট হলো এই 'এসি' আর কথা না বাড়িয়ে দুধ সাদা রিমোটটা নিয়ে 'বিশাল ভাই' এক দম সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় পৌঁছে গেল, বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু তাপমাত্রার কোনরূপ হেরফের হলো না নিজের মন বলে উঠল নুতন জিনিস কিনা তাই একটু সময় লাগছে ! এই আর কি?

এর পর শুরু হল রিমোট রিমোট খেলা তাপমান বাড়িয়ে কমিয়ে দেখা এই ভাবেই চলল প্রায় ঘন্টা- খানেক কোনরূপ আর তাপমাত্রার পরিবর্তন হলো না এর মধ্যে 'বিশাল ভাই' আর ওর 'স্ত্রী' ঘেমে প্রায় স্নান করার মতো অবস্থা এরই ফাঁকে 'বিশাল ভাই' 'এসি' 'অন-অফ' করে ক্লান্ত হয়ে কখন যে ঘুমের দেশে প্রবেশ করলো সকাল সাতটার অ্যালার্ম হঠাৎ করে বেজে উঠতেই টনক নড়ে চড়ে উঠলো, আজও অফিসে সেই লেট করে যেতে হবে বিছানায় বসে অভিশপ্ত 'এসির' দিকে চোখ যেতেই সারা গায়ে অতিরিক্ত উত্তাপ এমনই অনুভব হলো যেন অনায়াসে ঔই মুহূর্তে যে কোন বেক্তি ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ার যোগাড় আর কি !

অফিসে এসে সমস্ত কাজকর্ম করে 'বিশাল ভাই' খানিকটা মানসিক শান্তি পেল এর পর কাজের ফাঁকে ওই অভিশপ্ত 'এসি' কোম্পানিকে গতকালের নিদারুণ দরদ্দনাক কাহিনীর ঝলক শুনিয়ে অভিযোগ দায়ের করলো আর এই বলে ফোন রাখলো যদি এই বার এসি ঠিক না হয় তো 'এসির' শব দাহ সবার সামনে করে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেবো বলে পেল্লাই হুমকি টা আগেভাগেই শুনিয়ে রাখলো।

পরের দিন সকাল - সকাল 'এসি' কম্পানি থেকে 'বিশাল ভাই' এর মোবাইলে ফোন আসা শুরু হয়ে গেল অনেক বাকবিতন্ডার পর উভয় পক্ষই পরের দিন বিকেলে রাজি হল।

সময়মত 'বিশাল ভাই' অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এল রীতিমতো যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে সঙ্গে সেই অভিশপ্ত 'এসির' ফাইল আর সমস্ত কাজের ফাঁকে 'বিশাল ভাই' ঝগড়ার প্রস্তূতিটা মনে মনে ছকা কষেই রাখলো আগে ভাগেই।

নিদিষ্ট সময়মত হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল নিচে গিয়ে 'বিশাল ভাই' দরজা খুলতেই জনা চারেক লোক ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল যে সিনিয়র ভদ্রলোক কয়েক দিন আগে 'এসি' মেশিনটা টাঙিয়ে গিয়েছিলেন তিনিও এই মিছিলে সামিল ওনাকে দেখা মাত্র 'বিশাল ভাই' এর সারা গায়ে এলার্জির শিহরণ অনুভব হলো আর কি !

এক মধ্যবয়সী যুবক ইঞ্জিনিয়ার এসির রিমোট হাতে নিয়ে নীচ থেকে 'অন - অফ' ইত্যাদি ইত্যাদি সব রকম প্রায়াস করে কিছু না ফল্ট না পেয়ে মেঝেতে বসে অতি বড় বই টাইপের কিছু বের করে 'এসির' শবদেহর বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ চেক করতে লাগলো, আরেকজন আবার 'বিশাল ভাই' এর এই 'এসির' মডেলের কমিপেশী মোবাইলে অন্য প্রান্তে 'মহাশয়কে' বলতে এতখানিই মোসগুল যে সামনের সিঁড়ি থেকে পড়তে পড়তে বেঁচে যায় যাই হোক এখন রুমের পরিস্থিতি দেখে হঠাৎ করে যে কেউই ভাবতে দোষ নেই এযেন একটা ছোট খাটো 'স্টক এক্সচেঞ্জর' অফিস যার কোথায় কী হচ্ছে বোঝা দায় !

এই পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক চলছিল কিন্তু বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ পাওয়া গেল যখন নুতন সিনিয়র ভদ্রলোক বিশাল ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন,
- স্যার আপনি কি রিমোট কন্ট্রোল করে 'এসি' চালিয়ে ছিলেন না অন্য ভাবে ?

কথাটা শেষ হতে না হতেই 'বিশাল ভাই' রীতিমত ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো 'সরি' আপনার নাম কি যেন কি?
যাই হোক আপনাকে আমি বলছি "আমি এই অভিশপ্ত এসি' গত পরশু চালিয়ে ছিলাম দুই হাত মেঝেতে রেখে পা দুটো উপরে উঠিয়ে রিমোট টিপে" এর পর নানান রকমের বাকালঙ্কার অব্যয় ঔই ভদ্রলোককে শুনতে হলো এরই ফাঁকে ।

এতো কমসময়ে 'র‌্যাপিড ফায়ার' রাউন্ড মোকাবিলা করতে ভদ্রলোক প্রস্তূত ছিলেন না, আর এইখানেই কাহিনীতে মোড় এল বড় কথা হল এই টীমের যে ছেলেটি ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাগ বয়ে নিয়ে এসেছিল হঠাৎ করে সামনে হ্যালান দেওয়া সিঁড়িটা সোজা করে এক ঝটকায় 'এসির' কাছে পৌঁছে কিছু একটা করে দিতেই অভিশপ্ত 'এসি' চলতে শুরু করলো যা সবাইকেই অবাকই করলো না বরং ঘর ভর্তি লোকজন যেন কোন মৃতদেহ মিছিলে সামিল হলো কারোর মুখে কোন কথা নেই যে যার মুখপানে চাহিয়া !!

ঘোর নিস্তব্ধতা দুর করে 'বিশাল ভাই' বলে উঠল, "আরে 'ছোটু' তোর তো 'দিমাগ এর তো দ্বাত' দিতে হয় কি এমন করলি যে কম্পানির এত ইঞ্জিনিয়ারিং সব ফেল হয়ে গেল" ??

উত্তরে, 'ছোট্টু' যে অকপট 'কথা-কাহিনী' সবার সামনে বল্লো তা যেইনা শোনা, মুহূর্তের মধ্যে যে যার মতো কেউ কারও সঙ্গে কথা না বলে 'বিশাল ভাই' এর ঘর থেকে 'ছুটতে' 'ছুটতে' বেরিয়ে গেল প্রান হাতে করে যেন কেউ সবার পেছনে 'টাইম বোম' লাগিয়ে দিয়েছে।

'স্যার', আমিই আর কি করলাম কিছুই নয় আপনার এসি রুমে ঢুকিয়ে যখনই আমার চোখ পড়ে 'এসির' উপর তখনই দেখতে পাই কোন একটা দুধ সাদা প্লাস্টিকের মতো কিছু আটকে আছে 'কুলিঙ্গ প্যাডের' সাথে যার জন্য আপনার 'স্পিট' কাজ করছে না এই কথা আমি অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি আমাদের 'সিনিয়রকে' কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি সবাই ব্যস্ত মেশিনের 'ফ্লট' নিয়ে তাই বাধ্য হয়ে সিঁড়ির সাহারা নিতে হলো....

যাক সে কথা আপনি 'এসির' ঠান্ডার মজা নিন আর 'সরি স্যার' 'কাস্টমার কেয়ারে' আমার কথা একটু বলে দেবেন কারন আজকাল 'স্টার' না পেলে 'প্রোমোশান' হয় না বলেই ছেলেটা ব্যাগ উঠিয়ে সামনের দরজা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল 'বিশাল ভাইএর' 'এসি' মেশিনের ঠান্ডা ঠিক করে।।


++++সমাপ্ত ++++