★ 03 ★ A ★
সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। দেখি, আমার ওঠার আগেই কুকুর গুলো উঠে পরেছে। উঠেই একটা বড় হাই তুলে সামনের ও পিছনের পা টান টান করে শরীর বেঁকিয়ে আলিশ্যি ভেঙে নিল। আমিও উঠে পড়লাম। রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে ভোরের ফুরফুরে হাওয়ায় একটু পায়চারি করে নিলাম। পাশে একটা নিমগাছ দেখতে পেয়ে, একটা ডাল ভেঙে নিয়ে দাঁত পরিষ্কার করে নিলাম। হাসপাতালের সরকারি কলে স্নানটাও সেরে নিলাম। কালকের ক্লান্তি আর নেই। আজ আবার যেন সব কিছু নতুন করে শুরু।
ততক্ষণে নকুলও উঠে পরেছে। ও জানায়, বাড়ি ফিরতে হবে, না হলে জঙ্গলে গরু নিয়ে যেতে গোকুলের খুব অসুবিধা হবে। তাই এখনই ও বেরিয়ে পড়বে। তবে সন্ধ্যের পর আবার আসবে। আমিও আর বাধা দিই না। গরু দুটোকে নিয়ে এসে গাড়ির সাথে জুড়ে দেয়। চোখে মুখে একটু জল দিয়েই নকুল রওনা দেয়। আমি হাসপাতালের সামনের রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে নকুলের ফিরে যাওয়া দেখতে থাকি।
বেশ কিছুটা দূরে একটা বাঁকের পর, যতক্ষণ গাড়িটা অদৃশ্য না হয় ততক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। এখনও চারপাশে স্নিগ্ধতা বিরাজ করছে। ভোরের আলো বাড়তে শুরু করেছে।
হাসপাতালের সামনের সরকারি আলো এখনও জ্বলছে। চারপাশের গাছপালা থেকে পাখিদের মিষ্টি ডাক শুনতে পাচ্ছি। আমি শুধু সামনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে আছি। খুট করে একটা শব্দ হল। ঘার ঘুরিয়ে পিছনের দিকে তাকাতেই দেখি, দরজা খুলে লক্ষ্মী এগিয়ে আসছে।
তোমার ঠাকুমা এখন ভালো আছে গো। নকুলকে ডেকে দিতে এলুম। বাড়ি যেতে হবে তো!
ও একটু আগেই চলে গেল। বলল, এখনই না বেরোলে মাঠে গরু নিয়ে যেতে অসুবিধা হবে।
হঠাৎ লক্ষ্মী এগিয়ে এসে আমাকে বলে, দেখবে তুমি পরীক্ষায় ঠিক পাশ করে যাবে।
আমি কিছু বলার আগেই, এখন আসছি,বলে যেমন হঠাৎ এসেছিল, তেমন হঠাৎই ভিতরে চলে গেল।
আমিও আবার একা হয়ে পড়লাম। গতকাল সকালের পর থেকে পরীক্ষার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। লক্ষ্মী সকালেই মনে করিয়ে দিয়ে গেল। দূর থেকে একটা কোকিল ডাকছে। তার ডাক শুনে মন ভরে যায়। কিন্তু সময় যেন কিছুতেই কাটতে চায় না। আমি বসেই থাকি।
ভোরের স্নিগ্ধতা এখনও চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। রাস্তা দিয়ে একজন একজন করে লোক যাতায়াত শুরু হয়েছে। আমিও উঠে পরি। পায়চারি করতে থাকি। বাইরে রাস্তার দিকে এগিয়ে যাই। মেঠোপথ সোজা অনেকটা গিয়ে বেঁকেছে। রাস্তার দুপাশের গাছগুলো যেন দুদিক থেকে রাস্তাটিকে ছেয়ে রেখেছে। আলো না ছায়া - কে বেশি আপন, মনে দ্বন্দ্ব ধরায়।
আলো যেমন যেখানে যায়, সেখান থেকে অন্ধকারকে দূর করে, ঠিক তেমনি ছায়াও আলোর সাথে মিশে, নিজের ক্ষয় করেও আলোর তীব্রতা বাড়ায়। এই নিঃস্বার্থ ত্যাগ, আমার কাছে ছায়াকে আরও বেশি কাছের করে।
আমিও সামনের দিকে হাঁটতে থাকি। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজাবাঁধ পৌঁছে যাই। একটি দোকানের সামনে ভিড় জমেছে। সেই দিকেই এগিয়ে যাই। এটি একটি চায়ের দোকান। তবে চায়ের সাথে অনেক কিছুই আছে দেখলাম। তিন জায়গায় ছোলা মুড়ি নিলাম। দেখি, পিঁয়াজ ও কাঁচালঙ্কাও দিয়ে দিয়েছে। মুড়ির ঠোঙা গুলি হাতে নিয়ে আবার হাসপাতালের দিকে ফিরে চলি।
দেখি নিচে লক্ষ্মী দাঁড়িয়ে আছে।
তোমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না!
কেন, কি হয়েছে?
একবার সিস্টারদিদিকে ডাকতে হবে। স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে। আর দিতে হবে কিনা জানতে হবে। তোমার ঠাকুমা এখন উঠে বসেছে।
আমি লক্ষ্মীর হাতে দুটো মুড়ির ঠোঙা দিয়ে, সিস্টারদিদিকে খুঁজতে বের হই।
হাসপাতালের ভিতরেই, আলাদা কোয়াটারে সিস্টারদিদি থাকেন। ডাক্তারবাবুর কোয়াটারটি যেদিকে আছে, এটি তার ঠিক বিপরীত দিকে। কোয়াটারটির সামনে কিছুটা জায়গা বেড়া দিয়ে ঘেরা। বেড়ার ভিতরে ফুলগাছগুলি শুকিয়ে অযত্নে পরে আছে। আসলে দেখেই বোঝা যায়, ফুলগাছগুলি মরসুমি ফুলের গাছ। আর এই সময় তাদের শুকনো হয়ে যাওয়া, প্রাকৃতিক নিয়মেই পরে।
যাইহোক, কোয়াটারের সামনে যেতেই সিস্টারদিদির সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ওনাকে ঠাকুমার খবর জানালাম এবং স্যালাইনের কথাও বললাম। উনি একটু পরেই হাসপাতালে আসছেন জানালেন।
আমিও ফিরে আসি। সেই পুরনো জায়গায় বসে বসে ছোলা মুড়ি খেতে শুরু করি। কুকুর দুটোও আমাকে দেখে, আমার সামনে এসে লেজ নাড়াচ্ছে। হয়তো আমি মুড়ি খাচ্ছি, তাই আমার সাথে ভাব জমাতে এসেছে! যদি কিছু পাওয়া যায়- এই আশায়। আমিও তাদের ফেরাই না, অর্ধেক মতো খাওয়ার পর, এক জায়গায় ঢেলে দিই। ওরা দুজনেও আনন্দের সঙ্গে ছোলা মুড়ি খেয়ে নেয়। তারপর আবার একটু দূরে গিয়ে শুয়ে পরে। আমিও উঠে অনেকটা জল খেয়ে নিই। এবার চুপ করে অপেক্ষা করার পালা।
তবে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। দেখি সিস্টারদিদি একটা ব্যাগ হাতে এগিয়ে আসছেন। আমিও উঠে দাঁড়াই।
ঠাকুমার সাথে দেখা হয়েছে?
না, দিদি।
এসো আমার সঙ্গে।
আমিও সিস্টারদিদির পিছু পিছু হাসপাতালের ভিতরে ঢুকি। আউটডোর পেরিয়ে সামনের বারান্দা ধরে সোজা এগোতে থাকি। ডানদিকে একটা বাগান মতো রয়েছে। বামদিকে সার দিয়ে ঘর। অনেকগুলি ঘর পেরিয়ে বারান্দাটা ডানদিকে বেঁকে গেছে। এখানেও বারান্দার বাঁদিকে অনেক ঘর আছে। একেবারে শেষের ঘরটিতে সিস্টারদিদি ঢুকে পড়েন। বাইরে লেখা রয়েছে ফিমেল ওয়ার্ড। সিস্টারদিদির পিছু পিছু আমিও ভিতরে ঢুকি। এই ঘরে মোট চারটি বেড পাতা আছে। সবকটি বেডই লোহার। দুটো বেডে বিছানা পাতা আছে। বাকি দুটো বেডের উপরেই বিছানা গুছিয়ে রাখা আছে। দেখি ঠাকুমা বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে। আর ওই বেডেই পায়ের দিকে পিসি আর লক্ষ্মী বসে আছে।
ঠাকুমা কেমন আছো? সিস্টারদিদি ঠাকুমাকে জিজ্ঞেস করে।
হাতের কাঁটাগুলো কখন খুলে দেবে গো?
ওগুলো দিয়েই তো তোমাকে কাল থেকে খাওয়ানো হল। তুমি যদি এবার থেকে নিজে নিজে খেয়ে নাও, তাহলেই খুলে দেওয়া হবে।
খেতে যে ভালো লাগে না।
না খেলে বেঁচে থাকবে কি করে! খেতে তো হবেই।
আচ্ছা, একটু একটু খাবক্ষণ।
দেখি ততক্ষণে সিস্টারদিদি তার ব্যাগ থেকে একটা বোতল বের করেছেন। পিসিকে গ্লাসটা একটু ধুয়ে দিতে বললেন।
বোতল খুলে গ্লাসে সরবতের মতো কিছু একটা ঢাললেন। এবং ঠাকুমার হাতে গ্লাসটা দিয়ে খেয়ে নিতে বললেন।
দেখি ঠাকুমাও আস্তে আস্তে খেয়ে নিল।
আজকে তোমাকে দেখা হবে। যদি আর কিছু না হয়, তবে কালকে তোমাকে ছুটি দেওয়া হবে। আবার বাড়ি ফিরে যাবে।
আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন, আর স্যালাইন দিতে হবে না, তবে চ্যানেলটা করা থাক, কাল ছুটি দেবার আগে খুলে দেব।
দিদি, রাতে ছুটি দেওয়া যায় না?
আমাদের অসুবিধার কথা জানাই।
সিস্টারদিদিই উপায় বলে দেন। কাল সকালে ছুটি হয়ে গেলে, সন্ধ্যার পর তোমরা গাড়ি নিয়ে এসে ঠাকুমাকে নিয়ে যেও।
★ 03 ★ B ★
সকালের ট্রেন চলে গেছে। ঠাকুমার ভালো থাকার খবর বাড়িতে জানানোর জন্য এবং পিসি ও লক্ষ্মীর খাবার আনার জন্য বাড়ি ফেরার কথা চিন্তা ভাবনা করি। পিসিকে বললে, পিসিও যেতে বলে। লক্ষ্মীও আমার সাথে একবার বাড়ি যাবে জানায়। আমার ইচ্ছা না থাকলেও, সঙ্গে নিতে হয়।
আমরা বেরিয়ে পরি। আমি সামনে সামনে চলেছি, লক্ষ্মী আমার পিছু পিছু হাঁটছে। সামনেই রাজাবাঁধের পথ আলাদা হয়ে গেছে। এখান থেকেই আমরা অন্য পথ ধরি। জানি লক্ষ্মীর হয়তো একটু কষ্ট হবে। কিন্তু এদিক দিয়ে পথটা অনেকটা কম। গামছাটা লক্ষ্মীকে দিয়ে দিই।
সকালের সেই স্নিগ্ধতা এখন আর নেই। গতকালের মতো কষ্ট না হলেও, আজও যে গরম পড়বে বুঝতে পারা যাচ্ছে। লক্ষ্মীও গামছাটা মাথায় ঘোমটার মতো করে দিয়ে রেখেছে। আমরা দুজন কিশোর কিশোরী ফাঁকা মাঠের উপর দিয়ে রেল লাইনের দিকে এগিয়ে চলেছি। একসময় রেল লাইনের উপরে উঠে পরি। স্লিপারের উপর পা ফেলে এগিয়ে চলেছি।
ও সৌরভদা, আমাকে ধরো, নইলে পরে যাব।
বাধ্য হয়েই লক্ষ্মীর হাত ধরে হাঁটতে হচ্ছে।
আমরা হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি হেঁটে চলেছি। কারোর মুখেই কোন কথা নেই। হাতের উপরে চাপ থেকে বুঝতে পারি, লক্ষ্মী কখনও আমার হাত ধরে পরে যাওয়া আটকাচ্ছে, কখনও বা এমনিই হাতটা ধরে রেখেছে।
দেখবে সৌরভদা, তুমি যদি আমার হাতটা ধর, তাহলে আমি লাইনের উপর দিয়েও হাঁটতে পারি। একথা বলেই, আমার হাতটায় একটা টান মেরে লাইনের উপরে উঠে পরে।
আমি সোজা সামনের দিকে হাঁটতে থাকি। লক্ষ্মীও আমার হাত ধরে রেখে লাইনের উপর দিয়ে হেঁটে চলেছে। এটা কিন্তু ঠিক যে, লাইন থেকে একবারও পরে যাচ্ছে না। আমার মনে হয়, এখানে বেশ স্বচ্ছন্দে হাঁটছে, বরং স্লিপারের উপর দিয়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল।
এইভাবে হাঁটতে হাঁটতে আমরা এগিয়ে চলেছি। এই পথে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। দরকার না থাকলে গরমের মধ্যে এই পথে কেউ আসবেই বা কেন!
লক্ষ্মীর হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে গরম বুঝতে পারি। এদিকে সেই রেলব্রীজ পর্যন্ত কোন ছায়াও নেই। তাই এই কষ্টটা সহ্য করতেই হবে। লক্ষ্মীরও খুব কষ্ট হবে! একে গরমের মধ্যে বেরোয়ও না। ওর দিকে তাকিয়ে দেখি।
একি! ওর মধ্যে যেন কোন কষ্ট নেই। আমার হাত ধরে আনন্দের সঙ্গে মাথায় গামছার ঘোমটা দিয়ে লাইনের উপর দিয়েও প্রায় লাফাতে লাফাতে চলেছে।
তোর কষ্ট হচ্ছে না তো?
কষ্ট হবে কেন! তাছাড়া তুমি তো আছ। আমাকে কষ্ট দেবে কার সাধ্যি! এই রে! তুমি তো একেবারে ঘেমে নেয়ে গেছ! এই বলে লাফিয়ে লাইন থেকে আমার সামনে। মাথা থেকে গামছাটা খুলে পরম যত্নে আমার ঘাম মুছিয়ে দেয়। তারপর আবার গামছাটা নিয়ে নিজের মাথায় আগের মতো করে জড়িয়ে নেয়।
আমিও আর কোন কথা না বলে হাঁটতে শুরু করি। তবে এখন আর হাত ধরাধরি করে হাঁটতে হচ্ছে না। স্লিপারের উপর দিয়ে অনায়াসেই লক্ষ্মী হেঁটে চলেছে। বরং আমার পায়ে লেগে মাঝে মাঝেই পাথর ছিটকে যাচ্ছে। পায়ে জুতো না থাকলে খুব অসুবিধা হতো, বুঝতে পারছি। আর কিছুটা গেলেই রেলব্রীজ। এখান থেকে দেখতেও পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমরা অনেকটা এসে গেছি, বুঝতে পারি।
রেলব্রীজ পার হয়ে আমরা ডুলুং নদীতে নেমে পরি। নদীতে এখন জল খুব কম। তাই জলও খুব গরম হয়ে আছে। সেই গরম জলই আমি ও লক্ষ্মী খেয়ে নিই। চোখে মুখে দিই।
হঠাৎ লক্ষ্মী বলে, সৌরভদা একটু দাঁড়াও, নদীতে একটা ডুব দিয়ে আসি।
বলেই এগিয়ে যায়। কিন্তু নদীর সব জায়গাতেই হাঁটুর নিচে জল। তাই আমিও এগিয়ে যাই।
একটু দাঁড়াও, ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
লক্ষ্মীও দাঁড়িয়ে পরে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
নদীর মাঝ মতো জায়গার দিকে এগিয়ে যাই। নদীর জল খুব কম হলেও, সর্বদা প্রবাহিত হয়। তাই নদীপথে প্রচুর নুড়ি পাথর বালি বয়ে নিয়ে আসে। হাতে করে সেই সব বালি নুড়ি সরাতে থাকি। ফলে জল ঘোলা হয়ে যায়। আবার স্রোত সেই ঘোলা জলকে মুহূর্তে সরিয়ে নিয়ে যায়। আর স্রোতের দিকে বালি সরাতে আমাকে খুব বেশি কষ্টও করতে হয় না। বেশ কিছুটা জায়গা বুক সমান বালি সরিয়ে দেওয়ার পর একটা গভীর অংশ তৈরি হয়ে যায়। এইবার আমি উঠে আসব ভাবছি, আর তখনই লক্ষ্মী সেই গর্তে নেমে পরে।
তুমি কি ভালো গো! আমি চান করবো বললাম, আর তুমি এই গরমের মধ্যেও এতো তাড়াতাড়ি পুকুর কেটে ফেললে! তবে এসো, একসাথেই চান করে নিই।
আমি না চাইলেও, অন্য কোন উপায় ছিল না। আমি শুধু একটা ডুব দিয়ে উঠে পরি। ডুব দেওয়ার সময় বুঝতে পারি, গর্তের নিচে ঠান্ডা জল জমতে শুরু করেছে। আমি লক্ষ্মীর থেকে গামছাটা চাই।
দিচ্ছি।
আমিও জলের মধ্যেই অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু গামছা দেয় না। গলা পর্যন্ত জলের মধ্যে ডুবিয়ে লক্ষ্মী বসে রয়েছে। মাথার চুলগুলো জলে ভিজে জলের মধ্যেই ছড়িয়ে আছে। মাঝে মাঝে চোখ পর্যন্ত ডুবে উঠে পরছে এবং হাত দিয়ে চোখ থেকে জল চেঁছে ফেলছে। আমি আবারও গামছাটা চাই।
একটু পরে দিচ্ছি। দিলেই তো তুমি উঠে পড়বে! তোমাকে আর পাব না। বলে আমার হাত ধরে টেনে নেয়। আমিও হাতের কাছে গামছাটা পেয়ে যাই।
উঠে পরো। আবার পিসির খাবার নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে।
ততক্ষণে গামছা দিয়ে মাথা মোছা হয়ে গেছে। গামছাটা লক্ষ্মীকে দিয়ে দিই। আমি একটু এগিয়ে নদীর বাইরে রেলব্রীজের তলায় ছায়াতে দাঁড়াই। বেশিক্ষণ দাঁড়াতে হয় না। দেখি, ভিজে ফ্রক লেপ্টে রয়েছে। গামছাটা এখনও মাথায় ঘোমটার মতো করেই জড়ানো।
এখন সত্যিই লক্ষ্মীকে, প্রতিমার মতোই লাগে! লক্ষ্মী সোজা এগিয়ে এসে আমার সামনে হেঁট হয়ে, পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে।
এই, এই, কি কর?
আমার দেবতাকে প্রনাম করছি।
আমি কেন দেবতা হতে যাব? চলো, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে।
লক্ষ্মীও আর কথা বাড়ায় না। এরপর থেকে সারা রাস্তা কোন কথা না বলেই চলে এলাম।
যখন শিবমন্দিরের কাছে এলাম, ততক্ষণে আমাদের জামাকাপড় সব শুকনো হয়ে গেছে।