Tin house in Bengali Short Stories by Kalyan Ashis Sinha books and stories PDF | টিনের বাড়ি

Featured Books
Categories
Share

টিনের বাড়ি

কালীপূজার পরের দুদিন, আমার সবসময়ই ভালো কাটে। এই সময়টাতে আমি প্রতিবারই দিদির বাড়িতে কাটাই। এ বছরও কোন নড়চড় হয়নি। কালীপূজার পরের দিনই, আমি আর শান্তনু ব্যাগপত্র গুছিয়ে, সাইকেল নিয়ে সোজা দিদির বাড়ি।

শান্তনু আমার সাথেই পরে। সবে মাধ্যমিক পাশ করে, দুজনেই সাইন্স নিয়ে ভর্তি হয়েছি। ওর কোন বোন নেই, আমার সাথে প্রতিবারই ফোঁটা নিতে দিদির বাড়ি আসে।

দুদিন খুব আনন্দে কাটলেও, এই সময়টায় মনটা খারাপ হয়ে যায়। এবার যে বাড়ির দিকে ফিরতে হবে। দুপুরে ভালোই খাওয়া দাওয়া হয়েছে। তারপর একটু গড়িয়ে নেওয়াও গেছে। এখন আর উঠতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু উপায় নেই।

প্রতিবারই এই সময়টাতে আমার এতো খারাপ লাগে যে বলার নয়। তবু মনকে মানাতেই হয়। শান্তনুও রেডি হয়ে গেছে। তাই উঠে পড়তেই হল। চোখে মুখে একটু জল দিয়ে ফ্রেশ হয়ে পোশাক পরে নিলাম। ব্যাগ আগে থেকে দিদিই গুছিয়ে দিয়েছে।

একটা টিফিন ক্যানে করে কিছুটা মাংসও ব্যাগে দিয়ে দিয়েছে। এটা প্রতিবারই বাবার জন্য দিদি পাঠায়। কিন্তু আজকে যা গুমোট করে আছে, ভালো থাকবে কিনা জানি না।

প্রায় সারে চারটে বাজে। এবারে বেরিয়ে পরতে হবে। সাইকেলে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক লাগে। কিন্তু এই সময়টায় আবার পাঁচটা বাজতে না বাজতেই সন্ধ্যে হয়ে যায়। তার উপরে দুজনে একটা সাইকেলে করে যাব।

তাই আর দেরি না করে, সকলের সাথে দেখা করে বেরিয়ে পরি। আমিই প্রথমে সাইকেল চালাবো। শান্তনু সামনের রডের উপর বসে। পিছনে ব্যাগটা থাকে। দিদি জামাইবাবুকে বিদায় জানিয়ে সাইকেলের প্যাটেলে চাপ দিই। সাইকেলও চলতে শুরু করে।

মোটামুটি আধঘণ্টাও আসিনি। আকাশ যেন কালো হয়ে আসছে। এমনিতেই সন্ধ্যে হয়ে গেছে। তাই সবকিছু দেখাও যাচ্ছে না। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। শুধু আমরা দুজনে একটা সাইকেলে চেপে এগিয়ে চলেছি।

জানিস সৌরভ, বৃষ্টি আসার আগেই কোথাও দাঁড়িয়ে পরতে হবে।

হ্যাঁ, সে আর বলতে। কিন্তু একটাও দাঁড়ানোর মতো জায়গা পাচ্ছি না।

চল তাহলে, সামনের দিকেই এগোতে থাকি। যতটা এগিয়ে যাওয়া যায়।

চল।

আমি সাইকেলের গতি আরও বাড়িয়ে দিই। এখানে রাস্তার একপাশে পাথুরে জমি, আর অন্য পাশে খাল। খালের ওপাশে, বছরে একবার চাষ হয়। আর একটু এগিয়ে গেলে, দুপাশেই লালমাটির খাদান পড়বে। তার আগে তো দাঁড়াবার মতো কোন জায়গা মনে পড়ছে না।

শান্তনুকে বলি কথাটা। ও বলে, এখন বৃষ্টি শুরু হলে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে হবে তাহলে।

হ্যাঁ রে! অনেকটা সেই রকমই। তবে কোনভাবে কুমারচক পৌঁছে যেতে পারলে আর কোন সমস্যা হবে না।

সে তো এখনও আধঘণ্টার রাস্তা!

তা হবে।

তবে তুই একটু বোস, আমি চালাই।

তাই কর।

আমি সাইকেল দাঁড় করাই। জায়গা বদল করে আবার এগোতে থাকি। ততক্ষণে লালমাটির খাদান শুরু হয়ে গেছে। সামান্য কিছু পয়সার বিনিময়ে এখান থেকে লালমাটি তুলে নেয়। বালি দিয়ে ভর্তি করে দেওয়ার কথা থাকলেও, কখনোই গর্তে বালি পরে না। এটাই এখানকার নিয়ম হয়ে গেছে। আর তাই এখানে রাস্তার দুপাশে অনেক বড় বড় ঝিল চোখে পরে।

এগুলি আসলে লালমাটি তুলে নেওয়ার পরের গর্ত। যা বৃষ্টির জলে ভরে গিয়ে ঝিলের রূপ নেয়। গরমকালে যখন সব জল শুকিয়ে যায়, তখন গর্তগুলির চেহারা দেখতে পাওয়া যায়।

তবে এখানে রাস্তার পাশে মাঝে মাঝে গাছ চোখে পরে। হঠাৎ শান্তনু বলে, অন্ধকারে কিছুই যেন দেখতে পাচ্ছি না। শুধু মাঝে মাঝে রাস্তার পাশের গাছগুলোকে দেখে যেতে পারছি।

কি আর করা যাবে! এই সময়ই আকাশ কালো করে এলো। আর একটু আগে হলে দিদির বাড়ি থেকে বেরোতামই না।

ওসব ভেবে এখন কিছু লাভ নেই।

আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ। ততক্ষণে ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করে দিয়েছে। শীতও করছে খুব। আমরা যেদিকে চলেছি, বাতাসও সেই দিকেই বইছে। ফলে আমরা বেশ দ্রুতই এগিয়ে চলেছি। মাঝে মাঝে দূরে কোথাও বিদ্যুৎ চমকায়। আর তারই আলো আমাদের পথ দেখায়।

এবারে হাওয়াটা যেন একটু বেশি ঠান্ডা বয়ে আনে। বুঝতে পারি, পিছনে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আর বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য, আমরাও দ্রুত জায়গাটা পার হবার চেষ্টা করি।

ওই আলোটা কিসের বলতো?

বুঝতে পারছি না, তবে ওটার কাছে একটা বাড়ি আছে বলে মনে হচ্ছে।

তাই তো দেখছি।

কিন্তু খাদানে বাড়ি আসবে কোথা থেকে?

যাইহোক, বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য চল বাড়িটায় ঢুকি।

কার বাড়ি, কে জানে!

যারই হোক না, আমরা তো আর চুরি করতে ঢুকছি না। বৃষ্টি থেমে গেলেই আবার চলে যাব।

তবে চল।

আমরা রাস্তা থেকে নেমে একটা ছোট ঝিলের পাশ দিয়ে আলোটাকে লক্ষ্য করে এগিয়ে চলি। পাশে যে বাড়িটা আছে, সেটি আপাদমস্তক টিন দিয়ে তৈরি। বোঝা যায়, খাদানের কাজের জন্য অস্থায়ী ভাবে বানানো। কাজ শেষ হয়ে গেলেও বাড়িটা রয়ে গেছে।

আর এই একটি বাড়ির জন্যই ইলেকট্রিকের লাইন টানা হয়েছে। একটি পোস্টে শুধু আলো জ্বলছে। বাকিগুলো মনে হয় কেটে গেছে।

বাড়িটি একটি একতলা বাড়ি। চারপাশ করগেটের টিন দিয়ে ঘেরা। কিন্তু ঢুকবো কিভাবে?

শান্তনু সাইকেলটা একপাশে ঠেকিয়ে রাখে। বলে, আয় আগে চারপাশটা একবার ঘুরে দেখে নিই।

বাড়িটা মনে হয় অনেকদিন পরে আছে।

যা করার তাড়াতাড়ি কর। এখুনি বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারে।

বাড়িটার চারপাশ ঘুরে দেখার জন্য ডানদিক দিয়ে অগ্রসর হই। পাশের দিকে আসতেই দেখি, একটা জানালা আছে। কিন্তু জানালায় কোন গ্রিল বা পাল্লাও নেই। তার মানে, ভিতরে ঢোকার রাস্তা তৈরি। জানালার পাশে এগিয়ে যাই। ভিতরের দিকে তাকাই।

ভিতরে এতো অন্ধকার যে বাইরে থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে ভিতরের দেওয়াল কাঠ দিয়ে তৈরি। মানে, যিনিই এটা বানিয়ে থাকুন না কেন, তিনি বেশ সৌখিন লোক ছিলেন।

সাইকেলটা এদিকে নিয়ে আয়।

আমিও সাইকেলটা জানালার নিচে টিনের দেওয়ালে ঠেকিয়ে রাখি। শান্তনুই প্রথমে সাইকেলে উঠে তারপর জানালা দিয়ে ঘরের ভিতরে পা রাখে।

আগে ব্যাগটা দে, তারপরে উঠে আয়।

আমিও পিছনের কেরিয়ার থেকে ব্যাগটা শান্তনুর দিকে বাড়িয়ে দিই। তারপরে আমিও ঘরের ভিতরে ঢুকি। ভিতরটা দেখতে না পেলেও বুঝতে পারি, মেঝেও কাঠ দিয়ে বানানো। একটু আলো থাকলে খুব ভালো হতো। বাড়িটার সামনে আলো আছে। কিন্তু দেওয়াল ও বন্ধ দরজা ভেদ করে ভিতরে ঢুকতে পারেনি।

আমরা পায়ের কাছে ব্যাগটা রেখে ভিতরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কিছুক্ষণ পরেই অন্ধকার সয়ে আসে। ঘরের ভিতরে আসবাব বলতে, একটি তক্তাবোশ ছাড়া আর কিছুই নেই। ঘরটিতে পিছনের দিকে আরও একটি জানালা আছে। সেটাও ফাঁকাই পরে আছে।

অন্ধকার সয়ে আসার পর ব্যাগটাকে নিয়ে তক্তাবোশের উপরে রাখি ও আমরাও বসি। ততক্ষণে বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। টিনের চালের উপর বৃষ্টির ফোঁটা পরার শব্দও শুনতে পাচ্ছি। বুঝতে পারি, মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। এই বাড়িটা দেখতে না পেলে, এই শীতের সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে হতো।

বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ঝড়ের দাপট। সাথে আবার বাজ পড়াও শুরু হয়েছে। জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি। মনের মধ্যে একটা ভয় জমতে থাকে। এটা ভয় না উত্তেজনা বুঝতে পারি না। দূরে কোথাও বাজ পড়লো। তার আলোতে ঘরের ভিতরটা আর একবার ভালো করে দেখতে পেলাম। আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই এখানে।

এমন সময় শান্তনু বলে, এই রকম বৃষ্টি বাদলার মধ্যেই পোড়োবাড়িতে ভুতেরা আসে।

তুই চুপ করবি। আমি ধমকে উঠি।

আচ্ছা তুই বল, এই বৃষ্টিতে বাইরে পরে পরে ভেজার থেকে তো ভালো।

আমার এখন কোন কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।

আমার সাথে শান্তনুও চুপ করে যায়। টিনের চালের উপর বৃষ্টির শব্দ আর ঝড়ের শোঁশোঁ শব্দ একসাথে সত্যিই একটা ভয়ের অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে। বাইরে বিদ্যুতের আলো কখন নিভে গেছে। মাঝে মাঝে বাজের আলোয় ঘরের ভিতর ও বাইরে দেখতে পাচ্ছি।

ঘরের ভিতরে সরাসরি কোন হাওয়া আসছে না। তবে দুটো জানালা খোলা অবস্থায় থাকার জন্য বদ্ধ ভাবটাও নেই। খুব যে স্বস্তিতে আছি, তা'ও বলা যাচ্ছে না। জানালা দিয়ে বাইরের বৃষ্টি দেখতে খুব খারাপও লাগছে না। কিন্তু শান্তনুটা যেন কি! তাঁদের নাম মনে করিয়ে দিল। আমি শুধু বারেবারে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে থাকি। অন্ধকারে ভালো করে কিছু দেখাও যায় না।

কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর শান্তনু বলে, আজকে না বেরোলেই ভালো হতো!

বেরোবার আগে বলতে পারতিস। এখন বলে কি হবে।

তুই এমন কাটা কাটা কথা বলচিস কেন রে?

এই অন্ধকারে কিছু ভালো লাগছে না!

কি আর করবি বল! এখানে আর আলো কোথা থেকে পাব! বৃষ্টিতে মাথা গোঁজার মতো কিছু একটা পেয়েছি, এই রক্ষে।

তা যা বলেচিস। আমিও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করি। এদিকে বাইরে একবার বিদ্যুৎ চমকায়, আর সাথে সাথে আমিও চমকে উঠি! এই ঘরের মধ্যে আমরা দুজন ছাড়া আরও একজন আছে! শান্তনুকে দেখাই। শান্তনু হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে, কে তুমি?

ঘরের এক কোনে একটা টুলের উপর প্যান্ট শার্ট পরে বসে আছে। কখন ঘরের মধ্যে ঢুকলো? কোন্ দিক দিয়ে ঢুকলো? আমরা দেখতে পেলাম না কেন?

নানা প্রশ্ন মনের মধ্যে ভিড় করে। লোকটি কোন উত্তর দিচ্ছে না কেন! আমরাও কিছুক্ষণ চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকি। শান্তনু আবার জিজ্ঞেস করে, কে তুমি?

সেই প্রশ্নটাই আমি তোমাদের করছি, তোমরা কারা?

লোকটির মুখ থেকে মানুষের মতো কথা শুনে বুকে বল পাই। শান্তনু বলে, আমরা এই পথ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম, বৃষ্টির কারণে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু আপনি কে? আর এই ঘরের মধ্যে ঢুকলেন কোথা দিয়ে?

লোকটি যেন জোর করে হাসার চেষ্টা করলো! তোমরা এখন আমার বাড়িতেই আছো। অনেকদিন কেউ আসেনি, তাই একটু নোংরা হয়ে আছে। চারিদিকে ঝুল পড়েছে। লোকটি বলতে থাকে, আসলে আমি এখন আর এখানে থাকি না। তোমাদের এখানে ঢুকতে দেখে, আমিও এখানে ঢুকি।

এই ঘরে আলো নেই?

বললাম না, অনেকদিন ব্যবহার হয়নি। তাছাড়া বাইরেও তো লোডশেডিং চলছে।

লোকটির সাথে কথা বলতে বলতে মনের মধ্যে থেকে ভয়টা কেটে গেছে। এখন স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে পারছি।

শান্তনু বলে, ভাইফোঁটা নিয়ে দিদির বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। আপনার বাড়িটা পেয়ে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেলাম। ধন্যবাদ। তবে যিনি আমাদের আশ্রয় দিলেন, তাঁর পরিচয় এখনও জানতে পারলাম না!

তোমরা আমার কথা শুনবে?

বলুন না।

আমার নাম মহাদেব কর্মকার। আমি বুলডোজার চালাতাম। সারা দিন বুলডোজার দিয়ে লালমাটি কেটে লরিতে তুলে দেওয়া। কিন্তু রাতে থাকবো কোথায়! প্রথম প্রথম তাঁবুতে একসাথে থাকতাম। কিন্তু শীতে, গরমে, বর্ষায়, খুব কষ্টে কাটতো। এদিকে বাড়ি বলতেও কিছু নেই। বিয়েথাও করিনি। আর বাবা-মা'ও অনেকদিন আগেই চলে গেছেন।

তাই যেখানে যাই, সেখান থেকে ফেরার ইচ্ছাও খুব একটা থাকে না। যতক্ষণ সবার সাথে থাকা যায় আর কি!

যা উপায় করি, খরচ করতেও দ্বিধা করি না। শেষে এই ঘরটা বানিয়েই ফেলি। প্রত্যকেরই সুবিধা হয়। আর এখানেও লালমাটি কাটা চলতে থাকে।

হঠাৎ একদিন রাতে, আমি এই ঘরে তখন একাই ছিলাম। সেদিনও প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। রাতে একা খুব ভয় করছিল। যেখানে আছি, তার চারপাশে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত আর কোন জনমানুষ নেই। প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির সাথে মাঝে মাঝেই বাজ পড়তে থাকে।

একটু আগে আমাদেরও খুব ভয় করছিল।

সত্যি, বাজ পড়লে সকলেরই ভয় হয়।

হঠাৎ এই ঘরের উপরে নেমে আসে। ভিতরের সব কিছু সাথে সাথেই ভস্মীভূত হয়ে যায়। শুধু টিনের কাঠামোটা পরে থাকে।

আমরা ভয়ে চুপ করে যাই।

পরদিন সকালে এখানে এসে বাড়ির ভিতরে শুধু ছাই ছাড়া আর কিছু পায়নি। বৃষ্টির সময় কেউ বাড়িটায় ভুল করে ঢুকে পরলে, আমি চলে আসি। বাড়িটাকে আবার আগের মতো করে তুলি। বৃষ্টি থেমে গেলে, আমার শক্তিও শেষ হয়ে যায়। তখন আবার বাড়িটা শুধু টিনের কাঠামোয় পরিনত হয়।

আমাদের মন থেকে ভয় কেটে গিয়ে বিষ্ময়ে পরিনত হয়েছে। কিন্তু এরপর কি করা উচিত, বুঝতে না পেরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি। অন্ধকারে ভালো করে দেখাও যাচ্ছে না। তবে বাইরে যে বৃষ্টি থেমে গেছে, বুঝতে পারি। বৃষ্টির পরে এক ধরনের বিশেষ আভা চারপাশ আলোকিত করে তুলেছে যেন।

বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে, এবারে তোমরাও বেরিয়ে পর।

আমরাও আর কোন কথা না বলে ব্যাগটাকে নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে পরি। বাইরে এলেও, মন কিন্তু পরে আছে ভিতরে। তাই জানালার মধ্য দিয়ে ভিতরের দিকে তাকাই। ভিতরে এখনও সেই টুলের উপরে মহাদেববাবু বসে আছেন।

জানালার পাশে আমাদের দেখতে পেয়ে, ভিতর থেকে আদেশের সুরে বলে, তোমরা যাও এবারে।

সেই আদেশ অমান্য করতে পারি না। সাইকেলটি নিয়ে বাড়িটার কাছ থেকে সরে আসি। এমন সময় কাছেই কোথাও একটা বাজ পরে। চমকে উঠে পিছনের দিকে তাকাই।

এবারে যেন চোখকেই বিশ্বাস করতে পারি না! এতক্ষণ আমরা যে শক্তপোক্ত বাড়িটায় আশ্রয় নিয়েছিলাম, তার জায়গায় পরে আছে ভাঙা টিনের স্তুপ! চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি।

এমন সময় ইলেকট্রিক পোস্টের আলোটা জ্বলে ওঠে। শান্তনু বলে, হাতটায় দেখ।

দেখি, হাতে কাঠকয়লার কালি লেগে একাকার হয়ে আছে। বলি, তাহলে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম না।

খাদানের জলে ভালো করে হাতের কালি ধুয়ে, বাড়ির পথ ধরি।