'বাপান' - এক ছোট্ট কাহিনী
সমীর সিন্ হা
এবারের হঠাৎ ছুটিতে বাড়ি যাওটা কেমন যেন ঘটনা বহুল হয়ে উঠলো নিজের অজান্তেই বুঝতেই পারলাম না।
একান্নবর্তী পরিবার ছাড়া বাড়ির বাইরে ছোট্ট বাচ্চাকে সযন্তে মানুষ করা যে কি বড়ো ব্যাপার তা আমি ছাড়া আর কেই বা বলতে পারে !
যাইহোক, কাউকে না জানিয়ে চ্টজলদি বেরিয়ে পড়লাম বউ - বাচ্চাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য।
কোনো রকম পরিকল্পনা না করে বেরিয়ে পড়ার যে এক অন্যরকম মজা আছে তা আজ বহুদিন পর অনুভব করলাম নুতন ভাবে বিশেষকরে 'বাবা' হওয়ার পর।
- বাচ্চার আধো আধো হাঁটা, এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে বাবা ছেলের ছোটাছুটি আর সান্ধ্যকালিন খাওয়ার হাতে স্ত্রীর ছেলেকে ভুলিয়ে খাওয়ানোর প্রস্তূতি আর যাত্রীদের মাঝে আমার দুষ্ট ছেলের 'কুকি - কুকি' খেলা দিল্লির কার্পেট পাতা লাউঞ্জে উড়ান লেট হওয়া কেবিন কর্মীদের সঙ্গে।
দিল্লি থেকে বাড়ি ফেরার পথে লেট হওয়া বিমান-সময় কিভাবে অতিবাহিত হয়ে গেল যাত্রীদের হাঁটা চলার মাঝে ছেলের রীতিমত দৌড়দৌড়িতে এক মূহুর্তে বিন্দুমাত্র বুঝতেই পারলাম না সত্যি আমার জীবনে এ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।
যাই হোক, গভীর রাতে বিমান 'কোলকাতা' এসে পৌঁছলো আমার 'বাবা' 'মা' সঙ্গে গাড়ি নিয়েই এসেছিল তাই সে রকম অসুবিধা হয় নি বাড়ি পৌঁছাতে ততক্ষণে আমার ছেলেটা ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়ে দিয়েছে আমার কোলে মাথা রেখে ।
গ্রামের বাড়িতে প্রকৃতির সঙ্গে হেসেখেলে কি ভাবে ছুটির দিন গুলো খরচের খাতায় চলে গেল বলে বোঝাতে পারব না ।
এই মুহূর্তে একটা কথা 'বার' 'বার' মনে হচ্ছে, - "সমুদ্রের 'ঢেউ' আর 'সময়' কারোর জন্য কখনো অপেক্ষা করে না" ঠিক তেমনি আমার কাছে ছুটির সময় তর তরিয়ে শেষের পথে কোন ক্রমে কয়েক দিনের মধ্যে ভোরের এয়ারলায়েন্সে টিকিট পাওয়া মাত্রই স্ত্রী, ছেলেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা মনকে সংবেদনশীল করে তুললো, আর মনকে এই বলে আশ্বাস দিলাম আর তো কয়েকটি দিন মাত্র এই গীষ্মের ছুটির পর ওরা আমার কাছে ফিরে আসবে।
অগ্যতা, অবশেষে দিল্লি ফিরে যাবার সেই মহেন্দ্রক্ষন এল, আমি এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম সেই কাকভোরে পিঠে পিট্ঠু ব্যাগ নিয়ে 'প্রাইভেট কারে' চেপে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টার সফর আমার বাড়ি থেকে 'এয়ারপোর্ট' মজার ব্যাপার হলো হলো কোন দিনই এতো ভালো করে কখনও তারিয়ে তারিয়ে ভোররাতের পরিবেশে উপভোগ করিনি কারন এই সময়টা (ভোর আড়াইটা) বিশেষ করে গভীর ঘুমের দেশে যাওয়ার সময় তাই বোধ হয় রাস্তায় মানুষজনের কোন নামগন্ধ নেই, মনে হল এই ঘোরঘনঘটা পরিবেশে শুধু আমি, আমার সাথে আমার সারথী আর এই অনন্ত নিস্তব্ধতা একটা সুযোগ নুতন করে এলাকার 'চক্ষু জরিপ' করা তা সে 'রাজনৈতিক পরিবর্তনের' হোক কিংবা 'ভৌগলিক পরিবর্তন' ।
কি জানি কি মনে হল আমাদের এলাকা যেই তিমিরে ছিল এখন ঠিকই তাই রয়েছে, রাস্তাঘাট যেমনটি ছিল ঠিক তাই আছে পরিবর্তন শুধুমাত্র এই রঙেই সীমাবদ্ধ, যাক সে কথা...
সকাল সকাল গাড়ির মধ্যে বসে শরীরের কলকজ্বার যে পরিমান ব্যায়াম হলো তাতে করে মনে হলো এলাকায় শিল্পাঞ্চল এর চিন্তা আর না করে ড্রাইভিং ট্যাক বানিয়ে বড়ো বড়ো অটোমোবাইল কম্পানির নুতন গাড়ির টেস্ট ড্রাইভ করা এখানে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ।
যাই হোক এই ভাবেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলাম ভোরের আলো ফোটার আগেই আর বিমানে ওঠার যা যা করণীয় সবকিছু করে লাউঞ্জে গিয়ে নিশ্চিতে প্রতিক্ষায় বসলাম আর সময়মতো বিমানে গিয়ে জানালাবালা সিটে বসে দীর্ঘ - শ্বাস নিলাম তখনই ছেলের আর স্ত্রীর মুখটা জানালার কাঁচে ভেসে উঠল ওদের ছেড়ে আবার সেই একই রুটিনে নিজেকে ঢেলে সময় কাটানো তা সে কি মর্মান্তিক বোধহয় বলে বোঝানো যাবে না ।
শুধু আপেক্ষিক পাওয়ার তাগিদে বাড়ি-ঘর ছেড়ে এই রাজধানীতে পড়ে থাকা শত সহস্র মুহূর্তের বাকরুদ্ধ করে একবার ভেবে দেখলে 'আমি হারা দলের সেনাপতি বলে বললে খুব একটা বেশি বোধহয় অত্যুক্তি হয় না'।
হঠাৎই মনটা বিষন্ন হয়ে পড়লো....
যাই হোক মনে আরোও একবার অস্কিজেন ভরে শ্বাস নিয়ে বসলাম নিজের সিটে দৃঢ় ভাবে ।
তখনই চোখ গেল পাশের সিটে এক বাঙালি পরিবার আমার পাশে, একটু সময় নিয়ে বুঝলাম দিল্লিতে কোন আত্মীয় বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদান করতে যাওয়া ছেলের পরিবার,
- সত্তরউদ্ধ 'বাবা' , ষাটউদ্ধ 'মা' আর সঙ্গে বছর চারেকর এক চসমিস মিস্টি ছেলে সঙ্গে তার 'মা' আর যাদের সিট আমার সাথেই।
কথাবার্তা শুনে মনে হল সবাই মিলে বহু বছর পরে এক সাথে বিমান যাত্রা করছে হঠাৎ করে কেন জানিনা বাচ্চাটাকে দেখে আমার খুব ভালো লাগলো তাই নিজের অজান্তেই আমার চোখ ওর দিকে পড়েই রইল।
অনুমান মতো বাচ্চাটা ঠিক উল্টো দিকে জানালার সামনেই বসলো।এর পর শুরু হল ওর পাশে বসা দাদুকে জিজ্ঞাসার পালা....
- দাদান, আমরা 'দিল্লি' যাব কি মজা!
- দাদান, বল তো মেঘের মধ্যে কি সাঁতার কাটা যায়? প্লেন আকাশে কি ভাবে ওড়ে? ইত্যাদি, ইত্যাদি ।
- দাদান, এটা কি, ওটা কি এতো প্রশ্ন ওর মনের মধ্যে রয়েছে যে তা এতসহজে শেষ হওয়ার নয়।
প্লেন এখনও উড়ান ভরার অনুমতি পায় নি, আর আমি এই ফ্যামিলির সঙ্গে বসে উনাদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ জানার চেষ্টা করছি নিছক সময় কাটানোর বাহানা হিসাবে ।
'বাপান' এর বাবা সঙ্গে উনার স্ত্রী আমার সারিতে আর ঠিক উল্টো দিকে 'বাপান', 'দাদু ও 'ঠাম্মা, পরিবারের কথোপকথনের মাঝে জানতে পারলাম এই ফুটফুটে, চসমিস, দাঁত ফকলা ছেলের নাম 'শ্রীমান - বাপান' ।
একসময়, দেখলাম ভদ্রলোকটির 'মা-বাবা' খানিকটা বিচলিত বলে মনে হয় ওনাদের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস এর প্রয়োজন তাই ছেলেকে বেশ কয়েকবার ডেকে সাড়া না পেয়ে নিজেই দাঁড়িয়ে জিনিসএর উদ্দেশ্য খোঁজাখুঁজি সুরু করে দিলেন, ছেলে নির্বিকার হয়ে বারবার চোখ বড় বড় করে মা বাবাকে শাসন করে যাচ্ছে এই বলে 'টেক-অফ' এর সময় কোন ম্যানার জানো না, বারবার খোলাখুলি জিনিষ ওঠানো নামানো, আর তোমাদের সঙ্গে কখনও বেরুবো না বেশকয়কবার এই ধরনের অভিব্যক্তি পাশে জানালার সিটে বসে দেখতে বাধ্য হলাম ।
একটু অবাক হলাম ভাবলাম মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্য অঃবস্যাম্ভাবিক কিছু তো পরিবর্তন আসবেই শরীরে এটাই স্বাভাবিক আর আমরা যারা ওদের খেয়াল রাখি এখন কত সহজে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ি তা সহজেই লক্ষ্য করা যায় ওনার আচরন দেখে ।
ওদিকে 'মিঃ বাপান' তার দাদু দিদানকে প্রশ্নের বানে জর্জরিত করার প্রয়াস করেই যাচ্ছে এই মুহুর্তের বিষয় যতদূর সম্ভব 'সিট বেল্ট' বাঁধা নিয়ে।
অবশেষে উড়ান ভরার সময় এল সবাই সিট বেল্ট বাঁধতে ব্যস্ত এমন সময় 'মিঃ বাপান' ' বলে উঠল আমার 'হিসু' পেয়েছে বাপী ও বাপী!!! আমাকে নিয়ে চল আর কথা বাপি ঔই আন্টিরা হাত নাড়িয়ে 'লেফট-রাইট' করছে কেন? ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারিনি প্রথমে একটু পরে বুঝলাম ওই বিমান - সেবিকাদের 'সেফটি বেল্ট' বাঁধার প্রক্রিয়াটাই ওর কাছে মজার ব্যাপার লেগেছে স্যরি 'বাপানের কথায় 'লেফট- রাইট' ।
- এই কথা শুনে বাপানের বাবা রেগেমেগে অগ্নি শর্মা হয়ে বলেই ফেলল 'এই ছেলেটা নিয়ে আর পারা গেল না' ।
- 'চুপচাপ বসে থাকো পরে দেখছি' !
- এই কথা শুনে 'বাপান' বলে উঠলো আমি বেশিক্ষন চেপে ধরে রাখতে পারবো না বাপী, অগ্যতা বাবা বাধ্য হয়ে উঠতে যাবেন এমন সময় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা প্লেনের ক্রু এগিয়ে এসে বলল 'সরি স্যার' 'আমি আপনার ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছি আপনি বসুন'।
এই পর্বে শেষ হতে না হতেই বাপান বিমান সেবিকাদের উদ্দেশ্য ওর দুষ্ট ভরা হাসি হেসে ওর মতো করেই বলে উঠলো 'আন্টি' - এক বোতল জল দেবে আমায়, খুব তেষ্টা পেয়েছে' !
আমি বিমান সেবিকার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি ওই মুহূর্তে, বাপানের সজোরে ডাকা 'আন্টি' আওয়াজে, সাময়িক ধাক্কাটা কাটিয়ে সেবিকা মুখের হাসিটা হেসে মুহূর্তের মধ্যে যতগুলো সম্ভব জলের বোতল ওর হাতে দিয়ে গেল - 'তেষ্টা মেটাতে'।
এখন' মিঃ বাপানের' কাছে প্লেনের 'এ্যাটেনডেন্ড বটনটা' নিছই লুকোচুরি খেলার এ্যালাম হিসেবে কাজ করছে বার বার এক এক জন 'এ্যাটেনডেন্ড' ওর কাছে এসে হেসে ওর গাল টিপে বলে যাচ্ছে 'জো-হুকুম-আকা' এখন কি হুকুম?
- এতে 'বাপানের' আনন্দের সীমা পরিসীমা নেই সারাক্ষণ হাততালি দিয়েই যাচ্ছে।
কিছু সময় পর 'বাপান' চিৎকার করে বলে উঠল আমার খিদে পেয়েছে 'মা' - 'ওমা',- আমি ম্যাগি খাব সঙ্গে চকলেট !!!
এই কথা শুনে আমার পাশে বসা বাপানের বাবা রীতিমতো রেগে আগুন, বেয়াদপ ছেলে খাওয়ার আর সময় পেলে না, যখন তখন খাওয়া ।
ওদিকে বাগানের 'মা' এর মানসিক অবস্থা ওনার চোখ মুখ থেকে বোঝা যায় আমার মনে হল ওনার সামনে যে ই থাকবে এই সময় ভ্যস্ম হয়ে যাবে, কোনো ক্রমে সামলে নিলেন নিজেকে আর হুঙ্কার ভরা আওয়াজে উনার শাশুড়িকে বললেন 'মা' আপনার ছোট ব্যাগে কেক রাখা আছে বের করে দিন তো?
ঘড়ি দেখলাম প্রায় দিল্লি র কাছাকাছি শেষ বারে মত সেবিকাদের যাত্রী অভ্যর্থনা পালা শুরু হয়ে গেছে এর ফাঁকে সিট বেল্ট বাঁধার ঘোষণা শুরু হতেই 'মিঃ বাপান' স্বশব্দে চিৎকার করে উঠলো:
-'ডি ফর-'দিল্লি'-'দিল্লি' বলে !!
এমন খাঁটি উত্তেজনা বোধহয় বাচ্চাদেই হয় ওর মানসিক অবস্থা আমি বোঝার চেষ্টা করলাম,
- এই প্রথমবার প্লেনে চেপে রাজধানী যাওয়ার মজাই ওর কাছে আলাদা এই ফাঁকে বাপানকে বিমান সেবিকারা যে যার মতো করে চকলেট আর ওই এয়ারলায়েন্সের গিফট দিয়ে গেল ওর চোখে মুখে তখন বিশ্বজয়ের হাসি কারনটা খুবই স্বাভাবিক।
এবার আকাশ থেকে ঘরে ফেরার পালা প্লেন 'ল্যান্ডেং' এর মডে ধীরে ধীরে নিচের নৈসর্গিক দৃশ্য স্পষ্ট হচ্ছে বাপান আর স্থির থাকতে না পেরে চিৎকার করে বলতে শুরু করল 'কি মজা! কি মজা! আমরা দিল্লি পৌঁছে গেলাম, ডি - ফর' দিল্লি'!! ডি - ফর' দিল্লি'!!
শেষ মুহূর্তে বাপানের বাবা আর স্থির থাকতে পারলো না উনি প্রায় চিৎকার করে আমার পাশে বসে রীতিমত রেগে 'তেলেবেগুন' ওনার ছেলে ব্যবহারে আর এই কাজে সায় পেয়েগেলেন ওনার স্ত্রীর, পাশে বসে উনাদের সমালোচনা শোনা ছাড়া কোন উপায় ছিল না কথা শুনে বুঝলাম উনাদের সম্মানহানী হয়েছে সমস্ত যাত্রীদের মাঝে 'মিঃ বাপানের' এই অকপট 'শিশু সুলভ' আচরনে যার খেসারত দিতে হতে পারে 'বাপানকে' ভবিষ্যতে মনে হল এনারাই কি আজকালকার 'মা-বাবা' না কি কোন মধ্যযুগের বাসিন্দা??
এদিকে সমস্ত প্লেনের মধ্যে হালচাল শুরু হয়ে গিয়েছে প্লেন এখন 'ট্যাক্সি মডে' আমিও প্রস্তূতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছি নীচে খোলা জুতোয় পা টা গলিয়ে প্রায় রেড ততক্ষণে আমার চোখ 'শ্রীমান বাপানের' দিকে পড়তে দেখলাম এক বিমান সেবিকা বাপানের গালে আলতো টোকা দিয়ে বলল 'বাই' 'বাই' এই নও তোমার জন্য আর একটা চকলেট গিফট 'বাপান' খুশিতে লাফালাফি শুরু করে দিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো
- 'বাই বাই আন্টি,
- 'দিল্লি - দিল্লি', কি মজা! কি মজা !
বাপি তুমি আমাকে 'সোনার কেল্লায়' নিয়ে যাবে? আর আমাকে 'মোদি' আঙ্কেল এর সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাবে, প্লিজ 'বাপি',
ঔই ছোট্ট ছেলের মিস্টি আওয়াজে এই রকম একখানা বায়না প্লেন ভর্তি যাত্রীর গোঁফের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হাসিটাকে মুখে এনে দিল এক ঝটকায় তা বিলক্ষণ কাবিলে তারিফ।
'বাপানের' প্রশ্নের সঠিক উত্তর ওর বাবা দিল না বার বার জিজ্ঞাসা করা সত্ত্বেও কিছু ক্ষন চুপ থেকে ওর বাবা উত্তর দিল - 'তুই একটু থামবি, চুপ কর আর জ্বালাতোন করিস না' ।
এই ঘটনায় 'বাপানের' বাবা - মা প্রচন্ড ক্ষুব্ধ রেগে মেগে লাল হয়ে পড়েছেন, ছেলের এই ধরনের অকপট আচরনে দেখে মনে হচ্ছে মান সম্মান উনাদের লুণ্ঠিত তাই এই প্লেন থেকে নেমে যাওয়ার মুহূর্তে উনাদের আলোচনার কেন্দ্রে বিন্দু সেই প্রান চঞ্চল 'বাপান' - এর ভবিষ্যত ।
প্লেন থেকে নেমে সহযাত্রীরা যে যার মতো লাগেজ কাউন্টারে পৌঁছে যেতে লাগলো আমিও এবার কিছু বেশি জিনিস নিয়ে এসেছিলাম তাই বাধ্য হয়ে কাউন্টারে অপেক্ষায় চেয়ে রইলাম আমার লাগেজের দিকে ঠিক তখনই দেখলাম আমার সহকারী যাত্রী 'শ্রীমান বাপান' যথারীতি সপরিবারে ব্যাগের কাউন্টারে উপস্থিত এরই মধ্যে আমি পিট্ঠু ব্যাগ তুলে বাইরে বেরোনো প্রস্তূতি নিচ্ছি পাশে দাঁড়ানো 'বাপানের' বাবা - মা তখনও একে অপরকে দোষারোপ দিয়ে চলেছে কার সাথে বাপান বেশি সময় থাকে যার ভুল গাইডে আজ ওদের ছেলের এই দুরঃ- অবস্থা ইত্যাদি, ইত্যাদি ।
বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে আমি ওদের সমন্ধে অবগত আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না 'বাপানের' বাবাকে বললাম স্যরি, যদিও জানি আপনাকে কোনো কথা বলার আমার কোন অধিকার নেই তবু বলি আপনার 'বাপান' আর পাঁচটা ছেলে মেয়ের থেকে আলাদা ওর মনটা বড্ড বেশি সরল ও খাঁটি তাই ও সবার থেকে আলাদা, ওকে 'উড়তে দিন, পায়ে আপনাদের ইচ্ছার বেড়ি পরিয়ে দেবেন না' আর সময় পেলে 'ভগবত গীতা' পড়বেন তাহলে এই তথাকথিত 'আমি,'তুমি,'তোমার' আর 'আমার' থেকে মুক্তি পেতে পারেন আর একটা কথা,
- 'চ্যারেটি বিগিনস অ্যাট হোম' তাই যা আপনি দেবেন আপনার ছেলেকে সেই শিক্ষাই আপনার কাছে ফিরে আসবে ছেলের মাধ্যমে,
অনেক কূটু সত্য আপনাদের বলার জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন - মনে কিছু করবেন প্লিজ 'বাই' -'বাই' বাপন,
- 'পৃথিবীটা অনেক ছোট রে কোথাও কোন এক মূহুর্তে তোর সঙ্গে আবার কখনো এই ভাবেই দেখা হয়ে যাবে, ভালো থাকবি আর এই ভাবে মন খুলে কথা বলবি।
বলে এগিয়ে এলাম আর কখন যাত্রীদের ভিড়ে হারিয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। পিছন ফিরে দেখ বো না ভেবেই রেখেছিলাম কি জানি কি মনে হল আড় চোখে পিছন ফিরে তাকালাম যা দেখলাম তাতে মনটা ওই কয়েক ঘণ্টা ধরে হঠাৎ পরিচিত ছেলেটার কাছে যেন বাঁধা পড়ে গেল।
দেখলাম তখনও 'মিঃ বাপান' আমার উদ্দেশ্য ওর ছোট্ট হাতটি নাড়িয়ে 'টা' 'টা' 'বাই- বাই' করেই চলেছে !!!
=====সমাপ্ত =====