এই ঘর এই লোকালয়
শফিকুল ইসলাম
প্রবর্তন প্রকাশন
প্রারম্ভিক কথা...
এই ঘর এই লোকালয়
এই জনপদে যাপিত জীবন ও জীবনের চালচিত্র।
জীবনের বিচিত্র অনুভূতির সমাবেশ ঘটেছে
কাব্যগ্রন্থটির পংক্তি জুড়ে।
মিলনের প্রত্যাশা,
প্রিয় বিচ্ছেদের দুর্নিবার যাতনা,
স্বপ্ন দেখার আনন্দ
স্বপ্ন ভাঙার বেদনা
জীবনের গভীরতম উপলব্ধি,
সবই কাব্যের পংক্তিমালারূপে গ্রন্থটিতে ছড়িয়ে আছে....
বিচিত্র আবেগের সন্নিবেশে যে জীবন আন্দোলিত হয়
সেই জীবনেরই নির্যাসে
গ্রন্থটি ধারণ করেছে জীবনের বিচিত্র উপলব্ধি,
যা পাঠক হৃদয়কে আন্দোলিত করবে
পাঠকের অজ্ঞাতসারে ॥
উৎসর্গ
যে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়,
ভালমন্দ মিলায়ে সকলি...
সূচীপত্র
এই ঘর, এই লোকালয় ১
আজন্ম আমি শুনি ২
আমার জীবন থেকে কবেই ৩
কিছু স্বপ্ন ছিল আমারও ৪
সেদিনকার আনন্দ উৎসবে সবাই ছিল ৫
নদী আর নিসর্গ ৬
যখনই তোমার কথা ভাবি ৭
তবু তুমি ফিরে আসবে ৮
এখানে তুমি আসবে না আর ৯
ঐতো ঐ দূর সুমুখের পথের বাকে ১০
আমাকে তুমি চিনবেনা ১১
জানি আজ আমার সঙ্গ-মাধুর্য ১২
সুখের বাসর সাজাতে যাবার আগে ১৩
এখনও তো লগ্ন অতিক্রান্ত হয়ে যায়নি ১৪
আমার সমস্ত সুখ ১৫
তোমাকে ভালবেসে নারী ১৬
আমার জীবন থেকে ১৭
তোমার দুচোখে আমি ১৮
অনেকদিন তুমি আসনা ১৯
দূর নক্ষত্রের তুমি আজ ২০
জানি আজ আমার স্মৃতি ২১
আমায় ভুলে গেছ বলে তাই ২২
অগো সুন্দর ২৩
ঐ যে ঐ দূরের ব্যস্ত সড়কে ২৪
তুমি আসবে প্রত্যয়ে ২৫
এসো নারী এসো ২৬
আজকের এই রাত ২৭
কি করে আমি ভুলে যাবো ২৮
২৯ প্রেমের আখরে একদিন গেথেছিলাম যে মালা
৩০ তোমার কাছেই আমি যাচ্ছিলাম সেদিন
৩১ কাল সারাটা রাত কেটে গেলো স্বপ্নের ভেতর
৩২ আমার যা কিছু বলার ছিল
৩৩ একদিন তুমি ছিলে
৩৫ তুমি যেন বিশাল আকাশ হয়ে
৩৬ জানি এই পথ শুধু বেদনার
৩৭ সন্ধ্যা নেমে আসছে
৩৮ জানি এ জীবনে
৩৯ GB ফাল্গুনী জ্যোৎস্না রাতে
৪০ একদিন স্বপ্ন হারিয়ে যায়
৪১ আজ এই পথে কেউ আসে না আর
৪২ জানিনা তুমি আজ আমার কথা ভাব কিনা
৪৩ একদিন তোমার বাগানে
৪৫ আকাশের চাদ ছিল চাদের চেয়েও সুন্দর
৪৬ হাজার দিনের মাঝে
৪৭ কতকাল এই বিষন্ন শূন্যতায়
৪৮ যেখানেই যাই যেদিকে তাকাই
৫০ প্রিয় এই পথে তুমি চলেছ
৫১ একদিন এসেছিলে ভালবেসেছিলে
৫৩ কতবার ভেবেছি আজই
৫৪ একদিন আমার অজস্র কবিতার
৫৫ আজ মনে হয় তোমাকে ভালবেসে
৫৬ ভুলে যেও বন্ধু ক্ষতি নেই
৫৭ তুমি চলে যাবে একথা শুনতেই
৫৮ তোমার চলে যাওয়া মানে
৫৯ নই রাজপুত্র কিংবা যুবরাজ
৬০ তোমার বাগানে ফুল ফুটিয়ে
এই ঘর, এই লোকালয়
এই ঘর, এই লোকালয়,
জনপদ, বসতি -
জন মানুষের মত্ত কোলাহল
পরস্পর উন্মত্ত প্রতিযোগিতা -
এখানে আমি চিরদিন প্রবাসী
বিব্রত আগন্তুক।
ঐ উদার আকাশ,
শ্যামল অরণ্য,
ঐ বিস্তৃত প্রান্তর,
বহতা নদী,
ওরা আমার চিরচেনা
জন্ম-জন্মান্তরের পরিচিত,
ওখানেই আমার ঠিকানাবিহীন ঠিকানা
ওখানেই আমার ঘরহীন ঘর ॥
আজন্ম আমি শুনি
আজন্ম আমি শুনি
ঘরছাড়া এক বাউলের ডাক
আমার বুকের ভেতর-
নীড়ের মোহন স্বপ্ন
আমায় তাই কাছে টানেনা-
এক পথের শেষে
আমি তাই, রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যাই পুনঃ
নতুন পথের ডাকে
নব দিগন্তের অভিসারে।
আজন্ম যাত্রা আমার
সুদুর নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে -
আজীবন আমি পথের মোহে
ঘরকে করেছি পথ
পথকে করেছি ঘর ॥
আমার জীবন থেকে কবেই
আমার জীবন থেকে কবেই
সুখ নামের শুক পাখীটা চলে গেছে
আমায় ফাকি দিয়ে-
পড়ে আছে শূন্য আশার পিঞ্জর।
তারপর থেকে
দুঃখ আর আমার জীবন
হাত ধরাধরি করে চলছে পরস্পর
উদ্দেশ্যবিহীন গন্তব্যের দিকে।
জীবন চলার পথে
তুষার-আবৃত পাহাড় চূড়ার মত
বুকের পর বারবার জমেছে শুধু তুষারের স্তুপ,
সে জল জানি কখনও
বরফগলা নদী হয়ে বয়ে যাবেনা ॥
কিছু স্বপ্ন ছিল আমার ও
কিছু স্বপ্ন ছিল আমার ও
একান্ত সুখের কাছাকাছি-
ঝড়ো হাওয়া তাড়িত শ্রাবণ মেঘের মত
সে স্বপ্ন আমার
সহসাই গেছে মিলিয়ে দূর মহাশূন্যে।
জীবন মানেই তো স্বপ্ন
যেখানে স্বপ্ন নেই, জীবন সেখানে অর্থহীন।
উপদ্রুত হৃদয়ে জুড়ে হু হু করে
সর্বগ্রাসী দুঃখরা হানা দেয়
বেনো জলের মত;
আর আমি ক্রমশঃ বেদনার অতল গভীরে
হারিয়ে যেতে থাকি
হারিয়ে যেতে থাকি
এক সময় তলিয়ে যাই-
বুকের মধ্যে সৃজনশীল স্বপ্নেরা
তখন কোন সুখই আমায় দিতে পারেনা ॥
সেদিনকার আনন্দ উৎসবে সবাই ছিল
সেদিনকার আনন্দ-উৎসবে সবাই ছিল
অযাচিত ভীড়ে ভরে গিয়েছিল
আমার ক্ষুদ্র কুটির-প্রাঙ্গন,
জন কোলাহলে মুখরিত ছিল আমার আঙ্গিনা।
বলেছিল সবাই মাত্রাতিরিক্ত বিনয়ের সুরে
প্রতিযোগীতামূলক কন্ঠে-
এ আপনার চমৎকার আয়োজন,
সত্যি আপনার প্রশংসা না করে পারা যায়না।
তখনও উৎসব শেষে ঘরে জ্বলছিলো ঝাড়বাতি
রঙ্গীন কাগজে ঝলমল করছিলো উদ্যান-প্রাঙ্গন,
ক্রমে রাত গভীর হয়ে এলো-
একে একে নিভে গেলো সবকটা প্রদীপ
অন্ধকার নেমে এলো সমস্ত আঙিনা জুড়ে,
রঙীন কাগজের বর্ণালী বাহার হল দৃষ্টি অগোচর।
বিদায় আনন্দ-বিলাসী অতিথি যত-
আর আমি অন্ধকারে উৎসব-শেষের ধূলি পরিত্যক্ত
বাদ্যযন্ত্রের মত নিঃসঙ্গ, একা পড়ে আছি-
আমাকে কেউ দেখছেনা
কেউ কিছু জিজ্ঞেস করছেনা ॥
নদী আর নিসর্গ
নদী আর নিসর্গ
আকাশ আর অরণ্যের কাছে
যেখানেই যাই না কেন,
জানি তবু তোমারই ভালবাসার কাছে
আমার বারবার নিঃশব্দ প্রত্যাবর্তন।
জীবন প্রণোদিত সংগ্রামে
প্রতিবাদ আর প্রতিরোধে
এ চিত্ত যতই বলিষ্ঠ হোক,
জানি তবু তোমারই ভালবাসার কাছে আমার
বারবার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ।
আমার সব পাওয়াই অপূর্ণ থেকে যায়
তোমার ভালবাসার কোমল স্পর্শবিহীন।
তোমার ভালবাসার ছুয়ে গেলে
মরুভূমি মুহূর্তে হয়ে যায় মরুদ্যান
ফুল-পত্র প্রস্ফুটিত,
মরানদীতে সহসা জোয়ার উঠে জেগে,
আর আমার জীবন বাচার আনন্দে
মুহুর্তে স্বপ্ন-রঙীন হয়ে উঠে ॥
যখন তোমার কথা ভাবি
যখন তোমার কথা ভাবি
বিষাদ ছুয়ে যায়
আমার সমস্ত হৃদয়।
নদীর মত
তোমার স্মৃতি বুকে নিয়ে
আমি ভেসে গেছি
অনেক দূরে
একা একা।
চেয়েছি সমুদ্র-বিস্তৃত জীবন,
পাইনি কিছুই-
পেয়েছি শুধু রাশি রাশি বালুকণা
আর অথৈ সাগরের অন্তহীন লোনাজল ॥
তবু তুমি ফিরে আসবে
তবু তুমি ফিরে আসবে
চলে আসবে অকস্মাৎ
আমার নিঃসঙ্গ নির্জন ভুবনে,
আমি এমনিটিই তো ভেবেছিলাম।
তোমার আমার বহু বিতর্কিত ভালবাসার
চূড়ান্ত অবসান ঘটিয়ে
সবাইকে চমকে দিয়ে-
সব দ্বন্দ্ব-সংশয়, তুমুল উত্তেজনা
আর বিতর্কের মধ্য দিয়ে ঘটবে
তোমার শুভ প্রত্যাগমন,
আমি ভেবেছিলাম।
সন্দেহবাদী সব শুভানুধ্যায়ী
আর পরসুখকাতর প্রতিপক্ষদের কাছে
একথাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম
তুমি মহৎ,
তার চেয়ে মহত্তর তোমার প্রেম,
তোমার ভালবাসা অন্তত ছলনা-উদ্ভুত নয়-
সকলের সাথে এক পংক্তিতে নয়
তোমার যোগ্যস্থান ॥
এখানে তুমি আসবে না আর
এখানে তুমি আসবে না আর
জানি বলবেনা তোমার যত কথা
কোনদিন আর অবাধ হৃদয়ে-
শুনবেনা তুমি আর এমনটি পাশে বসে
কোনদিন আর
একটি ব্যর্থ হৃদয়ের আর্ত হাহাকার।
জানি আজ হতে যাত্রা তোমার
নতুন জীবনের নব দিগন্তের সন্ধানে।
তুমি চলে গেছ, সে কতকাল-
জীবনের বহুমুখী স্রোতধারায়
জানি এসে মিশেছে তোমার জীবনে।
শুধু আমি আজও দাড়িয়ে আছি
যেখানে ছিলাম ঠিক সেখানে-
আজ আখীজল ছাড়া আমার
নেই কোনো আর পৃথক সম্বল ॥
ঐ তো ঐ দূর সুমুখের পথের বাকে
ঐ তো ঐ দূর সুমুখের পথের বাকে
দুটি পথ দুদিকে চলে গেছে,
সেখানে থেকেই
আমাদের যাত্রা শুরু ভিন্ন পথে।
জানি তোমার জন্য তোমার পৃথিবী
সমৃদ্ধ আগামী দিন,
আমার জন্য আমার বঞ্চিত অতীত,
আমার জন্য
অপেক্ষমান যন্ত্রণা ॥
আমাকে তুমি চিনবে না
আমাকে তুমি চিনবে না
না-চেনারই তো কথা আজ,
আমি তো তোমার অধুনা-বিস্মৃত কেউ একজন।
একদিন যে তোমার একান্ত কাছের কেউ ছিলো-
তুমিই বলতে একথা শতবার।
তোমার হৃদয় আজ ভিন্নখাতে প্রবাহিত-
কে জানতো নদীর মত
নারীর হৃদয় ও ভালবাসা
বারবার বাঁক বদলায়,
আজ শুধু অপেক্ষাই আমার একান্ত সম্বল ॥
জানি আজ আমার সঙ্গ-মাধুর্য
জানি আজ আমার সঙ্গ-মাধুর্য
আনন্দ দেয়না তোমারে আর-
আমার বহু ব্যবহৃত হৃদয়
পুরনো মলিন হয়ে গেছে-
আর তুমি আমার ভালবাসা থেকে
ক্রমশ চলে গেছ
দূর হতে আরো দূরে, বহু দূরে।
অতটা দূরত্বে আজ তুমি চলে গেছ যে
ভয় হয় বুঝিবা সেই দূর দূরত্ব অবধি
ফিরে এসো, তুমি ফিরে এসো’-
পৌছাবে না আমার কাতর কন্ঠস্বর|
স্মৃতি-মধুর অতীত তবু আজও কথা বলে
আমার অন্তরে-গোপনে নীরবে,
আর আমি একা পড়ে কাদি
নীরবে নিভৃতে,
তোমারই একান্ত বিরহে ॥
সুখের বাসর সাজাতে যাবার আগে
সুখের বাসর সাজাতে যাবার আগে
যেদিন তুমি আসবে বন্ধু আমার কাছে,
দাড়াবে এসে শেষবারের মত
সম্মুখে আমার-
সজ্জা ভারাক্রান্ত নববধূর বেশে।
একান্ত বিদায় সাক্ষাতে
সন্ধ্যার অন্ধকারে দাড়িয়ে বলবে
নাটকের সংলাপের মত-
বহুবার মুখস্থ করা সাজানো সেই কথাটি-
আমায় ভুলে যেও।
চোখের জল গোপন করে
আমি শুধু বলবো
আবেগ-রুদ্ধ কন্ঠে অস্ফুট উচ্চারণে
তুমি সুখী হও জীবনে।
জানি সে অস্ফুট শব্দ
তোমার কানে পৌছার আগেই
হয়তো মিলিয়ে যাবে সুদুর বাতাসে ॥
এখনো তো লগ্ন অতিক্রান্ত হয়ে যায়নি
এখনো তো লগ্ন অতিক্রান্ত হয়ে যায়নি,
এখন ও হৃদয়ে আবেগ আছে
প্রীতি আছে,
আছে উষ্ণ অনুরাগ অনন্ত।
মাধবী এখন ও ফিরে আসো,
আমার ভালবাসার বুকে ফিরে আসো।
এসো দুজনে মিলে এ দ্বৈত ভালবাসাকে
অর্থবহ করে তুলি।
এসো বন্ধু এসো
এই চাদ আর এই জোছনা
বিকশিত ফুলের হাসিকে
আমরা অর্থবহ করে তুলি-
আমাদের ভালবাসার সঙ্গীতে ॥
আমার সমস্ত সুখ
আমার সমস্ত সুখ
আত্মসাৎ করে তুমি চলে গেছ।
তুমি চলে গেছ
আমার সমস্ত স্বপ্ন নস্যাৎ করে দিয়ে।
একদিন তুমি ছিলে
তাই প্রাণে ছিল অন্তহীন আশা,
চোখে ছিল স্বপ্ন
আর বুকে ছিল ভালবাসা।
আজ তুমি নেই
নিজেকে ভাবি কক্ষচ্যুত উল্কার প্রায়
গতি আছে, তবু গন্তব্য নেই-
ভেসে চলেছি দিক চিহ্নবিহীন পথে
দূর অজানায় ॥
তোমাকে ভালবেসে নারী
তোমাকে ভালবেসে নারী
আপন হাতে যে চিতা-বহ্নি আমি জ্বেলেছি,
জানি আজ তার অনলে আমাকে
নিশ্চিত পুড়ে মরতে হবে।
তোমার রূপে শুধু আলো ছিল না,
ছিল অনলের জ্বালা দুঃসহ
সেদিন আমি জানতে পারিনি।
ভালবাসায় শুধু ভালবাসাই থাকে না
থাকে গোপন ছলনা
ফুলের আড়ালে কাটার মত।
যখন বুঝলাম তখন আমার সবশেষ হয়ে গেছে-
আমি মত্ত জুয়ারীর মত তখন ভুল চাল দিয়ে
সব খুইয়ে বসে আছি ॥
আমার জীবন থেকে
আমার জীবন থেকে
আমার ভালবাসা থেকে
যত দূরেই তুমি থাকো না কেন
তোমার অনেক কাজের মাঝে
যতই ব্যস্ত থাকো না কেন -
তোমার বুকের ভেতর নিঃশব্দে
কাজ করে যায় আমার ভালবাসা।
তুমি আছো, আজও ভালবাসো
এই বিশ্বাস আমাকে দিয়েছে
বেচে থাকার আনন্দ,
আমার দিনগুলোকে দিয়েছে
অনুপম মাধুর্য ॥
তোমার দুচোখে আমি
তোমার দুচোখে আমি
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার আসন্ন মৃত্যু,
অনুভব করতে পারছি অন্তরে
কৃষ্ণপক্ষের চাদের মত
কেবলই ক্ষয়ে যাচ্ছে প্রেম
তোমার হৃদয় হতে আমার জন্য।
আর সে নিশ্চিত অমাবস্যার
অতলগর্ভ অন্ধকারে
নিঃশব্দে হারিয়ে যাচ্ছে
আমার সমস্ত মগ্ন চেতনা।
কেন প্রেম মরে যায় এক সময় মানুষের মনে?
কাছের মানুষ কেন দুরে সরে যায় এক সময়-
কেন হৃদয়ের মৃত্যু হয়না?
অনেক দিন তুমি আস না
অনেক দিন তুমি আসনা
লেখ না একটি চিঠি
অন্তত দু-একটি ছত্র -
কেমন আছো, কোথায় থাকো।
অনেকদিন তুমি রাখনা আমার খবর।
একা একা আমি এতদিন এই সবই
পাতাভরা খাতায় লিখে গেছি একে একে।
লিখেছি মিলন-মধুর সেই দিনগুলোর কথা,
যেদিনগুলি আজ স্মৃতি হয়ে গেছে।
আর আজ আমার ডায়েরীর
শেষ পাতায় এসে লিখেছি শেষ কথা-
তোমায় ভুলে গেছি।
দূর নক্ষত্রের মত তুমি আজ
দূর নক্ষত্রের মত তুমি আজ
জানি চলে গেছ
আমার থেকে দূরে বহু দূরে।
তবু তোমার স্মৃতি সতত
স্বর্ণালীনক্ষত্রের মত
উজ্বল হয়ে আছে আমার হৃদয়ে।
জানি হয়তো দূরত্ব আর দীর্ঘ সময়
তোমার হৃদয় থেকে একদিন মুছে দেবে
আমার স্মৃতি।
ক্রমে কমে আসবে তোমার
ঘন ঘন চিঠি লেখার অদম্য উৎসাহ-
একদিন সত্যি সত্যি তুমি ভুলে যাবে আমায়।
তবু কথা দিলাম বন্ধু,
সেদিনও আমি একান্ত হৃদয়ে
লালন করবো তোমার স্মৃতি-
সে স্মৃতির কথা তুমি ছাড়া
কেউ আর জানবেনা এই পৃথিবীতে ॥
জানি আজ আমার স্মৃতি
জানি আজ আমার স্মৃতি
তোমার গভীর হৃদয়ে কবে
বিস্মৃতির অতলগর্ভে চাপা পড়ে গেছে
হরপ্পা মহেঞ্জদারোর লুপ্ত সভ্যতার মত।
আমার ভালবাসার জানি
তোমার কাছে আজ
পুরাতাত্ত্বিক মূল্য ছাড়া বেশী কিছু নেই।
জানি কখন হারিয়ে গেছে
তোমার বিস্তীর্ণ ছলনার নীচে
আমার সমৃদ্ধ ভালবাসার স্বপ্ন,
যেমন করে কবেকার ভিসুভিয়াসের
উদগ্র লাভার নীচে
সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে
পম্পেই আর হার্কুলেনিয়াম-
দুটি সমৃদ্ধ নগরী ॥
আমায় ভুলে গেছ বলে তাই
আমায় ভুলে গেছ বলে তাই
আজ আর দুঃখ করিনা নতুন করে।
তুমি যে আমায় ভুলবে একদিন এ আমি জানতাম।
নারীর প্রেম সেতো জানি
আধপোড়া সিগারেটের মতই
সেতো নিঃশেষ হয়ে যাবেই এক সময়।
জানি ভালবাসা ও সুখ জীবনে
একই অনুভুমিক রেখায়
অবস্থান করেনা।
তবু সব জেনেশুনে আমি
তোমায় ভালবেসেছিলাম-
বেদনাকে ভালবেসে ॥
অগো সুন্দর
অগো সুন্দর
স্বপ্ন আমার, সাধনা আমার।
জানি আমার পাওয়া হতে
বহু দূরে তোমার অবস্থান।
মনে মনে তবু
অনেক কাছে চলে যাই তোমার।
বুকের মধ্যে নিষিদ্ধ অনুরাগ
তবু উথলি উঠে বারবার।
জানি দুঃখই তো
ভালবাসার অবশ্যম্ভাবী পরিণাম।
তবু সব জেনেশুনে ভালো লাগে তোমারে।
মনের দুয়ারে তবু, অয়ি রংগময়ী,
ভালবাসা হানা দেয় বারবার।
বিচিত্র তোমার নির্মম ছলনা
মধুর হয়ে উঠে ভাললাগা অন্তরে,
সত্য-অবহেলা মধুর মিথ্যে বলে ভ্রম হয় ॥
ঐ যে ঐ দূরের ব্যস্ত সড়কে
ঐ যে ঐ দূরের ব্যস্ত সড়কে
মানুষগুলো ছুটছে সবাই উর্ধ্বশ্বাসে,
জীবনের মত্ত উল্লাসে।
ওদের যেতে দাও-
ওরা যাক ছুটে, ছুটে যাক।
শুধু আমরা দুজনা
হারবো না হয়, মানবো না হয় ক্ষতি
তবু ছুটবো না।
বসে রবো বিছায়ে আচল নরম ঘাসের গালিচায়
খুব কাছাকাছি ঘেষে,
কোথাও যাব না।
যেন আমাদের কোন তাড়া নেই।
আমরা দুজনা চোখে চোখ রেখে
চেয়ে রবো নীরবে,
বহুযুগ শতাব্দী ধরে নিশ্চুপ অনুভবে।
সময়ের গতি হার মানবে আমাদের কাছে এসে
পৃথিবীর সব গতি হতে
আমরা নিজেদের আড়াল করবো
একান্ত ভালবেসে ॥
তুমি আসবে প্রত্যয়ে
তুমি আসবে প্রত্যয়ে
কাল সারারাত বৃথাই আমি জেগে জেগে
শব্দের বাসর সাজালাম
আগ্রহ-ব্যাকুল হাতে।
অঙ্গে নতুন বেনারসী শাড়ীর খসখস শব্দ তুলে
কাকনের রিনিঝিনি ঝংকারে
আমার হৃদয়ে বাজাবে মোহন সংগীত,
রাঙা অধরের রঙীন হাসিতে রাঙিয়ে
দেবে আমার এ মন,
ভীরু লজ্জায় ধরা দেবে নিঃশব্দ আলিঙ্গনে।
শুধু তুমি আসবে প্রত্যয়ে
কাল সারারাত আমি...
জেগে জেগে এই সব কত কি
ভেবেছি, কেবল ভেবেছি...॥
এসো নারী এসো
এসো নারী এসো
সব দ্বিধা লজ্জা ঝেড়ে ফেলে এসো,
আমরা মিলিত হই পরস্পর অভিন্ন প্রেমে,
সৃজনশীল স্বপ্নে।
তোমার মাঝে পুষ্ট হবে আমার ভবিষ্যৎ।
আমরা যদি মিলিত না হই
সভ্যতা থেমে যাবে,
বিলুপ্ত হবে ঐতিহ্য।
এসো আনন্দ করি এবং মিলিত হই পরস্পর
নতুন সৃষ্টির নব উন্মাদনায়,
রেখে যাই সভ্যতার আগামী সম্ভাবনা আমাদের
দুজনার আনন্দিত মিলনে ॥
আজকের এই রাত
আজকের এই রাত
মায়াবী এই রাত, রজনী জোছনা মদির-
আর আমার মুগ্ধ চোখের নীচে
শায়িত তোমার সুন্দর অবারিত দেহ।
যেন আমারই পানে চেয়ে
নীরব আমন্ত্রণ জানায়-
জীবনের এই প্রথম মধু-চন্দ্রিমায়
এসো বন্ধু এসো পান করো
মধুলগ্ন যে ফুরায়ে যায়।
মন দিয়ে আজ বুঝলাম
মনের কত মূল্য-
তোমার দেহের নিবিড় সান্নিধ্যে এসে
আজ জানলাম
যৌবন কত অমৃতময় ॥
কি করে আমি ভুলে যাবো
কি করে আমি ভুলে যাবো
কি করে আমি তাকে ভুলে যেতে পারি,
যে নারী তার অনন্য প্রেম আর একাগ্র যৌবন দিয়ে
ভরে রেখেছিলো আমার যৌবন।
চুম্বনে-শীৎকারে সঙ্গমে-শৃঙ্গারে
আজও যে ভরে রেখেছে আমার অনুভূতি।
আজ তারই স্মৃতি-মধুর উদ্দেশ্যে
আমায় রেখে যেতে দাও
আমার কবিতার কয়েকটি চরণ।
যার ভরা অঙ্গের প্রতি ভাজে ভাজে
আমার তৃষিত যৌবন রেখেছে পদচ্ছাপ,
যার যৌবনের সুরা পান করে
আমি আজ লাভ করেছি অমরতা
এই মৃত্যুশীল জীবনে ॥
প্রেমের আখরে একদিন গেথেছিলাম যে মালা
প্রেমের আখরে একদিন গেথেছিলাম যে মালা
কেন যে আজ তা গেল ছিড়ে,
প্রেমের পরশ দিয়ে মুকুলিত করেছিলাম যে পুষ্প
কেন যে আজ তা গেল ঝরে।
মধুর করে একেছিলেম ওগো যার ছবি
এই হৃদয়ের স্বপ্ন-নীড়ে,
কেন যে আজ তারে হায় খুজে না পাই
অনেক স্মৃতি-তারার ভীড়ে।
যাকে নিয়ে লিখেছিলাম ওগো গান গভীর অনুরাগে
গেয়েছিলেম সুরে সুরে,
চলার পথে আজ কেন ভাবি বুঝি সে গেছে চলে
আমা থেকে দূরে-বহুদূরে।
যে আখীতে অগো একদা দেখেছিলেম
স্বপ্নময় জীবনের রঙীন দিনগুলিরে,
কেন যে আজ সেই আখী দেখে মনে হয়,
এক কুটিল প্রতারণা আছে যেন তায় ঘিরে ॥
তোমার কাছেই আমি যাচ্ছিলাম সেদিন
তোমার কাছেই আমি যাচ্ছিলাম সেদিন,
সেদিন পথে যেতে হঠাৎ দেখা-
আরে আপনি,
যাচ্ছেন কোথায়?
অনেকদিন দেখা হয়না আপনার সাথে’-
শুধালে দুলিয়ে অলকগুচ্ছ,
ছড়িয়ে হাসি রাঙা অধরে
ফুলের পাপড়ির মত।
কি করে বুঝাবো নারী
তুমি নিজে থেকে যদি নাই বুঝো,
তুমিই আমার একমাত্র গন্তব্য--
আমার সব চলার শেষ তোমাতে এসে ॥
কাল সারাটা রাত কেটে গেলো স্বপ্নের ভেতর
কাল সারাটা রাত কেটে গেলো স্বপ্নের ভেতর।
নির্জন জানালায় একা বসে
কাটিয়ে দিয়েছি কাল সারাটা রাত
শুধু তোমাকে ভেবে ভেবে।
তুমি আসবে প্রত্যয়ে
গ্রন্থিত কবরী খুলে দিয়ে
একরাশ এলোচুল পিঠের পরে ছড়িয়ে দিয়ে
আমি একা বসেছিলাম
তোমার ভাল-লাগায় ধন্য হতে।
ভেবেছিলাম তুমি এলে কথা হবে দুজনায়
নিরিবিলি জোছনায়।
কি দরকার ছিল বলতো এত রাত অব্দি জেগে থাকার?
জানতাম তুমি এলে অনুযোগ করতে,
আরও কত কি!
আমার যা কিছু বলার ছিল
আমার যা কিছু বলার ছিল
সবই তো একে একে খুলে বলেছি তোমায়।
তবু বুকের ভেতর
আরো অনেক না-বলা কথা,
পুঞ্জীভূত বেদনা,
আর গুমরে মরা কান্নাগুলো
থরো থরো মেঘ হয়ে রয়ে যায়।
শব্দ আর সুরে কিছুতেই হয়না তার
সমগ্র প্রকাশ-
করা যায়না কোন বর্ণমালায় সে ভাষা-বিস্তার।
অনেক কথার শেষে তবু কিছু কথা
রয়ে গেলো আখীজলে
শিশিরের মত অব্যক্ত করুণ।
হলনা তার কিছুতেই বাক্যবিকাশ-
হৃদয় দিয়ে তুমি তার
বুঝে নিও সে ভাষা ॥
একদিন তুমি ছিলে
একদিন তুমি ছিলে
এই হৃদয়ে স্বপ্ন ছিল
আশা ছিল, ভালবাসা ছিল
আজ তুমি নেই-
আজ কোন স্বপ্ন নেই, আশা নেই
আজ দুচোখে আলো নেই।
পৃথিবীর সব দীপ নিভে গেছে
সব গান থেমে গেছে।
তুমি এসেছিলে আমার জীবনে
সহসা এক ঝড়ো বাতাসের মত,
আচমকা এক দমকা হাওয়ার মত,
নিমেষে সবকিছু তছনছ করে দিয়ে চলে গেছ।
তুমি এসেছিলে আমার জীবনে
সহসা বাধভাঙা ভরা জোয়ারের মত,
তীর উপচে পড়া জলরাশির মত,
নিমেষে সব ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেলে।
তুমি এসেছিলে-
বহু যুগ জন্মান্তর ধরে যেন আমি
তোমারই প্রতীক্ষায় ছিলাম।
তুমি এলে
যেন এই প্রথম পৃথিবীর আকাশে চাদ উঠলো,
বাগানে সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটলো,
সব পাখীরা এই প্রথম গান গাইলো
মিলিত কন্ঠে,
মরা নদীতে জোয়ার জাগলো।
আর তুমি চলে গেলে-
পাখীর গান যেন গান নয় আজ,
মর্সিয়া-
নদীর কলতান যেন অনন্ত ক্রন্দন,
সমস্ত পৃথিবী যেন
বিষন্নতার খাখা একটি বিরান প্রান্তর ॥
তুমি যেন বিশাল আকাশ হয়ে
তুমি যেন বিশাল আকাশ হয়ে
আমাকে ঘিরে আছ-
যেখানেই যাই তোমারই ছায়া
আমায় ঘিরে রাখে।
মন্দিরে যখন বিগ্রহ বন্দনায় চোখ বন্ধ করি-
কখন দেব বিগ্রহ তোমার মুর্তিতে
রূপান্তরিত হয়ে যায়-
চোখ খুলে দেখি তুমি শুধু তুমি।
এখানে সেখানে ধুলি-ধূসরিত অঙ্গে
জীর্নবস্ত্র মলিন বসন ক্লান্ত চরণে
কোথায় না খুজেছি তোমায় হন্যে হয়ে,
চোখ বন্ধ করতেই দেখি
অন্তরের অধীশ্বর হয়ে
বসে আছ তুমি অন্তরে রাণীর মহিমায়।
এ ঘরে ও ঘরে মন্দিরে আশ্রমে
ঘুরে ফিরেছি ঘরছাড়া বিবাগীর মত-
কোথায় আমার তীর্থভূমি?
অবশেষে যখন তোমার দ্বারে একদিন
উপনীত হলাম-
জানলাম তোমার আঙিনাই আমার তীর্থভূমি,
তোমার ঘরই আমার দেবালয় ॥
জানি এই পথ শুধু বেদনার
জানি এই পথ শুধু বেদনার,
কষ্টের পথে তবু চলি
ছায়াহীন দীর্ঘ মরু-পথে একলা পথিক
আমি চলি তোমার অভিসারে।
জানি এ পথের শেষে একদিন
তোমার দেখা পাবই-
পাথেয়বিহীন এ পথ চলায়
তোমাকে পাবার আশাই আমার একমাত্র পাথেয়।
জানি এই একাকী পথ চলার শেষে
একদিন তোমার দেখা পাব-
আর ঘুচবে আমার এই একাকীত্ব।
জানি ছায়াহীন এই মরুপথের শেষে
তোমার ভালবাসার ছায়াঞ্চলে
আকাঙ্খিত বিশ্রাম
আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
কন্টকিত পথ চলতে
রক্তাক্ত চরণ থেকে রক্ত ঝরে,
হৃদয়ের গোপন ক্ষত-ঝরা-রক্তে
শোধ করে যাই ভালবার ঋণ।
এ পথের শেষে আমি কি পাবনা
তোমার ঠিকানা-
জানিনা, আমি আজ ও জানিনা ॥
সন্ধ্যা নেমে আসছে
সন্ধ্যা নেমে আসছে
থেমে গেছে সব কোলাহল,
নীড়ে পাখী ফিরে যাচ্ছে
সবাই যে যার গন্তব্যে চলে যাচ্ছে,
আর আমি ফিরে যাচ্ছি তোমার কাছে।
তোমার কাছে ফিরে যাওয়া মানে
অন্ধকার রাত্রি ছেড়ে আলোকিত ভোরের দিকে যাত্রা,
তোমার কাছে ফিরে যাওয়া মানে
একটি অনুপম স্বপ্নের কাছে চলে যাওয়া।
যতদূরেই তুমি থাকো
যদি জানি পথের প্রান্তে তুমি বসে আমার প্রতীক্ষায়,
সে পথ কখনই দীর্ঘ নয়।
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে
মিলনের চিত্রকল্প কল্পনা করতে করতে
কখন সে পথ ফুরিয়ে যায় টের পাই না।
কন্টকিত পথে ক্ষত-বিক্ষত চরণে রক্ত ঝরে টের পাইনা-
আমার দুচোখে তখন কেবল তোমারই ছবি।
ক্লান্তিহরা ভুবন-মোহন সেই রূপ মাধুরী
আমার পথ চলার প্রেরণা।
তোমার কথা ভাবলে
আমার দীর্ঘপথ মনের অজান্তে সংক্ষিপ্ত
হয়ে আসে ॥
জানি এ জীবনে
জানি এ জীবনে
আমার অক্লান্ত প্রতীক্ষার প্রহর
ফুরাবেনা কোনদিন,
তুমি ফিরে আসবেনা কোনদিন।
তবু আমি যতদিন বেচে থাকবো বন্ধু
প্রতিদিন সন্ধ্যায় তোমার স্মরণে
একটি প্রদীপ জ্বালবো
আমার মনের দেবালয়ে,
আর তোমারই কথাই ভাববো
সকাল, বিকেল, সন্ধ্যে, রাতে।
তোমারই স্মৃতি-কুসুমে
কুসুম-মালা গেথে কন্ঠে পড়ে থাকবো।
সেদিন চলে যাব এ পৃথিবী ছেড়ে
যাবার আগে তোমারই স্মরণে
এক ফোটা নয়নের জলে
সিক্ত করে দিয়ে যাবে এই ধরাতল ॥
এই ফাল্গুনী জ্যোৎস্না রাতে
এই ফাল্গুনী জ্যোৎস্নারাতে আমি একা
আমার পাশে কেউ নেই-
এই পুষ্পশোভিত বর্ণিল উদ্যানে
আমি একা, আমার পাশে কেউ নেই।
বল এই জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধ আলোতে
কার মুখ দেখে আমি প্রাণের এ পিপাসা
নিবৃত্ত করবো-
এই পুষ্প চয়নে আমি কার জন্যে মালা গাথবো?
কোকিলের গানে আর ভ্রমর গুঞ্জনে
তার স্মৃতি জাগে মনে-
তার কাকন-কন্ঠ মনে আনে।
সুরভিত বাতাসে যেন তারই
শ্রাবণের-কালো-মেঘ কেশেরই
সুবাস ভেসে আসে।
অগো পুর্ণিমার চাদ!
বসন্তের কোকিল! ফাল্গনী পুষ্পরাশি!
এই ফাল্গুনী রাতে জ্যোৎস্না-আলোকিত
পুষ্পিত উদ্যানে আমি একা-
আমার পাশে কেউ নেই ॥
একদিন স্বপ্ন হারিয়ে যায়
একদিন স্বপ্ন হারিয়ে যায়
থাকে শুধু স্বপ্ন-ভাঙার বেদনা।
এক সময় যে পাখী
শাখায় বসে গান গেয়েছিল
সেও উড়ে যায় নিলীমায়-
পেছনে পড়ে থাকে
তার ঝরা পালক।
একদিন প্রাণের অতি নিকটজন
সেও দুরে চলে যায়-
পেছনে পড়ে থাকে স্মৃতি শুধু স্মৃতি।
তেমনি করে একদিন তুমিও চলে গেছ
পেছনে পড়ে আছি আমি, শুধু আমি ॥
আজ এই পথে কেউ আসে না আর
আজ এই পথে কেউ আসে না আর,
কারো রাঙা চরণের চিহ্ন আর
এ পথের বুকে চিত্রাংকিত হয় না আর।
এ বাগানে আজ আর কেউ
পুষ্প চয়নে আসে না আর,
নীরবে ফুল ফুটে, ফুল ঝরে যায়-
কেউ সে ফুলে মালা গাথে না আর।
এ ঘরে কেউ আসেনা আর,
কারো কলরব-মুখর আগমনে
এ গৃহ প্রাঙ্গন মুখরিত হবে না আর।
অভিমানে এ আবাস-গৃহ নীরবে
মুখভার করে বসে থাকে দিনমান।
স্মৃতির অব্যবহৃত এ গ্রন্থ খুলে
আমি শুধু পাঠ করি আজ
ফেলে-আসা দিনের কথা-
আর নীরবে নিভৃতে খুব সন্তর্পণে
অতীত দিনের কাব্যকথা
লিখে যাই ॥
জানি না তুমি আজ আমার কথা ভাব কিনা
জানি না তুমি আজ আমার কথা ভাব কিনা,
হয়তো ভাবো আমিও তোমার মত
তোমাকে ভুলে বসে আছি।
ভুলে থাকতে চাইলেই কি
ভুলে থাকা যায় প্রিয়তমা?
জীবনের আয়োজনে চাপা পড়ে গেছে
কত কামনা বাসনা-
আজও কি ভুলতে পেরেছি
তোমায় হারানোর ক্ষতি?
মুছতে কি পেরেছি তোমার স্মৃতি
মনের আঙিনা হতে ?
ঢাকতে কি পেরেছি মনের গভীরে
তোমায় না পাওয়ার বেদনার গভীর ক্ষত-চিহ্ন?
তবু আজও যখন হৃদয় মাঝে চোখ মেলি
মনে হয় তুমি কত কাছে আছো,
হাত বাড়ালেই তোমাকে ছুয়ে ফেলতে পারি।
অথচ যখনই সত্যি সত্যি হাত বাড়াতে গেছি
অদৃশ্য কাচের দেয়ালে প্রসারিত হাত
বাধা পেয়ে ফিরে এসেছে।
প্রিয়তমা যতদিন বেচে থাকবো
ততদিন এই বুকে তোমার জন্য ভালবাসা
জেগে থাকবে-
যতদিন এ মন থাকবে
ততদিন এ মন-বেদনার শেষ হবে না জানি ॥
একদিন তোমার বাগানে
একদিন তোমার বাগানে
নব বসন্তে ফুল ফুটে ছিল।
আর একটি পাখী আপন মনে গান গেয়ে
চলে গিয়েছিল
দূর নিলীমার শূন্যতায় মিলিয়ে। তুমি তাকে মনে রাখনি-
তার মনে কি বেদনা লুকানো ছিল,
কি গোপন কামনা সে গানের ভাষায়
শুনাতে সে চেয়েছিল-
তুমি বুঝনি।
নব বসন্তের আমেজে তখন তোমার মন রঙীন,
তুমি তখন মালা গাথায় ছিলে মগ্ন,
তোমার চোখে তখন অন্যদিনের স্বপ্ন|
একটি পাখীর গানের বারতা
তাই তোমার কাছে সেদিন অর্থ খুজে পায়নি।
তুমি শুধু উদাস নির্মোহ দৃষ্টি মেলে
তাকিয়ে দেখেছ তার চলে যাওয়া,
যেতে যেতে তার ফেলে যাওয়া
ঝরা পালক তুলে সেদিন খোপায় গুজে দাওনি।
আবার তোমার জীবনে ঘুরে ঘুরে
আর ও কত বসন্ত আসবে,
নিত্য নতুন পাখীর কল-কাকলীতে
ভরে যাবে তোমার উদ্যান-প্রাঙ্গণ।
শুধু সেই অভিমানী পাখীটা,
সেই নিঃসঙ্গ পাখীটা
আর কোনদিন তোমার বাগানে
আসবে না গান শুনাতে,
তার বেদনা-ভরা হৃদয়ের ভাষা
গানের সুরে সুরে তোমাকে শুনাতে আসবে না।
একা একা ঘুরে বেড়াবে আকাশে আকাশে
চিহ্নবিহীন দূর মহাশূন্যে ॥
আকাশের চাদ ছিল চাদের চেয়েও সুন্দর
আকাশের চাদ ছিল চাদের চেয়েও সুন্দর
তুমি ছিলে তাই-
একদিন ফুল-পাখী-নদী
সবই ভাল লেগেছিল,
তুমি ছিলে তাই।
সেদিন ফুল, পাখী, নদীর অন্যরকম মানে ছিল
আমার কাছে।
আজ তুমি কাছে নেই,
ফুল-পাখী-নদী সবই আজ আমার জীবনে অর্থহীন
মাতালের প্রলাপের মত।
তোমাকে ছাড়া এই পৃথিবীর সবই বেমানান
অসহনীয়।
আকাশ-ভরা হাজার তারার মেলায় আজ
তোমাকে খুঁজি,
সাগর জলের অথৈ ঢেউয়ের মাঝে
আজ তোমায় খুজি,
গহন বনের গভীর ছায়ায় আজ তোমায় খুজি।
তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া একটি গানের সুর,
তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া একতারাটির
একটি তার ॥
হাজার দিনের মাঝে
হাজার দিনের মাঝে
সেদিনটি ছিল অনন্য।
কারণ সেদিন তুমি এসেছিলে
সব দ্বিধা লাজ ভুলে আমার কাছে,
আমার এ ঘর ক্ষণিকের তরে আলোকিত করে
তুমি এসেছিলে।
সেদিনকার প্রতিটি তাল-লয়-সুর
প্রতিটি রঙ আমার মুখস্থ,
আজও স্মতিপটে অক্ষয় হয়ে আছে।
তোমার স্মৃতিমাখা সেদিনটি আমার জীবনে
অনন্য একটি দিন।
সেদিনকার প্রতিটি অক্ষর, শব্দ, বাক্য
দাড়ি, কমা, সেমিকলন, প্রতিটি যতিচিহ্ন
আমার স্পষ্ট মনে আছে-
কারণ, হাজার দিনের মাঝে সেদিনটি ছিল অনন্য।
তোমার অভাবিত আগমনে সেদিন
ধন্য হয়ে গিয়েছিল আমার এ ঘর।
সেদিনকার তোমার চলার প্রতিটি মুদ্রা
কন্ঠস্বরের উত্থান পতন,
বাচন-ভঙ্গী,
হুবহু আজও মনে পড়ে-
কারণ, সেদিনটিতে তুমি সব দ্বিধা লাজ ভুলে
ক্ষণিকের তরে আমায় আপন করে নিয়েছিলে ॥
কতকাল এই বিষন্ন শূন্যতায়
কতকাল এই বিষন্ন শূন্যতায়
বিসর্জিত আমি-
চোখের জলে আর সাত সাগরের জলে একাকার।
জীবন এখানে অবিরাম প্রশ্নবোধক চিহ্ন,
ক্ষমাহীন আধারে জানিনা
আর কতকাল কাটাবো কাল।
আলোকের বার্তাবাহী
অগো বন্ধু তুমি কোথায়?
মুক্তির আলোক-বর্তিকা আমাকে দেখাও।
পেছনে রুদ্র সাগরের ক্ষিপ্ত তরঙ্গের উন্মত্ত উল্লাস,
সমুখে অনতিক্রান্ত উত্তুঙ্গ পাহাড়-
সম্মুখে চলার নেই অবকাশ,
পেছনে ফেরারও পথ নাই।
দিকচিহ্নহীন অথৈ মরুভূমিতে
আমি দিকভ্রান্ত পথহারা-
অগো আমার জীবনের ধ্রুবতারা
চেতনার আকাশে তুমি উদ্ভাসিত হও ॥
যেখানে যাই যেদিকে তাকাই
যেখানে যাই যেদিকে তাকাই
তুমি শুধু তুমি-
তোমার স্মৃতি সর্বত্র বিরাজিত বিভাসিত
দূর আকাশের মত,
কি করে তোমাকে ভুলি?
সাগর বালুকা-বেলায় যত ছবি আকি
যত চিহ্ন জাগে ভাটির তানে-
জোয়ারের জলে মুছে যায় বারেবারে।
আখীর কাজলে প্রণয়ের যে মুগ্ধ ছবি আকি
নয়নের জলে তাও মুছে যায়-
হৃদয়ে আকা তাই তোমার অক্ষয় ছবি
কি করে মুছি?
বল কোন আধারে মুখ লুকিয়ে আমি কাদি?
এ উদাস পৃথিবী তোমায় মনে রাখেনি,
থেমে যায়নি তার সৌর প্রদক্ষিণ
আপন কক্ষ পথে।
তুমি চলে গেছ
আমার ঘড়ির কাটা একটি রেখায় এসে
স্থির হয়ে থেমে আছে।
তুমি চলে গেছ বলে
আমার বিশাল ভুবন শূন্য ফাকা হয়ে গেছে।
কেউ বুঝেনা এই অদৃশ্য শূন্যতায়
আমি কাকে খুজে বেড়াই,
কার স্মৃতি আমাকে বিচলিত করে।
আকাশের চাদ, প্রতিটি নক্ষত্র
তোমার মুখচ্ছবি হয়ে ঝুলে থাকে
আমার চোখের সামনে।
তোমায় ভুলে থাকা দায়।
বাহুর বাধন ছিন্ন করে চলে গেছ
হৃদয়ের বাধন তাই বুঝি আরও সুদৃঢ় হয়েছে।
নয়নের আড়ালে গিয়ে হৃদয় জুড়ে আসন পেতেছ।
অগো আমার হৃদয় রাজ্ঞী
তোমার আজ্ঞা আমায় শুনাও ॥
প্রিয় এই পথে তুমি চলেছ
প্রিয় এই পথে তুমি চলেছ
যেতে যেতে কত পদচিহ্ন রেখে গেছ,
তাই এ পথের প্রতিটি ধূলিকণা কখন
সোনা হয়ে গেছে তুমি জাননা।
এই ধূলিধূসরিত পথে ধুলিমাখা অঙ্গে
তাই আমি চলবো আজীবন,
আমাকে কেউ ফেরাতে পারবে না।
প্রিয় এই ঘর, এই বাস গৃহ
একদিন তোমার পদধুলি পেয়ে ধন্য হয়েছিল,
এই ভিটে মাটিতে তোমার ও রাঙা চরণ
পড়েছিল-
তাই এই ঘর এই বসত বাটি
আমার পৃথিবী, আমার ঠিকানা
স্থায়ী নিবাস।
এখানটা ছেড়ে আমি কোন স্বর্গেও যাবনা, আমাকে কেউ ডেকোনা।
প্রিয় এই বাগানের যে শুষ্ক বিবর্ণ ফুলে
তোমার করপুটের স্পর্শ লেগেছে,
মুহূর্তে সে ফুল রঙীন সজীব
হয়ে উঠেছে আমার চোখে।
তোমার কোমল কর স্পর্শে
গন্ধহীন পুষ্প থেকেও সুমধুর সৌরভ
ছড়িয়ে পড়েছে-
এই বাগানের ফুলে একটি মালা গেথে
আমি সারাক্ষণ কন্ঠে পড়ে থাকবো ॥
একদিন এসেছিলে ভালবেসেছিলে
একদিন এসেছিলে ভালবেসেছিলে
সোহাগ ভরে শুধায়েছিলে দুটো কথা,
মনে আছে, আজও মনে আছে
ভুলে গেছি আর সব,
দীর্ঘ প্রতীক্ষার যন্ত্রণা
ক্ষমাহীন উপেক্ষার কথা।
একদিন এসেছিলে
কাছে এসে বসেছিলে,
সোহাগ ভরে দুটি হাত তুলে নিয়েছিলে
তোমার দুটি হাতের মুঠোয়,
মনে আছে সেই স্মৃতি, আজও মনে পড়ে।
আর ভুলে যাই আজিকার এই একাকীত্ব
বিরহ ব্যথিত যন্ত্রণার অকথিত কাহিনী।
একদিন এসেছিলে ভালবেসেছিলে,
আপন মনের খেয়ালে
তারপর চলে গেলে,
ধরে তো রাখা যায়নি তোমাকে।
এই সেই একদিন হাজার দিনের মাঝে
আজ ও মিলে গিয়ে একাকার হয়ে যায়নি।
সেদিনের এক চিলতে পাওয়ার আনন্দ
চিরদিনের আনন্দ হয়ে
আজও এই বুকে বাজে নীরবে নিভৃতে
নিঃশব্দ সংগীতের মুর্ছনার মতন।
সেদিনকার প্রতিটি অক্ষর, প্রতি শব্দ, বাক্য
হুবহু আজও মনে জাগে।
না-পাওয়ার বঞ্চনা-ভরা জীবনে
এ যে পাওয়ার সৌরভ-মাধুর্যমন্ডিত।
মনে পড়ে তোমার অঙ্গভঙ্গির প্রতিটি মুদ্রা,
অবিকল মুখের আদল
দাড়ি, কমা ও সেমিকলন, যতিচিহ্ন সব।
সেদিনকার প্রতিটি দৃশ্যপট ছিল অনুপম
মোহনীয় আর তোমার রূপের বিভায় উদ্ভাসিত।
একদিন এসেছিলে আর ভালবেসেছিলে
মনে আছে, আজও মনে আছে ॥
কতবার ভেবেছি আজই
কতবার ভেবেছি আজই
তোমার কাছে যাব,
হৃদয়ের সব ক্লান্তি সপে দিয়ে
তোমার কাছে বিশ্রাম নেবো,
হলনা, আর হলনা।
যাই যাই করে শুধু কেটে গেলো সময়।
কতবার ভেবেছি চৈত্রের খরায়
শুষ্ক বিশীর্ণ নদী পার হয়ে তোমার কাছে যাব
কন্ঠভরা অক্লান্ত পিপাসা নিয়ে,
যাওয়া হলনা।
কখনও ভেবেছি ভরা বরষায়
মনের খেয়া নৌকোয় পাল তুলে দিয়ে
তোমার কুলে যাবো,
আর যাওয়া হল না ॥
একদিন আমার অজস্র কবিতার
একদিন আমার অজস্র কবিতার
লাজুক পংক্তিমালা তোমারে
অনুসরণ করতো প্রিয়তমা।
যে পথ দিয়ে তুমি চলে যেতে
ধুলিমলিন সে পথ মুহুর্তে
কুসুমাস্তীর্ণ হয়ে যেত।
আজ তুমি নেই,
আমার আড়ষ্ট কবিতা
পথের ধুলিতে বারবার হোচট খায়,
চেতনায় ছায়া বিস্তার করে বিষণ্নতা।
চৈত্রের খা খা রোদ্দুরে
দুরের খোলা বিরাণ প্রান্তর যেমন খা খা করে তেমনি এই বুক জুড়ে শূন্যতা, ধু-ধু শূন্যতা।
দূর নিলীমায় দুপুরের নির্জনতায়
ডানা মেলে উড়ে উড়ে চক্রাকারে
ঘুরে বেড়ানো ঐ নিঃসঙ্গ শংখচিল আজ আমার মন,
একই বৃত্তে ঘুরপাক খায়-
কোথায় যাব যেন জানিনা আজ ॥
আজ মনে হয় তোমাকে ভালবেসে
আজ মনে হয় তোমাকে ভালবেসে
আমি আসলে
দুঃখকেই ভালবেসেছি।
তোমায় ভালবেসে বল দুঃখছাড়া
আর কি পেয়েছি?
সেই ভাল ছিলাম
নিজের মাঝে নিজেকে নিয়ে হারিয়ে।
তোমার মাঝে আজ নিজেকে খুজতে যেয়ে
তোমায় হারিয়ে নিজের একাকীত্ব আজ
নতুন করে উপলব্ধি করলাম।
আজ দুরের ঐ নিলীমা
বড় বেশী বিষন্ন উদাস বলে মনে হয়।
আজ এই দিগন্তবিস্তৃত শ্যামলিমা
বড় বেশী বিষন্ন উদাস বলে মনে হয়।
বল দুচোখভরা অশ্রুজল
কেন আজ আমার দিবস-রাতের সঙ্গী ?
বল বুকভরা হুহু কান্না আজ কার জন্য?
এ বুকের তলে যে বেদনা ঝড় তুলে সংগোপনে
সে বেদনার সে দুঃসহ যাতনার ভাষা
বুঝাবার ভাষা আমার জানা নেই ॥
ভুলে যেও বন্ধু ক্ষতি নেই
ভুলে যেও বন্ধু ক্ষতি নেই
এই একটাই মাত্র তো জীবন,
এই এক জীবনের দুঃখ নিয়ে না হয়
কাটিয়ে দেবো বাকীটা জীবন।
চলে যেও বন্ধু বাধা দেবনা,
এই একটাই মাত্র তো জীবন
না হয় এই এক জীবনের প্রতীক্ষাতেই
কাটিয়ে দেবো সারাটা জীবন।
না হয় তুমি দিলে না আমায় একটি মিলন বাসর-
হাজার মিলন বাসর রাত সাজিয়ে
একা একাই কাটাব জীবন তোমার আশাতে।
তোমায় ভালবেসে না হয় কাটিয়ে দেবো
একটি জীবন,
আর জীবনে তোমার ভালবাসা পাবো
সেই দূর দূরাশাতে ॥
তুমি চলে যাবে একথা শুনতেই
তুমি চলে যাবে একথা শুনতেই
কেন চোখের সামনে
নিমিষেই সমস্ত পৃথিবী থত্থর করে কেপে উঠলো;
অজানা ব্যথায় বুকের ভেতর
কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো।
আর নিমিষে দুচোখ জলে ভরে গেলো,
জানিনা কেন জানিনা।
তুমি চলে যাবে
একথা শুনতেই কেন সমস্ত আকাশ
অন্ধকারে ঢেকে গেলো,
পৃথিবীর সব আলো নিভে গেলো;
আর আমার মনের কোন অদৃশ্য সুতোয়
টান পড়লো-
জানিনা, কেন জানিনা।
প্রেম কি আমি তো জানিনা,
ভালবাসা কি আমি তা জানিনা,
শুধু বুঝি তোমায় হারালে
আমার আর এই পৃথিবীতে কিছু হারাবার
আর বাকী থাকেনা ॥
তোমার চলে যাওয়া মানে
তোমার চলে যাওয়া মানে
যে তোমার চলে যাওয়াই শুধু নয়-
কি করে বুঝাবে তোমাকে
তোমার চলে যাওয়া মানে
আলো-ঝলমল জলসা ঘরের
সব আলো অকস্মাৎ নিভে যাওয়া দমকা হাওয়ায়।
তোমার চলে যাওয়া মানে
বাগানের সব ফুল নিমেষে শুকিয়ে ঝরে যাওয়া
চৈত্রের নিদাঘে।
তোমার চলে যাওয়া মানে
আকাশের সব স্ফুট নক্ষত্রের সহসা পতন-
অর্থহীন অনন্ত আধার।
তোমার চলে যাওয়া মানে
একটি হৃদয়ের মৃত্যু।
তোমারই তো চলে যাওয়া মানে
একটি স্বপ্নের ভুবন থেকে
একটি অনাবিল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা থেকে
আমারই স্ব-আরোপিত বিদায়।
আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে তুমি চলে যেওনা।
বেলোয়ারী চুড়ির মত আমার সব স্বপ্ন
ভেঙে দিয়ে তুমি চলে যেওনা।
যত দূরে তুমি যাও
কখনও পেছনে ফিরে তাকালে দেখবে,
যত দূর দৃষ্টি যায়
আমার সজল করুণ দৃষ্টি
তোমাকেই অনুসরণ করছে ॥
নই রাজপুত্র কিংবা যুবরাজ
নই রাজপুত্র কিংবা যুবরাজ
ছন্ন ছাড়া বিবাগী এক কবি-
তবু এ বুকের ভেতর বসবাস করে
এক রাজপুত্রের মন।
নাই থাক আস্তাবল
সান্ত্রী, সেপাই, রাজপ্রাসাদ।
আমাকে অভিবাদন জানায়
সকালের পুব আকাশের রক্তিম সূর্য
নতমস্তকে।
আকাশ তার নীল পক্ষপুটে
আমাকে ঢেকে রাখে রাজছত্রধারীর মত।
জোছনা-ঝরা রাত আমার বাসর সাজায়,
আর আমি মনে মনে এক রাজকন্যার
অপেক্ষায় থাকি...
এক সময় সে আসে নীরবে নিভৃতে।
কি দিব তাকে উপহার?
হীরা-মণি-মুক্তার মালা নাই থাক,
বুকভরা ভালবাসা তার রাঙা পতদলে
নিবেদন করি উজাড় করে।
সে আসে স্বপনে, সে আসে সংগোপনে
আমার কল্পনায়...
আমার জীবন চলার পথটুকু
সুমধুর করে ভরে রাখে
কল্পনালোকবাসিনী স্বপ্নচারিণী সে এক
রাজনন্দিনী ॥
তোমার বাগানে ফুল ফুটিয়ে
তোমার বাগানে ফুল ফুটিয়ে
আমি চলে যাব
দূরের আকাশের পাখী-
তোমার জন্য রেখে যাব রঙ, সুরভি
আর আমার জন্য নিয়ে যাব কাটার জ্বালা।
তোমার দেবালয়ে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে
অন্তহীন আধারে আমি হারিয়ে যাব
একটি আকাশ-প্রদীপ হয়ে-
তোমার জন্যে জ্বলবে আলো
আমার জন্যে রইবে অন্ধকার,
আমার জন্যে অমানিশা।
তোমার বসন্ত ভুবনে আমি গান শুনিয়ে চলে যাব
আত্মগোপনকারী বনের কোকিলের মত
বুকের মধ্যে কান্না গোপন করে-
তোমার জন্যে রেখে যাব সুর, তোমার জন্যে গান
আমার জন্যে রয়ে যাবে অশ্রু, আমার জন্যে কান্না।
তোমার জন্যে ছন্দের পংক্তিমালা সাজিয়ে
ছন্নছাড়া বিবাগী কবির মত
একলা উদাস চলে যাব
কোন সুদুরের অচেনা পথ ধরে-
তোমার জন্যে রেখে যাব কবিতা,
ভালবাসার লাজ রক্তিম পংক্তিমালা,
আমার জন্য নিয়ে যাব
অন্তমিলনহীন অন্ত্যজ শব্দমালা ॥