প্রত্যয়ী যাত্রা
শফিকুল ইসলাম
মিজান পাবলিশার্স
প্রারম্ভিক কথা...
জীবন মানেই অবিরাম যাত্রা
জন্ম থেকে মৃত্যু
আমৃত্যু চলাই জীবন।
অন্য কথায়,
আমৃত্যু বেচে থাকার সংগ্রামই জীবন।
ব্যষ্টিক জীবনে ব্যক্তির মৃত্যু হলে ও
সামষ্টিক জীবনে
মানুষ জাতির কোন মৃত্যু নেই-
সেই অনাদিকাল থেকে তার যাত্রা
সেই যাত্রায় নেই কোন বিরতি...
ব্যক্তি মানুষের মৃত্যু হলে ও
মানব জাতি কিন্তু অমর,
সেই সাথে তার আশা আকাংখা ও অমর।
আমাদের যাত্রা শুধু আজকেই নয়
অনাদিকাল থেকে শুরু
এবং চলবে অনাগত কাল পর্যন্ত...
আর মানুষের মুক্তি, সাম্য, মৈত্রী
ও সম্মিলিত জীবন যাপনের সেই লক্ষ্য অর্জনে
প্রত্যয়ী যাত্রায়
সবাইকে অংশ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করবে
গ্রন্থিত পংক্তিমালা।
সংগ্রামের শুরু সচেতনতায়-
একই পৃথিবীর পরে আমরা দাড়িয়ে
একটি জাতি- মানবজাতি,
তবু এক যাত্রায় কেন
আমাদের পৃথক ফল হবে-
এসব প্রশ্নের উত্তর খুজতে হবে,
আর সমাধান খুজতে হবে অবিরাম যাত্রায় ॥
উৎসর্গ
প্রকাশ্যে কিংবা লোকচক্ষুর অন্তরালে
যারা আজ ও
জনতার মুক্তি সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে
কাজ করে চলেছেন,
সেইসব অমিত আশাবাদী
অসমসাহসী মানুষদের উদ্দেশ্যে....
মুখবন্ধ
কাব্যমনস্ক বিবেকী সত্তার মানুষ, সত্য সাধনায় অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসের নির্ভীক ব্যক্তিত্ব শফিকুল ইসলামের লেখার ভান্ডারে সঞ্চিত পান্ডুলিপি থেকে ইতোমধ্যে তার বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আলোচিতব্য কাব্যগ্রন্থ ‘প্রত্যয়ী যাত্রা’ তারই সাম্প্রতিক প্রয়াস। তার নিরলস প্রয়াস প্রমাণ করে যে, তার অপ্রতিরোধ্য গতি থামবার নয়, অন্যায়ের কাছে মিথ্যার কাছে আপোষ করবার মত নয়। আর তার নিরন্তর চেষ্টার মাঝে তিনি তার অনন্য কাব্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন বলেই প্রতিভাত হয়।
বাহুল্য শব্দের অলংকার, অনুপ্রাস বিবর্জিত আধুনিক সাহিত্য মূলতঃ বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে বাংলাদেশ দিয়ে তার রক্তাক্ত অভিযাত্রা আরম্ভ করে। এই অভিযাত্রায় যারা কাব্য চর্চ্চা করে খ্যাতিমান তারা অনেক। তাদের মাঝে লেখালেখির সাথে জড়িত বহুদিন ধরে প্রত্যয়ী যাত্রা-র কবি শফিকুল ইসলাম।
কবি শফিকুল ইসলাম শুধু কবি নন, তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার। তার কাব্য প্রতিভা আর গীতিকার সত্তার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সুরেলা ছন্দে রচিত প্রত্যয়ী যাত্রা গ্রন্থটি প্রাঞ্জল ভাষার এক অনবদ্য সৃষ্টি।
কোন দেশ বা জাতির নিপীড়িত মানুষের কষ্ট কান্না বঞ্চনার চিত্র দেখে কখনো কোন বিবেকবান সচেতন মানুষ স্থির থাকতে পারে না। প্রকৃত অর্থে যারা কবি তারা বিবেকের তাড়নায় মজলুমের সঙ্গে আরম্ভ করেন লেখার সংগ্রাম। আলোচ্য প্রত্যয়ী যাত্রা গ্রন্থে অনলবর্ষী শব্দে রচিত সর্বমোট তেত্রিশটি সাবলীল কবিতা স্থান পেয়েছে। কবিতাগুলো গীতিকবিতার আঙ্গিকে রচিত বিধায় প্রত্যয়ী যাত্রা গ্রন্থটি মূলতঃ অধিকার বঞ্চিত মেহনতী মানুষের গীতাঞ্জলী।
জীবনের যন্ত্রণায় মানুষ যখন অতিষ্ঠ হয়ে যায় তখন সে তার অধিকার আদায়ের ব্রতে নেমে আসে প্রকাশ্য রাজপথে। আর কবির কন্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে থাকেঃ--
আমরা এবার নেমেছি পথে
আখিজলে নয় বুকের শোণিতে
অনেক দুঃখে ও যন্ত্রণাতে
জয় করে নিতে বৈরী জীবনটাকে।
(প্রত্যয়ী যাত্রা)
সত্য দাবীর কাছে অন্যায় চিরদিন পরাজিত। এই বিশ্বাস এই প্রত্যয় যে যাত্রীর সে এ-ও জানে যে তার অভিষ্ট লক্ষ্য কি। আর তখন সে নিশ্চিত করে বলতে পারেঃ--
আমাদের লক্ষ্য আছে জানা
আমরা কজন ভয়ভীতি মানিনা,
উদ্যত মৃত্যুকে পরোয়া করি না-
এগিয়ে যাবো দ্বিধাহীন আলোর-পথযাত্রী।
(সামনে অসীম আধার-কালো রাত্রি)
প্রত্যয়ী যাত্রা গ্রন্থে বিপ্লবী আদর্শে, লক্ষ্যে ও চেতনায় রচিত ছাব্বিশটি কবিতা ভিন্ন আঙ্গিকে রচিত এক একটি জাগরণী শ্লোগান এবং বাংলা সাহিত্যের জন্যে এক অমূল্য সম্পদ। বাকী সাতটি কবিতার মাঝে ফুটে উঠেছে এ দেশের প্রাণকেন্দ্র এ দেশের রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত শহুরে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ক্ষোভ আর মনস্তাপ। যেমন ‘ঢাকার গান’ কবিতায় আছে-
কত লোক আসে যায় এখানে
আপন আপন ভাগ্যের অণ্বেষণে,
কেউ দুর্ভাগ্য নিয়ে ফিরে যায়
কারো ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা।
(ঢাকার গান)
আরো বঞ্চনা আরো কষ্টের চিত্র খুজে পাই ‘ঢাকা আমার ঢাকা’ কবিতায়-
এখানে আলোর নীচে জমে অন্ধকার
উচু প্রাসাদ ইমারতের সাথে
পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে বস্তির সমাহার।
(ঢাকা আমার ঢাকা)
সমাজে বঞ্চিত শোষিত মানুষের কষ্ট আর বঞ্চনাকে উপজীব্য করে কবিতা লিখে অনেকে। কিন্তু বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পর সত্যকে সরাসরি বলার সাহস রেখে কবিতা লিখেছে এমন কবির সংখ্যা হাতে-গুণা।
প্রত্যয়ী যাত্রা-র কবি শফিকুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে একজন ব্যতিক্রম প্রতিভা। তার অনন্য কাব্য প্রতিভা ইতোমধ্যে বাংলা সাহিত্যে তার স্থায়ী আসন সৃষ্টি করে নিয়েছে ।
--শামসুল হক শামস্
সুচিপত্র
প্রত্যয়ী যাত্রা ৬
সামনে অসীম আধার কালো রাত্রি ৭
ঝড়ো দিনের সংলাপ ৮
ঘর ছেড়ে সব বেরিয়ে পড়ো ৯
বন্ধু তুমি এতটা ভেঙে পড়না এখুনি ১০
বন্ধু তুমি এগিয়ে যাও ১১
বন্ধু তুমি এতটা ভেঙে পড়না,শুনো ১২
আমাকে শুধু একটি গান গাইতে দাও ১৩
দেশ আজ দেখেছে অনেক ১৪
ঢাকার গান ১৫
ঢাকা আমার স্বপ্নের নগরী ঢাকা ১৬
এই স্মৃতির শহর ঢাকা ১৭
ঢাকা আমার আলো-ঝলমল স্বপ্ননগরী ঢাকা ১৮
এই যে মহানগরী সবাই ছুটছে ১৯
যত সুন্দর আমার এ শহর ২০
এই শহরে একটা বাঘ এসেছে ২১
পত্রিকার পাতা খুললেই ২৩
হে বিশ্ববাসী মহারাষ্ট্রনায়কগণ ২৪
কবিতায় আর গানে বহুবার ২৬
পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে ২৭
আমাকে কিছুই বলতে দেয়া হচ্ছে না ২৮
বন্ধু বলতে পারো কি ৩০
যারা মাঠে ফলাবে ফসল ৩১
বন্ধু তুমি বুকে নিয়ে সাহস,বাহুতে বল ৩২
বন্ধু তোমার চেতনার আলো ৩৩
আধার দেখে বন্ধু তুমি ৩৪
বন্ধু তুমি সত্যকে জেনেছ ৩৫
বন্ধু তুমি কেদনা ৩৬
যে বিধান দিতে পারেনি ৩৭
সত্য ও সুন্দরের আকাংখা চিরন্তন ৩৮
পথের ধারে যে মানুষটি কাদছে ৩৯
ঐ যে অকারণ হৈচৈ করে বেড়ানো ৪০
এই পৃথিবী আমার স্বদেশ ৪১
প্রত্যয়ী যাত্রা
আমাদের চলা শেষ নয় পথের বাকে
আমাদের চলার শুরু পথের প্রান্ত থেকে।
কষ্টের পথে বন্ধুর পথে
যাত্রা আমাদের চিরকাল হতে,
আমাদের আনন্দ পথ চলাতে
অন্তবিহীন পথ আমাদের ডাকে ॥
আমরা এবার নেমেছি পথে
আখিজলে নয় বুকের শোণিতে,
অনেক দুঃখে ও যন্ত্রণাতে
আমরা জয় করে নিতে বৈরী জীবনটাকে ॥
সামনে অসীম আধার-কালো রাত্রি
সামনে অসীম আধার-কালো রাত্রি
তারই মাঝে আমরা কজন নির্ভীক যাত্রী ॥
সম্মুখে বাধার পাহাড়
পথ নেই পালাবার-
পেছনে উত্তাল সাগর
মাঝখানে আমরা কজন নবীন যাত্রী ॥
আমাদের লক্ষ্য আছে জানা
আমরা কজন ভয়ভীতি মানি না,
উদ্ধত মৃত্যুকে পরোয়া করিনা-
এগিয়ে যাবো দ্বিধাহীন আলোর যাত্রী ॥
ঝড়ো দিনের সংলাপ
তোমাদের আছে দম্ভ নিষ্ফল, তোমাদের দুঃশাসন
আমাদের আছে সত্যবল আমাদের আন্দোলন।
তোমাদের আছে অন্যায় ঔদ্ধত্য
আমাদের আছে অন্তরলব্ধ সত্য,
আমাদের তরে লাঞ্চনাv, স্বেচ্ছায় দুঃখ বরণ॥
তোমাদের আছে পুঞ্জিত ক্ষমতা, তোমাদের কদিন
আমাদের আছে কোটি জনতা, আমাদের চিরদিন।
তোমাদের আছে চমক, ক্ষণিক বিজয়
আমাদের কেবল ভ্রান্তি পরাজয়,
আমাদের তরে চুড়ান্ত বিজয়, পথচলা আমরণ ॥
ঘর ছেড়ে সব বেড়িয়ে পড়ো
ঘর ছেড়ে সব বেড়িয়ে পড়ো
যার যা আছে লও হাতে তুলে,
রক্তের শোধ আজ আমরা
নেব রক্তের বদলে ॥
ধন গেছে গেছে মান
বাকী আছে শুধু এই প্রাণ,
সেই প্রাণ দিয়ে হানবো আঘাত
শাসন-শোষণ শৃংঙ্খলে ॥
আনুগত্য শৃঙ্খলার নামে এবার
দাসখত লিখতে যাব না আর,
প্রমাণ করবো আমরা
রুখে দাড়াতে জানি প্রয়োজন হলে ॥
বন্ধু তুমি এতটা ভেঙে পড়না এখুনি
বন্ধু তুমি এতটা ভেঙে পড়না এখুনি
সবকিছু এখনও শেষ হয়ে যায়নি ॥
আধার রাতের শেষে
জেনো তবে সূর্য হাসে,
রাত ছাড়া কোন প্রভাত আসেনি ॥
সব হারালে ও জেনো তুমি
সামনে রয়েছে আগামী,
সুন্দর দিন দিচেছ তোমায় হাতছানি ॥
বন্ধু তুমি এগিয়ে যাও
বন্ধু তুমি এগিয়ে যাও
খুজে তুমি পাবে ঠিকানা,
একটু একটু করে পথ পেরোও
পাবেই পথের সীমানা ॥
দিনে সূর্য রাতে চাদ-তারা
তোমার পথে দেয় আলোর ইশারা,
কেন ভাবো তুমি দিশেহারা
কেন করো এত ভাবনা ॥
ফুল ফুটে বনে,শাখে পাখী গায়
সবাই তোমায় স্বাগত জানায়
এই আকাশে বাতাসে সর্বত্র
তোমার প্রাণের সম্বর্ধনা॥
তুমি নও অনাহুতো পৃথিবীতে
তুমি তো আমন্ত্রিত অতিথি
সবাই তোমার সাথে আছে
কখন ও ভেবো না তুমি একা ॥
বন্ধু তুমি এতটা ভেঙে পড়না,শুনো
বন্ধু তুমি এতটা ভেঙে পড়না, শুনো
সব কিছু এখনোই শেষ হয়ে যায়নি
সামনে ভবিষ্যৎ আছে এখনো ॥
একটা পথ বন্ধ হলে কি হবে
আরো শত পথ খুলে যাবে,
একটা দুয়ার বন্ধ দেখে ফিরে যেওনা
আরো কত দুয়ার খোলা আছে জেনো ॥
একজনের কথায় ভুল করে
সকলকে শত্রু ভেবো না অন্তরে,
তাহলে তুমি হবে না কখন ও বন্ধুশূন্য ॥
বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দাও দেখবে
বন্ধু আরো কত আছে দাড়িয়ে,
যাদের সাথে হয়নি পরিচয় এখনো ॥
আমাকে শুধু একটি গান গাইতে দাও
আমাকে শুধু একটি গান গাইতে দাও
হৃদয়ের সুরে একটি গান গাইতে দাও।
মাটির সাথে বাধা যাদের মমতা
হৃদয়ের সবটুকু একাগ্রতা
আমার গানে তাদের কথা গাইতে দাও,
তাদের সাথে প্রাণের একাত্মতা ঘোষণা করতে দাও॥
কর্ষিত মৃত্তিকার গর্ভে যারা আনে সম্ভাবনা ফসলের
তারাই এ মাটির খাটি সন্তান গর্ব আমাদের ॥
তারাই মহৎ, তারাই মানব
এই মাটিই যাদের সব--
আমার গানে তাদেরই স্তব শুধু করতে দাও,
তাদের সাথে প্রাণের একাত্মতা ঘোষণা করতে দাও ॥
দেশ আজ দেখেছে অনেক
দেশ আজ দেখেছে অনেক
শোষণ শাসন ত্রাস,
জনগণ ত্রাতা সেজে
জনগণের রক্ত গ্রাস।
দেখেছে অনেক ফাকি
শুনেছে অনেক মিথ্যে বুলি,
কোনদিন ভরে নাই
তার আশার শূন্য ঝুলি।
দেশ আজ চায়
ঝড়ে ঝঞ্ঝায় হুমকীর মোকাবেলায়,
সত্য-সাহসে সে ছেলে
অটল দৃঢ় মহীরুহ প্রায়।
যে ছেলের কথায়
আর কাজে অনবদ্য মিল,
দেশ আজ চায়
সেই ছেলে উদ্যমশীল ॥
ঢাকার গান
এই যে ঢাকা মহানগরী ঢাকা
কত আশা আর নিরাশায় ঢাকা,
আলো ঝলমল রাজধানী ঢাকা
আলোর নীচেই অন্ধকারে ঢাকা ॥
কত লোক আসে যায় এখানে
আপন আপন ভাগ্যের অণ্বেষণে,
কেউ দুর্ভাগ্য নিয়ে ফিরে যায়
কারো ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা ॥
কেউ দ্রুত সিড়ি বেয়ে উঠছে
আর কেউবা চাপা পড়ে মরছে,
দিবানিশি কত খেলা জমে এখানে
সব নিয়েই এখানে বেচে থাকা ॥
ঢাকা এক সুন্দরী নারীর মতন
ভেতরে যার নেই সুন্দর মন,
বড় বড় কত কথা হয় এখানে
কাজের বেলা দেখি সব ফাকা ॥
কত বড় মাপের বক্তরা আসেন
সভা সেমিনার বাজিমাৎ করেন,
মানুষের ভাগ্য বদলের কথা বলে
নিজ ভাগ্য ফেরাতে তারা পাকা ॥
আজকে সবাইকে বুঝতে হবে
নিজের ভাগ্য নিজে বদলাতে হবে-
তুলে লও হাতে কাস্তে ও হাতিয়ার
বদলাতে আপন ভাগ্য রেখা ॥
ঢাকা, আমার স্বপ্নের নগরী ঢাকা
ঢাকা, আমার স্বপ্নের নগরী ঢাকা,
তোমার যান্ত্রিক জীবনের নীচে
বিবেক-বুদ্ধি-মানবতা
পড়ে গেছে ঢাকা ॥
প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের চলে দিনমান
হয় ক্ষমতার পালাবদল-
কান পাতলেই শোনা যায়
নীরবতার মাঝে
কিসের যেন হাহাকার মাখা ॥
মানুষের অসম্বৃত দীর্ঘশ্বাস
ভারী করে তুলে নগরের বাতাস,
বিষাক্ত কালো ধোয়ায়
সূর্যের আলো পড়ে ঢাকা।
এখানে আলোর নীচে জমে অন্ধকার
উচু প্রাসাদ ইমারতের সাথে
পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে বস্তির সমাহার॥
এখানে কেউ কারো রাখেনা খবর
অসম প্রতিযোগীতা চলে দিনভর,
পাষাণ নগরী ও পাষাণের মাঝে
মানুষ এখানে হয়ে গেছে খুব একা॥
এই স্মৃতির শহর ঢাকা
এই স্মৃতির শহর ঢাকা
এই প্রাণের শহর আমার
বাইরে তার চাকচিক্য-ভরা
তবু ভেতরে যেন হাহাকার ॥
দিনের আলো না ফুটতে সবাই থাকে ছুটতে
উন্মত্ত প্রতিযোগীতায় সবাই উঠে মেতে,
ফলে কেউ যেতে পারছেনা এগিয়ে
সবার দেরী হয়ে যাচ্ছে
পিছিয়ে পড়ছে সবাই বারবার ॥
আলো-ঝলমল এই মহানগরী আমার
আলোকের নীচে কত যে অন্ধকার--
উচু দালান কোঠার পাশে ঘিঞ্জি বস্তির সমাহার ॥
শহর উপশহরের পাশাপাশি অলিগলি-বস্তি
সৌখিন নগরবাসীর চোখে জাগায় অস্বস্তি-
এখানে কত সভা সমিতি শিক্ষাঙ্গন
তবু বিবেকের শিক্ষায় অশিক্ষিত মানুষ এখানকার ॥
ঢাকা, আমার আলো-ঝলমল স্বপ্ননগরী ঢাকা
ঢাকা, আমার, আলো-ঝলমল স্বপ্ননগরী ঢাকা
তুমি শুধু স্বপ্ন দেখিয়েছ,
যত না দিয়েছ
তারও বেশী কেড়ে নিয়েছ ॥
মাঝে মাঝে মনে হয় এমন
তুমি যেন বিগত যৌবনা পতিতার মতন,
কোন শ্রী নেই
কেবল বাইরে তুমি রঙচঙ মেখেছ ॥
তোমার বাইরের রূপ দেখে কতজন
ছুটে আসে পতঙ্গের মতন,
তুমি যৌবনের লোভ দেখিয়ে
কতজনকে নিঃস্ব করেছ ॥
এই যে মহানগরী সবাই ছুটছে
এই যে মহানগরী সবাই ছুটছে,
যেতে চায় আগে
খোজ রাখে না
কে পড়ে রয় পশ্চাৎ ভাগে ॥
এ এক নিষ্ঠুর প্রতিযোগীতা
যেখানে নেই মানবিকতা,
অন্যকে হারিয়ে
নিজের সফলতা সবাই মাগে ॥
কেউ ভাবে না হেরে গেল যে জন
সে ও তো আমাদেরই একজন,
তার ও বিজয়ীর হাসি
হাসতে ইচ্ছে জাগে ॥
যত সুন্দর আমার এ শহর
যত সুন্দর আমার এ শহর
সুন্দর নয় এ শহরের মন-
একটি শহর তবু তার
মানুষের মধ্যে শত বিভাজন ॥
একদিকে বিলাস বহুল বাড়ী আলীশান
দিনে দিনে চায় ছুতে ঐ উচু আসমান,
অন্য দিকে দিগন্ত সমান্তরালে
বস্তি বাড়ে সারাক্ষণ ॥
শহরবাসী কেউ কেউ খাবার নষ্ট করে
কতজন আবার না খেয়ে মরে,
এখানে নিরূপায় নগরবাসীর
দূর্বিষহ জীবনযাপন ॥
এই সৌখিন নগরীর রাস্তা যারা গড়ে
বিলাসী গাড়ীর নীচে তারাই চাপা পড়ে,
এই অসম জীবন যাপনে এখানে
হয়েছে বিবেকের মরণ ॥
এই শহরে একটা বাঘ এসেছে
এই শহরে একটা বাঘ এসেছে
বিশাল বাঘ
ইয়া বড় গোফ, সারা শরীরে ডোরাকাটা।
বাঘ বাঘ বললেই
শহরের রাস্তা নিমেষে জনশূন্য
ফাকা হয়ে পড়ে-
সবাই যে যার মত পালায়।
ফুটপাতের বিক্রেতা
তার পসরা ফেলে দৌড়য়,
কেউবা তার লটবহর
কোনরকম জাপটে ধরে বেসামালভাবে
কিছু ফেলতে ফেলতে ছুটে রুদ্ধশ্বাসে,
দোকানীরা তড়িঘড়ি করে দোকানের ঝাপ ফেলে,
বাড়ী ঘরে শিশুরা মায়ের কোলে মুখ লুকায়।
আবার একসময় ভীত মানুষেরা,
লোকালয়ের মানুষেরা,
বনের কল্পিত দুর্ধর্ষ বাঘের বিরুদ্ধে
মনে সাহস সঞ্চয় করে-
আবার দোকানের ঝাপ খুলে
রাস্তায় পথচারী নামে
শিশুরা মায়ের কোল থেকে
বিছানা ছেড়ে নেমে আসে।
আবার এক সময় বাঘের প্রসঙ্গ উঠে
দ্রুত আতংক ছড়ায় বিদ্যুৎ বেগে-
অথচ সেই ভীতিকর জন্তু-দানবটা কেউ দেখেনি।
সবাই বলে অমুক দেখেছে;
অমুককে জিজ্ঞেস করলে বলে,
অমুক দেখছে-
এই ভাবে দিন যায়।
বাঘের আতংকে যেন কত যুগ ধরে
মানুষ গৃহবন্দী হয়ে আছে,
স্বাধীন মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিপর্যস্ত....
অবশেষে একদিন যখন
আতংকিত মানুষের চীৎকারে
নিজেই আতংকিত হয়ে
বাঘ নিজেই বনের থেকে বেরিয়ে এলো জনপদে
তখন দেখা গেলো কেউ পালালো না।
সবাই ঢাল সড়কি, তলোয়ার নিয়ে
বাঘকে ঘিরে ফেললো-
এক সময় মেরে ও ফেললো।
সেই বাঘের মৃতদেহ পচে গলে
এক সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো-
দেহাবশেষ কিছুই আর অবশিষ্ট রইলনা;
অথচ সেই আতংকময় দিনগুলির স্মৃতিচিহ্ন
বহুদিন মানুষের মনে জেগেছিল ॥
পত্রিকার পাতা খুললেই
পত্রিকার পাতা খুললেই
প্রতিদিন চোখে পড়ে মৃত্যু--
প্রকাশ্য দিবালোকে খুন,
আততায়ীর হাতে নিহত
অজ্ঞাতনামা যুবকের মৃতদেহ,
নয় তো ধর্ষিতা কিশৈারীর বিকৃত লাশ।
আমার বাংলাদেশ তবে কি একদিন
বিশাল বধ্যভূমি হয়ে যাবে?
আর দেশ জুড়ে থাকবে খুনীরা।
আমার বাংলাদেশ তবে কি একদিন
খুনীদের দখলে চলে যাবে?
টকটকে তাজা সদ্য প্রস্ফুটিত লাল গোলাপের চেয়ে
এখানে মূল্য পাবে
খুনীর হাতের রক্তমাখা রঙীন ছুরি,
মৃত্যুপথযাত্রীর আর্তনাদের চেয়ে
তবে কি একদিন এখানে মর্যাদা পাবে
ঘাতকের ক্রুর অট্টহাসি।
পথের পাশে সদ্য নিহত
কোন মানুষের রক্তমাখা লাশ দেখে
একদিন অভ্যস্ত চোখে
পাশ কেটে চলে যাব ভাবান্তরবিহীন,
লজ্জাহীন পশুদের মত
বিবেকহীনতার সগৌরবে।
আর কতকাল আমরা
দাড়িয়ে থাকবো নির্লজ্জের মত
নিষ্ক্রিয় নির্বাক হয়ে
প্রিয় স্বদেশের রক্তমাখা লাল পটভুমিতে ॥
হে বিশ্ববাসী মহারাষ্ট্রনায়কগণ
হে বিশ্ববাসী, মহারাষ্ট্রনায়কগণ, জেনে রাখুন
আমার বাংলাদেশ সংবৎসরই দূর্যোগ-কবলিত।
কোন বিচ্ছিন্ন এলাকা নয়,
আমার পুরো বাংলাদেশই একটা দূর্গত এলাকা।
এখানে বন্যা ঝড় সাইক্লোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ
বৎসরে একবার কি দুবার বিধ্বস্ত করে
প্রিয় বাংলাদেশের জনপদ;
অথচ সারা বৎসরই
আমার দেশবাসীর গৃহ থাকে ছাউনিবিহীন,
সংবৎসরই হাঘরে হাভাতে থাকে দরিদ্র দেশবাসী।
আমার বাংলাশেকে সব সময় কুরে কুরে খায়
স্বদেশী বিদেশী মহাজন, দালাল,
মজুতদার, কালোবাজারী, লুটেরা-
আমার বাংলাদেশ যুগ যুগ ধরে অঘোষিত দূর্গত এলাকা।
কেবল দারিদ্র রেখার নীচেই আমাদের বসবাস নয়-
মানবতা রেখার নীচে ও আমাদের অবস্থান।
এখানে মানবতা লাঞ্চিত হলে কেউ ধার ধারে না-
পথের ধারে অযথা সন্ত্রাসীর হাতে
কেউ চপেটাঘাত খেলে অন্যরা মুচকী হেসে চলে যায়,
ছিনতাইকারীর হাতে ¯^e©¯^
লুট হতে দেখে কর্তব্যরত পুলিশ
উর্ধ্বাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে নব্য দার্শনিকের মত।
বুকের মধ্যে লাঞ্চনা অপমান লুকিয়ে
আর উদরের মধ্যে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা পুষে
দিব্যি আমরা ভোটকেন্দ্রে যেয়ে
ভোট দিয়ে রাজা উজির বানাই-
রাজা উজির হয়ে তারা
চর্ব, চুষ্য, লেহ্য, পেয় সবই পান করে।
উদরের স্ফীতি বাড়িয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে।
আর আমরা তা দেখে ধন্য হই,
প্রজাহিতৈষী রাজ-অমাত্যগণ বলে
তাদের বাহবা দিই বাধ্যতামূলকভাবে।
হবুচন্দ্র রাজার অধীনে গবুচন্দ্র মন্ত্রীশাসিত দেশে
বলতেই হয় আমরা ভাল আছি,
মন্দ আছি বলতে গেলে
যেখানে মন্দ পরিণামের ভয় আছে ॥
কবিতায় আর গানে বহুবার
কবিতায় আর গানে বহুবার
স্বদেশকে নিয়ে কাব্য করা হল সার
বুকের রক্তে লিখবো এবার ¯^vaxb বাংলাদেশ ॥
যুগে যুগে কত হায়েনারা এখানে হানা দিয়ে
ফিরে গেছে তারা অবশেষে ব্যর্থ হয়ে
উদ্ধত প্রতিরোধের মুখে মুক্ত রেখেছি স্বদেশ ॥
যখন উদ্ধত অন্যায় অবিচার
স্বদেশের প্রিয় মাটিতে করেছে বাহু বিস্তার
ভালবাসার অহংকারে মোকাবিলা করেছি আপ্রাণ॥
আমাদের চেতনায় চেতনায় এখন
সেই দুঃসাহসের দৃপ্ত প্রতিফলন
আমরা পথে নেমেছি যখন, কে রুখবে এ অগ্রাভিযান ॥
জনতার বাধ ভাঙা জোযারে
কাপন জাগাবো কাযেমী স্বার্থের প্রাচীন প্রাচীরে
শোষকের ভিত নড়ে উঠবে এবার ॥
শোষকের হাতে যারা হয়ে বঞ্চিত
মিথ্যে ভাগ্যকে দায়ী করছে প্রতিনিয়ত
তাদেরকে প্রকৃত শত্রু চিনিয়ে দেবো এবার ॥
ঘুমিয়ে আছে যারা তাদের ঘুম ভাঙাবো এখন
মানুষকে করবো অধিকার সচেতন
মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেবো হৃত অধিকার ॥
পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে
পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে
আহত আর নিহতের সংখ্যা সম্বলিত শিরোনাম।
আমার বাংলাদেশ পুরোটাই কি একদিন
পিজি হাসপাতালের ক্যাজুয়েলটি ওয়ার্ড হয়ে যাবে?
আহত নিহতের আর্ত চিৎকারে
আর দুর্বৃত্তের বর্বর উল্লাসে
পাখীর গান নদীর কলতান চাপা পড়ে যাবে?
দেশ জুড়ে রাজত্ব করবে
ছিনতাইকারী, খুনী, সন্ত্রাসী আর দুর্বৃত্তরা।
আমাদের পিচঢালা কালো রাজপথ কি একদিন
নিহতদের তাজা রক্তে আপন বর্ণ হারিয়ে
রক্তাক্ত রাজপথ হিসেবে পরিচিতি পাবে?
কবে আমাদের পবিত্র সংবিধানের তালিকায়
স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত হবে?
ক্ষুধা, দারিদ্র, বঞ্চনামুক্ত
স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার স্বীকৃতি পাবে?
আমাকে কিছুই বলতে দেয়া হচ্ছে না
আমাকে কিছুই বলতে দেয়া হচ্ছে না
কিংবা বলতে দিলেও
প্রশ্ন করার সীমানা চিহ্নিত করা হচ্ছে,
প্রধান অতিথি বিব্রত হন
এমন ধরণের প্রশ্ন থেকে বিরত থাকতে
বলা হচ্ছে।
অবারিত বাকশক্তিকে নিয়ন্ত্রিত করতে
আমার মুখে অদৃশ্য কুলুপ এটে দেয়া হচ্ছে।
আমি যখনই আমার অধিকার
মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেছি,
আমার মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়া হচ্ছে
নয়তো শব্দযন্ত্র বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ॥
জঠরে অদৃশ্য ক্ষুধার জ্বালা নিয়েও
উপস্থিত খাদ্যমন্ত্রককে
দূর্ভিক্ষের বিষয়ে প্রশ্ন করতে
নিষেধ করা হচ্ছে,
তবে তাকে সঙ্গীত বিষয়ে
প্রশ্ন করতে বাধা নেই।
রাষ্ট্রনায়ককে রাষ্ট্রের দুর্দশার
দিকে ইঙ্গিত করে কিছু বলা যাবে না,
মাননীয়ের অবমাননা হবে ।
কিন্তু এই যে আমি অনাহারে অর্ধাহারে মৃতপ্রায়,
জীর্ণবস্ত্রে লজ্জা ঢাকার ব্যর্থ প্রয়াস চালাচ্ছি,
আমার বেচে থাকার অধিকার
জীবনের অধিকারকে যারা অবমাননা করলো
হায়, সেটা কোন আইনে অবমাননার
সংজ্ঞায় পড়ল না।
অথচ যারা বিন্দুতম মানুষকে ভালবাসেন
মানবতা সম্পর্কে যাদের কণা পরিমাণ আস্থা আছে,
তারা প্রকাশ্যে না হোক গোপনে স্বীকার করবেন
এর চেয়ে বড় অবমাননা
মানুষের পৃথিবীতে আর হতে পারে না।
এতবড় অবমাননাকে
বিনা বিচারে শাস্তিহীন ছেড়ে দেয়া যায় না ॥
বন্ধু বলতে পারো কি
বন্ধু বলতে পারো কি
একই আকাশের নীচে একই মাটির পরে দাড়িয়ে,
তবু কেন এত ব্যবধান?
একই আকার আকৃতি, একই রক্ত প্রবাহ ধমনীতে
তবু পাইনা মানুষের সম্মান ।
পরের অন্ন করে উৎপাদন
কেন নিরন্ন থাকি আজীবন,
আমাদের উৎপাদিত ফসল
অন্যের গোলায় আনে ফসলের বান।
আমাদের হাতে উৎপাদিত পণ্যে
আমরা অধিকার পাবনা কি জন্যে,
কেন শিল্পের সাথে শিল্পীর এই ব্যবধান?
যারা মাঠে ফলাবে ফসল
যারা মাঠে ফলাবে ফসল
বলতে পারো তারা কেন মরবে অনাহারে?
মাটির ফসল কেন তাদের হবে না
ফসল ফলায় যারা বৃষ্টিতে ভিজে রোদে পুড়ে?
কলে-কারখানায় যারা উৎপাদন করবে
উৎপাদিত পণ্য কেন তাদের হবে না?
এ অন্যায়, এ মেনে নেয়া যায়না,
প্রচলিত এ প্রথা বন্ধ করতে হবে।
আজ থেকে লাঙ্গল যার জমি তার
আজ থেকে জাল যার জলা তার,
উৎপাদনের সাথে সম্পর্কহীন মালিকানা
আমরা মানি না, মানব না ॥
বন্ধু তুমি বুকে নিয়ে সাহস,বাহুতে বল
বন্ধু তুমি বুকে নিয়ে সাহস, বাহুতে বল
এগিয়ে চল লক্ষ্যে থেকে অবিচল ॥
ভয়ভীতি প্রলোভনে তুমি
হইও না কখন ও বিপথগামী,
তোমার দুর্গম পথে আদর্শই সম্বল ॥
চক্রান্তে ষড়যন্ত্রে হইও না ভীত
বিপদ বাধায় থেকো অবিচলিত,
জানি তুমি একদিন হবেই সফল ॥
বন্ধু তোমার চেতনার আলো
বন্ধু তোমার চেতনার আলো
সবার মনে জ্বালো,
তুমিই পারো সবাইকে জাগাতে।
বাইরের আধার দূর হলে তবে
ঘরের আধার আলোকিত হবে,
মনের আধার দূর করতে হবে
সত্যকে এবার জানতে।
যা চলছে তা চলতে দেয়া যায়না
যেভাবে চলছে তা মেনে নেয়া যায় না,
আমরা কান পেতে আছি
তোমার আহ্বান শুনতে ॥
আধার দেখে বন্ধু তুমি
আধার দেখে বন্ধু তুমি
শুধু শুধু মন খারাপ করনা,
পৃথিবীতে শুধু আধার নয়
আলোও আছে চেয়ে দেখ না?
রাত যতই দীর্ঘ হোক
রাতেরও শেষ আছে,
রাতের শেষে নতুন সূর্য
জানায় সম্বর্ধনা ॥
রাত শেষ হবেনা ভেবে
ঘুমিয়ে থাকো যদি তবে,
আলোয়-ভরা দিন তুমি
তাহলে দেখতে পাবেনা ॥
বন্ধু তুমি সত্যকে জেনেছ
বন্ধু তুমি সত্যকে জেনেছ
তোমার কিসের ভয়?
আপন আলোকে আলোকিত তুমি
আধার তোমার কাছে
মানবে পরাজয় ॥
তোমাকে হারলে চলবে না
এগিয়ে যেতে হবে,
তোমার আলোকে সবাই পথ চলবে।
ক্ষুদ্র কুটিরে সুখ নীড় রচনা
বন্ধু তোমার তো সাজে না-
তুমি জানো আদর্শের চেয়ে
মৃত্যু বড় নয় ॥
শোষক বঞ্চনাকারীদের জন্য
তুমি হবে ত্রাস,
তুমি সৃষ্টি করতে চলেছ
নতুন ইতিহাস।
তোমার দৃপ্ত পদক্ষেপে
নতুন যুগের সূচনা হবে,
এ বিশ্ব দেখছে তোমায়
নিয়ে চোখভরা বিস্ময় ॥
বন্ধু তুমি কেদনা
বন্ধু তুমি কেদনা
মনে কর না খুব একা,
কেউ যদি না থাকে পাশে
জেনো আমি আছি
তোমার খুব কাছাকাছি ॥
দুঃখের দিন শেষে
আলোর দিন উঠবে হেসে,
অনেক সুখে ভরবে তোমার মন
আমি বলছি ॥
মেঘ কেটে যায় এক সময়
রাত ও অবশেষে ভোর হয়,
আমি আজ তোমায় অভয়
জানাতে এসেছি ॥
যে বিধানে দিতে পারেনি
যে বিধান দিতে পারেনি
ক্ষুধার অন্ন, পরণের বস্ত্র-
যার কারণে জীবন বিপন্ন,
সেই বিধান আজ অমান্য করতে হবে,
ঘুণে ধরা এ সমাজ ভাঙতে হবে ॥
দেখ পূব আকাশে সূর্য রক্ত-লাল
এসেছে আজ নতুন সকাল,
গত রাত্রির যত ভীরুতা ঝেড়ে ফেলে
সাহসে বুক বাধতে হবে ॥
যুদ্ধ তো অনিবার্য, যদি চাও মুক্তি
প্রকৃত অর্থে,
মুক্তি তো সূদুরপরাহত
সমঝোতার শর্তে ॥
সত্য ও সুন্দরের আকাংখা চিরন্তন
সত্য ও সুন্দরের আকাংখা চিরন্তন
মানুষ তা পেতে চাইবেই,
যতবার নিভিয়ে দিতে চাইবে
ততবারই জ্বলে উঠবে জেনে যাও ॥
তোমাদের থাকতে হবেই ভীত সন্ত্রস্ত
তোমাদের ক্ষমা নেই জানবে,
প্রতিটি সকাল এ কথাই ঘোষণা করে
আধার রাত্রির অবসান হবে।
ষড়যন্ত্রের নীল নক্সা করে বানচাল
আমরা আনবোই অনন্ত প্রভাত-
দেখবো তখন কোন আধারে মুখ লুকাও ॥
পথের ধারে যে মানুষটি কাদছে
পথের ধারে যে মানুষটি কাদছে
কাছে যেয়ে শুধাও তারে কি হয়েছে?
একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না,
ভালবেসে দুটো কথা বলতে পয়সা লাগে না ॥
মানুষ ছাড়া পৃথিবীতে মানুষকে
কেইবা বল ভালবাসবে?
মানুষের সুখে-দুখে মানুষই তো সান্তনা ॥
আজ কাউকে ব্যথায় কাদতে দেখে
ভেবনা তোমার বিপদ গেছে কেটে,
কাল তুমি কাদবে না কেউ বলতে পারে না ॥
ঐ যে অকারণ হৈচৈ করে বেড়ানো
ঐ যে অকারণ হৈচৈ করে বেড়ানো
চঞ্চল প্রজাপতির মত ছুটে বেড়ানো ছোট্ট শিশুরা,
আমাদের প্রিয় আদরের ছোট্ট শিশুরা-
স্বর্গ© হতে নেমে আসা ছোট ছোট দেবদূত
নিষ্পাপ অমলিন-
আমাদের আগামী পৃথিবী
আমরা যাদের হাতে তুলে দেব
আমাদের কৃতি সন্তান,
তাদেরকে মনের আনন্দে
ফুলের মত ফুটতে দাও।
জীবনের সব গ্লানি হতে ওদেরকে
দূরে রাখো।
ওদের হাতে এক একটি ফুল তুলে দাও,
তারাও ফুলের মত সুন্দর হবে।
শোন শিশুরা, ছোট্ট সোনামণিরা
পৃথিবীর সব গান তোমাদের জন্য,
পৃথিবীর সব ছন্দ তোমাদের জন্য-
তোমাদের জন্য আমার সব ভালবাসা।
পৃথিবীর সব আনন্দে
তোমাদের অবিসংবাদিত অধিকার ॥
এই পৃথিবী আমার স্বদেশ
ঐ যে ক্ষুধায় কাতর
মানুষ করছে জীবনযাপন মানবেতর
সেও আমাদের ভাই, বোন, বন্ধু, একান্ত স্বজন|
ঐ যে রোগে-শোকে বিনা শুশ্রূষায়
পথের ধারে পড়ে আছে মূর্ছাহতপ্রায়-
সেও আত্মীয় আমাদের, একান্ত নিকটজন ॥
জগতে যত মানুষ আছে
সবাই মিলে আমরা একটি জাতি, মানবজাতি;
এই পৃথিবী আমার স্বদেশ
এই পৃথিবীর মানুষ আমার দেশবাসী ॥
মানুষ ছাড়া মানুষের কে আছে আপন,
আমরা সবাই মিলে
গড়ে তুলেছি আমাদের এই পৃথিবী;
আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে
বাসযোগ্য হয়েছে আজ এই ভুবন ॥